somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সে, আমি এবং........

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘামতে ঘামতে যখন আমার চরম অবস্থা, তখনই ফোনটা বেজে উঠল (শালার ফোন!! বাজার আর সময় পায়না)। কিঞ্চিত টেরা হয়ে স্যার তাহার বিখ্যাত চিকন চাহনিটা আমার দিকে নিক্ষেপ করলেন। তাড়াতাড়ি করে ফোনটা বের করে সাউন্ড অফ করলাম।
অবশেষে স্যার এর রুম থেকে অগ্নি পরীক্ষা প্রদান শেষে যখন আমার ডেস্কে এলাম, মনে পড়ল আমাকে বিপদে ফেলে দেয়া সে মহান কলার টি কে তাইতো দেখা হল না।

ফোন খানা বাহির করিয়া মিস কল লিস্ট দেখলাম। আয় হায়, এইটা কি হইল?? কিছুক্ষন বেকুবের মত আমি ফোনের দিকে চাহিয়া রইলাম। মনে মনে ভাবিলাম, এতদিন পর তিনি আমাকে স্মরন করিলেন।। ভাল কথা, কিন্তু কেন করিলেন, কিভাবে করিলেন কিছুই বুঝার চেস্টা করিলাম না। মেয়েদের ব্যাপারে সকল ছেলেই দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীল। আমি যে তাহার ব্যতিক্রম নই, তাহা প্রমান করিতে দেরি করিলাম না। সাথে সাথেই দিলাম তাহার মুঠোফোনে কল।

সেঃ হ্যালো...(আহা, সকল নারীর কন্ঠই কি সুমধুর!!)
আমিঃ হ্যালো...(প্রানপনে স্মার্ট টোনে বলার চেস্টা)

সেঃ কেমন আছেন ভাইয়া?? ...(কি বেরসিক!! আমার কি ভাইয়া ডাক শুনার বয়স আছে?? জান, প্রান ইত্যাদি শুনার বয়স না এইটা!!)
আমিঃ এইতো ভাল, এতদিন পর মনে পড়ল?? (মনে মনে আমি লাফাচ্ছিঃ তাও মনে করছ জানেমান, খুশিতে তোমাকে খাইয়া ফেলতে ইচ্ছা করতেছে )

সেঃ (অভিমানী গলায়)...হুমমমম...আপনি ই বা মনে রাখলেন কই?? (আহা, আহা, কি মিস্টি অভিমান...আমিতো সারাজীবন তোমায় মনে রাখতে চাই, কইলজার টুকরা)
আমিঃ হায় হায় কি বল? আমিতো তোমাকে ফোন দিছিলাম কয়েকবার (খোদার কসম, মিছা কতা)। তুমি ফোন ধর নাই বইলা ভাবলাম তুমি হয়ত চাও না আমি ফোন করি। তাই আর ফোন দেই নাই। কারন আমি মেয়েদের ডিস্টার্ব করা টাইপ পোলা না (তাই নাকি?? ঝানতাম নাতো! আমার এই গুনটা হইল কবে?)

সেঃ তা জানি...আপনি সেরকম ছেলে না। (খাইছে!!! কয় কি ছেমড়ি!!!) যাইহোক, আপনি এখন কই? (আর কই জান, আসমানে ...আসমানে...)
আমিঃ এইতো অফিসে...তুমি কই?? (এইবার সারছে...বাড়ি, ঘর কই সেইটা তো ভুলছি, কি করে, কই থাকে সেটাও খাইয়া ফালাইছি)

সেঃ আর কই ...বাসায়। আর কই থাকব? আচ্ছা, আমার বাসা কই আপনার মনে আছেতো?? (লে হালুয়া...যেখানে বাঘের ভয়...)
আমিঃ সরি, আসলে অনেকদিন পর কথা হচ্ছে তো। আমি আসলে ভুলে গেছি...(এইবারের মত পার পাইলেই হইল, আর জীবনেও ভুলুম না)

সেঃ সব ভুলে গেছেন???? কি বলেন?? আমার তো সব মনে আছে...(কয় কি?? আমার প্রেমে টেমে পড়ে গেছিল নাকি?)
আমিঃ তাই নাকি? দেখ, দেখি কি লজ্জার ব্যাপার!! আমি তো সব ভুলে বসে আছি...প্লিজ কিছু মনে করনা...(কানে ধরলাম, আর জীবনেও এই ভুল করুম না )

সেঃ হুমমমম...যাইহোক, আপনার কেমন চলছে?? ও ভাল কথা, আপনি এখন আর মিগ এ চ্যাট করেন না?? (ও মিগ!!! তোমার সাথে তাইলে মিগ এ চ্যাট হইছিলো আমার!!)
আমিঃ না, তেমন একটা সময় পাই না...খুব ব্যস্ত থাকিতো...(ধুর, মিগ এ আজকাল মাইয়ারা কম আসে, তাই আর যাই না)

সেঃ ভাইয়া, আপনার বাসার সবাই কেমন আছে?? ভালতো?? ও, আপনার সেই মুটকো ফ্রেন্ডটা কেমন আছে?? কিযে দুস্টু উনি...
আমিঃ হুমমম সবাই ভাল।।...তোমার মেমরীতো দেখি দারুন শার্প।। আমি প্রায়ই মনে রাখতে না পারার কারনে ভেজালে পড়ি।। কি যে লজ্জা লাগে তখন।।তোমার মত শার্প হলে বেচে যেতাম। (তোমার সব ভুইলা গেছি, সেটাই হল লজ্জার কথা।।মেয়ে মানুষের নাম, ঠিকানা মনে রাখতে না পারাতো অবিবাহিতদের জন্য অন্ন পাপ!!)

সেঃ (তাহার পর আমার নাম, ঠিকানা সব বলিয়া...আমাকে টাশকিতো করিয়া)...ভাইয়া, আপনি সামনের শুক্রবার ফ্রি আছেন??? (বেকুব মাইয়া কয় কি?? অতি অবশ্যই ফ্রি, খালি আমি না আমার ১৪ গুস্টি ফ্রি...কিন্তু এই কথা কেন?? লিটনের ফ্ল্যাট??)
আমিঃ (অতি মাত্রায় ভাব এর সাথে...) শুক্রবার!!! কেন বলত?? এই শুক্রবারে তো মনে হয় ফ্রি নেই...একটু দেখতে হবে। (আহা, দেখাদেখির কিছু নাই, আমার বুঝি কপাল খুলিল...

সেঃ ভাইয়া দেখাদেখির কিছু নাই। ওই দিন আমার একটা সেলিব্রেশন প্রোগ্রাম আছে। আপনাকে থাকতেই হবে??আপ্নি আসলে আমি উৎসাহ পাব অনেক।।(কয় কি!! আমি কি লাভার?? আমি থাকতে হইবে কেন??)
আমিঃ সেলিব্রেশন প্রোগ্রাম!! ওকে...চেষ্টা করব...থাকতে পারলেতো ভাল লাগত...

সেঃ ওকে ভাইয়া...আপ্নি অবশ্যই থাকবেন।।৯টায় শুরু হবেন।।আপনি ৮টায় চলে আসবেন কিন্তু...(এইবার তো সন্দেহ ঢুকতাছে মনে!!!কাহিনী কি???)
আমিঃ ওহহহ...৮টায়!!! আমিতো এত্ত সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারিনা...দেখি চেষ্টা করব তারপর ও।।

সেঃ না ভাইয়া, আপনাকে আস্তেই হবে।।আপনি একদিন কম ঘুমালে ক্ষতি কি?? আপনি না আসলে আমি যাবই না প্রোগ্রামে...(কয় কি!! ছিনতাই কারী দলের মেম্বার নাতো?? আধুনিক ছিনতাইকারী???)
আমিঃ আচ্ছা, চেষ্টা করব...ওহহ আসল কথাই জানা হলনা।।তোমার সেলিব্রেশন বললে...কি সেলিব্রেশন সেটা বললে নাতো...

সেঃ ভাইয়া,সেটা আপনি এলেই দেখতে পারবেন...আজ রাখি, আমি আপনাকে সকালে ঘুম থেকে তুলে দিব।খোদা হাফেজ।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।ভাল থেক। খোদা হাফেজ।

দিন যায়, আর টেনশন বাড়ে...কিসের প্রোগ্রাম, কেমন প্রোগ্রাম, ভেবে কুল কিনারা পাওয়া যায় না...বুঝিনা, আমাকে তো সে চেনেই না ধরতে গেলে...তাহলে কেন আমাকে আসার জন্যে এত জোর করছে?? তাহলে কি আমার বিশ্রি গলা শুনে প্রেমে পড়ে গেল??নাকি বড় কোন ছিনতাইকারী দলের সদস্য, নাকি বাজে টাইপ মেয়ে?? অনেক চিন্তা করেও কোন সমাধান পাচ্ছি না। যতই দিন যায়, দুস্চিন্তা বাড়ে...আর কি যেন এক অমোঘ আকর্ষন টানে আমাকে...কিসের সে টান??? এ টান কি অচেনা এক তরুনী কে জানার জন্যে ছন্নছাড়া যুবকের টান, নাকি যৌনতাকাতর অন্য সব পুরুষের মতই মাংসের স্তুপের প্রতি লোভী পুরুষের টান?? যত যাইহোক, দিনশেষে, সকল পুরুষই তো পুরুদস্তুর পুরুষ হতে চায়। আমি কি তার ব্যতিক্রম ছিলাম কখনো?? নাকি যতটুকু আমার ভিন্নতা ছিল তার সবটুকুই ছিল অভিনয়???

অবশেষে সেদিনটি চলে এল।। যাব না, যাব না ভেবেও আমি পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। কি পড়ে যাব, কিভাবে যাব ইত্যাদি ঠিক করে রেখেছি আগের দিন রাতেই। পরদিন সকালেই ৮টা বাজতে না বাজতেই যথারীতি বেজে উঠল আমার মুঠোফোন।। ওপাশে ব্যস্ত, উদ্বিগ্ন সেই তরুনীর কন্ঠ...
সেঃ ভাইয়া , আপনি কই?? এখনো ঘুম থেকে উঠেন নি?? এদিকে দেরি হয়ে গেল যে??
আমিঃ ওহহহহ...আমারতো মাত্র ঘুম ভাঙল।।ঠিক আছে।।আমি আসছি...

সেঃ ভাইয়া, তাড়াতাড়ি আসেন...আমার সেলিব্রেশন শেষ হয়ে গেলে আপনি এসেতো লাভ নেই।
আমিঃঠিক আছে, ঠিক আছে...আসছি...

এরপর অচেনা সেই যুবতীর মন রাখার জন্যে শুরু হয়ে যায় আমার প্রচন্ড ব্যস্ততা।। ফ্রেশ হয়ে, দ্রুত কাপড় চেঞ্জ করে, কোন রকম নাস্তা মুখে দিয়েই ছুটলাম রহস্যময়ীর আহবানে সাড়া দিব বলে...এরমধ্যে একটু পরপর ই বেজে উঠছে সেই রহস্যময়ীর ফোন।। ভাইয়া, আপনি কই, আর কতক্ষন, এত দেড়ি হচ্ছে কেন, অনুষ্ঠানতো শেষ হয়ে গেল, এখনো আসছেন না কেন, ইত্যাদি ইত্যাদি।।

অবশেষে ঢাকা শহরের দুর্বিষহ জ্যাম ঠেলে,ঘর্মাক্ত কলেবরে হাজির হলাম গিয়ে আমি তার দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী সেই মিলনায়তনে।। বুকে দুরুদুরু আশা, কোন এক রাজকুমারী অপেক্ষা করছে আমার জন্যে।। তার সাথে কি কি কথা বলব, কোথায় তাকে খেতে নিয়ে যাব ইত্যাদি ইত্যাদি ভেবেই আমি সারা... তাকে সারপ্রাইজ দিব বলে ফোন না দিয়েই ঢুকে গেলাম মিলনায়তনে।
---কিন্তু একি???? কি দেখছি আমি????তাহলে বুঝি এই ছিল তার মনে?? এই তার সেলিব্রেশন প্রোগ্রাম??? এর জন্যেই এতদিন পর তার আমাকে মনে পড়া?? এরজন্যেই আমাকে পাগলের মত আমাকে তার এ ফোন দেয়া??

ব্যথিত হৃদয়ে ধীরে ধীরে আমি বের হয়ে আসলাম সে মিলনায়তন থেকে।। মুঠোফোনটি বন্ধ করে দিলাম বের হয়ে...আর উদাসী হয়ে ঢাকার ব্যস্ত রাস্তায় হেটে চললাম আপন গন্তব্যের দিকে...

পেছনে পড়ে রইল সেই রহস্যময়ী মেয়েটি, সেই কোলাহল মুখর মিলনায়তন, আর আমাকে ব্যঙ্গ করা সে ব্যানার, যেখানে লেখা ছিল, "সেলিব্রেশন প্রোগ্রাম এবং সেমিনার, ডেসটিনি, ২০০০"।

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১১:৫০
৮টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×