-গাড়িটা একটু থামাবেন?
-গাড়ি কি আদৌ চলছে? যাও নেমে পড়ো।
-না সেটা না।আপনি এতক্ষন ধরে ড্রাইভ করছেন তাই ভাবলাম আপনার একটু রেস্ট দরকার।
-গাড়ি ড্রাইভ করতেছি আমি আর টায়ার্ড হলে তুমি।প্রেমে টেমে পড়ো নাই তো?
-কি যে বলেন না।
আকিবের এটা দ্বিতীয় মুভি।ভালো একটা ভৌতিক মুভি করার চেষ্টা করছে।তবে প্রথমটি তেমন সফলতার মুখ দেখেনি।ব্যর্থতা জীবন থামিয়ে দিতে পারেনা।তাই এই মুভিটা নিয়েও সে খুব মনোযোগী।
গ্রামের একটি পুরাতন কবরস্থানে দিন রাত যাপন করা একটি মেয়ের জীবনযাপন নিয়ে গল্পটা।চরিত্রের জন্য মেয়ে খুজতে অনেক সময় যায়।কিন্তু ফেসবুকে পরিচয় হয় টিভিতে কয়েকটি অ্যাড করা “সারার” সাথে।আজ সারাকে নিয়ে একটি গ্রামে যাচ্ছে শুটিং লোকেশান দেখতে।মাঝরাতে কবরের পরিবেশ দেখবে।
-আপনি হটাত ভূতের মুভি বানাচ্ছেন যে?
-কে বলল ভূত? মানুষ জানে ভূতের মুভি।কিন্তু হতে পারে সেই ভূত আবার প্রেম করছে আরেক ভূতের সাথে।তাইলে একদিক থেকে তো এটা প্রেমের মুভিও হল।
-এ ধরনের মুভি চলবে?
-নাহ।
আকিবের কাছ থেকে “না” শুনে একটু অবাক হল সারা।এই লোক আসলে কি? নিজেই কি ভূত নাকি?
হটাত মায়ের ফোন আকিবের ফোনে।মা ঢাকায় আসতেছে হুট করেই।তার ফ্ল্যাটেই উঠবে।এভাবে না বলে মা চলে আসাতে একটু ভয়ই পেল আকিব।তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থামিয়ে বাসায় তার কেয়ারটেকার কে ফোন দিয়ে বলল সব পরিষ্কার করতে।বাসার এক কিলোমিটার আশেপাশে যাতে কোন সিগারেট না থাকে সেটার উপর জোর দিল।
-সারা আজ আর যাওয়া হবেনা।রাতের বেলায় শুটিং স্পটটা দেখার সৌভাগ্য হলনা।হুট করে মা ঢাকায় চলে এলেন।এখন আমার মৃত দেহ হলেও মাঝরাতের আগে ঢাকায় পৌছতে হবে।
-এত ভয় পান?
-হা।
বগুরা হাইওয়েতে গাড়ি চলছে ৮০ কিলো বেগে।“সারা” গাঁ এলিয়ে হতাশ ভঙ্গীতে মনে মনে বলছে এই ছিল আমার কপালে।
এই রকম ডিরেক্টরই ছিল!
আকিব একটা সিগারেট ধরিয়ে সারাকে বলল স্ক্রিপ্টটা দেখো।চরিত্রটা বুঝার চেষ্টা করো।শুধু শুধু মন খারাপ করে বসে থেকে কি হবে।ঠিক তখনও রাস্তার একটু দূরে এক মেয়ে ইশারা দিচ্ছে গাড়ি থামাতে।“সারা” বলে যাচ্ছে না থামাবেন না।কিন্তু আকিব থামাল।
-আমাকে ঢাকা নিয়ে যান প্লিজ আমাকে ঢাকা নিয়ে যান।
আকিবঃ-আপনি ছিনতাইকারী না তো?
সারাঃ-(আস্তে করে) গাড়ি চালিয়ে যান।এটা ফান করার টাইম না।
আকিবঃ-আচ্ছা উঠুন।পেছনের ৩ টা সিটই খালি।তবে ১০০ টাকা দিতে হবে।
মেয়েটি বলল তার কাছে কোন টাকা নেই।
-নেই তো কি? ঢাকায় গিয়ে দিবেন।
সারা মেজাজ খারাপ করে বসে আছে।এই লোকের সাথে ঘুরলে বিপদ, আরও বাড়বে।ঢাকা যে কখন যাবো।মেয়েটির নাম হল “পূর্ণি”।
-কি ব্যাপার বলুন তো এভাবে এই রাতে রাস্তায় আপনি?
-আপনার কাছে পানি আছে?
-খাদ্যদ্রব্যের মাঝে শুধু সিগারেট আছে।সারার কাছে মনে হয় আছে।
সারার কাছ থেকে পানির বোতল নিয়ে এক ঢুকে অনেক খানি পানি খেয়ে নিলো।অতঃপর বলতে শুরু করলো তার বিপদের কথা।
জীবনের বাকা পথে তার জীবন আজ বিপথে।নিজেকে পতিতাবৃত্তিতে জড়িয়ে ফেলে প্রতিনিয়তই এ ধরনের বিপদে ফেলে।আকিব বলল “আপনি এ কথা গুলি তো লুকিয়েও রাখতে পারতেন”।
পূর্ণিঃ-আপনারা আমাকে বিশ্বাস করে গাড়িতে তুলেছেন।আমার আর কিসের ভয়।বিশ্বাসীদের সামনে আমি ভয় পাইনা।ভয় হয় সমাজের মুখোশধারী মানুষদের।
আকিব সারার দিকে তাকিয়ে একটা চাহনি দিল যাতে বুঝা গেল আকিব গাড়িতে পূর্ণিকে তুলে সারাকে ভুল প্রমাণিত করেছে।কিছুক্ষনের মাঝেই পূর্ণি ঘুমিয়ে গেল।
-সারা একটা গান গাও।
-এখন মুড নেই।আর নায়িকাদের কি গায়িকা বানাতে চান নাকি?
-নায়িকা বল কেন? আমার মুভিতে নায়ক ফায়ক থাকেনা।প্রতিটি চরিত্রই দামি।ফুটবলের ১১ টা প্লেয়ারের মতো।যে কেউ ভালো করতে পারে।আর গান না গাইলে আমি কিন্তু এমন এক গান ছাড়বো যেটা তোমাকে সোজা নাক কান গলা বিশেষজ্ঞর কাছে নিয়ে যাবে।
সারা গাইতে শুরু করলো
“শুনো গো দখিন হাওয়া প্রেম করেছি আমি……….”
মেয়েটা ভালো গান গায়।নায়িকা হওয়ার জন্য নিজের অনেক প্রতিভাকেই কবর দিয়েছে সে।তার গান শুনে ঘুম থেকে উঠে পূর্ণি।
উঠে সামনে তাকাতেই দেখেই পুলিশ চেকপোস্ট।আকিবকে ব্যাপারটা বলে।একটু দুশ্চিন্তায় পরে যায় আকিব।গাড়িতে ২ টি মেয়ে,তার মধ্যে পূর্ণি নামের এক পতিতা।পূর্ণির কোন মাস্টার প্ল্যান আছে নাকি?
সারা আবার বলে যাচ্ছে গাড়ি থামাবেন না…………..
তানভীর মাহমুদল হাসান
২৩-০৩-২০১৩