somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সৌম......

২৯ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

……বলা নেই কওয়া নেই হুট করেই বৃষ্টি নেমে এলো।রাত ৩ টার দিকে আয়,কিন্তু না এই সুন্দর বিকালেই আসতে হল।ভিজে ভিজে বাসায় যাবার মুড নেই।কোথাও অপেক্ষা করার ও মুড নেই।বৃষ্টির জন্য কেনই বা অপেক্ষা করবো?
মুখের কাছে সিগারেটে নিয়ে এসে টান দিতেই বুঝা গেল যে না আজ আর বৃষ্টির সাথে পারা যাবেনা।অন্তত সিগারেটের সুস্থতার জন্য হলেও কোথাও একটু থেমে থাকা উচিত।ছোট একটি মার্কেটের সামনে দাঁড়ালাম।অনেক মানুষ দাড়িয়ে আছে যাদের শরীরে একটু হলেও বৃষ্টির ছোঁয়া লেগে আছে।কারও চুলে একটু কারও আবার জামায় একটু।বৃষ্টি ছুঁয়েছেই সবাইকে।তবু সবার চোখে মুখে আতংক।কখন যাবো বাসায়? কখন গরম বিছানায় শরীর ছেঁড়ে দিয়ে আরাম করে ঘুম দিবো?
এসব ভাবতে ভাবতেই হুট করে পেছন থেকে এক মেয়ে নক করে জানতে চাইল ছাতা আছে কিনা আমার কাছে।চশমার ফাক দিয়ে তাকে চেনা যাচ্ছেনা।চশমাটা খুলে তার দিকে তাকালাম।কে যেন মেয়েটা? বাংলাভিশন,এনটিভি,বৈশাখী!! কোথায় দেখেছি তাকে?
এসব ভাবতে ভাবতেই মেয়েটি জোরে চেঁচিয়ে বলল
-‘ভাইয়া আমি “শারলী”,আপনার পাশের দুই বাসা পরে থাকি।ঐ যে একদিন আপনার পেপার থেকে নকশা লুকিয়ে রেখেছিলাম।
ও আচ্ছা মনে পরেছে বলে চুপ থেকে গেলাম।আসলে তাকে মনে পড়তে সময় লাগবে।ইদানীং মাথাটা একটু এলোমেলো হয়ে গেছে।অনেকটা আমার ল্যাপটপের ভাইরাস যুক্ত সি ড্রাইভের মত।
-ছাতা নেই।আমার কখনও ছাতা ছিলও না।চল একটা কিনে ফেলি।
-থাক ভাইয়া কিনতে হবেনা।বৃষ্টি কমলেই চলে যাবো।
-আচ্ছা ছাতার দাম কত? অনেক দাম?
-আপনি ছাতার দামও জানেন না? চশমা পরা ছেলেদের আমার অনেক জ্ঞানী মনে হয়।
-তো তুমি চশমা নিয়ে নাও।
-নাহ চশমা পরা মেয়েরা জানি কেমন হয়।তাছাড়া সুন্দর চোখে চশমা পড়তে নেই।
-তোমার চোখ সুন্দর?
-অবশ্যই।
কথা বলতে বলতে বুঝা গেল এই মেয়ের সাথে আর কিছুক্ষণ কথা বললে আমার ৫ বছরের স্মৃতি মাথা থেকে চলে যাবে।কারণ ও একটার পর একটা জাগতিক জীবনের কথা আমার ব্রেনে পুশ করতে চাইছে।যেটা আমার জন্য খুবই পেইনফুল।
মেয়েটি কিছুক্ষণ চুপ করে দাড়িয়ে আছে।তার সাথে এখন আর কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছেনা।আসলে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝা গেল ওর চোখ এতটা সুন্দর না যতটা ও ভাবে।ওর সব থেকে সুন্দর হল ওর ঠোঁট জোড়া।কিন্তু মেয়েরা ঠোঁটের প্রশংসা কমই করে।হয়তো ভাবে ঠোঁটের সৌন্দর্য নিয়ে কথা বললে কেউ জোর করে চুমু দিয়ে দিবে।
-চলুন রিকশা নিয়ে চলে যাই।
-আচ্ছা চলুন।
মেয়েটি রিকশাকে বলল নিকেতন যাবে।আচ্ছা আমিতো নিকেতন থাকিনা।তবু রিকশায় উঠলাম।জানিনা কেন যাচ্ছি।
-আমরা নিকেতন যাচ্ছি কেন?
-আপনি নিকেতন ৩ নাম্বার ব্লকে থাকেন তা কি ভুলে গেছেন?
-তুমি কিভাবে জান?
-বা রে আমি জানবো না!! প্রতিদিন বিকালে আপনাকে একা বসে থাকতে দেখি ছোট জলপাই গাছটার নিচে।
-মেয়েটির কথা শুনে মনে হচ্ছে সে ঠিকই বলছে।তাকে বিশ্বাস করা যায়………

…………জলপাই গাছটি আমার সাথে বসে আছে।কাল শারলী আমাকে মনে করিয়ে দিল আমি বিকেলে জলপাই গাছের নিচে বসি।আমরা দুজন পাশাপাশি বসে থাকি সেটা ও বলল না।সে গাছ থেকে আমাকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছে।
শারলী আমার কাছে ২০ টাকা পায়।কাল রিকশা ভাড়া ঐ দিয়েছিল।এখন আমি এই মেয়েকে কি করে পাবো? এই এলাকায় আমি চিনি শুধু একজনকেই।তিনি আবার ৬০ ঊর্ধ্ব এক বন্ধু আমার।নাম কর্নেল ভাইয়া।আমি কর্নেল ভাইয়া ডাকি।কর্নেল এর পর ভাই ডাকতে গেলে সবার খটকা লাগা স্বাভাবিক।আমার লাগেনা।তিনিই আমার বন্ধু।কর্নেল ভাইয়া এখানে আসলে তার কাছ থেকেই জানা যাবে মেয়েটির পরিচয়।না জানা গেলেও ক্ষতি নেই।তবু রিকশা ভাড়ার টাকাটা ফেরত না দিয়ে আমি স্বস্তি পাচ্ছিনা।টাকা জিনিসটা ব্যাংকেই মানায়।আমার হাত থেকে তার হাত হয়ে শুধু শুধু ঘুরে।এত ঘুরাঘুরির কি দরকার আমি বুঝিনা!!!!
কর্নেল ভাইয়া এসেই আমার পিঠে হাত রাখল।
-কি “সৌম” এত চিন্তা করতেছ আজ? খুবই ভাবুক হয়ে আছো?
আমার নামটা এই একজনই ঠিক ভাবে বলতে পারে।সৌম বলতে গেলে অনেকে সোমা সুমি বলে ফেলে যেটা আমার জন্য দাত কিড়মিড় টাইপের মেজাজ খারাপের অবস্থা হয়ে দাড়ায়।
-কেমন আছো তুমি।পড়াশোনা কেমন চলছে?
-এখন আর পড়িনা।ডাক্তার বলছে আমার বর্তমানের ঘটনা ভবিষ্যতে মনে থাকবেনা।তাই শুধু শুধু সময় নষ্ট করছিনা।
-ডাক্তার চেঞ্জ কর।
-আমাকেই চেঞ্জ করে ফেলি?
-হাহা।তোমার বয়স বেশি হলে ২৪।কিন্তু কথা শুনে মনে হয় তোমার জন্ম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়।
-তখন হলেই মনে হয় ভালো ছিল।পৃথিবীর এই মাঝামাঝি সময়ে এসে নিজেকে কেমন যেন মাঝ পথের পথিক মনে হয়।শুরু আর শেষে থাকার একটা মজা আছে।
এই একজনের সাথেই আমি মন খুলে কথা বলি।পরিবার পরিজন বন্ধু বান্ধব কারও কাছে আমি যাইনা।শারলীর কথাটা তাকে বলতেই তিনি বললেন “আবার টাকা ফেরত দিতে যাবা কেন?একদিন চা খাইয়ে দিও।একই এলাকার মেয়ে।আমাকে দেখলেই সালাম দেয়।হয়তো চা খাওয়ানোর পর তোমাকেও দিবে।
-আমি সালাম দিয়ে কি করবো?
-উত্তর দিবা।নাইলে পকেটে রেখে দিবা।
কথা বলতে বলতেই বললাম “চলুন একটু শারলীর বাসার দিকে হাটি।ওকে একটু ধন্যবাদ দিতে হবে।কাল আমি বাসায় আসতে পারতাম না,ও না থাকলে।আর রিকশা ভাড়াটাও দিয়ে আসি।”
শারলীর বাসা আমার বাসার দুই বাসা পরে।এই বাসা থেকে সবসময় কলকাতার সিনেমা লাল নীল মোজা কলি ফুল কলি টাইপের গান আসে।কয়েকদিন আমি বারান্দায় এসে তীব্র ভাবে তাকিয়েছি তাদের দিকে কিন্তু কোন ফল পায়নি।হয়তো ধমক দিতে পারলে আর এমন হতোনা।ধমক দেয়া রাগ করা এগুলা আমাকে দিয়ে হয়না।কিন্তু আমি চোখ দিয়ে মানুষের দিকে তীব্র মেজাজ খারাপ করে তাকাতে পারি।হুট করে শারলীকে তার বাসার সামনেই পাওয়া গেল।অনেক খোলা জায়গা তার বাসার সামনে।এমন খোলা জায়গা থাকলে আমি কখনও বাসার ভেতরেই যেতাম না।শারলী কেন যায়?
-আরে সৌম ভাইয়া,কর্নেল আঙ্কেল যে….
কর্নেল ভাইয়া বলেছিল মেয়েটি সবসময় তাকে সালাম দেয় কিন্তু আজ দিল না।আমি সাথে দেখে এমন করলো!!
-তুমি কালকে নাকি এই ভুলমনা সৌমকে এলাকায় নিয়ে আসছ? ও তোমাকে ধন্যবাদ দিতে এল।
-আমরা তো একসাথেই এলাম।অনেক বৃষ্টি নেমেছিল।সৌম ভাইয়াও ছাতা নেয়নি আমিও না।
কর্নেল ভাইয়া বেশি কথা বলছে।বেশি না তবে আমার থেকে বেশি।আমার থেকে মনে হয় সবাই বেশি কথা বলে।
শারলীর চোখ আজ অন্যরকম লাগছে।সে গতকাল বলেছিল তার চোখ সুন্দর কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে আজকে তার চোখ সুন্দর লাগছে।কালকে একদমই লাগেনি।
-আচ্ছা সৌম ভাইয়া আপনার সাথে কি জিন পরী আছে? এলাকার অনেকেই বলে।
কর্নেল ভাইয়া হেসে উঠলো। “কোন মেয়েই নাই তার পাশে আবার জিন পরী”
-হা আছে।তবে আমি জিন পরীর সাথে।তারা আমার সাথে নেই।
-একদিন দেখাবেন?
-দিনে না রাতে দেখাবো।
৩ জন হেটে চলছি রাস্তায়।৩ জন একসাথে হাঁটলে আমাকে কোন দিকে দিয়ে হাঁটতে হবে তা নিয়ে আমি একটু ইতস্তত বোধ করছি।কবে ৩ জন একসাথে হেঁটেছিলাম তা আমার মনে নেই।আর সাথে একটি মেয়ে।একটু পর পর আমার দিকে তাকিয়ে এক একটা উদ্ভট প্রশ্ন করে।তার পরের প্রশ্নটি হতে পারে
“আপনি কি শিং মাছ কাটতে জানেন?”
এরকম বন্ধুত্ব মায়া থেকে আমি একটু দূরে থাকি।সব কিছু মস্তিস্ক থেকে হারিয়ে যায় কিন্তু মায়া হারায় না।তবে কি মায়ার অবস্থান অন্য কোথাও?
সন্ধ্যা হয়ে আসছে।টুং টাং শব্দ হচ্ছে চায়ের দোকানে।সকালে এই দোকানদারের কাছে আমি ৫০০ টাকা রেখে গিয়েছিলাম এখন মনে হল।সিগারেট কিনতে এসেছিলাম কিন্তু ভাংতি টাকা ছিলনা।তাই বলেছিলাম রেখে দেন ৫০০ টাকা,পরে নিবো।ওর দোকানের সামনে যেতেই ও আমাকে টাকা ফেরত দিল।আমি ভাংতি ২০ টাকা শারলীর হাতে দিতে চাইলাম।
সে আমার দিকে তীব্র রাগান্বিত ভাবে তাকালো তার সুন্দর চোখ দুটি দিয়ে।
এমন কাজটি করা আমার মোটেও ঠিক হয়নি………….
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×