পার্কের ধারে বাদাম খেয়ে খেয়ে খোসা গুলি পানিতে ফেলে দিচ্ছি।নৌকার মত পানিতে খোসা ভাসছে।এই নৌকার কি নাম দেয়া যায়?
টাইটানিক থেকে বাদাম-নিক? না আজ আর নাম দিতে ভাল লাগছেনা।তার চেয়ে বরং একটু ঘুরে আসি মিনার ভাই এর বাসা থেকে।তার বাসায় জগতের সব দুশ্চিন্তা রেখে চলে আসা যায়।তিনি মানুষের দুশ্চিন্তা পুষে রাখেন।এতে কি সুখ পান আমি জানিনা।হটাত পিছন থেকে ডাক এল।
-এই যে আপনার…….
আপনার এর পর কি বলল শুনা গেল না।পিছনে থাকাতেই দেখি এক মেয়ে আমার ফোন নিয়ে দৌড়ে আসছে।
-আমার ফোন আপনার হাতে?
-আপনি ওখানে ফেলে এসেছিলেন।তাই দিতে এলাম।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
-আচ্ছা ঠিক আছে মানে? কোন থ্যাংকস দিবেন না? আমি যদি ফোন টা নিয়ে গিয়ে বেচে দিতাম।
-বেচে না দেওয়াটা স্বাভাবিক।তাই বাড়তি আপনাকে কেন শুধু থ্যাংকস দিবো?
-ইন্টারেস্টিং।
-ঠিক আছে।যাচ্ছি।
বেশি কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছেনা।আজকাল ক্রাইম কেই স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে ধরে মানুষ।ফোন পেলে ফোন বেচে দেয় রাস্তায় কেউ আহত হয়ে পরে থাকলে তাকে সাহায্য করেনা।
-এই যে…..
আবারও পেছন থেকে ডাক এলো।
-কি ব্যাপার আপনি কি আবার আরেকটা ফোন দিবেন?
-আপনার একটা ছবি তুলবো।
-কেন?
-আপনাকে একটু অস্বাভাবিক মনে হয়েছে তাই।আমার সংরক্ষণে রেখে দিবো।
-কিইইই?
-প্লিজ রাগ করবেন না।
এ কথা বলেই আমার হাত ধরে একটু সাইডে নিয়ে একটা ছবি তুলল।আর যাবার পথে একটা কার্ড দিল তার।সে পেশায় একজন ডাক্তার।
-আপনি ডাক্তার?
-হু।
-তবে ডাক্তার থেকে বেশি আগ্রহ আমার মানুষ সম্পর্কে জানতে।
-এই জন্য এই পার্কে হাঁটাহাঁটি?
-আরে না আমি চেম্বারে বসি।
-ছবির নিচে আপনার কি নাম লিখবো?
-অনির্বাণ।
-এত কঠিন নাম কেন?
-নাম কি কঠিন তরল বায়বীয় হয়?
-আচ্ছা যাই হোক আপনি একদিন আসবেন।কফি খাওয়াবো।
ডাক্তার কখনও কফি খাওয়ানোর দাওয়াত দেয় আমার জানা ছিল না।তবে তার কাছে মনে হল আমি অস্বাভাবিক।অস্বাভাবিক বলতেই যে মানসিক বিকারগ্রস্ত তা কিন্তু না।
মিনার ভাই এর বয়স ৩৫।মাস্টার্স শেষ করে তিনি এমনিতে আর ঘর থেকে বের হন না।তিনি আবার বাড়ির মালিক।যা টাকা পান তা দিয়ে তার চলে।সিগারেট জালিয়ে গীটারে টুং টাং করছেন।আমি যেতেই বললেন তার সিগারেট জ্বালালেই আজকাল খুব ঠোঁট জ্বলে।
-সিগারেট এর সামনের দিক কি ঠোঁটে নিয়ে আসেন?
তিনি সিগারেটটা হাতে নিয়ে দেখলেন।না ঠিক ভাবেই ধরায়।
-আচ্ছা মিনার ভাই নিরপেক্ষ মানে কি?
-একদম ঠিক সংজ্ঞা তোকে বলতে পারবো না।তবে জেনে রাখ আমার গীটারের ৬ টা তারই নিরপেক্ষ।তোর হাতে গেলেও বাজবে আমার হাতে গেলেও বাজবে।
-ডাক্তার দেখাবা?
-ডাক্তারের কাছে গিয়ে কি দেখাবো?
-তোমার শরীর।
-কি হইছে তোর আজকাল।
-তোমার ঐ ঠোঁট জ্বলা সমস্যার সমাধান হবে।আজকেই একজন ডাক্তারের সাথে পরিচয় হয়।অনেক বড় ডাক্তার কিন্তু বয়স একটু কম।
-কম বয়সী ডাক্তার কম বয়সী লেখক আমার ভাল লাগেনা।
মেয়েটির কার্ড বের করলাম।কার্ডের উপরে নাম লেখা “আফিফা চৌধুরী”।ফোন করতেই চিনতে পারল।বললাম আজকেই আবার দেখা করতে চাই।তিনি আজ দেখা করতে বলছেন।কিন্তু চেম্বারে না তার এক পরিচিত রেস্টুরেন্ট এর ছাঁদে।
-আমি তো এসব রেস্টুরেন্ট এর ছাঁদে যাই না।
-যান না তো আজকে যাবেন।
-আমি কিন্তু রোগী না।রোগী আমার এক বড় ভাই।মিনার ভাই।
-সাথে কিন্তু আপনিও আসবেন।
যে রেস্টুরেন্ট এর ছাদের কথা বলল সেখানে পৌছতেই দেখি আফিফা চৌধুরী হাজির।মিনার ভাই শেষ সময়ে বললেন তার ঠোঁট একদম ফিট।দুটি নারীকে নাকি এখন একসাথে চুম্বন করা যাবে।তাই আর ডাক্তার দেখাবেন না।আমাকে একাই আসতে হল।
জিন্স আর টিশার্ট পরে আফিফা আসছে।এই পোষাকে এই প্রথম কোন ডাক্তার দেখলাম।
-হাই অনির্বাণ।
-হ্যালো।
-আচ্ছা আপনাকে প্রথমেই বলে দেই আমি আসলে ডাক্তার না।আমি বিবিএ স্টুডেন্ট।আমি মাঝে মাঝে ইন্টারেস্টিং লোকদের সাথে মিশতে চাই নানান পরিচয়ে।
-আজকে যাবার পর কি আরেকটা কার্ড দিয়ে বলবেন আপনি ইঞ্জিনিয়ার?
-হাহা না আজ আর না।
চুপ করে দাড়িয়ে আছি।আফিফা একটা সিগারেট ধরাল।তার নামটা মনে হচ্ছে তার আসল নাম না।আবার তার নাম জানতেও ইচ্ছে হচ্ছেনা।মেয়েটার সাথে এখন কথাই বলতে ইচ্ছে হচ্ছেনা।সুন্দরী একটা মেয়ের সাথে যখন কথা বলতে ইচ্ছে না হয় তখন আসলে জগতের সবচেয়ে বাজে সময় পার করি।
হুট করেই আমাকে টান দিয়ে দূরে নিয় গেল।সোফায় বসে আছে তার বাবার বয়সী একজন।তার সামনে নিয়ে যেতেই আফিফা বলে যাচ্ছে।
-ডেড যার কথা তোমাকে বলেছিলাম এই সেই ছেলে।
আমি একটু অবাক হলাম।আমাকে কিভাবে চেনে।ভদ্রলোক আমার সাথে হাত মেলালেন।বললেন আমার সাথে নাকি অনেক কথা আছে।সম্পূর্ণ জীবনের ব্যাপার।তাই নাকি অনেক কথাই বলতে হবে।কি নিয়ে কথা হবে বলতে গেলেই আফিফা আমাকে টান দিয়ে নিয়ে আসলো।আমি বললাম চলে যাব।
-চলে যাবা কেন? বিয়েকে ভয় পাও নাকি?
-বিয়ে?
-হু তোমাকে বিয়ে করবো।
-আমাকে চেন তুমি?
-হা সেদিন যখন পানিতে বাদামের খোসা ফেলছিলে তখন তোমাকে দেখেছি গভীরভাবে।আর তোমার মোবাইলটা আমি নিজেই লুকিয়ে তোমাকে আবার দেই।আমার এই টাইপের ছেলে আজব ছেলে খুব ভালো লাগে।
-আজকে একটু যাই?
-যাও।কিন্তু মনে রেখ পালাতে পারবেনা।বাবা বড় পলিটিশিয়ান।
মাথা ঘুরপাক খাচ্ছে।কি বিপদে পরলাম? রাস্তার বিল্ডিং গুলিকে মনে হচ্ছে এই বুঝি ভেঙ্গে ভেঙ্গে পরবে।মিনার ভাইকে ফোন দিয়ে বললাম কি করা যায়।
-আমাকে একদিন নিয়ে যা মেয়েটার কাছে।ওর বিয়ের স্বাদ মিটিয়ে দিবো।
-আরে ভাই এখন কি করবো? ফোন অফ করে দিবো?
-আয় বাসায় আয়।
মিনার ভাই এর বাসায় যেতে না যেতেই আফিফার ফোন।
-এই তুমি কই?আমি তোমার মেসের সামনে।
-কি? মেসের ঠিকানা কই পেলা?
-ঠিকানা পাইনি।তবু চলে এসেছি।
-তুমি আসবা না আমি ভেতরে ঢুকবো?
মেসের কাছে যেতেই দেখি আফিফা দাড়িয়ে আছে।রাত হয়েছে।একটি মেয়ে আমার পেছনে হুট করে কেন এভাবে লেগে গেল? কি চায় ও?
তাকে হাত ধরে টেনে একটু দূরে নিয়ে এলাম।এই রাতে ওকে রুমে নেয়া যাবেনা। আফিফা বলে উঠলো তোমার রুমমেট নেই আমি জানি।চল ভেতরে যাই।
-আমার পেছনে কেন লেগেছ? এটা আমি জানিনা।
শক্ত ভাবে ওর দিকে তাকালাম।যদিও কখনও আমি আমার চাহনীকে শক্ত করতে পারিনা।ও কেঁদে কেঁদে বলা শুরু করল।
-তুমি জান আমার কেউ নেই?
-আমি তোমাকে কি করে জানবো?
-তুমি জানো এক বাবা ছাড়া আমার কেউ নেই? আর বাবার ব্যবসা ছাড়া আর তার কেউ নেই?
-নাহ।
-তুমি জানো তোমাকে আমি পার্কে অনেকদিন ধরে ফলো করি? তুমি জানো তোমার চোখে আমি একই দুঃখ দেখি? তুমি জানো তুমি তোমার ভেতরের কান্নাকে আমি নিজের কান্না মনে করি?
-আফিফা,আমি কিছুই জানিনা।
-আমি আজ তোমার সাথেই থাকবো।
-চল তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি।
-বাসায় কেউ নেই।বাবা কখনও খেয়াল রাখেন না আমি কই থাকি না থাকি।
-বাসায় কেউ থাকুক না থাকুক তুমি এখন বাসায় যাবা।
আমি সিএনজি ডাকতে যাব তখনই সে বলে আমি গাড়ি নিয়ে আসছি।
আফিফা গাড়ি ড্রাইভ করছে।হটাত সে আবার চুপ হয়ে গেল।এখন আমারও কেন জানি খারাপ লাগছে।তার মানে কি আমিও তার এই চাওয়াটাকে উপভোগ করছিলাম।নীরবতার অবসান ঘটিয়ে আফিফা বলে উঠলো আমি কি তোমাকে খুব বিরক্ত করেছি?
-না তা না।
-মাঝামাঝি কোন কথা বলবানা।হ্যাঁ অথবা না।
-হ্যাঁ করেছো।
-আমি সরি।আচ্ছা যাও তুমি নেমে যাও।আমি বাসায় যেতে পারবো।
ওকে এখন আর একা ছাড়তে ইচ্ছে হচ্ছেনা।যেকোনো কিছু ও ঘটাতে পারে।
-তোমার বাসার পাশেই আমার এক ফ্রেন্ড এর বাসা আছে সেখানে নামিয়ে দিও।
আফিফা মুচকি হাসি দিয়ে বলল তুমি কিন্তু আমার বাসা চেননা ।কিন্তু আমার জন্য তোমার একটু হলেও কেয়ার আছে দেখে ভালো লাগলো।
আমি ভালোবাসা না একটু কেয়ারই চাই অনির্বাণ।
দুই দিন হয়ে গেল আফিফার কোন খবর পাচ্ছিনা।মিনার ভাই এর বাসায় শুয়ে আছি আর কি করা যায় ভাবছি।এটাই কি স্বাভাবিক আচরণ না? ও আসলেই তো আমার সমস্যা বেড়ে যায়।তার ফোন বন্ধ।তার বাসা চিনি আমি।কিন্তু কিভাবে তার বাসাতে যাই।মিনার ভাই এক প্ল্যান বের করলেন তিনি বাসায় যাবেন।গিয়ে বলবেন তিনি এক অনলাইন কোম্পানি থেকে বই নিয়ে এসেছেন যেটা আফিফা আগেই অর্ডার দিয়ে রেখেছিল।বললাম এগুলা করার কোন দরকার নেই।তিনি বলে যাচ্ছে তুই বল কি বই নেয়া যায়? বললাম নিয়ে যাও একটা।
-উচ্চ মাধ্যমিক এর পদার্থ বিজ্ঞান নিয়ে যাব?
-জয় গোস্বামীর একটা কবিতার বই নিয়ে যাও।
-গুড আইডিয়া।
তাকে বলে দিলাম বেশি কথা না বলতে।শুধু দেখে আসতে তার বর্তমান অবস্থা কি।আমি দূরে দাড়িয়ে আছি।মিনার ভাই ভেতরে গেলেন বই হাতে নিয়ে।বের হলেন বিধ্বস্ত চেহারা নিয়ে।সিগারেটে জোরে জোরে টান দিতে দিতে বললেন একটা পিস্তলে দাম কত রে?
-জানিনা।
-কি হইছে?
-তুই কি এখনও বোকা থাকবি?
-এই মেয়ে প্ল্যান করে তোকে বোকা বানিয়েছে।
আমি যেতেই বলে অনির্বাণ কে বলবেন অনেক মজা পেয়েছি।মাঝে মাঝে এমন করি কিছু বোকা বোকা ছেলে সিলেক্ট করে।একটা থাপ্পড় মেরে আসলাম।
-কিইই?
-হ।
-ভালো করছিনা?
-কেন করেছ এই কাজ?
-তুই মন খারাপ করে দুইদিন আমার ঘরে পড়ে থাকবি এক মেয়ের জন্য আর সেই মেয়ে কিনা এমন কথা বলে।ওকে বিকেলে এসে খুন করবো।পিস্তলের খুজ নে।
আমার কেন জানি মন খারাপ লাগছেনা।প্রতিশোধ ব্যাপার গুলিও আমার মাঝে নেই।বিধাতা কিছু কিছু জিনিষ আমার ভেতরে কম দিয়েছেন।কিন্তু এই সব ব্যাপার ঘটে গেল যা আমাকে একটু অন্যরকম এর আনন্দে দিয়ে গেল।একটা মেয়ে অসম্ভব সুন্দর করে ভালোবাসা মাখিয়ে কিভাবেই না আমাকে বোকা বানাল।আফিফার মোবাইলে একটা ম্যাসেজ পাঠালাম
“তুমি কিন্তু ইন্টারেস্টিং”
রিপ্লাই আসলো “ইয়া আই এম,এন্ড আই এম সরি”
“ভালোবাসার অভিনয়ের জন্য সরি বলতে নেই,এই অভিনয় সবাই করে।থাপ্পড়ের জন্য আমি সরি”
তানভীর মাহমুদুল হাসান