Flag of the Gambia
গাম্বিয়া প্রজাতন্ত্র
রাজধানী: বাঞ্জুল
বৃহত্তম শহর: সেরেকুন্দা
সরকারি ভাষা: ইংরেজি
সরকার: প্রজাতন্ত্র
রাষ্ট্রপতি: অ্যাডামা ব্যারো
স্বাধীনতা: যুক্তরাজ্য থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৫
প্রজাতন্ত্র ঘোষিত: ২৪ এপ্রিল, ১৯৭০
আয়তন: ১০,৬৮৯ বর্গ কিলোমিটার / ৪,০০৭ বর্গ মাইল
জনসংখ্যা: ১৮,৮২,৪৫০
মুদ্রা: ডালাসি
মুদ্রার মান: ৫২.২৫ গাম্বিয়ান ডালাসি = ১ মার্কিন ডলার (তারিখ: ১২-১২-২০১৯)
ব্যাংক নোট: ৫, ১০, ২০, ৫০, ১০০ ও ২০০
বিমান বন্দর: বাঞ্জুল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট
সমুদ্র বন্দর: পোর্ট অব বাঞ্জুল
গাম্বিয়া (রাষ্ট্রীয় নাম গাম্বিয়া প্রজাতন্ত্র) প্রগতি, শান্তি ও উন্নতি নীতিবাক্যে বিস্বাসী পশ্চিম আফ্রিকার একটি রাষ্ট্র। এটি আফ্রিকা মহাদেশের মূল ভূখন্ডের ক্ষুদ্রতম দেশ। উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে সেনেগাল দ্বারা পরিবেষ্টিত। পশ্চিমে রয়েছে আটলান্টিক মহাসাগর। গাম্বিয়া নদী দেশটির মধ্যভাগ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে পতিত হয়েছে। গাম্বিয়া সাগর উপকূল থেকে প্রায় মহাদেশের ৩২০ কিলোমিটার অভ্যন্তর পর্যন্ত চলে গেছে। তবে এর সর্বোচ্চ প্রস্থ মাত্র ৫০ কিলোমিটার। বন্দর শহর বাঞ্জুল দেশটির রাজধানী আর সেরেকুন্দা দেশের বৃহত্তম শহর।
Agriculture of Gambia
গাম্বিয়া একটি মৎস্যজীবী ও কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের অধিকাংশ মানুষই দরিদ্র। চীনাবাদাম এখানকার প্রধান উৎপাদিত শস্য। সেইসাথে এটি প্রধান রপ্তানিযোগ্য পণ্যও। এছাড়াও পর্যটন শিল্প থেকেও বেশ কিছু আয় হয়। কারণ, আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে অবস্থিত হওয়ায় সাগরের উপকূলের সমুদ্র-সৈকতে অনেক পর্যটক ঘুরতে আসেন। এছাড়াও সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এই দেশে প্রচুর পাখি রয়েছে। তাই পর্যটকরা পাখি দেখতেও ভীড় করেন এই দেশে এবং গাম্বিয়া নদীর বৈচিত্র ও মনোরম সৌন্দর্য্য দেখতে পর্যটকেরা গাম্বিয়াতে আসেন। দেশটির কিয়াং ওয়েস্ট ন্যাশনাল পার্ক পাখিদের অভয়াশ্রম হিশেবে বিবেচিত। অসংখ্য পাখি ছাড়াও বেবুনস, ওয়ার্টহগ, বুশবাবি, মার্শ মঙ্গুস সহ স্তন্যপায়ী প্রাণীদের আবাসস্থল। গাম্বিয়ার প্রধান সমুদ্রসৈকত কোটু। নানা ধরনের রেসিংয়ের জন্য জায়গাটি বিখ্যাত পাশাপাশি সামুদ্রিক মাছ ধরার ব্যবস্থা আছে। তাছাড়া প্রাচীন পাথর নিয়ে পূর্ব গাম্বিয়ায় গড়ে উঠেছে ওয়াসু স্টোন সার্কেলস। ১২০০ বছরের পুরোনো এই জায়গাটিকে প্রাচীন কবরস্থান মনে করেন অনেকে।
ইতিহাস:- ধারণা করা হয় যে নবম ও দশম শতাব্দীতে গাম্বিয়া অঞ্চলে আরব ব্যবসায়ীদের আগমণ ঘটে। দশম শতাব্দীতে মুসলিম বণিক এবং আলেমগণ পশ্চিম আফ্রিকায় বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন। তারা ট্রান্স-সাহারান বাণিজ্য রুট স্থাপন করেছিলেন, যার ফলে এ অঞ্চল থেকে সোনা ও হাতির দাঁতের রফতানি করা হতো। পাশাপাশি বিভিন্ন তৈরি পণ্য আমদানি করা হতো। আর এ কারণেই গাম্বিয়াতে ইসলামের প্রসার ঘটে। আর এভাবেই এক সময় ইসলামের ছায়াতলে আসে গাম্বিয়া। দেশটির অধিকাংশ মানুষ সুন্নী মুসলমান। তারা মূলত মালেকী মাযহাবের অনুসারী। তবে কিছু শিয়া মতালম্বীও রয়েছেন। গাম্বিয়া আন্তর্জাতিক বিষয়ে বিশেষত পশ্চিম আফ্রিকান এবং ইসলামিক বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে থাকে। যদিও বিদেশে দেশটির সীমাবদ্ধ প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। এর আগে লাইবেরিয়া এবং সিয়েরা লিওনের গৃহযুদ্ধের সমাধানে গাম্বিয়া সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে।
রাজনীতি: - গাম্বিয়া ১৯ শতকের দিকে একটি ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত হয়। ১৯৬৫ সালে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৯৪ সালে একটি রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গাম্বিয়ার রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করা হয় এবং সামরিক নেতা ইয়াহিয়া জাম্মেহ ক্ষমতা নেন। জাম্মেহ পরবর্তীতে গাম্বিয়ার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজয়ী হন। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে জাম্মেহ’কে পরাজিত করে জানুয়ারী ২০১৭ সালে অ্যাডামা ব্যারো গাম্বিয়ার তৃতীয় রাষ্ট্রপতি হন।
রোহিঙ্গা ইস্যু: - গাম্বিয়া রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ এনে জাতিসংঘে সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস বা আইসিজে-তে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে। এই অভিযোগে গাম্বিয়া বলেছে, রোহিঙ্গাদের উপর নৃশংস সামরিক অভিযান চালানোর মাধ্যমে ১৯৪৮ সালে গৃহীত জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদ লঙ্ঘন করেছে মিয়ানমার। দেশটি বলছে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ৫৭ জাতির সংগঠন অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কনফারেন্স বা ওআইসি'র পক্ষ থেকে এই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে সৌদি আরবের মক্কায় অনুষ্ঠিত ওআইসি'র ১৪তম সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস বা আইসিজে-এ তুলে ধরার সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য ওআইসি'র এড-হক মিনিস্ট্রিয়াল কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়। গাম্বিয়া এ কমিটির নেতৃত্বে রয়েছে। বিচার কার্যক্রমে মামলায় বাদি গাম্বিয়া, আসামি মিয়ানমার ছাড়াও ওআইসিসহ বেশ কিছু দেশ ও সংস্থা অংশ নিয়েছে। আদালতে অং সান সু চি মিয়ানমারের পক্ষে হাজির হয়েছেন। গাম্বিয়ার প্রতিনিধি দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিচারমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু।
অভিযোগের গুরুত্ব: - মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার যে অভিযোগ ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস-এ গাম্বিয়া দায়ের করেছে সেটি নজিরবিহীন। গণহত্যার অভিযোগ নিয়ে এর আগে আইসিজে'র কাছে কেউ কখনো আসেনি। আইসিজে যদি শোনার জন্য এই অভিযোগ গ্রহণ করে তাহলেও এটি একটি বড় প্রাপ্তি হবে। গণহত্যা সংক্রান্ত যে আন্তর্জাতিক সনদ আছে ১৯৪৮ সালের, সেই সনদ ইন্টারন্যাশনাল ল'র একটি মূল অংশে পরিণত হয়েছে। কোন একটি রাষ্ট্র যদি মনে করে যে আরেকটি রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইন মান্য করছেনা তখন তারা আইসিজে'র শরণাপন্ন হতে পারেন এবং এখানে গাম্বিয়া সে কাজটিই করেছেন। মিয়ানমার ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস-এর সদস্য। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, আইসিজে কি এখন মিয়ানমারকে বিচারের আওতায় আনতে পারবেন? আসলে সময়ই বলে দিবে রোহিঙ্গা তাদের অধিকার ফিরে পাবে কিনা? নাকি অনন্তকাল তাদের বাংলাদেশে শরণার্থী জীবন যাপন করতে হবে।
আবুবকর তামবাদু: - গাম্বিয়া, আবুবকর তামবাদু উভয়েই বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিলেন। রাখাইনে মিয়ানমারের গণহত্যার বিরুদ্ধে অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ হচ্ছে গাম্বিয়ার আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা। গাম্বিয়া মিয়ানমারকে গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখে দাঁড় করিয়েছে। মানবতার স্বঘোষিত নেত্রী শান্তিতে নোবেল জয়ী অং সান সু চি আজ প্রশ্নবিদ্ধ গণতন্ত্র আর মানবাধিকারের। আন্তর্জাতিক আদালতে অং সান সু চি যথারীতি সকল মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে গণহত্যার পক্ষে কথা বলে যাচ্ছেন।
His Excellency Abubacarr M. Tambadou
The bravest sight in the world is to see a great man struggling against adversity. The first test of a truly great man is his humility. By humility I don't mean doubt of his powers or hesitation in speaking his opinion, but merely an understanding of the relationship of what he can say and what he can do.
we are proud of his justice, we are proud of his honor, we are proud of His Excellency Abubacarr M. Tambadou.
উপসংহার: - শেষ পর্যন্ত মামলার ফলাফল যা-ই হোক, আবুবকর তামবাদুকে সময় মনে রাখবে। গাম্বিয়াকে সবাই মনে রাখবেন। নির্যাতিতের পক্ষে, নিপীড়িতের সঙ্গে দাঁড়ানোর সুযোগ সময় করে দেয়। কিন্তু সেই সুযোগ সবাই গ্রহণ করতে পারেন না। যারা ঝুঁকি নিয়ে, দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে যান, ইতিহাসের পাতায় তাদেরই নাম লেখা হয়। গাম্বিয়া থেকে বাংলাদেশের ভৌগলিক দুরত্ব ১১,০৬৪ কি: মি: এতোদুরে থেকে গাম্বিয়া আমাদের মর্মপীড়া, মর্মব্যথা বুঝতে পেরেছেন তাদের প্রতি আমরা বাংলাদেশী চিরো কৃতজ্ঞ। গাম্বিয়ার প্রতি আমরা বাংলাদেশী চিরো ঋণী।
কৃতজ্ঞতা: - সামহোয়্যারইন ব্লগ কর্তৃপক্ষ। নির্বাচিত পোস্টে “গাম্বিয়া, আবুবকর তামবাদু ও রোহিঙ্গা ইস্যু” লেখাটি স্থান দেওয়াতে সামহোয়্যারইন ব্লগ কর্তৃপক্ষকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।।
তথ্য ও ছবি: - গুগল সার্চ ইঞ্জিন
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৪১