somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

........ অ্যাডজাস্টমেন্ট.......

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




বর্ষাকালটাকে শায়লার কখনই ভাল লাগত না, আর টিপটিপ করে বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। কিন্তু এমনই কপাল আজ সেই রকম একটি দিন। বাসায় থাকলে অবশ্য এখন মায়ের হাতের খিচুড়ি আর মাংশ খেত। কিন্তু এখানে সেটাও সম্ভব না। কোনমতেই সে এখানে স্থির থাকতে পারছে না। ইচ্ছা করছে ছুটে কোথাও চলে যেতে। কিন্তু সেটাও সম্ভব না। আপন মনেই সে বলে ওঠে, জীবনটা অ্যাডজাস্টমেন্টের! কিন্তু গত তিন মাস ধরে অনেক চেষ্টা করেও সে এটা মানতেই পারছে না।


প্রেমের বিয়ে ওদের, খুব বেশি দিন হয়নি। দু’পরিবারের কেউই রাজি ছিল না। একমাত্র ওদের একগুয়েমিতেই বিয়েটা হয়েছে। শিশির,ওর স্বামী পেশায় একজন ডাক্তার। সদ্য বিসিএস দিয়ে মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগ দিয়েছে এক গ্রাম এলাকার সরকারী হাসপাতালে। প্রথমে শায়লাতো খুব খুশি কারন ওর খুব শখ গ্রাম ঘুরে দেখা। শায়লা আগে কখনই এই ইট-পাথরের শহর ছেড়ে কোথাও যায় নি। শায়লা ভেবেছিল গ্রাম বুঝি অনেক সুন্দর হবে, কিন্তু এখানে এসে সে তার কল্পনার সাথে খুব সামান্য মিল খুজে পাচ্ছে। এখানে ডাক্তারদের জন্য কোয়ার্টার আছে। কিন্তু তার যা বেহাল অবস্থা তা বলা অপ্রতুল। সিদ্ধান্ত নিল শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকবে, কিন্তু সেখানেও বিপত্তি। মাসে যা আয় তার প্রায় সবটুকুই চলে যাবে ভাড়ার পেছনে। কি আর করা কোনমতে সেই কোয়ার্টার এ থাকতে হবে ভেবে মনটা অনেক খারাপ হয়ে গেল।


এদিকে শিশিরের আয় খুব বেশি না। একে তো নতুন, তারপর গ্রামে প্র্যাকটিস খুব একটা ভাল হয় না। ও প্রথম দিন অফিসে গেলে সেই বদ্ধ কোয়ার্টারে দম বন্ধ হয়ে আসে শায়লার। কোনদিন সে এমন বাজে পরিবেশে থাকে নি। সন্ধ্যা হলেই মশার কামড় আর ঝিঝির ডাক কান ঝালাপালা করে দেয়ার মত অবস্থা।

অন্যদিকে সে সারাদিন কাজ করে ক্লান্ত হয়েই ঘুম । শায়লা খুবই বিরক্ত, এভাবে শুয়ে, বসে কতক্ষণ থাকা যায়। ঘর থেকে বের হয়েই সে এদিক –ওদিক দেখল। কোয়ার্টার এর অন্য সবাই মোটামুটি মিশুক। কিন্তু শায়লার সাথে সবাই কেমন যেন একটু দূরত্ব বজায় রাখে। হয়ত শায়লা ডাক্তার এর বউ তাই ওকে সবাই একটু সমীহ করে চলে। তবে যাই হোক এই জিনিসটাতে শায়লা বেশ মজায় পায়।

শায়লা অনেক দিন ধরে বলে চলো কোথা থেকে ঘুরে আসি। ঘুরতে যেতে ওর ও ইচ্ছা করে কিন্তু সেখানে যেতে গেলেও তো বেশ টাকা চায়। বেতনের সামান্য টাকা থেকে মা-বাবা, একমাত্র ছোট ভাইটির লেখাপড়ার খরচ দেবার পর আর তেমন কিছুই হাতে থাকে না। এই কথা শায়লাকে অনেক বার বোঝাতে চেয়েছে কিন্তু পারেনি। বলতে গেলে শায়লা বলে আমার কোন আবদার রাখতে পারবে না তো কেন বিয়ে করেছিলে আমাকে? তোমার চেয়ে অনেক ভাল ছেলের সাথে আমার বিয়ে হত। এ কথার পর আর কিছুই বলার থাকে না। সেদিন অফিস থেকে ফিরে শায়লার চোখে জল দেখে খুব কষ্ট হয় ওর। ভাবল আজ ওকে নিয়ে একটু বাইরে ঘুরে আসব। অনেক দিন পর বাইরে এসে শায়লাও বেশ খুশি। আর সেই খুশিতেই সে মার্কেটের দোকানগুলো ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল। এর মাঝে ওর একটি শাড়ি খুবই পছন্দ হল। কিন্তু বিপত্তি বাধল দাম দেখে, এত দামি শাড়ি কেনার মত সামর্থ ওর ছিল না। বাসাই ফিরেই সে কি কান্না। কোন কথা নেই, একেবারে বাচ্চাদের মত গাল ফুলিয়ে বসে থাকে। দু’দিন পর অফিস এর এক পিয়ন এসে শায়লাকে একটি বক্স দিয়ে যায়। খুলতেই ও অবাক হয়ে দেখে ওর সেই পছন্দ করা সেই শাড়িটি। খুশিতে ওর মনটা ভরে যায়। কিন্তু শায়লা ভাবে ও কিভাবে এটা কিনল? ওর কাছে তো এত টাকা নেই। ও বাসায় আসতেই ওকে জড়িয়ে ধরে বলল আমাকে তুমি অনেক ভালবাস তাই না? ও মনে মনে বলল, তোমার সাথে আমার এত দিনের সম্পর্ক, কিন্তু ও একবারও বুঝতে পারল না শায়লার দেয়া সেই আংটি টা এখন ওর হাতে আর নেই। শায়লার খুশি দেখে ও চোখ মোছে, আর ভাবে মধ্যবিত্তের দৈনন্দিন সংসারে কতই না মান-অভিমান, ছন্দ পতনের ঘটনা ঘটে।


পুনশ্চঃ এই ঘটনার প্রায় বছর তিনেক পর শিশিরের সাথে হঠাৎ করেই দেখা হয় আমার। শায়লার কথা জিজ্ঞেস করতেই বলে, দু’জন এখন দুই মেরুর বাসিন্দা। হ্যাঁ অফিসিয়ালি ডিভোর্স হয়নি কিন্তু তারা একসাথে থাকে না। হয়ত আমার সাথে অ্যাডজাস্ট করতে পারছিল না। বিদায় নেবার আগে শিশিরের শেষ কথাটা আজও মনে পড়ে ‘Life Is A Series Of Adjustment’.
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৩৩
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×