somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন হিন্দু হিসাবে কেন আমি গর্বিত ।

০৯ ই জুন, ২০০৭ দুপুর ১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভারতবর্ষে বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষিত হিন্দুদের অবস্থাটা কিছুটা যেন কনফিউজড । আধুনিক প্রগতিশীল বাঙালি হিন্দুরা প্রায়ই নিজেদের হিন্দু বলে পরিচয় দিতে চান না বা দিতে লজ্জা পান । তাঁদের অনেকরই বক্তব্য যে তাঁরা কোন ধর্মে বিশ্বাস করেন না এবং বিশ্বাস করতে চানও না । তাঁরা অনেকই বলবেন যে তাঁরা ভারতীয় হিসাবে গর্বিত বা বাঙালি হিসাবে গর্বিত কিন্তু তাঁরা কখনই বলবেন না যে তাঁরা হিন্দু হিসাবে গর্বিত ।

অদ্ভুত ব্যাপার হল আমি যদি নিজেকে একজন হিন্দু বলে পরিচয় দিই তাহলে যেন আমি যেন একজন সাম্প্রদায়িক অথবা বিজেপি, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, এস এস এর বা বজরং দলের দালাল । আর আমি যদি বলি যে আমি কোন ধর্মে বিশ্বাস করি না তাহলেই আমি একজন প্রগতিশীল এবং আধুনিক মানুষ ।

অথচ ভারতে যদি কোন মুসলমান নিজেকে মুসলমান হিসাবে পরিচয় দেন অথবা একজন খ্রীস্টান নিজেকে খ্রীস্টান হিসাবে পরিচয় দেন তাহলে ধরে নেওয়া হয় সেটাই স্বাভাবিক ব্যাপার । এবং কেউই তাঁদের কোন রাজনৈতিক বা অন্য কোন পরিচয় খুঁজতে যায় না । কিন্তু একজন হিন্দু যদি নিজেকে হিন্দু হিসাবে পরিচয় দেন তাহলেই যেন তার যত দোষ ।

অথচ এই প্রগতিশীল হিন্দুরাই জাতপাত দেখে ছেলেমেয়ের বিয়ে দেন অথবা তাঁদের যদি শিডিউল কাস্ট বা শিডিউল ট্রাইব সার্টিফিকেট থাকে তবে তার উপযোগিতা নিতে তাঁরা পিছপা হন না । এবং কথায় কথায় আফসোস করেন যে কেন শুধু মুসলমানদেরই চারটি বিয়ে করার অধিকার থাকবে ।

এই প্রগতিশীল মানুষদের অনেকরই বক্তব্য হিন্দু ধর্ম বলে কিছু হয় না, যারা আগে সিন্ধুনদের তীরে বসবাস করত তারাই নিজেদের হিন্দু বলে পরিচয় দিত । হিন্দুধর্মের কোন প্রতিষ্ঠাতা নেই, এতে তেত্রিশ কোটি দেবদেবী ইত্যাদি ।

কিন্তু তাঁরা ভুলে যান যে হিন্দুধর্ম কখনও কোন মানুষের উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয় নি। যুদ্ধজয় করে কোন দেশের মানুষকে বাধ্য করা হয় নি একে গ্রহন করার জন্য । অথবা সামান্য কিছু খাবারের লোভ দেখিয়ে গরীব মানুষদের রূপান্তরিত করা হয়নি এই ধর্মে ।

বরং হিন্দুরাই অন্য ধর্মের আচার আচরন এবং দেবদেবীকে নিজেদের বলে গ্রহন করেছে । যেমন প্রাচীন বৈদিক আর্যরা আস্তে আস্তে গ্রহন করেছিল শিব ও শক্তিকে । আবার পরবর্তীকালে বুদ্ধকে স্বীকৃতি দিয়েছিল বিষ্ণুর অবতার বলে ।

হ্যাঁ এটা অবশ্যই মেনে নেওয়া দরকার যে হিন্দুধর্মের ভিতরেও কালক্রমে নানারকমের কুসংস্কার প্রবেশ করেছিল । কিন্তু সেগুলিও ছিল কিছু মানুষের ষড়যন্ত্র । যেমন সতীদাহ প্রথা । শোনা যায় বেদের কিছু শ্লোকের ভুল অর্থকরে সতীদাহ প্রথা চালু করা হয়েছিল । এর আসল উদ্দেশ্য ছিল মহিলাদের সম্পত্তি দখল করা । আবার পরবর্তীকালে বিদ্যাসাগর প্রমান করেছিলেন যে বিধবাবিবাহ শাস্ত্রসম্মত । আর জাতিভেদ প্রথার মূল লক্ষ্য ছিল সমাজে কে কি কাজ করবে তা ঠিক করে দেওয়া । সমাজের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করা এর উদ্দেশ্য ছিল না । আর যদি এটা বৈষম্যই সৃষ্টি করে থাকে তাহলে এখনও কেন ভারতে কেন্দ্রীয় সরকার নানা রকমের সংরক্ষন চালু রেখে জাতিভেদ প্রথাকে জিইয়ে রেখে দিয়েছেন ?

সমস্ত মানুষই যে এক তা প্রমান করার চেষ্টা হিন্দুদের মধ্যে থেকে বারবারই হয়েছে । চৈতন্যদেব এবং বিবেকানন্দই তার প্রমাণ ।

কমিউনিস্টরা কোন ধর্মে বিশ্বাস করেন না । কিন্তু তাঁরাও স্বীকার করেন চৈতন্যদেব এবং বিবেকানন্দের দর্শনকে ।

বিবেকানন্দের লেখায় পড়েছি যে হিন্দুধর্ম শ্রেষ্ঠ কারন একমাত্র এই ধর্মই শেখায় অন্য ধর্মকে শ্রদ্ধা করতে । রামকৃষ্ণদেব বলেছিলেন যে যত মত তত পথ । অর্থাৎ তিনিও অন্য ধর্মের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন ছিলেন । এমনকি এরকমও শোনা যায় যে তিনি মুসলমান হয়েও সাধনা করেছিলেন ।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের উপরেও হিন্দু দর্শনের প্রচুর প্রভাব ছিল । অনেক বিপ্লবীই ইংরেজদের বিরূদ্ধে মনোবল সংগ্রহ করতেন গীতা পড়ে ।

অতএব জন্মসূত্রে আমি হিন্দু এবং আমি যদি আমার এই পরিচয় সম্পর্কে গর্ববোধ করি তাতে দোষের কিছু নেই ।
৪৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×