somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃজানি তুমি আসবেই

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চারপাশের মানুষের ঝগড়া আর বিবাদ দেখে দেখে অশান্ত এই মনকে কল্পনার জগতে নিয়ে একটু শান'ত করার নিছক প্রচেষ্টা চালালাম এই গল্প দিয়ে।ভালো লাগাতে পারলেই অধমের লেখা সার্থক হয়।

কিছুক্ষণ কলিং বেল চাপতেই ঘরের সদর দরজা খুলে ৪০ এর উপর বয়সী এক ভদ্রমহিলা।
মহিলাকে সালাম জানায় ফাহাদ।
ফাহাদকে দেখে উনিও খুশি হন বেশ।ফাহাদের শ্বাশুরী তিনি।
সালামের উত্তর দিয়েই বললেন,'আসো বাবা,ভেতরে আসো।'
প্রাথমিক অভিবাদন সেরে নিয়ে ফাহাদ জানতে চাইলো,'বর্ণা কোথায় মা?'
'মুখপুড়িটা আর কোথায়?নিজের রুমেই মন খারাপ করে বসে',বললেন উনি।

বর্ণার সাথে ফাহাদের মাস কয়েক হলো বিয়ে হয়েছে।
ভালোবাসার বিয়ে তাদের!তাই একজন আরেকজন সম্পর্কে ভালোভাবেই অবগত।
অল্পতেই রাগ করে বাবার বাড়ির নিজের রুমের দিকে পাড়ি জমায় বর্ণা।
তখন তাকে ফেরানো যায় না কোনোভাবেই। ফাহাদও জানে এই রাগ নিয়ে মেয়েটা নিজেও কষ্ট পায়।
রাগ করে চলে যাওয়ার অভ্যাসটা তার পুরনো।
বিয়ের আগেও তারা যখন দেখা করতে যেতো,এমন অনেকদিনই হতো যে ফাহাদকে ফেলে দিয়ে সে হাঁটা ধরতো।
ফাহাদও তার ফোনে ম্যাসেজ করতে করতে তার পিছু পিছু যেতো।
এভাবেই চলে আসছে।
এখন বিয়ের পর বর্ণা রাগ করে হাঁটা ধরে না,সোজা বাবার বাড়ি।
কিন্তু যতই রাগ করুক,কখনো কাপড়ের লাগেজ আনতে দেখা যায় নি বর্ণার সাথে।
সেও জানে,অফিস থেকে ফেরার পথে ফাহাদ তাকে নিতে আসবেই!

'আচ্ছা আজকে তোমাকে যে এতোবার ফোন দিলাম,কোথায় ছিলে তুমি?আবার এতোক্ষণে একবারও ফোন দাও নি।
ফোন দিলে না ধরলে যে রাগ লাগে আমার,জানোনা তুমি?
নাকি ভুলে যাওয়ার অভ্যাসের ভেতর এটাও চলে গেছে??',ভ্রু কুঁচকে ফাহাদের কাছে জবাবদিহি চাইতে লাগলো বর্ণা।
ফাহাদ অপরাধির সুরেই বললো,'কাল রাতে রং নাম্বারের কল আসার কারণে যে আমার ফোন সাইলেন্টে করে তোমার ব্যাগে রেখে দিয়েছিলে সেটা নিতে ভুলে গেছিলাম,অন্য কিছুই ভুলিনি!'
বর্ণা এবার নিজেই চুপ করে ফাহাদের হাত ধরে বাসার জন্য বের হয়।
মেয়ের জামাইয়ের উপর বর্ণার মা সন্তুষ্ট।মেয়ের জন্যই বরং তার রাগ হয়।

রাত তিনটা।
হঠাৎ ফাহাদের ঘুম ভেঙে যায়।দম আটকে যাবার মতো অবস্থায় পড়ে যায়।
তখনি পিঠে কারো হাত বুলানোর স্পর্শ পায় আরেকটা হাত পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়।
'তুমি না থাকলে,আজকে দমটা বুঝি আটকেই যেতো!'-বর্ণার দিকে তাকিয়ে বললো ফাহাদ।
'চুপ করো তো!
কি বলো না বলো?
ঘুমাও তো!'-ধমকের সুরে বলে ফাহাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় বর্ণা।
ফাহাদ ঘুমিয়ে তার বুকে মাথা দিয়ে তাকে শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে বর্ণা ভাবছে,এই ছেলেটার সাথে আর কক্ষনো রাগ করে ফেলে চলে যাবে না।একদমই না।
বুকের ভেতরটা কেমন যেনো ধক্ ধক্ করতে লাগলো।
বছর কয়েক আগে ফাহাদ তখন ভার্সিটির প্রথম দিনের ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে।
এক সময় হঠাৎ তার এরকম হয়।
বেশ কাশিও পাচ্ছিলো,মানুষ যাকে বলে কেও নাম নিলে কিংবা মনে করলে যেরকম হয়।
একটা গোলগাল চেহারার মেয়ে তখন তার পানির বোতলটা এগিয়ে দেয়।
সেদিনই ফাহাদের সাথে তার প্রথম পরিচয়।
সেই যে ফাহাদের মায়ার আবেশে আবদ্ধ হলো,এখন রাত তিনটায় পানির বোতল থেকে পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়া আর সকালে ঘুম ভাঙানো পর্যন্ত পৌছুলো!

ফাহাদকে সকালে ডেকে না দিলে সে পুরো দিন ঘুমাতে পারবে,ঘুমের গাঁধা বলা চলে তাকে।
একবার বর্ণা তার এক আত্মীয়ের ওখানে বেড়াতে যায়।ফাহাদই দিয়ে আসে,অফিসে কাজ থাকায় চলে আসতে হয়েছিলো।
আসার সময় ফাহাদ বর্ণাকে বলতে লাগলো,'কাল আমাকে মনে হয় ঘুমের গাঁধা হতে হবে। কে জাগাবে আমাকে?'
বর্ণা বললো,'ওসব নিয়ে ভেবো না,আমি আছিতো এখনো-
তাকে থামিয়ে দিয়ে ফাহাদ বললো,
'হুঁ।
তোমার ভুত এসে আমাকে জাগাবে।তাই না?'
বর্ণা হেসে হেসে বলে,
'হ্যাঁ।
আমার ভুতই দিবে।
চিন্তা না করে ঘুমিয়ে যেও।
ফাহাদ চলে যায়।

সেদিন ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে বাসায় এসে ফাহাদ শুয়েই কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে।
হঠাৎ, অ্যালার্মের তীব্র শব্দ কানে ভেসে আসতে লাগলো।
চোখ না খুলেই ঘড়িটার খোঁজে এখানে সেখানে হাতড়াতে লাগলো।
কিন্তু ঘড়ি পাচ্ছে না,অ্যালার্মও থামছে না।
চোখ খুলে তাকিয়েই দেখে ফর্সা হয়ে গেছে বাইরে!
ঘড়ি খুঁজতে খুঁজতে সে ওয়াশরুমে গিয়েই দেখে বেসিনের উপর ঘড়িটা রাখা!
সাথে একটা চিরকুট।
চিরকুটের সাথে ব্রাশ আর টুথপেষ্টটাও রাখা!
মুখে হাসির রেখে ফুটিয়ে চিরকুটটা হাতে নিলো।
তাতে লেখা,'বলেছিলাম না আমি আছি।
দেখেছো,আমাকে তো পেলাই আবার আমার ভুতটাকেও পেলা!
দাঁত মাজো এখন হাসি বন্ধ করে।
ঘুমের গাঁধা কোথাকার!'

মাস কয়েক পার হলো।
বর্ণা আর রাগ করেনি,যায়ও নি বাবার বাড়ি।

সেদিন অফিস থেকে বাসায় এসে দেখে বাসায় তালা দেয়া।
চাবী থাকা সত্ত্বেও দরজা না খুলে শ্বশুর বাড়ির জন্য ছুটে।
ভেবেই পাচ্ছিলো না হঠাৎ করে কি হলো!
ফোনটাও বন্ধ পাচ্ছে।
ওদের বাসার ফোনেও কল যাচ্ছে না।
একসময় বাসায় পৌঁছে গেলো।
কলিং বেল কিছুক্ষণ চাপার পর তার শ্বাশুরী দরজা খুলে।
প্রাথমিক কাজ সেরে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে,তখনি উনি মুখে একটা রসের গোলক পুরে দিয়ে বললেন,আমি নানু হতে চলেছি!
যাও উপরে যাও!
মুখ যেনো বন্ধ হয়ে গেছে তার।
পা পর্যন্ত নাড়াতে পারছে না কথাটা কানে যাওয়ার পর!
বর্ণা রুমে গিয়ে তাকে ডাকতেই বর্ণার আওয়াজ গেলো কানে,
'চুউউউউউপ!
কিচ্ছু বলবা না!
আজকে রেগে নয়,লজ্জায় চলে এসেছি!'
কথাটা বলেই সে ফাহাদের বুকে মুখ লুকালো।
ফাহাদ তখনো মুখে কুলুপ এটে রইলো।
সে আজ ভীষণ খুশি।
আস্তে আস্তে মুখে পুরে রাখা রসের গোলকটার সাথে গোগ্রাসে তখনকার একটা একটা মূহুর্ত গিলতে লাগলো!

#অলস বেলার আবোল-তাবোল
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:১১
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×