somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোলকাতা বইমেলা2006

১৪ ই অক্টোবর, ২০০৬ সকাল ৯:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ সক্কাল সক্কাল রান্নাবাটি সেরে নিয়েছিলাম বইমেলা যাব বলে । তাও খাওয়া সেরে বেরোতে বেরোতে দুটো বেজেই গেল । লম্বা লাইন দিয়ে মেলায় ঢুকতে বেলা তিনটে পার । বারবার মনে হচ্ছিল, এত্তো দেরী করলাম !

মেলায় ঢুকে প্রথম ষ্টলটিতে ঢুকেই যেন চেনামুখ দেখলাম বলে মনে হল। ডালিয়াদি । চেঁচালাম । ডালিয়াদি, বলে । পেছন থেকে কার যেন গলা শুনতে পেলাম,এখানে আবার কে ডালিয়াদি করছে? একগাল হেসে ডালিয়াদি এগিয়ে এসেই সোজা জড়িয়ে ধরলেন । খানিক গপ্প হল দাঁড়িয়ে । ডালিয়াদি বেরুচ্ছিলেন । আমি সবে এসেছি শুনে বললেন, তুমি তাহলে দেখ । ষ্টলের বাইরে এসে দুজনের সাথে আলাপ করিয়ে দিলেন, একজন দাদা ( ডালিয়াদির বর) আরেকজন ডালিয়াদির দাদা । ওরা এগুলেন বেরুনোর পথে, আমি মেলার ভিতর দিকে পা বড়ালাম ।

প্রশান্ত মেলায় এসেছে "অলিন্দ' নিয়ে, জানা ছিল। ওকে ফোন করে জেনে নিলাম কোথায় সে এখন । আমি তখন সেই ষ্টলের সামনে দাঁড়িয়ে, যাদের সহযোগিতায় বের হয়েছে -অলিন্দ, সেই দীপ প্রকাশনের দোরগোড়ায় । প্রশান্ত বলল সে বাংলালাইভের ষ্টলে আছে, আমাকে দাঁড়াতে বলল ওখানেই । মিনিট দশ লাগল, প্রশান্ত'র এসে পৌঁছুতে । সাথে করে নিয়ে গেল যেখানে যেখানে অলিন্দ দেওয়া হয়েছে । আলাপ করিয়ে দিল সেখানকার লোকজনের সাথে, আমিও 'অলিন্দ'এর একজন বলে । আবার আসব বলে বেরিয়ে এলাম খানিক গল্প করে । এবার প্রশান্ত বিদায় নিল । তার অন্য কোথাও যাওয়ার কথা আছে ।


ঘন্টা খানেকমত ঘোরাফেরা করে খুঁজে বের করলাম বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন । মেলায় ঢুকতেই এক ভদ্রলোক ধরিয়ে দিয়েছিলেন মেলার ম্যাপ । কিন্তু ওখানে কিছুতেই বাংলাদেশকে খুঁজে পেলামনা । তাহলে কি বাংলাদেশের কোন ষ্টল নেই? কিন্তু ঐ যে। বারবার বাংলায়, হিন্দিতে, ইংরেজীতে ঘোষণা হচ্ছে কোন কোন দেশ এসেছে বইমেলায়। তাতে তো তারা বাংলাদেশের নামও বলছে । মেলারই একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম । কিন্তু সে বলল, জানেনা বাংলাদেশের ষ্টল কোথায় । খানিকটা এগোতেই দূরে চোখে পড়ল বড় বড় অক্ষরে লেখা 'বাংলাদেশ' । ছোট ছোট ষ্টলে সাজিয়ে এ যেন এক আলাদা মেলা । কলকাতা বইমেলা নয় । শুধুই বাংলাদেশ । মনে হচ্ছিল যেন ঢাকার বাংলাবাজার কিংবা চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লায় পৌঁছে গেছি, প্যাভিলিয়নের ঐ একটি দরজা পেরোতেই । মানচিত্রে যেমন গোটা দেশটা ছড়িয়ে পড়ে জেলায় জেলায় ছোট্ট ছোট্ট সব রেখার টানে, তেমনি আমার বাংলাদেশ জুড়ে আছে ছোট্ট ছোট্ট সব ষ্টল, একটা সরু পার্টিশন অথচ দুই পাশে দুই হয়ত চিরপ্রতিদ্বন্দী ব্যবসায়ী । আর তাতে সব বাংলাদেশী বই ঠাসা । ভাবা যায় !প্রায় সবকটি ষ্টলেই ছেয়ে আছেন হূমায়ুন আহমেদ । অগুনতি, অসংখ্য বই তার । অন্য বই ও আছে প্রচুর । এমন সব বই দেখলাম, এখন যেগুলো বাংলাদেশেই সব জায়গায় পাওয়া যায় বলে জানি না । সব রকমের বই । গল্প। উপন্যাস । কবিতা । মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই । ধর্ম বিষয়ক বই । প্রবন্ধ । সব, সব রকমের বই ।একটি ছেলেকে দেখলাম একসাথে আট/দশটি হূমায়ুন আহমেদ'এর বই কিনতে । দেখলাম জাহির রায়হান, রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, নির্মলেন্দু গুণ একগাদা সব বাঘাবাঘা নাম । চেনা সব । প্রায় সবকটি ষ্টলেই চোখে পড়ল একটি বই । 'বিষাদ সিন্ধু'। চোখ আটকাল সেলিনা হোসেনের 'বাংলাদেশের মেয়ে-শিশুরা' বইটির উপর । রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহের কবিতার বই হাতে নিয়ে পড়ে ফেললাম দুটি কবিতা । কোন কবিতারই নাম নেই । কবিতার নিচে শুধু সন,তারিখ আর জায়গার নাম লেখা ।

68,69,70,71সালের পরপর সব তারিখ । প্রায় কবিতাই মংলা থেকে লেখা । আমি দোকানি ভাইকে জিজ্ঞাসা করলাম, ও ভাই মংলা টা সিলেটে না ? দোকানি বললেন, না না মংলা তো খুলনায়! আমি যতই বলি যে, মংলা সিলেট যেতে পড়ে তিনি কিছুতেই মানতে চাইলেননা, অবশেষে বললেন, মংলাতে যে পোর্ট আছে দিদি । তখন চুপ করলাম আমারই হয়ত ভুল হচ্ছে এই ভেবে । পরে মনে পড়েছে, সত্যি তো! মংলা পোর্টের কথা ভুললাম কি করে! কিন্তু এখনও মনে হচ্ছে যে, সিলেট যেতেও একটা ছোট্ট ষ্টেশন পড়ে মংলাবাজার নামে ।

সব কটি ষ্টলে ঘুরে ঘুরে বই দেখে, দোকানিদের সাথে গল্প গুজব করে, কি কি বই কিনব সেগুলো মনে মনে ঠিক করে নিয়ে যখন প্যাভিলিয়ন থেকে বেরোলাম বাইরে তখন রাত । হেঁটে হেঁটে বেশ ক্ষিদে পেয়ে গেছে । ক্ষিদেটা আরো বেড়ে গেল যখন চোখে পড়ল এক ষ্টলের পাশে এক ভদ্রমহিলা কাগজের প্লেটে করে চিকেন ফ্রাই খাচ্ছেন । কিন্তু কোথা হতে তিনি ঐ চিকেন ফ্রাই যোগাড় করেছিলেন তা আর কিছুতেই খুঁজে পেলামনা। অগত্যা ক্ষিদে ভুলতেই হল । আবার খানিক ঘোরাফেরা করে গেলাম অসীম কাকুর ষ্টলে । ডালিয়াদির কাছ থেকে জেনে নিয়েছিলাম ষ্টল নম্বর । সেখানে গিয়ে অসীম কাকুকেই জিজ্ঞাসা করলাম, এখানে কি অসীম গুপ্ত আছেন ? তিনি হ্যাঁ বলে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতে বললাম, সামরান । ব্যাস । লহমায় আলাপ জমে গেল। কথা কেবল শুরু হয়েছে চেনা গলার আওয়াজ শুনে পেছন ফিরে তাকাতেই দেখি মণিকুন্তলাদি । সাথে তার দাদা । ওরা এসেছেন অসীম কাকুর সাথে দেখা করতে । হাসিমুখ মণিদির হাসি আরও বিস্তৃত হল আমাকে দেখে । খানিক তাদের সাথে গল্প চলল। মণিদির দাদা দেখালেন তাদের বাবার লেখা একটা বই । যার এটা তৃতীয় সংস্করন বেরিয়েছে বিকল্প থেকে। কি বই ? ও মা , পরিমল রায় নাকি মণিদির বাবা । উনি রম্যরচনা লিখতেন জানি, কিন্তু কখনও পড়া হয়নি । উনি মারা গিয়েছেন বহুকাল আগে । মণিদির মা বের করেছিলেন দ্বিতীয় সংস্করন । আর এবার এরা বের করলেন তৃতীয় সংস্করনটি । একটি বই হাতে করে মণিদি নিয়ে এসেছিলেন, যা অসীম কাকুকে দিলেন ।

আমরা বেরিয়ে এসে আবার যে যার পথে। আমি আবার মেলায় ঘুরছি । আবার চোখে পড়ল বড় বড় হরফে লেখা, 'বাংলাদেশের বই' । ঢুকে পড়লাম। বেশ বড় একটি ষ্টল । যেখানে প্রচুর বই । বেশিরভাগই পুরনো । চোখে পড়ল 'সোজন বাদিয়ার ঘাট'। রকমারী সব বই। এক কর্নারে একটা লম্বা টেবিলে রাখা ছিল কিছু পশ্চিমবঙ্গের বই । চোখ আটকে গেল একটি বইয়ে, 'থিয়েটার আরম্ভ সাড়ে সাতটায়' লোকনাথ ভট্টাচার্যের লেখা । বেশ, বেশ পুরনো বই । ধুলোমাখা । পাতাগুলো হলুদ হয়ে এসেছে । প্রথম পাতা খুলে দেখলাম প্রকাশকাল মে,1983। চারদিকে ভাল করে তাকিয়ে দেখলাম আর একটিমাত্র কপি দেখা যাচ্ছে। পরদিন কিনতে এসে যদি আর না পাই ? অতএব আজকে ' বই কিনবনা, শুধু ঘুরে দেখব' পণটি ত্যাগ করে চটজলদি মূল্য দেখলাম । 16 টাকা ! বই নিয়ে সোজা কাউন্টারে। ডিসকাউন্ট বাদ দিয়ে দাম দাড়াল সাড়ে চৌদ্দ টাকায় । এই মুক্তধারার ষ্টলেই দেখলাম এক লেখিকা বান্ধবীর চারখানা বই । নাসরীনের ( জাহান ) বই আগেও চোখে পড়েছে প্যাভিলিয়নের ভেতরকার ষ্টলগুলিতে । তসলিমা নাসরীনের বই দেখলাম শুধু একটি ষ্টলে । এখানে আনন্দ পাবলিশার্স থেকে বেরুনো নষ্ট মেয়ের নষ্ট গদ্য ও আরও কয়েকটি বই যা ওখানেও ছাপা হয়েছে এবং এসেছে এই মেলায় । কিন্তু ঐ বইগুলোর জায়গা কোন তাকে হয়নি । বইগুলো রাখা আছে ফ্লোরের উপর, এক কোণে । বাইরে থেকে দেখাও যায়না । ভেতরে ঢুকে বই ঘাটছিলাম বলে চোখে পড়ল ।

আজকের মত যথেষ্ট ঘোরা হয়েছে বলে যখন মনে হল তখনও বাকি বাংলালাইভের ষ্টলে যাওয়া । অতএব বাংলালাইভের ষ্টলের খোঁজে মেলার গেটের দিকে যখন এগুচ্ছি । আবার দেখা অসীম কাকুর সাথে । এবার সাথে কাকিমা । দুজনে বাড়ি ফিরছেন । বলতে ভুলে গেছি, অসীম কাকুর কাছ থেকে জেনে নিয়েছিলাম বাংলালাইভের ষ্টলের হদিস । ওরা টা টা বলে এগুলেন গেটের দিকে। আমি গুটিগুটি পায়ে আইটির ষ্টলগুলোতে উঁকি দিচ্ছি তখন । কাঙ্খিত ষ্টলটিতে ঢুকতেই একটি মেয়ে এগিয়ে এলেন। খানিক গল্পগাছা হল তার সাথে । বাংলা চ্যাট কি, কিভাবে করতে হয় সেটা তিনি বুঝিয়ে দিলেন । একটি ছেলে বসে কম্প্যুটারে বাংলা চ্যাট করছিল তাকে তুলে দেওয়া হল আমি বসব বলে । আমিও বিসমিল্লাহ বলে বসে পড়ালম । মিনিট পাঁচ চ্যাটও করলাম । টাইপো হচ্ছিলো, তাই উঠে পড়লাম । ফেরার তাড়াও ছিল । আমি গিয়েছিলাম বাংলা সফটওয়ারের খোঁজে । সেটার হদিস নিয়ে বেরিয়ে এলাম । প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা মেলায় ঘুরে প্রচুর ধুলো খেয়ে হ্যাচ্চো হ্যাচ্চো করতে করতে একমাত্র বইটি হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরতে রাত ন'টা ( আজ বাংলাদেশী টাইম লিখলাম)। 'থিয়েটার আরম্ভ সাড়ে সাতটায়' নিয়ে বসার আগে এই চিঠি লিখছি আর সমানে হ্যাচ্চো হ্যাচ্চো করছি।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০০৬ সকাল ৯:২৬
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×