ভোরের আজানের সাথেই উঠে পড়েন মা, চাচি আর ফুফুরা। ফজরের নামাজ সেরে অন্ধকার থাকতেই তারা ঢুকে পড়েন রান্নাঘরে। পুরুষেরা মসজিদ থেকে ফজরের নামাজ সেরে এসে হাঁক-ডাক শুরু করেন, এই পোলাপান, এখনও ঘুমাইতেছস? শিগগির ওঠ! সকাল হইয়া গ্যাসে তো! গোসল কইরা রেডি হ সব, নামাজে যাবি না? মাঝরাত পার করে ঘুমুতে যাওয়া সব ছেলে-মেয়ে, আমরা, চোখমুখ কচলে সোজা পুকুরে। মুখ ধুয়ে ঘরে আসতে আসতে টেবিলে হাজির আগের দিনে তৈরী করে রাখা সব সমোসা, নিমকি আর এক্ষুনি রান্না করা সেমুই, সুজির হালুয়া। এই সুজির হালুয়াটা দাদুর ফেভারিট। ঘরে বানানো, কিনে আনা যত খাবারই থাকুক, দাদুর সুজির হালুয়া চাইই চাই। ফ্লাস্ক ভর্তি চা আর ট্রেতে রাখা সব কাপ ডিশ। আমরা পোলাপানেরা তখন চা পেতাম না। আমাদের জন্যে জাগে আছে গরম দুধ। দুধ আমি একদম পছন্দ করি না, আমি চা ই খেতে চাই, কিন্তু চাইলেও কি পাওয়া যায়? দাদি বলে, চা খেলে নাকি আমি আরও কালো হয়ে যাব! অগত্যা : দুধ!
ভেতরবাড়ির উঠোনে তখন কাকার তদারকিতে কসাই খাসির মাংস টুকরো করছে। ভোরেই জবাই হয়েছে খাসি। কাজের বুয়ারা ঘুরঘুর করছে আশে-পাশেই। খাসির কলিজা, দিল, মগজ এগুলো নিয়ে যাওয়ার জন্যে। একটা ঝাল ঝাল কষা হবে লুচির সাথে খাওয়ার জন্যে।সেটা মা রাঁধবে। খাওয়ার ঘরে তিন-চারজন বসে বেলছে লুচি। মা মাঝে মাঝেই রান্নাঘর থেকে উঠে এসে দেখে যাচ্ছে লুচি বেলার কদ্দূর কি হল। কুলোতে খবরের কাগজ পেতে রাখা হচ্ছে বেলা লুচি, কুলো ভরে উঠলেই এক ছুট্টে আমি সেটা রান্নাঘরে নিয়ে যাচ্ছি ভাজার জন্যে, ( আমিও বসে লুচি বেলছি কি না! ) সেখানে চাচি লুচি ভাজছে। এই লুচিগুলো বেশ বড় বড়। আর ভাজাও হয় একটু কড়া করে। অত লোকের বাড়িতে সকলের নাশতার জন্যে ছোট ছোট লুচি বেলতে বেলতেই নাকি রাত হয়ে যাবে, তাই দাদির পরামর্শে লুচিগুলো আকারেও বড় আর ওজনেও ভারী!
(চলবে)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।

