আমি কোন সিনে-ক্লাবের মেম্বার নই কিংবা টেলি-সিনেমা জগতে কাজও করি না । যেহেতু কোন রকমেই সিনেমার সাথে দূর দূরান্ত পর্যন্ত আমার কোন সম্পর্ক নেই তাই আমার কাছে সিনেমা দেখার কোন ফ্রি পাস নেই , কিন্তু সিনেমা দেখার সাধ তো ষোলআনা । আমার তাই টিকেটই ভরসা তাও আবার সব হলে তো টিকেটে সিনেমা দেখাচ্ছে না । সেজন্যে বেশ কিছু সিনেমা ইচ্ছে থাকা সত্বেও দেখতেও পেলাম না, সেগুলো কিছু বিশেষ হলে শুধু ডেলিগেটস, গেষ্ট আর ভি আইপিদের দেখানো হচ্ছে ।
কিন্তু মন তো মানে না যে আমি কোন ক্যাটাগরিতেই পড়ি না তাই পছন্দের সিনেমা আমি দেখতেই পাবো না! রবীন্দ্রসদনে গতকাল সকাল এগারটায় দেখানো হল আর্জেন্টিনার সিনেমা ' কেপ্ট এন্ড ড্রিমলেস' । দেখবেন শুধুমাত্র ডেলিগেটস, গেষ্ট আর ভি আইপিরা । দেখি চান্স নিয়ে কিছু হয় কীনা এই ভেবে সকাল সকাল পৌঁছে গেলাম নন্দন চত্বরে রবীন্দ্রসদনের সামনে । হলে ঢুকবেন বলে যারা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন, ইচ্ছে, তাদেরকে জিজ্ঞেস করবো, কারো কাছে এক্সট্রা পাস আছে কীনা । একজনকে জিজ্ঞেস করতেই আশ পাশের আরও দু চার জন বলে উঠলেন, এক্সট্রা পাস তো নেই, আপনি এক কাজ করুন, লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ুন, গেটের পুলিশকে বলবেন, পাস বাড়িতে ফেলে এসেছেন!! আমি সাহস করে দাঁড়িয়ে পড়লাম, মনে ভাবনা কি হবে! ঢুকতে পারব কি? যদি ঢুকতে না পারি তো অন্য হলে পরবর্তী শো কটায় আর কোন দেশের সিনেমা দেখানো হবে সেটাও মনে মনে একটু হিসেব করে নিলাম । সকাল সকালই পৌঁছে গিয়েছিলাম বলে লাইনের প্রথম দিকেই দাঁড়িয়েছিলাম, মিনিট পাঁচেক পরে পেছনে তাকিয়ে দেখি লাইন নন্দন চত্বর ছাড়িয়ে রাস্তায় পৌঁছেছে আর সেই লাইনের পিছনে একের পর এক নতুন মুখ যোগ হয়েই যাচ্ছে । বেশ ভাবনায় পড়ে গেলাম এই এত ভীড়ের মাঝে আমাকে বিনা পাসে ঢুকতে দেবে কি? আমার আগে অল্প কয়েকজনই ছিলেন, গেট খোলা মাত্রই তাঁরা ভিতরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালেন সাথে আমিও । এরই মাঝে পার্সের ভিতর মোবাইলের ভাইব্রেশন টের পেলাম, ফোন হাতে নিয়ে কথা বলতে বলতে হঠাত দেখি আমি গেটের ভিতরে!! আমাকে কেউ কিছু জিজ্ঞাসাই করেনি!! ভেতরের গেটে দাঁড়ানো মহিলা আমার ব্যাগ পরীক্ষা করলেন জলের বোতল দেখলেন কিন্তু পাস দেখতে চাইলেন না । আমি প্রায় দৌড়ে হলের ভিতরে ঢুকে গেলাম, তাও আবার ব্যালকনিতে । কোথায় কে বসছে সেসব কোন ব্যাপার নেই যখন তখন নিচে বসে ঘাড় কেন ব্যাথা করব? পছন্দমত সীটে বসে এবার একটু ডাঁনে বাঁয়ে তকিয়ে দেখি হল ইতিমধ্যেই খচাখচ ভর্তি । বাতি নেভার আগে একজন ঘোষিকা এসে জানালেন আর্জেন্টিনা থেকে এসেছেন এই সিনেমার সহকারী পরিচালক ( নামটা খ্টোমটো তাই ভুলে গেছি ), তিনি এখন এই হলে আছেন এবং দর্শকদের সামনে দুটি কথা বলবেন । ষ্টেজে যিনি এসে দাঁড়ালেন তিনি এক অল্পবয়েসী মেয়ে । তিরিশও হবেন কিনা সন্দেহ । তিনি জানালেন এদেশে ( ভারতে) এসে তিনি খুব খুশি । ভাঙা ভাঙা ইংরেজীতে তিনি আরও কিছু কথা বললেন, আর সবশেষে সকলের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে বিদায় নিয়ে এসে বসলেন তার জন্যে নির্ধারিত দর্শকাসনে ।
আমি আবার চারপাশে একটু চোখ বোলাতে গিয়ে দেখি উপর থেকে নিচ পর্যন্ত সমস্ত সিঁড়ি ভর্তি! মানুষ বসে আছেন গায়ে গা ঠেকিয়ে সিঁড়িতেও ! আর তারপেরেও হলে ঢোকার দরজায়ও দাঁড়িয়ে আছেন আরও কিছু মানুষ!
সিনেমা কি দেখলাম সেটা হয়ত পরে কোন একদিন লিখব, আপাতত শুধু জানালাম বিনা টিকিটে বিনা পাসে আমার সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০০৬ সকাল ১১:০৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



