করোনার থাবায় আহত হয়েছে মানবতা, নিহত হয়েছে অসংখ্য প্রাণ। কিন্তু তবু মাথা উঁচিয়ে লড়ে যাচ্ছে কিছু মানুষ। দানবের কবল থেকে নইলে দুঃস্থ, অসহায়দের বাঁচাবে কে? কারণ বহুকাল আগেই মানিক বন্দোপাধ্যায় বলে গিয়েছেন, 'ঈশ্বর থাকেন ঐ গ্রামে, ভদ্র পল্লীতে- এখানে তাহাকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না।'
আমরা যারা ঘরে খিল এঁটে দিয়ে বসে আছি, অপেক্ষা করছি কখন ঝড় কেটে যাবে- তখন হয়ত অনেকে ভুলে গেছি যারা দিনমজুর, খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ তাদের খিল এঁটে বসে থাকবার উপায় নেই। দেহের শক্তি বিক্রি করেই পেট চালাতে হয় তাদের, কলের চাকা তাদের হাতেই নড়ে, উৎপাদিত হয় আমাদের ভোগ-বিলাসের বস্তু। তারা বাঁচবে কীভাবে? বাঁচবে কীভাবে সেসব মানুষ যারা টেলিভিশনে এসে নিজের কষ্টের কথা বলতে পারে না, সুযোগ পায় না, যে ঘরের মেয়েটা আত্মহত্যা করল খেতে না পেয়ে- সেই বাড়ির মানুষ আর কোনোদিন শান্তিতে ভাত মুখে তুলতে পারবে?
ঠিক তাদের কথা ভেবেই লড়ে যাচ্ছে কিছু তরুণ। যারা তেমন একটা আয় করে না, পকেট ভারী না- কিন্তু মনটা আকাশের মতো বড়। নিজেদের সামর্থ্যকে ব্যবহার করে, মেধাকে বিক্রি করে চাইছে অভুক্ত মানুষের অন্নের ব্যবস্থা করতে। চলুন জেনে আসি-দেখে আসি তাদের প্রচেষ্টাগুলোঃ
আহনাফ তাহমিদ রাতুল
পড়ালেখা করেছেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। লেখক, অনুবাদক। এ পর্যন্ত তার লেখা একটি মৌলিক উপন্যাস ও একাধিক অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ছাত্রজীবনে ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম একশন (DUMA) -এর সদস্য ছিলেন। মূকাভিনয়ে হাতেখড়ি সেখানেই। আর সেই অভিজ্ঞতাকেই পুঁজি করে আজকে সাহায্য চাইছেন আপামর জনগণের কাছে, গতকাল রাতে
ফেসবুকের ব্যক্তিগত প্রোফাইলে একটি ভিডিও আপলোড করেন তিনি। আর আকুতি জানান আমাদের কাছে, আপনার কাছে, সবার কাছে। তার মুখ থেকেই শুনে আসিঃ
সাহায্যটা তাদের জন্য, যারা আমার, আপনার কিংবা আমাদের মুখ চেয়ে বসে আছে। এখনও দিনে তিনবেলা খেতে পাই আমরা। সেটার জন্য শুকরিয়া আদায় করা উচিত। কিন্তু এমনও মানুষ এখন আছেন, যারা একবেলার খাবার কীভাবে জুটবে তা নিয়ে সন্দিহান। দুইদিন আগে একটা ভিডিও দেখলাম। মধ্যবাড্ডার একটি নিউজ রিপোর্টে এক নারী চিৎকার করে বলছেন মানুষ পেলে এখন ক্ষুধার তাড়নায় মানুষ খাওয়া শুরু করবেন। ভিডিওটা দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। প্রচণ্ড রাগ হলো। রাগটা কার ওপর জানি না। আমি প্রচণ্ড ডিল্যুশনাল, ইমোশনাল এবং ফ্রাস্ট্রেটেড নিজেকে নিয়া, চারপাশ নিয়া। স্বীকার করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা নাই।
বোনের সাথে বসলাম। বন্ধু-বান্ধব, পরিচিত মানুষদের দেখলাম তাদের আর্টস এন্ড ক্রাফটস শো করে ফান্ড রেইজ করছেন অভাবী, ক্ষুধার্থ মানুষের জন্য, যাদের এই মুহূর্তে একবেলার খাবার খুব দরকার। আলিজার আইডিয়াটা খুব ভালো লাগল। ফ্রন্টলাইনে এসে যুদ্ধ করার মতো শক্তি, সামর্থ্য আমার নাই। পিওর হার্টের কিছু মানুষ আমার বন্ধুতালিকায় আছেন, যাদের ওপর ভরসা করে দুই ভাইবোন মিলে একটা স্ক্রিপ্ট তৈরি করলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় শখের বশে মাইম করতাম, কিছু স্ক্রিপ্টিং এর কাজ করেছি, আর এখন তো লেখালেখি করার চেষ্টা করি। সেখান থেকেই তৈরি করে ফেললাম এই মাইমটা। তৈরি করার পর দেখি দুই ভাইবোন চুপ করে বসে আছি। দুজনের চোখেই পানি। কেউ কোনো কথা বলছি না।
আমাদের কাজ যদি আপনাদের ভালো লাগে, তাহলে প্লিজ ডু শেয়ার। যদি আপনিও আমাদের মতো ঘরবন্দী অসহায় হন এবং মানুষকে এক টাকা দিয়ে হলেও সাহায্য করতে চান, বলতে চান যে হ্যা, আমি পাশে আছি- তাহলে নিজের মধ্যে থাকা আর্টস এন্ড ক্রাফটস বের করে আনুন। এনগেজ করুন আরও মানুষকে, যাতে তারা এই লড়াইয়ে ঘরে থেকেই সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করতে পারে অভাবী মানুষগুলাকে। ডোনেট করুন আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী যে কোনো অংকের টাকা। মূল এবং একমাত্র উদ্দেশ্য ওটাই।
দয়া করে কোনো ভুল-ভ্রান্তি থাকলে ক্ষমা করবেন নিজগুণে। আমরা দুজনের কেউই প্রফেশনাল না। আর মাইমে প্রপসও ব্যবহার করা হয় না। এখানে করেছি শুধু আপনাদের বোঝার স্বার্থে। ব্যক্তিগত আর সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই কাজটা করা। আর আমার বোনকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। ও সাহায্য না করলে কিছুতেই এটা করতে পারতাম না।
আমি ফান্ড রেইজ করছি না। বরং বলতে পারেন আপনাদের ইনফ্লুয়েন্স করছি সাধ্যমতো এগিয়ে আসার। ব্যক্তিগতভাবে নিজে যতটুকু পারি সাহায্য করেছি। কিন্তু এটাই যথেষ্ট না। আরও অনেক মানুষের এগিয়ে আসা উচিত। যারা সামর্থ্যবান আছেন, তারা এগিয়ে আসুন। একসাথে লড়ি। দেশটাকে তো এইভাবে ভেসে যেতে দিতে পারি না, তাই না? আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।
ভিডিওর লিঙ্কটি জুড়ে দেয়া হল ব্লগবাসীদের জন্যঃ
সাহায্যের জন্য যোগাযোগ করুনঃ আবদুল্লাহ আল ইমরান
যোগাযোগঃ 01711002532
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন
রাফিজ ইমতিয়াজ
গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল গোপালপুরের বড়শিলা। বাংলা বইতে যেভাবে চোখ জুড়ানো গ্রামীণ সৌন্দর্যের কথা লেখা থাকে, ঠিক তেমন সৌন্দর্যের অধিকারী বড়শিলা। গ্রামের দুপাশ দিয়ে বয়ে গেছে নদী, আছে বিল আর অফুরন্ত সবুজ। বাংলা মাতার আর দশটা গ্রামের মতো এ গ্রামের মানুষও খেটে খাওয়া শ্রমজীবী, যাদের পেটের দায়ে নিত্য ছুটতে হয় কাজের খোঁজে। মহামারীর আগমনে থমকে গেছে জীবনযাত্রা, বন্ধ হয়ে গেছে উপার্জন, স্তব্ধ হয়ে গেছে প্রকৃতি। জমানো টাকা ভেঙে ভেঙে খেলেও তা ফুরিয়ে গেছে প্রায় সবই। সামনের দিনগুলো কীভাবে বাঁচবে তা জানে না অসহায় মানুষগুলো।
আর ঠিক তখনই এগিয়ে এলেন গ্রামেরই এক কৃতী সন্তান রাফিজ ইমতিয়াজ। পেশায় ছাত্র। শখ বই পড়া, বই সংগ্রহ করা। আর সেই তিল তিল করে জমানো বইয়ের স্তূপ বিক্রি করে দিচ্ছেন, টাকা তুলছেন যেখান থেকে-যেভাবে পারেন। যাতে শূন্য পেটে থাকা গ্রামবাসীদের মুখে আহার তুলে দিতে পারেন। তবে তার প্রচেষ্টার মাত্রা এখানেই শেষ না, বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে সচেতন করছেন, পোস্টারিং-মাইকিং করছেন দল বেঁধে। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে, প্রশাসন যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই যুদ্ধে প্রায় খালি হাতে লড়ে যাচ্ছেন রাফিজ আর ক্ষুদ্র টিম। আপনি পাশে না দাঁড়ালে এই প্রচেষ্টা হয়ত বেশিদিন চালানো যাবে না।
আসুন না, মানবতার খাতিরে এগিয়ে।
সাহায্যের জন্যঃ
Rocket -017821028021
Bkash- 01521493168
অনিন্দ্য অনির্বাণ
পছন্দ করেন কবিতা, পড়তে-আবৃত্তি করতে। আর সেই ভাল লাগাকেই পুঁজি করে এগিয়ে এসেছেন মানব কল্যাণে। ফেসবুক প্রোফাইলে আপলোড করেছেন নাজিম হিকমতের কবিতা 'আমি জেলে যাবার পর' কবিতা আবৃত্তির ভিডিও।
আমি জেলে যাবার পর - আবৃত্তি
মুফতে নন, নিজের দক্ষতা আপনার কাছে তুলে ধরেই চাইছেন আপনার সাহায্য, যদি ভাল লেগে থাকে তার আবৃত্তি। কিংবা ভাল না লাগলেও যদি স্রেফ উপকারের জন্যই চান কিছু পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে, এগিয়ে আসুন। এগিয়ে আসুন প্লীজ।
অনির্বাণ ভিডিওর পোস্টে উল্লেখ করেছেন তার উদ্দেশ্য, কীভাবে ডোনেট করতে পারেন সে উপায়ও বলে দিয়েছেন।
একজন আর্টিস্ট হিসেবে এই প্রোজেক্টে আপনাকে ডোনেশন করতে আগ্রহী করার জন্য এটা আমার একটা প্রচেষ্টা মাত্র !
কাদের জন্যে ?
এমন ভুক্তভোগী ২০০ টা পরিবার যারা একদিন খেলে আবার কবে খেতে পারবে জানেনা (হ্যাঁ সত্যিই আজ অনেক পরিবার এভাবে দিন পাড় করছেন, যা আমরা ঘরে থাকার কারণে অনেকেই জানিনা)। ঢাকার দূরবর্তী এলাকা, যেখানে অনেক চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান কিংবা মিডিয়া পৌঁঁছুতে পারে নাই, তাদের খুঁজে বের করে শুধুমাত্র ব্যাসিক খাবারদাবার প্রদান করা হবে ৩০ দিনের জন্যে। (যদিও প্রধান তালিকা ইতোমধ্যে ২০০ থেকে অনেক ছাড়িয়ে গেছে, আমরা চালিয়ে যাব যতদূর পারা যায়।)
আমার এই 'আর্টওয়ার্ক' যদি কারো ভাল লাগে, যে যা পারবেন, টাকা এদের কে ডোনেট করে দিয়েন।
আমরা আর্টিস্টরা প্রায়ই বিভিন্ন সোশ্যাল গেম এ অংশ নিয়ে নিজেদের ঘরে থাকতে উৎসাহিত করছি। এটাও একটা গেম এর মতই, শুধু পার্থক্য, এটা মানুষকে সহায়তায় উৎসাহিত করতে।
আপনি গান,কবিতা,ছবি অঙ্কন, যে কোনো ইন্সট্রুমেন্টাল,নাচ,অভিনয়, রম্যরচনা, গজল যেকোনো কিছু করতে পারেন আপনার ইচ্ছে মত
এটা কোনো (ট্রেন্ডি) ভাইরাল গেম না, সাহায্য পাওয়ার কোন উপায় বাদ না রাখতে গিয়ে এটি শুরু করা হয়েছে। সবাই যার যার জায়গা থেকে এগিয়ে আসছেন, আশা করি শিল্পীরাও এগিয়ে আসবেন।
রাতের আঁধারে যখন পরিবার গুলোকে খাবার দিতে গিয়ে, বেশির ভাগ পরিবার কেই দিতে ব্যার্থ হই সামর্থ্যের অভাবে, তখন চোখে পানি চলে আসে, কিছুই করার থাকে না। অনেক সাহায্যের প্রয়োজন। আর কিছু বলার নেই, যদি একবারের জন্যেও মনে হয় কিছু দেয়া উচিৎ, থেমে যাবেন না, একটু মনে করে দিয়েন। চার পাশে অনেকেই কাজ করছে, আমরাও করছি, কারো একার পক্ষে সবার কাছে পৌঁঁছানো সম্ভব না। একটা অনুরোধ, আজ হয়তো আমাদের কিছু দিলেন, কাল যদি অন্য কেউ চায় আর আপনার যদি সামর্থ্য থাকে, আবারো দিয়েন, কারন সমস্যাটা চলমান। আর সৃষ্টি কর্তার কাছে প্রার্থনা করুন সবার জন্যেই, কারন আমরা কেউই জানিনা আরো কোথায় কে না খেয়ে আছেন, আজ কাজ বন্ধ অনেক দিন! তবুও, অন্তত একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি।
সাহায্যের জন্য যোগাযোগ করুনঃ
বিকাশঃ 01741934933
নগদঃ 01687325925
রকেটঃ 016873259255
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:১৬