বর্তমানে সবচেয়ে বিখ্যাত অভিনেতা তিনি। তাঁর খ্যাতি দেশের সীমানা পেড়িয়ে আন্তর্জাতিক অংগনে গিয়ে ঠেকেছে। এমন অভিনেতা কে ভালো না বেসে কেউ কি থাকতে পারে? সবাই তার গুনোমুগ্ধ ভক্ত।
অভিনেতা তবে বেশ খুঁতখুঁতে। খুব বেছে কাজ করতে ভালোবাসেন। তবে সবকিছুর পেছনেই আছে কঠোর পরিশ্রম। প্রতিদিন ব্যায়াম, প্র্যাকটিস, যোগ ব্যায়াম কি না করেন তিনি! তবে যে বছর তিনি কাজ করেন সে বছর অন্য কারো টিকিটি পাওয়া মুশকিল। সব পুরষ্কার সে বছর থাকে তার বরাদ্দে। সহজে সমালোচক এবং দর্শকদের এক সাথে খুশী করা সম্ভব নয়। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন। হোক সমালোচক বা হোক দর্শক সবাই অভিনেতা বলতে পাগল। একটু ও বাড়িয়ে কিন্তু কেউ বলছে না। যেমন তার অভিনয় তেমন তার কন্ঠ তেমনি এপিয়েরেন্স, কোনোটাকে ছেড়ে কোনটা বলবে আসলে কে জানে!!
তাকে নিয়ে হয়েছে কত-শত অনুষ্ঠান, লেখালেখি। বিখ্যাত মানুষদের তো শত্রুর ও অভাব নেই। সে হিসেবে তাকে নিয়েও প্রায়ই নানান কথা বার্তা এখানে সেখানে ভেসে বেড়ায়। অন্যান্য অভিনেতারা মুখ ভরা কথা বলে বেড়ায় এখানে সেখানে যার সবই বানোয়াট। অভিনেতা সাংবাদিক রা যখন জেঁকে ধরে এসব প্রশ্নে সে খুবই বিনয়ের সাথে সব উত্তর দিতে থাকে। তার কোনো ক্লান্তি নেই, ভক্তদের সাথে অটোগ্রাফ দিতে ছবি তুলতে। এক কথায় সবাই তাকে বড় ভালোবাসে।
অভিনেতা শহরের অদূরে এক বাড়িতে থাকে। খুবই সাধারণ জীবন তার। বাড়িটা বেশ বড়-সড় হলেও সদস্য সংখ্যা খুবই কম। অভিনেতা এবং তার বিশ্বস্ত সহকারী-বন্ধু সবই। অভিনেতার এই জীবনেও আগ্রহের কমতি নেই অনেকের। বিয়ে-থা বা মেয়ে বন্ধু নেই কেনো তার চুলচেরা বিশ্লেষন ও কম হচ্ছে না। এত চমৎকার ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষের মেয়ে ভক্তের অভাব নেই তা তো না বললেও সবাই বুঝে গিয়েছে নিশ্চয়ই। মেয়েদের সাথেও তার বিনয়ী ব্যবহার তার চমৎকার ব্যক্তিত্বের আবার পরিচয় দেয়। কিন্তু প্রেম-ভালোবাসা তে কেনো জড়াচ্ছেন না জিজ্ঞাসা করাতে উনি মুচকি হেসে ফেলেন।
তবে তার অভিনয়ের শুরুর দিকে এক মেয়েকে নিয়ে তার বেশ গুঞ্জন হয়েছিলো। খুবই সাধারণ মেয়ে। যদিও কোনো প্রমাণাদি নেই কিন্তু সেই মেয়ের দাবী ছিলো অভিনেতা তাকে ব্যবহার করেছে। টিপিকাল অভিযোগ করে বেড়িয়েছে সে সবখানে যে অভিনেতা তার সাথে প্রেমের অভিনয় করেছে, সে আগাগোড়া নকল দিয়ে তৈরী। কিন্তু কোনো প্রমাণ পর্যন্ত সে দিতে পারে নি বিধায় তাকে সবাই তার অগণিত পাগল ভক্তের একজন বলেই সবাই ই ধরে নিয়েছিলো।
তার অভিনয়ে আসাটাও হঠাত করে। তার প্রথম অভিনয় খুবই সাধারণ চরিত্র। এলাকার রোমান্টিক যুবকের এক সামান্য চরিত্র যেনো অসমান্য হয়ে পড়েছিলো তার ছোঁয়াতে। মনে হচ্ছিলো যে সিনেমার পর্দা পেড়িয়ে অভিনেতা আমাদের সাথেই কথা বলছে হাসছে। এত বাস্তবতা এত ন্যাচারাল অভিনয় দেশের কেউ আজ অবধি দেখে নি। সব রোলেই উনি জ্বলজ্বল করছেন যেনো। রোমান্টিক, সিরিয়াস, ট্র্যাজেডি, ফিকশন, ফ্যান্টাসি সব শাখাতেই তাঁর অবাধ বিচরন। এক্সপেরিমেন্ট করতে ভালোবাসেন সব চরিত্র নিয়েই এবং সবখানেই পেয়েছেন সফলতা। ব্যর্থ হননি একবার ও।
অভিনেতাকে তার অভিনয়ের রহস্য জানতে চাইলে তিনি সর্বদা মুচকি হেসে বলেন, "আমি আমার চারপাশের দুনিয়া থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করি। আমি মানুষের অভিব্যক্তি দেখি, বিস্তর পড়াশোনা করি অবসর সময়ে, প্রচুর দেশ বিদেশের সিনেমা দেখি। এক্সপ্রেশনে খুব মনোযোগ দেই। এসবই আমার অভিনয়ের পেছনের রহস্য।" এটা অবশ্য ঠিক। অভিনেতা এজন্যই প্রতি সিনেমার আগে বিরাট এক সময় সেই অভিনয়ের জন্য ব্যয় করে। তৈরী হয়ে নেন সেই চরিত্রের জন্য। পড়াশোনা করেন অনেক।
তেমনি পুরো বছরের ব্রেকে আছেন তিনি এখন। পুরোদমে তৈরী হচ্ছেন সামনের সিনেমার চরিত্রের জন্য। এবারের চরিত্রটি বেশ চ্যালেঞ্জিং লাগছে উনার কাছে। চরিত্র নিয়ে খেলা করার সুযোগ এসেছে এবার। চরিত্রটিকে হিরো বা ভিলেনের গন্ডিতে ফেলতে পারছেন না যেনো। ক্রুর একটা ব্যাপার আছে সেই চরিত্রে। অভিনেতার বেশ লাগছে। প্রতিদিন চলছে পুরোদমে ব্যায়াম, গলার সাধনা, ডায়েট। এক বিকেলে রোদ পোহাতে পোহাতে তিনি সহকারীকে বললেন, "অনেক তো পড়াশোনা হলো, দেখে ফেললাম তো কত সিনেমা এ নিয়ে কিন্তু মন মতো হচ্ছে না যেনো কিছুই।" সবকিছুই মনে হচ্ছে খুব দূর থেকে নেওয়া জ্ঞান। এক্সপ্রেশন নিয়ে এখনো খুব দুশ্চিন্তায় ভুগছি। সহকারী বন্ধু তার বলে উঠলো, "চিন্তা করবেন না। আমি সব ব্যবস্থা করছি। চিন্তার কিছুই নেই।" অভিনেতা প্রশান্তির হাসি হেসে চোখ বুজলেন।
ক'দিন পর খবরের কাগজে ভলান্টিয়ার চাই বলে এক বিজ্ঞপ্তি দেখা গেলো। বেশ কিছুদিন ধরে সেটা ভেসে বেড়ালো খবরের কাগজের আনাচে কানাচে। বেশকিছুদিন পর হারানো বিজ্ঞপ্তি ও ভেসে বেড়ালো খবরের কাগজের ছোট্ট এক কর্নারে। যা কেউ দেখে বলে মনে পড়ে না। আসলেই এসব খবর আর ক'জন পড়বে কারণ বড় বড় শিরোনামে অভিনেতার নতুন সিনেমা নিয়ে রিপোর্ট ছাপা হচ্ছিলো সব জায়গায়। রাস্তায় বের হলে বিশাল বিলবোর্ডে সিনেমার পোস্টার। ভক্তদের উত্তেজনার কমতি নেই যেনো। সিনেমা বের হবার আগেই আগাম টিকেট হল বুকড হয়ে গেলো।
সিনেমা রিলিজ হবার পর যেনো এক আলোড়ন পড়ে গেলো সারা দেশে। এ যেনো কল্পনার ও অতীত। এত চমৎকার অভিনয়, অভিব্যক্তি আসলে সে ছাড়া কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। সিনেমাতে অভিনেতা যখন ছুড়িকাঘাতে হলো আহত, তখন তার অভিব্যক্তি, অশ্রু দেখে সারা হলের মানুষ যেনো কেঁদে উঠেছিলো বার বার। আবার তার ই খুণী হিসেবে ক্রুর হাঁসি দেখে শিউরে উঠলো সব দর্শকেরা। তাকে নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে স্তুতির জোয়ার বয়ে গেলো।
আবার সব পুরষ্কার বগলদাবা করার পালা যেনো। তেমনি এক অনুষ্ঠানে পুরষ্কার নিতে মঞ্চে উঠলেন তিনি। উপস্থাপক হেসে হেসে পরিচয় দিতে লাগলেন উনার। "উনি এমনই এক অভিনেতা যিনি ফুঁটিয়ে তুলতে পেরেছেন ছুরিকাঘাতে আহত হওয়ার পরবর্তী অভিব্যক্তি! ফুঁটিয়ে তুলছে পেরেছেন আঘাত দেবার পরবর্তী উল্লাস। যেনো সবই বাস্তব! যেনো বাস্তবেই তিনি এক ক্রুর মানুষ! এ কি করে সম্ভব?! কি করে পারেন তিনি? এ পুরষ্কার উনি ছাড়া আর কেই বা পাবেন !!!" অভিনেতা তার স্বভাবসুলুভ বিনয়ী ব্যবহারের পরিচয় দিলেন যেনো। বললেন, আমি আসলে বেশ সময় দিয়েছি। তুমুল করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠলো চারপাশ। সেই আওয়াজে কেউ হয়তো খেয়াল ই করলো না অভিনেতা বলেছিলো, "আমি আসলে সবার এক্সপ্রেশন স্টাডি করেই পেরেছি।"
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ৮:১৮