somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের মৃত্যু

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ ১৭ সেপ্টেম্বর! ৬৫ বছর আগে ১৯৪৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ভারতের শেষ স্বাধীন মুসলিম সালতানাত বা রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বাধীনতার অবসান ঘটে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর হাতে হায়দারাবাদের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের পরাজয় ও ভারতীয় সেনাদের মাধ্যমে সংঘটিত ব্যাপক গণহত্যার মধ্য দিয়ে।
-
১৯৪৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর হায়দারাবাদে অভিযান শুরু করে ভারত। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মাদ আলী জিন্নাহর মৃত্যুর একদিন পর এ অভিযান শুরু হয়। ওই অভিযানে নিহত হয়েছিল ২ লাখ মানুষ। তাদের বেশিরভাগই ছিল নারী ও শিশুসহ হায়দারাবাদের বেসামরিক মুসলিম নাগরিক।

দাক্ষিণাত্য নামে পরিচিত এই মুসলিম রাষ্ট্রের শেষ সুলতান ওসমান আলী খান নিজাম উল মুলক আসেফ জাহ (নবম) ভারতীয় হামলা শুরুর পর ছয় দিন প্রতিরোধ চালিয়ে যান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যাপক রক্তপাত এড়াতে আত্মসমর্পণ করে মুসলিম বাহিনী। ফলে প্রায় ছয় শত বছরের স্বাধীন এই রাষ্ট্রের স্বাধীনতার অবসান ঘটে। শেষ হয়ে যায় আসেফ জাহ’র পূর্বপুরুষদের ২২৪ বছরের শাসন।

হায়দারাবাদ ছিল ইউরোপের ফ্রান্সের চেয়েও ব্যাপক বিস্তৃত ভূখণ্ডের অধিকারী।

১৯৪৭ সালে যখন ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান সৃষ্টি হয় তখন হায়দারাবাদ নামক এই মুসলিম রাষ্ট্রটি ভারতীয় স্বাধীনতা আইন অনুযায়ী ভারত বা পাকিস্তান কোনোটিতেই যোগ না দিয়ে স্বাধীন থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। দেশটি জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের জন্য আবেদনও জানিয়েছিল।

কিন্তু আধুনিক ভারতের কথিত গণতন্ত্রকামী নেতারা সামরিক শক্তির জোরে এই মুসলিম দেশটিকে জোর করে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন। তারা “অপারেশন পোলো” নামের এক সামরিক অভিযান চালান ভারতীয় সেনাদের দিয়ে। (গোটা ভারতবর্ষের মধ্যে হায়দারাবাদ-দাক্ষিণাত্যে ছিল পোলো নামক অভিজাত খেলার সবচেয়ে বেশি ময়দান।)

এই অভিযান ব্যাপক বিপর্যয় বয়ে এনেছিল স্থানীয় অধিবাসীদের জন্য। বিশেষ করে মারাথওয়ারা অঞ্চলের পরিস্থিতি হয়ে পড়েছিল ভয়াবহ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহারলাল নেহেরু এই বিপর্যয়ের ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই তদন্তের ফলাফল কখনও প্রকাশ করা হয়নি। “হায়দারবাদ: একটি মুসলিম ট্র্যাজেডি” শীর্ষক এক প্রবন্ধে অধ্যাপক উইলফ্রেড ক্যান্টওয়েল স্মিথ বিবেকবান হিন্দু প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য উল্লেখ করে লিখেছেন, “যুদ্ধ থেমে যাওয়ার পর মুসলমানরা (গণহারে) ব্যাপক আঘাত ও পাশবিক হামলার শিকার হয়। ধ্বংসযজ্ঞের পর যারা বেঁচে ছিলেন তারাও ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিল। তাদের হাজার হাজার ব্যক্তিকে হত্যা করা হয় এবং উচ্ছেদ করা হয় কয়েক লাখকে। মুসলিম বাহিনীর সহযোগীদের কথিত সহিংসতার প্রতিশোধ নেয়ার অজুহাত দেখিয়েই এইসব নারকীয় অভিযান চালানো হয়েছিল।” (১৯৫০ সালে প্রকাশিত ‘দ্যা মিডল-ইস্ট জার্নাল’, খণ্ড-৪)

হায়দারাবাদ-দাক্ষিণাত্য আরব ও ইরানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের সুবাদে ইসলামী সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ হয়েছিল। এখানে ফার্সি ভাষা ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। ইসলাম-পূর্ব যুগেও দাক্ষিণাত্য উত্তর ভারতের মাধ্যমে স্বল্প কিছু কাল পদানত থাকলেও বেশির ভাগ সময়ই স্বাধীন ছিল। ভারতে তুর্কি মুসলিম তোঘলক বংশের শাসনামলে এই দেশটি ১৩৪৭ সালে আলাউদ্দিন হাসান বাহমান শাহের নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জন করে। ইরানি বংশোদ্ভূত এই জেনারেল প্রতিষ্ঠা করেন বাহমানী বংশের রাজত্ব।

সপ্তদশ শতকের প্রথম দিকে এই রাষ্ট্র ৫টি পৃথক সুলতানাতে বিভক্ত হয়েছিল। এসবের মধ্যে প্রধান তিন শক্তি হিসেবে বিবেচিত হত আহমাদনগরের নিজামশাহী রাজ্য, বিজাপুরের আদেলশাহী রাজ্য এবং হায়দারাবাদ-গোলকুণ্ডার কুতুবশাহী রাজ্য। এই রাষ্ট্রগুলো শিয়া মুসলিম রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল। তাই এই রাষ্ট্রগুলোর প্রধানরা ভারতবর্ষের মোগল সম্রাটদের পরিবর্তে ইরানের সাফাভিদ বংশের সম্রাটদেরকে নিজেদের সম্রাট হিসেবে মান্য করতেন। আদেলশাহী ও কুতুবশাহী রাজবংশের শাসকরা ছিলেন মূলত তুর্কিভাষী ইরানি বংশোদ্ভূত। মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব ১৬৮৬ ও ১৬৮৭ সনে এই দুই বংশের রাজ্য জয় করে নেন।

১৭২৪ সালে দাক্ষিণাত্য আবারও বিচক্ষণ জেনারেল কামারউদ্দিন খান নিজামুল মুলক আসফ জাহ’র নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জন করে। এই আসফ জাহ ছিলেন উঁচু মানের একজন ফার্সি কবি। তিনি নাদির শাহের ভারত আক্রমণের সময় দিল্লিতে উপস্থিত ছিলেন। ভারত বিজেতা নাদির শাহ আসফ জাহের কাছে গোটা ভারতের শাসনভার অর্পণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি পরাজিত মোগল সম্রাট মোহাম্মাদ শাহের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে সবিনয়ে ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×