somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তৃতীয় প্রজন্ম আর বাংলা বলবে না

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সন্ধ্যায় সামনের উঠোনে বসি। শত জোনাকির আলো এসে গায়ে পড়ে। নতুন দেখা মালালা কত সন্ধ্যা চেষ্টা করেছে একটা ধরতে....পারেনি। বড্ড চালাক জোনাকিরা। একটা ধরে বোতলে ভরে লাইট যদি বানাতে পারতাম...আফসোস মালালার।
ঢাকাতে কি কখনো জোনাকি দেখেছি....মনে পড়েনা।
তবে ছোটবেলায় দাদা-নানা বাড়ী কলাতিয়ায় দেখেছি। মনে পড়ে নাজিরপুরের খালের ধারে একসন্ধ্যায় তিন চাচাতো ভাই আমি,জুয়েল( Khan Jewel Asraful Alam), রুবেল দাঁড়িয়েছি, জোনাকিরা আমাদেরকে আলো দিয়ে ভরিয়ে দিলো। আমি তখন কলেজের ছাত্র। ইংরেজি একটি ছড়া অনুবাদ করেছিলাম :
একটি তারা যাচ্ছে উড়ে/ কাছে থেকে বহুদূরে
তারার আলো ঝিকিমিকি
তারার নামটি জোনাকি।
ওদেরকে শুনিয়েছিলাম। জানি ওরা শুনতে চায়নি। কিন্তু কবিরা যা হয়....
রাতে কাজ করি। সপ্তাহের ছুটির দুইদিন ঘুম ভাঙে পাখীর ডাকে...চড়াই,ঘুঘু,দোয়েল,শালিক জাতীয় পাখী ছাড়াও নাম না জানা কতো পাখী। বিশাল সাদা গাঙচিল দেখা যায় এখানে সেখানে।
আর ঢাকা দখল করে আছে কাক। তবুও তো কাক আছে। আর আছে চড়াই। ছোট বেলা আম্মির কাছ থেকে শেখা ছড়া কাটতাম
শালিক বলে চড়াই
তীরটা দেখে ডরাই।
আমাদের বড়ুই গাছে কলসী বেঁধে দিতাম। দোয়েল বাসা বাঁধতো। টুনটুনি টুনটুনাতো।
রায়ের বাজার হাই স্কুলে দেখেছি টুনটুনির বাসা। নাড়া দিতেই ভেঙে পড়েছে দুটি ডিম।
ঢাকাতে নারকেল গাছ ছিল অনেক। তাল,নারকেলে বাবুইপাখির বাসা ঝুলে থাকতো। ভাবতাম নীচের দিকে প্রবেশপথের বাসাগুলোতে বাচ্চাগুলো থাকে কেমনে? ডিমগুলো পড়েনা কেনো?
সেদিন রাতে কাছের কোন এক সাগর-নদী থেকে এত্তগুলা চাপিলা মাছ ধরে নিয়ে এসে দিলো দিশা। দিশা বাড়িওয়ালার ছেলে। কাজের সূত্রে থাকে দূর পেনসিলভানিয়ার পিটসবার্গে। মনানন্দের জন্য মাছ ধরা।
আজ ঢাকাতে কি মাছ ধরার জায়গা আছে? ধানমন্ডি আর গুলশান লেক। এর বাইরে..ন্যাচারাল? কিচ্ছু নাই। এই তো সেদিন আমার সবচে বড় ভাই আমাদের বড়দাদার (মরহুম) সাথে বাড়ির পাশে খালে,বিলে পুকুরে কতো মাছ ধরতাম। গোপালের পুকুরে এত্তো বড়বড় বাইলা মাছ। একসাথে এতো খাওয়া যেতো না বলে তারে ঢুকিয়ে মালা বানিয়ে শুটকি দেয়া হতো। গোপালের পুকুর আর নেই। এখন সেখানে চৌদ্দতলা বিল্ডিং হচ্ছে।
এইতো বছর কুড়িও হয়নি। বুড়িগঙ্গার ধারে আমাদের আড্ডাস্থলে জেলেরা দিয়ে যেতো টাটকা মাছ। আমি, মুক্তা( Mizanur Rahman),মুকসেদ(Makshud Alam), উসমান (মরহুম), নাহিদ( Nahid Nahid K) সহ সবাই ছিলো সেই মাছের বিশেষ ক্রেতা। আজ সে মাছগুলো সব রাম্পাল ফেসিয়াল লাগিয়ে বিবি সাহেবান সেজেছে। কালো নোংরা। নৌকায় বুড়িগঙ্গা পাড় হতে গিয়ে দেখতাম ঢাকার ডলফিন শুশুক লাফাচ্ছে নদী জুড়ে। একবার ভুলপথে খাল ধরে আমাদের সুলতানগঞ্জের ঘাটে এসে ধরা খেলো এক শুশুক। সে রাতে যেন উৎসব ছিলো পাড়ায়। শুশুক মাছের তেলে নাকি বাত সারে। পুরো পাড়ার মানুষই হয়ে গেলো বাতের রুগী। এখন সেই শুশুকও নেই,বুড়িগঙ্গাও নেই। বুড়িগঙ্গাই তো হয়ে গেছে একটা বিশাল বড় নর্দমা।
খুব ছোটবেলা আমাদের ঢাকার বাড়িতে বুনেছিলাম শিম। শিম নয় বনশিম। বড় বড় শিম। অনেক ধরেছিল। এর পরে মনে হয় আরেকবার লাউ। আম্মি মাঝেমধ্যে লাউ,মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া,পুঁই লাগাতেন। আমাদের পাশের বাড়ির কাকা মালেক ভূঁইয়া, সারা বছরই চাষ করতেন। আমাদের উল্টোদিকে নাগুভাইয়ের আব্বা ছিলেন পুরো দস্তুর চাষী। তার বড় বাড়িতে মুলা, শালগম, পালং সহ লাউ কদু জাতীয় সব্জীর চাষ ছিলো নিয়মিত। তার বাড়ীর জঙ্গলেই বড়ভাই আবুল খায়ের বাবলুর (Abul Khair Bablu) ছোট ভাই কচি ভাই আমাদের পাড়ার তার বন্ধু লিটু ভাইকে তীর তীর খেলতে যেয়ে, তীর মেরে একচোখ নষ্ট করে দেয়। দুজনেই আজ প্রবাসী। একজন আমেরিকায়, একজন ইতালি।
এখন আর ঢাকা শহরে চাষাবাদ খুব একটা হয় না। শহুরে চাষী বলতে গেলে নাই। চারদিকে বাড়ী আর বাড়ী। বাড়ীর ভিতর ঘর আর ঘর।
এতটুকু সবুজ নাই ঢাকা শহরে।
পৃথিবীর রাজধানী খ্যাত নিউইয়র্ক শহরের সাথে তুলনা করে ঢাকার কথা বললাম। নিউইয়র্ক, একদিকে এতো উঁচু উঁচু বিল্ডিং অন্যদিকে কত সবুজ। কতো পরিকল্পিত। হাজার ইচ্ছে থাকলেও বাড়ী এক ইঞ্চি বাড়াতে পারবেন না। একটা ইট গাঁথতে পারবেন না।
তবে পারবেন গাছ বুনতে। চিরায়ত বাঙ্গালী চাষী হয়ে পারবেন চাষ করতে। বঙ্গবাসী একসময় আল বা আইল রেখে জমি চাষ করতো। এজন্য পশ্চিমের মানুষ নাম দিল বঙ্গাল। সেখান থেকে বেঙ্গল,বাঙ্গাল। বেঙ্গলের অধিবাসী বেঙ্গালী....আমরা বলি বাঙ্গালী। আরো পরে বাংলাদেশী।
গরমকালে নিউইয়র্কের বাংলাদেশী বাড়ী চেনার সহজ উপায়... এরা চাষী..... সব্জীচাষী। নানা ধরনের সব্জী এদের বাড়ীতে লাগানো থাকে। তবে সেই ক্ষেতে আইল থাকে না....তাই এরা ধীরে ধীরে বাঙ্গালী থেকে পরিবর্তিত হচ্ছে....আমেরিকানে।
তৃতীয় প্রজন্ম আর বাংলা বলবে না।।

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:২৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×