
পবিত্র মাহে রমজান চলছে। দিবাগত রাতটি হচ্ছে মহিমান্বিত লাইলাতু কদরের পবিত্র রজনি। আর এর দুই দিন পার হলেই মহা আনন্দের ঈদ।
বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভিরু। তাই এই মাহে রমজানে ব্যাবসায়িরা ছাড়া সবাই কম বেশি সংযম পালন করে থাকে।
৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেই আঃ লীগ আগস্ট মাসকে শোকের মাস বলে ঘোষনা করেছে। উপলক্ষ্য ১৫ই আগস্ট।
এবছর ১৫ই আগস্ট রমজান মাসে পড়েছে বিধায়, অন্তত শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ মনে করেছিল যে, যাই হোক চাদাবাজির হারাম টাকায় বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকি পালিত হবে না।
সে গুড়ে বালি !
হারামের টাকায় একটি ধর্মিয় অনুষ্ঠান পালনের এই উদাহারণ পৃথিবিতে মিলবে না।
আর রমজান মাস বলে রক্ষা। অন্যান্যবার তো দেখি ১৫ই আগস্টে চাদাবাজির টাকায় বিরিয়ানি খাওয়ার সাথে বিজাতিয় হিন্দি গানের তালে তালে উৎসব। যেন ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুর বিবাহবার্ষিকি।
আওয়ামি লিগের সবচেয়ে কুৎসিত চরিত্র হলো, মিথ্যা কথা বলা। এবং চিরচেনা ইতিহাসকে আপন স্বার্থ উদ্ধারে বিকৃত করে বার বার প্রচার করা।
একারণেই ওদের সাহস হয় না, স্বাধীনতা পরবর্তি বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর কর্মকান্ড প্রচার করা। ঘুরে ফিরে সেই ৭ই মার্চের ভাষনই সম্বল। নইলে যে হাটে হাড়ি ভেঙ্গে যাবে।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন আমাদের মতই রক্ত মাংসের মানুষ। তিনি দোষ ত্রুটির উর্ধে তো ছিলেন না। অথচ তাকে দেবতা বলে প্রচার করে, তার সমালোচকদের রীতিমত ফ্যাসিস্ট কায়দায় আক্রমন করা হয়।
আওয়ামি লিগের ফ্যাসিস্ট চরিত্রের সাথে এক পাল গৃহপালিত চাটুকার যোগ দেয়াতে সোনায় সোহাগা ! এরা কখনও কবি বেশে কবিতায়, কখনো বুদ্ধিজীবি সেজে ইতিহাস বিকৃতিতে এবং কখনও লেখক সেজে ইতিহাসকে প্রতি নিয়ত ধর্ষন করে চলেছে।।

যারা ইতিহাস সমন্ধে সচেতন, তাদের না গেলানো গেলেও, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আবেগ সর্বস্ব কিছু কোমলমতি তরুণদের ব্রেণ ওয়াশ তারা ঠিকই করতে পেরেছে।
সেই উৎসাহেই কিনা জানি না, তবে ইতিহাস বিকৃতির আস্পর্ধায় আওয়ামি লীগ এখন স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন উল্লেখযোগ্য কমান্ডার এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট মরহুম জিয়াউর রহমানকেও রাজাকার বলছে।
রাজনৈতিক হিংসা থেকে জিয়াকেই শুধু নয়, বিভিন্ন সময়ে আওয়ামি লিগের কুৎসিত ইতিহাসকে তুলে ধরার কারণে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকিকেও রাজাকার বলে অপপ্রচার করেছে।
ভাষা আন্দোলন নিয়ে আওয়ামি মিথ্যাচার ফাস কর দেয়াতে বাম তাত্তিক বদরুদ্দিন ওমরও রাজাকার !
যারাই আওয়ামি লিগের বিপক্ষ্যে কথা বলছে, তাদেরকেই স্বাধীনতা বিরোধী আখ্যা দিয়ে কখনও মিথ্যা অপবাদ, কখনও আবার মামলা কখনও শারিরিকভাবেও লাঞ্ছিত করা হয়েছে এবং হচ্ছে।
আসলে কি ছিলেন বঙ্গবন্ধু। নিরপেক্ষ দৃস্টি দিয়েই তাকে দেখা হবে। স্বাধীনতার স্থপতি বলে তার যে পরিচয়, স্বাধীনতার পর ক্ষমতাকে আকড়ে ধরা, দেশ পরিচালনায় ব্যার্থতা, অদুরদৃস্ট সম্পন্ন স্বজন/দলিয় প্রীতি এবং চাটুকারদের ছলনায় ভোলার কারণে সেই মহান পরিচয়, মৃত্যুর আগে সম্পুর্ণ মুছে গিয়েছিল।
তাই ১৫ই আগস্ট ১৯৭৫ সালে সপরিবারে নিহত হলেও, তাতে দেশবাসির আনন্দ উপলক্ষ্য না হলেও, শংকার স্বস্তি ছিল।
অথচ সেই ইতিহাসকে আমাদের স্মৃতি থেকে লোপাট করার ষড়যন্ত্রে মরিয়া আওয়ামি লীগ এবং তাদের চাটুকারেরা।
তসলিমার অন্তর্বাস নিয়ে টানাটানি করা, কিংবা সুন্দরি প্রতিযোগিতায় অল্প বয়সি নারী প্রতিযোগিদের বস্র উন্মোচনের আহবান করা চরিত্রহীন কবি সৈয়দ শামসুল হককেও দেখি মাতম করতে, তখন মনে হয় হে ধরণি দ্বিধা হও।
শুধু বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নয়। চাটুকারিতার মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে নিয়েও। বেগম মুজিব হয়ে গিয়েছেন বঙ্গমাতা।
মৃত ব্যাক্তকে নিয়ে কিছু বলা আমার আদর্শের বাইরে হলেও, মিথ্যাচারের প্রতিবাদ করার জন্যই বলতে হয়, স্বাধীনতা সংগ্রাম হোক, কিংবাআ পাকিস্থানিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, কোন কিছুতেই বেগম মুজিবের কোন অবদান নেই।
হ্যা। অবদান নেই।
কেননা তিনি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শের কারণে ভালোবেসে বিয়ে করেননি। পারিবারিকভাবে বিয়ে হওয়াতে বাকি বাঙালি নারীদের মতই তিনি সংসার করে গিয়েছেন। এতে বিশেষ কোন কৃতিত্ব নেই। অন্য যে কোন নারীই একই কাজ করতেন।
আর বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে, ছেলে মেয়েকে উপযুক্ত মানুষ করার দ্বায়িত্ব তিনি কেমন পালন করেছিলেন, সেটা জামাল কামাল হাসিনা রেহানার কর্মকান্ডে দিব্যি বোঝা যায়।
অথচ তাকে নিয়ে চাটুকারদের নর্তন কুদনের কমতি নেই।
হিমালয় থেকে একেবারে মাটিতে নেমে আসা জনপ্রিয়তা নিয়েই বঙ্গবন্ধু ইহধাম ত্যাগ করেছেন। মুসলমান হিসাবে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করাই যায়।
কিন্তু তাই বললে পুরো আগস্টকেই শোকের মাস বানিয়ে শোকের নামে চাদাবাজি আর মচ্ছবের উপলক্ষ্য বানিয়ে জাতিকে নির্যাতন করা কোন ভাবেই সমর্থন করা যায় না।
আওয়ামি লিগের এক প্রভাবশালি সন্ত্রাসি নেতার কথায় স্পস্ট হয়েছে যে, এই মাসে জন্মদিন পালন তো দুরের কথা, কোন আনন্দের উপলক্ষ্য করা এমনকি শিশুর জন্ম হওয়ার উপরেও তারা নিষেধাজ্ঞা দিবেন।
৩০ লাখ শহিদের রক্তে আমরা স্বাধীনতা এনেছি, আওয়ামি লিগের কাছে স্বাধীনতা হারাবার জন্য নয়। আর কার জন্য শোক করবো, কার জন্য শোক করবো না, সেই স্বাধীনতা আমাদের প্রত্যেকেরই আছে।

শীর্ষ সন্ত্রাসিদের একজন হলো এই তনাই মোল্লা। আমি নিশ্চিত যে যত খারাপই হোক, তনাইয়েরও কিছু সমর্থক আছে। তনাইয়ের নামে কিছু বললে, ওরা হামলে পড়বে।
জঘণ্য মিথ্যাচার করে, গায়ের জোরে নিজ মতবাদ অন্যের উপর চাপানোর মত সন্ত্রাসি স্বভাব, কিংবা ভিন্নমতের বিরুদ্ধে আওয়ামি লিগের যে ধরণের এলার্জি, তাতে রাশ টেনে না ধরলে, ভুক্তভোগি নতুন প্রজন্মের কাছে আওয়ামি লীগ আর তনাই মোল্লাদের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকবে না।
পরিশেষ বলছি যে, মানুষের আবেগকে এক্সপ্লয়েট করে, নিজ স্বার্থ উদ্ধারের কাজেও আওয়ামি লীগ ভীষণ পারদর্শি। ২০০৮ এর নির্বাচনে এদের প্রচারনা তার একটি প্রমান।
তবে সাড়ে তিন বছরের দুঃশাসনের পরেও , যদি কোন জাতিয়তাবাদি ব্লগারের মুখে শুনি, মুজিব আমাদের সবার, তাহলে প্রমাদ গুণতেই হয়। একজন বিভ্রান্ত জাতিয়তাবাদির পেছনে না দাঁড়ানোই ভালো বলে মনে করি।
দেশের চেয়ে আত্মিয়স্বজন, দলের নেতা কর্মি যার কাছে বড়, দেশের স্বার্থের চেয়ে যার কাছে ক্ষমতা আকড়ে থাকাই মুখ্য, মেধার পরিবর্তে উদ্ধত ভাষণই যার এক মাত্র শক্তি, সেই মানুষটিকে আপন করে নিতে, বোধ বুদ্ধি সম্পন্ন যে কারো আপত্তি থাকবে।
আবেগ দিয়ে নাটক সিনেমা বানানো যায়, প্রেমের গল্প উপন্যাস কবিতা লেখা যায়, কিন্ত দেশ পরিচালনায় আবেগের কোন স্থান নেই।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০১২ দুপুর ১:৩৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




