somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দিল্লির লাড্ডু পর্ব ২ (ছবিসহ ব্লগ, তবে পোলাপানেরা একটু তফাতে থাকো)

৩০ শে অক্টোবর, ২০১২ ভোর ৪:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
প্রথম পর্ব



দিল্লির এয়ারপোর্ট বাইরে ফকিরন্নি মার্কা হলেও ভেতরটা সুন্দর। ওইখানে কেউ ঝামেলা করেনি। তবে কাস্টমস খালি সিগারেট আর মদের কথা জিজ্ঞেস করেছিল। এই খবরে আমাদের তরিকুল ভাইয়ের খানিকটা অস্বস্তি হয়েছিল। তবে ইন্ডিয়ানরা দারুপ্রেমিক বলে সব কিছু ঠিক ঠাক !

বুবুর সাথে যেখানে যেখানে গিয়েছি, খুব শান শওকতের সাথে অভ্যর্থনা করে নিয়ে গিয়েছে। এখানে দেখলাম উলটা। আমাদের মিজারুল কায়েস ভাইয়ের এসিস্টেন্ট পদ মর্যাদার (পোশাক দেখে আমাদের চাপরাশির চেয়েও খারাপ মনে হলো) একজন এসে আমাদের হোটেলে নিয়ে গেলো।



বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় আমাদের শেরাটনের মত। তবে ভিতরে একটু ঝাকা নাকা করেছে। ভালোই।



ভাবির ব্যাস্ত সময় ! বুবুর কড়া হুকুম, কি কথা বার্তা হয়, সব মগজে লিখে রাখতে হবে। পারলে পেজগি লাগাতে হবে। আর স্পেশাল সেল ফোন দিয়ে কয়েক ঘন্টা পর পর জানাতে হবে।

দুপুরে হোটেলেই খেতে হবে মনে হয়। আমি একটু আগ বাড়িয়ে মেনু দেখতে গেলাম। মন খারাপ হলো। দেশে গরিব হোক বড়লোক হোক, নাস্তায় দুপুর বা রাত্রের খাবা্র যাই হোক, পুরা দেশ গরুর মাংসের উপর ভাসছে। আর বুবুর জন্য কিনা আমার উপবাস! চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো।

মেনুতে মুরগি আছে, শুয়োরও আছে, খালি গরুর মাংসের নাম গন্ধও নেই। নয়া বাপেরা শুয়োরখোর বলে শুয়োর পর্যন্ত রাখতেও এদের আপত্তি নেই।



নাহ ! হোটেলে খাওয়া চলবে না। খোদ শিং সাহেবের ওখানেই দাওয়াত দুপুরে। খানিকটা আশার আলো দেখতে পেলাম। আমাদের দেশে বেড়াতে এসে ব্যাটা তো কবজি ডুবিয়ে খেয়েছ। এখন নিশ্চই পালটা খাওয়াতে ভুলবে না।

"আসেন আসেন ভাবিজি, তবিয়ত খুশ আছে তো?"

"আছি আপনাদের দোয়ায়। আপনি কেমন?"

"আর বোলবেন না ভাবিজি ! সোনিয়াজির হুকুম কংগ্রেসের মধ্যেও আপনার আর হাস্না বানুর মত তার লেড়কাকেও ডুকাতে হোবে। একুন কাকে বাদ দেই কাকে রাখি এই চিন্তায় ঘুম হোচ্ছে না।"

"আরে এইটা কোন সমস্যা? আমরা যা যা করেছি, আপনিও তাই করেন। এখন বলেন দাওয়াত নিয়ে আনলেন, কি ব্যাপার?"

"ছিঃ ছিঃ ছিঃ এইটা কুনো কথা বললেন ভাবিজি? হামড়া পড়িশি আছি, ভালো মন্দের খোজ না নিলে চলবে?"

"হুহ ! এই কথা আপনি বললেন? আমার বাড়ি গেলো, মামলা খেলাম, পোলাদের বাধ্য হয়েই বিদেশ পাঠালাম, তখন তো কোন রাও করলেন না।"

"ইটা ঠিক কথা না। হামরা হাজার বার বোলেছি হাস্না বানু, মাথা গোরোম কোড়ো না। কিন্ত কথা সুনে না। তার এক কথা। যা চাও সবই লিয়ে যাও, মাগার ভাবিজিরে হামি ফারদাফাই করে দিবো।"

" তো হাস্না বানুর কাছ থেকে মাগনায় যা চেয়েছেন, সবই পেয়েছেন। আমার কাছে কি তাইলে?"

"ইকটা কথা মনে রাখবেন ভাবিজি ! পাবলিক গুসসা হলে তকতা থাকে না।। যা খবর মিলছে তাতে হাস্না বানুর হালত খুবই নাজুক। আর আপনি হোচ্ছেন নায়া উজ্জিরে আযম। হামরা গদিকে সেলাম দেই ভাবিজি। "

" ও ! তো বলতে চান, হাস্না বানু যা যা ফ্রিতে দিয়েছে আমরাও তাই করি? কোন সুবিধা না বন্ধ করি?"

" হাপনার ডিগ্রি নাই, মাগার হাপনি বাহোত স্মার্ট আছেন।"

"যদি না দেই?"

শিং সাহেব হো হো করে অট্টহাসি দিলেন।

"ইটা স্মার্ট কোথা হোলো না ভাবিজি ! আমাদের লোক হার যায়গায় বোসানো আছে। আর্মি বোলেন, জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট বোলেন, মিডিয়া বোলেন, ষুসিল সামাজ বোলেন, অ্যাডমিনেস্ট্রশন বোলেন। আর ইন্তারন্যাশনাল কানেকশনের কোথা তো আর বোলতে হোবে না। তাছাড়া হাস্না বানুর খায়েশ ২০২১ সাল তাক গদিতে থাকবে। "

"কিন্তু বাংলাদেশের পাব্লিক তো আপনাদের দেখতেই পারে। এখন আমিও যদি আপনাদের সাথে থাকি, তাইলে হাস্নার সাথে সাথে আমার চামড়াও তো তুলে নিবে।"

"হাপনি এতো সাল পলিটিক্স করলেন আর নিজের মানুস চিনলেন না ভাবিজি ! হাপনাদের পাব্লিক তো বিল্কুল লো ক্লাস বুদ্ধু হ্যায়। হামরা বিনা পয়সায় এত কিছু পেলাম ! কই ? কোই কুছু বোলেছে? বর্ডারে মানুষ মারছি, কেউ রাও কোড়েছে? ইন্ডিয়ান আদমিরা গার্মেন্টস সেক্টরে উলটা সিধা করে ১২টা বাজাচ্ছে কুনো কুছু হোয়েছে? আর হোবেও না। আর য্যাসে য্যায়সে দিন পার হোবে, হাপনাদের নিউ জেনেরেশন সাব দিল সে ইন্ডিয়ান হোয়ে যাবে। হেহেহে ! "

"আর পানি সমস্যা? সীমান্তে হত্যা? এসবের কি হবে?"

"আরে হোবে হোবে ! চাল্লিশ সাল থেকে তো বোলেই আসছি সব দেবো। দোরকার হোলে লিক্কে দিবো। হাপনারও সোম্মান থাকলো, হামাদের ভি ইজ্জাত থাকলো। খুশ? "

"তো আমার এখন কি করতে হবে?"

"আরে বাদ কা বাদ দেখা যাবে। আগে চলুন খানা পিনা করি।"

খানার কথা কানে না গেলেও পিনা্র শুনে তরিকুল ভাই লাফ দিয়ে যাওয়ার ধান্ধা করছিলেন। ভাবির কাশিতে থেমে গেলেন।

ভেবেছিলাম বিশাল আয়োজন ! হ্যা ৪০ পদের খাওয়া। সবই নিরামিসি। পোড়া কপাল ! দেশে রাজভোগ বাদ দিয়ে এখানে এই সব আবর্জনা খেতে হচ্ছে ।



খালি উত্তর আর দক্ষিণ ভারতীয় আইটেম। ক্যান? পুর্ব ভারতের খাবার দিলেও তো না হয় একটু খাওয়া যেতো ! হালারা বাঙালি হয়েও হিন্দি আর ভারত মাতা বলতে অজ্ঞান ! আর দিল্লিতে কুত্তাও পুছে না।



ভাতের সাথে পাপড় খায় কোন বোক**? একটু একটু বাটিতে তরকারি? সব আইটেমেই দেখি টক দই ! মনে হচ্ছে আমাদের দেশের এক ফ্যামিলির জন্য বরাদ্দ কাচা সবজি দিয়ে রাবণের গুস্টি খাওয়ানর ধান্ধা ! এইজন্যই তো বলি, ঠাটবাটের পয়সা আসে কোত্থেকে !

আমি অবশ্য গন্ধ শুকে শুকে খেয়েছি ! বলা যায় না। ইন্ডিয়াতে যেভাবে গোমাতা চর্চা চলছে তাতে কোনটা গোবর দেয়া কে জানে? অবশ্য রিয়াজ ভাই আর শমসের ভাই পড়েছিলেন ফাপড়ে !

" এখন কি করি বলো তো বাচ্চু? "

" কি হইছে শমসের ভাই?

"আমার মনে হচ্ছে আমি আর তোমার রিয়াজ ভাই ইয়ে মানে ভুল করে গোচোনা খেয়ে ফেলেছি"

"এর লাইগ্যাই তো কই, গরুর মুতের গন্ধ আস্তেছে কই থেকে? এক কাজ করেন। বিষ খান। হাসপাতালে পেট ওয়াশ করে বিষের সাথে সাথে গোচোনাও বের করে দিবে ! "

খাওইয়ার পর বিশ্রাম। মানে হোটেলে ফেরত। তবে ভাবি কি যেন পরামর্শ করবেন। সেখানে আমার যাওয়া নিষেধ ! হেহেহে ! আমারে নিষেধ করলেই কি? শুনবে কে? তাছাড়া এই সব খবর বুবুর কানে না দিলে, আমারেই কোরবানি করবে বুবু। আগেই বলে দিয়েছে।

ফাক ফোকর খুজছি ! কি করে ওইসব কথা বার্তা শূনা যায় ! চোখ ঘুরছে চারিদিকে। অমন সময় দেখি শাড়ি পড়া এক রুপসি সেও ইতি উতি চাইছে আর ঘুরছে। ইস ! কি বেহায়া বেশরম ! এই রকম উদাম কাপড় পড়ে কেউ?



মন না চাইলেও লুল হয়ে যেতেই হয়। আমার কি দোষ? আমি তো আর মহাপুরুষ না।

ওমা ! একি ! মাইয়া দেখি ঠিকই কোন ফাক ফোকর দিয়ে ভাবিজির রুমের পাশে হাজির। চালু আছে তো ! হুম্ম মতলব ভাল না!
আমিও কম কিসে? ক্যাক করে গর্দানে ধরলাম।

"ওই ছেমড়ি ! এখানে কি করোস !"

আমাকে অবাক করে দিলে পরিস্কার বাংলায় মেয়ে বলে

"কি লো মিনসে কি? বলি মেয়ে মানুষ দেখলে নোলা লক লক করে তাই না?"

সোভানাল্লাহ ! এদেখি ক্যালশিয়ান।

পকেট থেকে ভুয়া আই ডি বের করলাম

"জানোস আমি কে? তোরে আমি পুলিশে দিমু ।"

মেয়ের গলা নীচে নেমে গেলো।

"আহা তাই তো বলি ! এমন হ্যান্ডসাম ছেলে গোয়েন্দা না হয়েই যায় না। আচ্ছা বলো না গো ! মেয়েদের সাথে এমন ব্যাবহার করতে হয়? "

হাজার হোক সুন্দরি মেয়ে। আমার আবার মন নরম। তাই শুদ্ধ কথাতেই চলে এলাম।

" ইয়ে না মানে, আমি উনার সিকিউরিটি দেখি। বোঝোই তো। কিছু একটা ঘটে গেলে ! তাই একটু কঠিন হয়েছিলাম আর কি !"

সোভানাল্লাহ ! একি । মেয়ে যেন ইচ্ছে করেই বুকের আচল ফেলে দিলো।

" আচ্ছা আমাকে তোমার সে রকম মনে হয়? আমার পক্ষ্যে কারো ক্ষতি করা সম্ভব বলো? না না চুপ করে থেকো না, তোমাকে আমার বুকের দিব্যি ! "

হায় হায় কিয়ের কসম দিলো। আমার মাথা নষ্ট !

"তোমাকে আমার ঢের বোঝা হয়ে গেছে বাপু। আচ্ছা আমার একটু ফ্রেশ হতে হবে। তোমার রুমটা কই গো? "

চলবে...


সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:৪১
৪৬টি মন্তব্য ৪৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×