প্রথম পর্ব
দ্বিতীর পর্ব
কথাটা খুবই সত্যি যে, খালি পেটে ঘুম আসে না। নইলে এত্ত চমত্তকার বিছানা দেখেও নিদ্রাদেবি আমার কাছে আসলেন না। উদরের টানে মন, বার বার ডাইনিং টেবিলের কাছে যেতে চাইছে।
তবে এয়ারপোর্টে এত্ত ধকল। ফ্রেস না হয়ে যাওয়া কি ঠিক হবে? হাজার হোক বুবুর ইজ্জতের সাওয়াল। তাছাড়া আমার জামা কাপড়ও বুবু এখানেই রেডী করে রেখেছে। তাই ঢুকলাম ফ্রেস হতে।
ওরে মোর খোদা ! এটা বাথরুম না বেহেস্তের হামাখানা। ইচ্ছা মত ডুবকি লাগিয়ে যদি জন্মের গোসল না সেরেছি, তো আমার নামও বাচ্চু না। এমনিতেই তো ঢাকায় পানি এই আছে তো সেই নেই। একবার তো বাথরুমে এক নম্বর করতে বসেছি। অমনি পানি বন্ধ ! বাসায় কেউ ছিলো না যে এক ঘটি জল দিতে বলবো। কি যে অবস্থা !
আরো অনেকক্ষণ থাকার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ওই যে ! পেট মানছে না। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও গোসল সেরে লাগেজ খুললাম।
এ আরেক বিস্ময় ! আমার বাপের জন্মেও এত ভালো জামা কাপড় আর আনুসাঙ্গিক জিনিস পত্র দেখিনি। লোকে যে বলে টাকা পয়সা না হলে মানুষের রুচিবোধ জন্মায় না। সেটা কি এমনি এমনি? আমার বুবু আরো বড়লোক হোক। আর আমিও ভালো ভালো খেয়ে পড়ে বাচি।
এমনকি জাঙ্গিয়াটা পর্যন্ত দামি। আর কি সুন্দর সুঘ্রাণ আসছে জামা কাপড়্গুলি থেকে। বেছে বেছে শার্ট প্যান্ট আর একটা হাল্কা সোয়েটার পরলাম। লন্ডনে এখন গরমকাল হলেও, আমাদের জন্য শীতই বটে ! তার উপর এই রোদ তো এই বৃস্টি। মাঝে মাঝে প্রচন্ড বাতাসও বটে। হাড় না কাপলেও গায়ের মাংস কাপাতে যথেষ্ঠ।
দেখেন ত ! আমাকে হ্যান্ডসাম লাগছে না?
রেডি হয়ে সোজা নিচে। কারণ সেভাবেই বলা আছে। তবে এই সময়টা বিলাতিরা ডীনার করে। আর আমাদের মনে হয় লাঞ্চ ডিনার এক সাথেই সারতে হবে।
নীচে গিয়ে আরে প্রস্থ ধাক্কা খেলাম। এত সুন্দর যায়গায় কি করে মানুষ খেতে পারে?
কি আর করা? খেতে যখন হবেই, বসে পড়া যাক। কিন্ত যেই চেয়ারে বসতে যাবো, পেছন থেকে কে যেন বললো
- অ্যাই তুই কেরে পোড়ামুখো ড্যাকরা?
অ্যা ? এইটা আবার কোনটা? পেছনে তাকিয়ে দেখি ধপধপে ফর্সা অভিজাত চেহারার এক বৃদ্ধা ! বাংলা শুনেই বুঝেছি কলকাতার। কিন্তু মুখের বুলির এই অবস্থা কেন?
উত্তর দেবো দেবো করছি, এই সময় দল বল সহ বুবু হাজির।
- এই যে দাদি, তুমি এইখানে আর আমরা তুমারে খুইজ্যা হয়রান।
দাদি? বুবুর দাদি? কলকাতাইয়া? কেমনে কি?
-চুপ কর পোড়ামুখি, আমাকে বিয়ে খাবার কথা বলে এই স্মেচ্ছ যবনদের দেশে এনে তুললি? কই বিয়ে কই? আমাকে এক্ষুনি সেখানে নে চল।
বুড়া হলে যা হয় আর কি ! মাথার স্ক্রু কিঞ্চিত ঢিলা, সাথে দেখি তিরিক্ষ্যে মেজাজ।
- আরে হইবো দাদি। তুমারে নিয়া যামুনে। আজকে মিস্টার হেগের লগে মিটিং সাইরা নেই, এর পর।
- অ্যা মলো যা ! বলি ওই ছুড়ি, লজ্জা শরমের মাতা কি খেয়ে বসেচিস? এত গুলির লোকের সামনে কি সব হাগাহাগির কথা বলচিস লো !
ল্যাও ঠ্যালা। এদিকে আমার খিদায় জান শেষ। আর এই বুড়ির পাল্লায় পড়ে তো দেখি সবার খাবার দফা রফা।
কোনমতে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বুড়িকে ঠান্ডা করে বসানো হলো। খাদ্য এলো। আহা দেখলেই তো পেট চনমন করে উঠে।
যেহেতু বুবু অর্ডার দিয়েছে, তাই নিউয়ইর্কের মত ধরা খাবার চান্স নেই। তাই ভাত ডাল না থাকলেও যা দিয়েছিলো, চোখ বুজে খেয়ে নিলাম। আহা ! একেই বুঝি বলে আসল মাখন দেয়া খাবার। আরো অনেক কিছু ছিল। পাছে বুবুর মান সম্মান যায়, তাই প্লেটে যতটুকু দিয়েছিলো তাই গিলে ফেললাম।
একটু পর বৃটিশ মন্ত্রি আসবেন। বুবু তার সাথে মিটিং করবেন। কিন্তু এই বুড়ি থাকলে, সাড়ে সর্বনাশ। তাই যুক্তি করে তাকে ছোট বুবুর কাছেই তাকে পাঠানো হলো।
মাত্র সাড়ে ছয়টা বাজে ! রোদ পুরাদমে। সন্ধ্যা হতে আরো তিন ঘন্টা বাকি। সেজে গুজে বাবু হয়ে আছি। ওইদিকে বুবুর সফর সঙ্গিরা যে যার মত উধাও। বুবুও বিজি। কি করা যায় ভাবছি। শহরটা ঘুরতে পারলে মন্দ হয় না। কিন্তু নিউইয়র্কের কথা ভেবে সাহসে কুলালো না। তার চেয়ে হোটেলেই ঘুরাঘুরি করি।
বৃটিশ মন্ত্রি আসবেন। তাই চারিদিকে বৃটিশ সিক্রেট সার্ভিসের লোকজন ঘুরাঘুরি করছে। আমাকে কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছে আমি কে ! উত্তরে আমার আইডি দেখিয়ে দিয়েছি। ওহ হ্যা ! বুবুর সফর সঙ্গিদের সবারই ভিভি আই পি আইডি দেয়া আছে।
বিশাল হোটেলের উপর নীচ করার জন্য লিফট তো আছে। সাথে ইমার্জেন্সির জন্য সিড়িও আছে। আমি হাল্কা ব্যায়াম সারার জন্য সিড়ি দিয়ে উঠানামা করছি। এই সময় দেখি এক মায়াবিনী।
কি দারুণ দেখতে। আমার তো জানেনই দিল নরম। কল্পনার পাখায় নিজেকে রাজ্জাক আর তাকে কবরি বানিয়ে মনের ভেতর সেলুলয়েড শুরু হয়ে গেলো।
চলবে...