somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তবু জয়ী সাম্প্রদায়িকতা

২৭ শে জুন, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(সাপ্তাহিক কাগজ. বর্ষ:৫. সংখ্যা:২০. ২৩ জুন ২০১৩)
কে জিতল ৪ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে? প্রশ্নটা যত সহজে করা যায়, উত্তরটা অত সহজ নয়। কারণ: সরকার জিতেছে? ঠিক সেভাবে উত্তর দেয়া হয়ত সহজ নয়। তবে সরকার পেশী শক্তি দেখায় নি, এটা পজেটিভ। আবার বলা যেতে পারে যে, দেখানোর সুযোগ ছিল না। নির্বাচন কমিশন কি জিতেছে? হয়ত কিছুটা। তবে, যথেচ্ছ আচরণবিধি লঙ্ঘন হলেও সেভাবে কোন পদক্ষেপই নিতে পারেনি তারা। হয়েছে ধর্মের যথেচ্ছ অপব্যবহার। বিরোধী দল কি জিতেছে? যেহেতু প্রার্থীরা সবাই তাদের দলীয় কর্মী, সে হিসেবে জিতেছে। কিন্তু মানুষ কি তাদের দলীয় কর্মকান্ডে খুশি হয়ে ভোট দিয়েছে? নাকি সরকারের কাজের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে ভোট দিয়েছে তাদের?

নির্বাচনে বিএনপি কর্মী হিসেবেই জয়ী হয়েছেন সবাই। স্থানীয় নির্বাচন আর স্থানীয় নির্বাচনে সীমাবদ্ধ থাকেনি। সেটা রূপ নিয়েছিল পুরোপুরি জাতীয় রাজনীতির নানা ইস্যুতে। মানুষ স্থানীয় প্রার্থীদের ব্যক্তিগত ইমেজ বা বিগত দিনের কর্মকান্ডকে কোনভাবেই নিজেদের বিবেচনায় রাখে নি। যদি রাখতো, সেক্ষেত্রে সরকার দলীয় ৪ জন প্রার্থীই পরাজিত হবে এটা বোধহয় সরকার বা বিরোধী দল কেউই ভাবেনি। এমন কি যারা ভোট দিয়েছে, তারাও নয়। মানুষের বিবেচনায় ছিল সরকারের গত সাড়ে ৪ বছরের কর্মকান্ড। শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারী আর তার প্রধান হোতার সরকার প্রধানের কাছাকাছি অবস্থান, পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারী এবং তার প্রধান ব্যাক্তিদের দেশ প্রেমিক উপাধিতে আখ্যা, যুবলীগ আর ছাত্রলীগের বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বিকৃত রূপ প্রদর্শন, শিক্ষাঙ্গনে পরিবেশ বিপর্যয়, নির্ধারিত বিরতির পর বারংবার অস্ত্রের ঝনঝনানি, টেন্ডার-সন্ত্রাস-তান্ডব এ যেন যুবলীগ আর ছাত্রলীগের আদর্শের অপর নাম হয়ে উঠেছিল। সারা পৃথিবী দেখেছে বিশ্বজিত উপাখ্যান। আইন রক্ষাকারী বাহিনীর নামে গুম যেন সংবিধানের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছিল। ইত্যাদি, ইত্যাদি, ইত্যাদি....................

গত সাড়ে ৪ বছরে বিএনপি এমন কিছুই করেনি, যার জন্য মানুষের ভোটের জোয়ার বিএনপির প্রার্থীর দিকে বয়ে যাবে । সংসদে যেমন যায় নি (গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের সব বিরোধী দলই যেন স্কুল পলাতক ছেলেদের জাতীয় দল), একইভাবে জনগণের পক্ষে বারবার ইস্যু আসলেও কোন ইস্যু নিয়েই উল্লেখ করার মতো রাজপথে দেখা যায়নি বিরোধী দলকে। বিভিন্ন সময় তারা যতগুলো কর্মসূচি দিয়েছে, তার প্রায় সবই ছিল নিজেদের রাজনৈতিক কারণে। তাহলে মানুষ কেন বিএনপিকে ভোট দিয়েছে! কারণ একটাই। বিএনপি কিছু না করলেও, সরকার করেছে। আর এটাই আমাদের গণতান্ত্রিক সরকারদের অসাধারণ একটি মিল। তারা ক্ষমতায় থাকতে মানুষের উপর এতটাই নির্মমতা দেখায় যে, জনগণ বাধ্য হয় বিকল্পকে বেছে নিতে। আর বিকল্প এসে নির্মমতার মাত্রা এমন এক শৈল্পিক পর্যায়ে নিয়ে যায় যে, মানুষ ভুলেই যায় বিগত দিনের নির্মমতার কথা। তখন বর্তমান থেকে বাঁচতে তারা আবার পুরনোর কাছে ফিরে যায়। ফলে প্রতিবার সুযোগ পেলেই জনগণ রাজনীতিবিদদের খাঁটি বাংলা ভাষায় উষ্টা মারে। কিন্তু তবুও কিছুই শিখে না আমাদের রাজনৈতিকরা। কারণ তারা খুব ভাল করেই জানে, মাত্র ৫টা বছর। কোন রকম কষ্ট করে কাটিয়ে দিতে পারলেই আবার তাদের হুজুর হুজুর করে জনগণই বসাবে ক্ষমতার মসনদে।

এবার একটা আশাঙ্কার কথা। কিছুদিন আগেও যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে যে জনতা জেগে উঠেছিল। তাদের জাগরণে একাত্তরের পিশাচ আর তাদের ছানা পিশাচগুলো স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের মতো টয়লেটের তেলাপোকার মতো লুকিয়ে গিয়েছিল। তারা আবার মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর জামাত একক প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছিল। তখন তারা অনলাইনভিত্তিক নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপির বিরুদ্ধে নানা বক্তব্য প্রচার করছিল। ‘অনেক সহ্য করেছি আর না!’, ‘আমাদের ব্যবহারের দিন শেষ’, ‘অপরের গোলামী আর না, বিএনপি এখন থেকে আমাদের গোলামী করবে’, ‘আমাদের বিপদে রেখে তারা ক্ষমতায় যেতে চায়, এবার দেখে নেবো আমাদের ছাড়া তাদের ক্ষমতা কত’ এরকম অনেক অনেক বক্তব্য তারা প্রচার করেছে বিশেষত ফেসবুকের জামাতী প্রুপগুলো।

নির্বাচন শেষ। জামাত তাদের প্রার্থী প্রত্যাহার করেছে। বিএনপি তাদের একক প্রার্থী রেখেছে এবং সবগুলোতেই জিতেছে। ঘটনাটা এর পরের। কারণ জয়ের পর মাঠে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদলকে সেভাবে দেখা না গেলেও, জামাত ইতিমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় আবারো মাথাচাড়া দেয়া শুরু করেছে। হয়ত যে কোন সময় তারা অস্ত্র হাতে মাঠে নামবে। যুদ্ধাপরাধের বিচারকে আটকানো, যারা এই ইস্যুতে সক্রিয় তাদের উপর হয়ত নেমে আসবে কালো থাবা। স্থানীয়ভাবে প্রজন্ম চত্বরের সাথে জড়িতদের উপরও যে কোন আক্রমণ হতে পারে যে কোন সময়। কারণ শিবির ইতিমধ্যে ককটেল বিষ্ফোরণ, ভার্সিটির হলগুলোর আশেপাশে অবস্থান ইত্যাদি শুরু করেছে। নষ্ট হতে যাচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ। হয়ত রগকাটা আরো কিছু মানুষকে দেখতে যাচ্ছি আমরা।

বিএনপি সেভাবে ইমেজ রক্ষা করতে পারবে কি না সেটা ভবিষ্যতে দেখা যাবে। তবে বিগত বেশ বছর কয়েক যাবত বিএনপি যতবার পাবলিকের গালির মুখে পড়েছে, তার বেশীরভাগ গালিই ছিল জামাতকে ঘিরে। কারণ নিকট অতীতে বিএনপি তেমন কিছুই করেনি যা আলোচনায় আসবে। ফলে ইমেজ ইস্যুতে বিএনপি বারবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে জামাতের কারণে। তবু হয়ত.....

না, বিএনপি এমন একটা জয়ের পরও হয়ত জামাতের রোগাক্রান্ত রাজনীতি থেকে নিজেদের আলাদা করবে না। কারণ তাদের কাছে জনগণের চেয়ে এখনো জামাতেই ভরসা বেশী। দেখা যাক, জনতা আগামী দিনগুলোকে কিভাবে ব্যবহার করে।

আরো একটা বিষয় এখানে লক্ষণীয়: দেশের রাজনীতিতে শুধুমাত্র ভোটের জন্য এক সময় যারা সংখ্যালঘু এবং ভোটব্যাংক বলে কিছু শব্দের আমদানী যারা করেছিল, আজ তারাই এই নোংরা রাজনীতির সবচেয়ে বড় শিকার হলো। কারণ লঘুকে টেক্কা দিতে মাঠে নামানো হলো গুরুকে। ফলে এই নির্বাচনে একই সাথে সবাই লক্ষ্য করলো সাম্প্রদায়িকতার অসভ্য রূপ। যারা সংখ্যালঘু এবং ভোটব্যাংক নামক একটু মিষ্টি দুষ্টু সাম্প্রদায়িকতার আরম্ভ করেছিলেন এক সময়, আজ তাদের ঠেকাতেই সাম্প্রদায়িকতার চূড়ান্ত রূপটা ধীরে ধীরে অসভ্য বটবৃক্ষে রূপ নিয়েছে। আর তাই নিজেদের পুসি বিড়ালটা আজ রূপ নিয়েছে হিং¯্র ডাইনোসরে। আর তার প্রথম থাবাটাও পড়লো.....

সর্বশেষ: এটা শুধুমাত্র ৪জন প্রার্থীর পরাজয় নয়। আপনাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরাজয়। মানুষকে দিন বদলের বুলি শুনিয়েছেন, কিন্তু নিজেদের মরচে পরা রাজনৈতিক সত্ত্বাকে বদল করার নূন্যতম ইচ্ছা আপনাদের ছিল না।

এটা কিছুই না। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের রাজনীতি, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ছাত্র আর যুব সংগঠনের সন্ত্রাস-তান্ডব-টেন্ডারবাজি; রথি-মহারথিদের দূর্নীতি; জাতীর প্রত্যাশা এবং আবেগ নিয়ে রাজনীতি রাজনীতি খেলা; সবচেয়ে বড় কথা রাজনীতিবিদদের ধরে রাখা বিবেকবর্জিত মধ্যযুগীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে চক্রবদ্ধ রাজনীতির বিরুদ্ধে মানুষের অবস্থান পরিস্কার করা।

জনতা আবারো আপনাদের বার্তা দিল: 'জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস'। তাই আপনাদের জাতীয় পর্যায়ের কর্মকান্ড যেমন মানুষকে সুযোগ দিয়েছে বিকল্প ভাবনার, তেমনি সাইবার দুনিয়ায় জামাতের দুষ্টু প্রচারণাতেও বিএনপির বর্তমান অবস্থানকে ছেটে ফেলা যায় নি। শুরুর দিকে জামাত কিন্তু কম প্রচারণা চালায়নি বিএনপি'র প্রার্থীর বিরুদ্ধে..... কিন্তু এখন তারা জয়ী প্রার্থীকে তাদের প্রার্থী বানিয়ে ফেলবে...............
অতএব, সাধু সাবধান..................

বি.দ্র.: স্থানীয় নির্বাচন হলেও, বাস্তবে সেটা জাতীয় রাজনীতির অংশ হয়ে যাওয়ায় সরকার, বিরোধী দল, বিএনপি, আওয়ামীলীগ এই শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×