somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বহুত খুব..... লাগাও তালিয়া......!!!

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৫ নভেম্বর ২০১৩ দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রায় প্রতিটি দৈনিকের ১ম পাতায় একটা খবর সেলিব্রেটি মর্যাদা লাভ করেছে। আর সেটা হচ্ছে রাজনীতির নামে বোমা উৎসব। এ আবার যে সে বোমা না। হাত বোমার পাশাপাশি এখন টপ সেলিব্রেটির মর্যাদায় পৌছে গেছে পেট্রোল বোমা। একটি পত্রিকায় পেট্রোল বোমার আঘাতে বাবা মারা যাওয়ায় ছোট্ট কন্যাশিশুর কান্নার ছবি। ছবিটা বেশ আশা জাগানিয়া। কারণ এমনিতেই আমাদের তরুণ প্রজন্ম বখে গেছে। তাদের আবেগ অনুভুতি বলে কিছুই নেই। সুযোগ পেলেই তারা শাহবাগের নষ্ট ছেলেদের চত্বরে গিয়ে অসভ্যতা করে, না হয় গালের মধ্যে লাল-সবুজ এঁকে চিৎকার করতে করতে মেহমানদের বাংলাওয়াশ করে বেয়াদবের মতো। তাদের কোন কাজ নেই, জিহাদী বই, দোররা মারার ১০১টি পদ্ধতি, নাস্তিক বলার সহজ তরিকা, মওদুদী কেন শ্রেষ্ঠ মানব ইত্যাদি বই তো দূরের কথা, কারণ এসব পড়তে যোগ্যতা লাগে। কিন্তু তারা তো পাঠ্যবইও পড়ে না! বাংলা পাঠ্য বই আর ইংরেজী টেক্সট বুক বাদ দিয়ে সারাদিন পড়ে থাকে ফেসবুক আর নাস্তিকতার গুদামঘর ব্লগ নিয়ে। আর এসবে থাকতে থাকতে তাদের আবেগ-অনুভুতি বলে আজ আর কিছুই পড়ে নেই। কাজেই একটা ছোট্ট শিশু যখন হাসপাতালের মর্গে পিতার লাশ দেখে কেঁদে উঠে, যখন একটু একটু মনে পড়ে বাবার বুকের উপর ঘুমিয়ে ছিল শেষ দিন... তখন তার বুক ফেটে কান্না বেরিয়ে আসে। বহুত খুব! অন্ত:ত নষ্ট তরুণ প্রজন্মের পর একটা আবেগী প্রজন্ম তো আমরা পাবো। আমরা পত্রিকার পাতায় দেখলাম শিশুটির কান্না। আপনার চোখেও যদি জল আসে ছবিটা দেখে, তাহলে আপনি অমানুষ। কারণ দেশ ও জাতির জন্য একটি মোক্ষম প্রজন্ম গড়ে ওঠার পথে আপনি বাঁধা দিচ্ছেন। আর জানেন নিশ্চয়ই একই দিন অন্যান্য পত্রিকাতেও ছিল পেট্রোল বোমার মহাকাব্য। সেটা হচ্ছে বাবার চেয়ে দেখলেন ছেলে আগুনে পুড়ছে। এমনি আরো কিছু ঘটনা। আর এভাবে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে এখন চলছে বার-বি-কিউ’র মাশালাহীন এক গন্ধের সমারোহ। সরকার এবং বিরোধী দল কেউই দায় স্বীকার করেনি। অনেকটা ভারতের আলোচিত সিনেমা ‘নো ওয়ান কিলড জেসিকা’র মতো। যেখানে কাহিনীটি ছিল, জেসিকা খুন হয়েছে। কিন্তু খুনি নেই। সন্দেহভাজন কয়েকজন আটক হলেও কোর্টে তারা দোষী সাব্যস্ত হয় নি। ফলে কোর্ট একটি ঐতিহাসিক ঘোষণা দেয়: ‘নো ওয়ান কিলড জেসিকা’। ঠিক তেমনি আমাদের এই সাধারণ মানুষগুলো পেট্রোল বোমায় জ্বলে পুড়ে মারা গেলেও হেড লাইনটি দাঁড়াচ্ছে: ‘নো ওয়ান থ্রু পেট্রোল বোমা’। সিএনজি চালকসহ গাড়ীতে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়া হলো। গাড়িতে যাত্রী থাকাকালেই পেট্রোল বোমা মেরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হলো। তবুও শুনছি: ‘নো ওয়ান থ্রু পেট্রোল বোমা’। আর বোমার স্প্লিন্টারের আঘাতে আহতের সংখ্যা তো কম নয়। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তার সংখ্যাও। ছোট বাচ্চারা খেলার বল পাচ্ছে না। বাবা-মার সামর্থ্য নেই একটি টেনিস বল কিনে দেয়ার। সমস্যা নেই। আমাদের আছে চ্যারিটি সংগঠন। তারা আবার ধর্মকে মেনে চলেন মনে-প্রাণে জীবনযাপনে। ধর্মে বলা আছে: ‘যখন তোমার ডান হাত কাউকে কিছু দান করবে, তখন যেন তোমার বাম হাত সেটা জানতে না পারে।’ আর তাইতো তারা বাচ্চাদের খেলার মাঠে বল ফেলে রাখে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। যাতে কেউ টের না পায়। একটা মনস্তাত্ত্বিক কথা আছে: ‘বাচ্চারা রঙিন বস্তুতে বেশী আকর্ষণবোধ করে।’ আর লালের চেয়ে বেশী দৃষ্টি আকর্ষণের রং কোনটা হতে পারে! তাই বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে এই চ্যারিটি সংগঠনের কমীরা বাচ্চাদের মনোরঞ্জনের জন্য লাল রঙের টেপ পেঁচিয়ে তাদের জন্য বল তৈরি করে। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন: ‘ভাল পরিমাণে কম বলেই সেটা ভাল....’। আর তাই বলটা নিয়ে শিশুরা বেশীক্ষণ খেলতে পারে না। প্রথম নাড়াচাড়াতেই সেটা ফেটে যায়। আমাদের ছোটবেলায়, আমরা নানা আনন্দ আয়োজনে সেটা ঈদ হোক কিংবা পূজা আমরা কিন্তু পটকা ফাটিয়ে আনন্দ করতাম। দল বেধে সবাই পটকা কিনতাম। একসাথে মাঠে, বাড়ির ছাদে বন্ধুরা মিলে পটকা ফাটাতাম। তাই সেই পুরনো দিনগুলোকে ফিরিয়ে আনতে বাচ্চাদের হাতের বলগুলোকেও হঠাৎ তাদের হাতে ফাটানোর ব্যবস্থা করেছে চ্যারিটি সংগঠনের কর্মীরা। আগেই বলেছি লাল রং বাচ্চাদের আকর্ষণ করে খুব। আর হঠাৎ বিকট শব্দ শরীরের পাশাপাশি মনকেও আন্দোলিত করে। শিশুরা সত্যিই মনে খুব উচ্ছ্বাস অনুভব করে, অন্ত:ত আমরা করতাম। কাজেই বোমা ফাটার সাথে সাথে বিকট শব্দে তাদের হাত-পা-শরীর ফেটে লাল রং বের হওয়া শুরু হলো। আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে! বহুত খুব! প্রিয় দেশবাসী আসুন আমাদের শিশুদের জন্য এমন আনন্দময় ও চিত্তে সুখ আনয়নকারী দৃশ্যের সফল অবতারণা করার জন্য একটা জোরসে হাতে তালি দেই আমাদের রাজনীতিকদের সম্মানে।

আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন ঘটনা-দূর্ঘটনায় আমরা দেখি কোন না কোন পক্ষ সরাসরি বা সাইবার দুনিয়ার মাধ্যমে ঘোষণা দেয় যে, ঘটনা আমরা ঘটিয়েছি। অথচ আমাদের এখানে কেউই এটা করে না। দু:খজনক... বড়ই দু:খজনক। যেখানে আমাদের ক্রিকেট আজ বিশ্বমর্যাদা লাভ করেছে, যেখানে আমাদের গলফাররা এখন বিশ্বকে জানান দিচ্ছে আমাদের উপস্থিতি, যেখানে আমাদের ফুটবল আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আস্তে আস্তে সফল হচ্ছে, যেখানে শিক্ষা-প্রযুক্তি-সিনেমা প্রায় সব কিছুতেই আমরা টুকটাক আন্তর্জাতিক খ্যাতিতে পৌঁছে গেছি... সেখানে আমাদের রাজনীতি কোনভাবেই আন্তর্জাতিক মানদন্ডে দাঁড়াতে পারছে না। এটা বড়ই দু:খজনক। হতাশ হতে হয় আমাদের রাজনীতিকদের মান এখনো লোকালে পড়ে থাকার রূপ দেখে।

বেশ অনেকদিন যাবৎ আমরা আনন্দ উৎসবে দিন পার করছি। ঈদ গেলো-পূজা গেলো-প্রবারণা পূর্ণিমা গেলো। এরপর দীর্ঘ বিরতী। কিন্তু আমরা যে এতগুলো উৎসব পালন করতে গিয়ে অভ্যস্থ হয়ে গেছি! এখন মন তো চাচ্ছে না কোন উৎসবহীন সময় কাটাতে। তাই আমাদের উৎসবের মাত্রা আরেকটু বাড়িয়ে দিতে উনারা আমাদের উপহার দিয়েছে বোমা উৎসব। আর এ উৎসবে পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের সাথে আমাদের পার্থক্য একটাই। তাদের বোমা সাইজে বড়, আমাদেরগুলো ছোট। তবে দেশকে উনারা যেভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তাতে বলা যেতেই পারে যে: ‘আল্লাহ-খোদা-ভগবান-ঈশ্বরের রহমতে নিশ্চয়ই আমরা আজ না হয় কাল পাকিস্তান আর আফগানিস্তানকে বোমা উৎসবে আমাদের পিছনে ফেলবই ইনশাল্লাহ।’

সবশেষ একটা কথা মনে পড়ে গেল। আমাদের গণমাধ্যমে প্রতিদিন বলা হচ্ছে: ‘অমুক জায়গায় বোমা/ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দূর্বৃত্তরা...’। ভাবনার বিষয়, আজকাল রাজনৈতিক কর্মসূচিকে বলা হচ্ছে দূর্বৃত্তপনা। তাহলে কি রাজনীতিকরা রাজনীতিবিদ হতে দূর্বৃত্ততে রূপান্তর হচ্ছেন! নাকি দূর্বৃত্তরা রাজনীতিবিদে! জবাবটা উনারাই ভাল দিতে পারবেন।

##
তির্থক আহসান রুবেল
মিডিয়াকর্মী
[email protected]
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×