somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যাকাতের কাপড় নামে আলাদা কাপড় বিক্রি করা ও দান করা কঠিন গুনাহ ও প্রকাশ্য ভন্ডামী

১৭ ই আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৪:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছুক্ষন আগে খবরে দেখলাম মালেক মার্কেটের যাকাতের কাপড় দান নামক ভন্ডামীর শিকারে ৪ জন অবলা নারী নিহত হয়েছেন। তাই ইচ্ছা হলো এ বিষয়ে লিখা ব্লগে একটা লিখা দিই। কারণ এ ধরণের কিছু ইসলামের নামে ইসলামী বিরোধী কাজই ইসলাম বিরোধীদের ইসলাম সমালোচনার খোরাক যোগায়। তাই এ লেখা...

আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, ‘তোমরা কখনই নেকী, সন্তুষ্টি হাছিল করতে পারবে না, যে পর্যন্ত না তোমাদের প্রিয় বা পছন্দনীয় বস্তু দান করবে এবং তোমরা যা কিছু দান করো সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক অবশ্যই পূর্ণ খবর রাখেন।’
যাকাত একটি ফরয ইবাদত ও ইসলামের অন্যতম ভিত্তি। যাকাতের নামে অপছন্দনীয় ও নিম্নমানের মাল বা বস্তু দান করা হারাম ও কুফরী।
কারণ নিম্নমানের মাল বা বস্তু যাকাত হিসেবে দেয়া স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর সাথে প্রতারণা করা এবং যাকাতকে অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার শামিল; যা নিঃসন্দেহে কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
নিম্নমানের বা অপছন্দনীয় মাল বা বস্তু যাকাত হিসেবে দিলে কস্মিনকালেও যাকাত আদায় হবে না; বরং কুফরীর গুনাহ হবে।
তাই যে সমস্ত দোকানে ‘যাকাতের মাল বিক্রি হয়’ লেখা সাইন বোর্ড লাগানো হয় তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
কারণ এটা মুসলমানগণের ফরয ইবাদত নষ্ট করার বিজাতীয় ষড়যন্ত্র।
-----------
যাকাত দেয়া নেসাবধারী ব্যক্তির জন্য ফরয। কিন্তু যাকাতগ্রহীতার জন্য যাকাত নেয়া ফরয নয়। সে ইচ্ছা হলে নিতেও পারে। ইচ্ছা হলে নাও নিতে পারে। তাই যে যাকাত গ্রহণ করে সেই যাকাতদাতার প্রতি ইহসানি তথা উপকার করে। কারণ, তাতে সে যাকাতদাতার যাকাত আদায়ে তথা ফরয আদায়ে সহযোগিতা করে।
যাকাতদাতা যাকাত দেয়ার মাধ্যমে আল্লাহ পাক-এরর হুকুম আদায় করে। অর্থাৎ আল্লাহ পাকএরর প্রতিই তার যাকাত ন্যস্ত হয়। কিন্তু আল্লাহ পাক পবিত্র। মহান আল্লাহ পাক তিনি দেখেন শুধু বান্দার নিয়ত বা ইখলাছ। যেমন, কুরবানী সম্পর্কে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, “আল্লাহ পাক-এর কাছে তোমাদের কুরবানীর গোশত ও রক্ত কিছুই পৌঁছে না। পৌঁছে তোমাদের বিশুদ্ধ নিয়ত।”
কেউ যদি মনে মনে যাকাত দেয়ার ক্ষেত্রে কমদামি বা নিম্নমানের জিনিস দেয়ার নিয়ত করে তবে তার সে খারাপ নিয়তই মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে বিবেচিত হবে। এতে করে তার যাকাত মহান আল্লাহ পাক-এরর দরবারে কবুল হবে না।
দান-ছদকা, যাকাত-ফিতরা সবকিছু করতে হবে একমাত্র আল্লাহ পাক-এর সন্তুষ্টি হাছিলের উদ্দেশ্যে। গাইরুল্লাহর জন্য কোনো আমল করা যাবে না। মানুষ দানশীল বলবে, দানবীর বলবে, দাতা বলবে, মানুষ জানবে, চিনবে, সমাজে নামধাম হবে, প্রচার-প্রসার ঘটবে, পরিচিতি হবে, যশ-খ্যাতি অর্জিত হবে, সমাজের অধিপতি হওয়া যাবে, নেতা-নেত্রী হওয়া যাবে, মসজিদের সেক্রেটারি, সভাপতি হওয়া যাবে, এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার, মন্ত্রী-এমপি হওয়া যাবে ইত্যাদি সবই হলো গাইরুল্লাহ তথা রিয়া বা লোক দেখানো।
গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্য থাকার কারণেই দেখা যায়, বেশি লোককে যাকাত দেয়ার জন্য অনেকে কম দামের খদ্দরের পাতলা লুঙ্গি ও পাতলা শাড়ি দিয়ে থাকে, যা সাধারণভাবে পরার উপযুক্ত নয়। আর সে লুঙ্গি ও শাড়ি যাকাত দানকারী ও দানকারিনীই পরিধান করতে কখনই রাজি হবে না বা পছন্দ করবে না। যদি তাই হয়, যেটা যাকাত দানকারী ও দানকারিনী নিজেরাই গ্রহণ করতে রাজি নয় সেটা মহান আল্লাহ পাক তিনি কী করে গ্রহণ করবেন? মূলত, সে দান আদৌ মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট গৃহীত হবে না। মহান আল্লাহ তা পরিষ্কারভাবে কালাম পাকে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘তোমরা কখনই নেকী, সন্তুষ্টি হাছিল করতে পারবে না যে পর্যন্ত না তোমাদের প্রিয় বা পছন্দনীয় বস্তু দান করবে এবং তোমরা যা কিছু দান কর সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি অবশ্যই পূর্ণ খবর রাখেন।” (সূরা ইমরান: আয়াত ৯২)
আল্লাহ আরো ইরশাদ করেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা স্বীয় উপার্জন থেকে এবং যা আমি তোমাদের জন্য ভূমি থেকে উৎপন্ন করেছি তা থেকে উৎকৃষ্ট বস্তু দান কর এবং নিকৃষ্ট জিনিস দান করার নিয়ত বা মনস্থ করো না। কেননা তোমরাই তা অনিচ্ছা ব্যতীত গ্রহণ করবে না। জেনে রাখ, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক গনী ও চরম প্রশংসিত। (সূরা বাক্বারা: আয়াত২৬৭)।
যেমন এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে, হযরত আদম আলাইহিস সালাম দু’ছেলেকে আল্লাহ পাক কুরবানী করতে বললেন। এক ছেলে হযরত হাবীল আলাইহিস সালাম তিনি দুম্বা চরাতেন। তিনি দুম্বা থেকে সবচেয়ে উত্তম একটি দুম্বা মহান আল্লাহ পাক উনার উদ্দেশ্যে কুরবানীর জন্য পেশ করলেন। অপরদিকে আরেক ছেলে কাবীল যে ফসল চাষাবাদ করতো। সে তার ফসল থেকে নিম্নমানের কিছু শস্যাদি মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য পেশ করলো। অতঃপর দেখা গেল মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে আগুন এসে কেবল হযরত হাবীল আলাইহিস সালাম উনার দুম্বাটি জ্বালিয়ে বা ভস্ম করে ফেললো। অর্থাৎ উত্তম ও ভালো জিনিস দেয়ায় হযরত হাবীল আলাইহিস সালাম উনার কুরবানী কবুল হলো এবং তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ বান্দা হিসেবে মনোনীত হলেন। সুবহানাল্লাহ! পক্ষান্তরে নিম্নমানের জিনিস দেয়ায় কাবীলের কুরবানী কবুল হলো না এবং পরিণতিতে সে পৃথিবীর বুকে প্রথম হত্যাকারী ও জাহান্নামী হিসেবে পরিগণিত হলো। নাউযুবিল্লাহ।
এখানে সম্পদের যাকাত, ফিতরা ও জমির ফসলের উশর ইত্যাদি ফরয, ওয়াজিব, নফল সকল প্রকার দান-ছদকার কথাই বলা হয়েছে। অর্থাৎ যেটা উত্তম, উৎকৃষ্ট, মূল্যবান সেটাই দিতে হবে। যেটা নিকৃষ্ট, নিম্নমানের, নিম্নমূল্যের সেটা দেয়া তো দূরের কথা সেটা দেয়ার কল্পনা বা চিন্তা করাও যাবে না। কেননা, খারাপটা সে নিজে ও অন্য কেউ গ্রহণ করতে চায় না। তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি সেটা কী করে গ্রহণ করবেন?
ইহুদী-খ্রিস্টানরা সবসময় ষড়যন্ত্রে মেতে থাকে কী করে মুসলমানগণের আমলগুলো নষ্ট করে দেয়া যায়। যাকাতের জন্য আলাদাভাবে কমদামি শাড়ি-লুঙ্গি তৈরি করা তাদের সে ষড়যন্ত্রেরই বহিঃপ্রকাশ। আজকাল অনেক দোকানে ব্যানার টানানো হয়, ‘এখানে যাকাতের কাপড় পাওয়া যায়।’ এর দ্বারা ফরয যাকাতের ইহানত করা হয়। নাউযুবিল্লাহ। যাকাতকে কম দামি ও কম মূল্যমানের বিষয় হিসেবে প্রতিপন্ন করা হয়। অথচ যাকাত অন্য কিছু নয় বরং যাকাত মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম আদায়ের বিষয়। অর্থাৎ যাকাতের মাল যাকাতদাতার জন্য রেখে দেয়া, ব্যবহার করা, খাওয়া ইত্যাদি হারাম হলেও যাকাতগ্রহীতার জন্য তা ঠিকই হালাল। তাছাড়া যাকাতগ্রহীতা যদি যাকাতের মাল থেকে হাদিয়াস্বরূপ কাউকে দান করে (যার জন্য যাকাত খাওয়া জায়িয নেই) তবে তা গ্রহণ করা ও খাওয়াও তার জন্য জায়িয। কাজেই, যাকাত, ফিতরা, ছদক্বা, কাফফারা ইত্যাদি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের বিষয় নয়।
নিম্নমানের বা অপছন্দনীয় মাল বা বস্তু যাকাত হিসেবে দিলে যাকাত আদায় তো হবেই না, বরং কুফরী হবে। যাকাতের নামে নিম্নমানের বা অপছন্দনীয় মাল বা বস্তু দান করার প্রবণতা মূলতঃ অন্যান্য ইবাদত-বন্দিগীর ন্যায় যাকাতকেও নষ্ট করার ইহুদী, নাছারা ও মুশরিকদের অসংখ্য ষড়যন্ত্রের মধ্যে একটি অন্যতম সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র। যার থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরয। কাজেই যে সমস্ত দোকানে “যাকাতের মাল বিক্রি হয়” লেখা সাইন বোর্ড লাগানো হয়, তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ১১:৫৭
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৭


ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

পহেল গাঁয়ে পাকিস্থানি মদদে হত্যাকান্ডের জন্য ভারত পাকিস্থানে আক্রমন করে গুড়িয়ে দেয় , আফগানিস্থান তেহেরিক তালেবানদের মদদ দেওয়ার জন্য, পাকিস্থান... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×