ছয়ঃ
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন ওরা প্রায় শেষ করে এনেছে। কিছুদিন পর ওরা পাশ করে বেরুবে। এখনও তানিয়া আর ফাহিম একসাথে হেঁটে চলে। ওদের সম্পর্ক অনেকের ইর্ষার কারন। এতো ভাল সম্পর্ক খুব দেখা যায় না আজকাল। গত চার বছরে ফাহিম যা কিছু করেছে তানিয়াকে সঙ্গে নিয়েই করেছে। ফাহিমের খুব সৌভাগ্য যে তানিয়া সবসময় তাকে সাপোর্ট দিয়ে গেছে। কখনো কোন কিছুতে না করেনি।
সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘তীর্থক’ এর সভাপতি হয়েছে ফাহিম। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক দলের সাথে অথবা বিতর্ক দলের সাথে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছে। ২/১ বার তানিয়াও সাথে গেছে। একবার সার্ক দেশে গিয়েছিল-সেবার খুব খারাপ লেগেছিল তানিয়ার। এক মাসকে মনে হয়েছিল এক বছর। অবশ্য ফাহিম ফিরে আসার সময় এমন সব গিফট নিয়ে এসেছে যে তানিয়ার মন ভাল হয়ে গিয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সবাই ওদের সম্পর্কের কথা জানে এখন। এই কাজটা অবশ্য শুরুতেই নেতা ডালিম ভাই করে দিয়েছিলেন। রাগে-দুঃখে প্রিয় পাত্র ফাহিমকে রুম ছাড়া করেছিলেন। শুধু কি রুম ছাড়া কিছুদিন হলছাড়াও হতে হয়েছিল। এজন্য অবশ্য ফাহিমের মন খারাপ নেই। ডালিম ভাই বরং তার উপকারই করেছে। তা না হলে তানিয়াকে অনেকেই জ্বালাতন করছিল।
পড়ালেখার পাশাপাশি ফাহিম নিজেকে তৈরী করেছে বিসিএস’এর জন্য। তার আসলে অন্য কোন চাকুরীর দিকে খুব একটা আকর্ষন নেই। তা না হলে বায়োকেমিষ্ট্রি পড়েও বিসিএস অফিসার হতে চাইবে কেনো!! ফাহিম টেনেটুনে সেকেন্ড ক্লাস পেয়েছে কিন্তু তানিয়া সহিজেই ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছে। ওর রেজাল্ট করা দেখলে মনে হয় ভাল রেজাল্ট করা খুব সহজ কাজ।
ফাহিমের অবশ্য সেকেন্ড ক্লাসে কোন আক্ষেপ নেই। সে কখনো চায়ওনি। তার বিশ্বাস সে পাবলিক সার্ভিসে ঢুকতে পারবেই। অনার্সের পর অনেকেই মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছে। ফাহিমও হয়েছে কিন্তু হতে ইচ্ছা করেনি একদম। পড়ালেখা আর ভাল লাগছিল না। যাক ফাহিম নন-থিসিস নিয়েছে কিন্তু তানিয়া থিসিস নিয়েছে। এর মাঝে ফাহিম চাকুরীর পরীক্ষার জন্য এপ্লাই করতে শুরু করেছে। তানিয়া অবশ্য দিতে চায়নি। ওর বক্তব্য হচ্ছে মাস্টার্সটা শেষ করুক আগে। কিন্তু ফাহিম সে কথা শুনতে চাইছে না। সে একটা ন্যাশনাল বিতর্ক সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়েছে। সেখানে কিছুটা সময় দিতে হয়। আর অন্যান্য ক্লাবের কাজ থাকে। সামাজিক আন্দোলনের সাথেও নিজেকে জড়িয়ে রেখেছে। বিশেষ করে পরিবেশ নিয়ে ওর অনেক চিন্তা আর স্বপ্ন।
সাতঃ
এর মাঝে পাবলিক সার্ভিস কমিশন থেকে ‘উপজেলা শিক্ষা অফিসার’ পদে পরীক্ষার জন্য ডাক পেয়েছে। তাই একটু পড়ালেখা করছে। ওর না হবার কোন কারনও নেই। ওর পুলিশ বা প্রশাসন এইসব চাকুরীর লোভ কখনোই নেই। যাক সময়মত পরীক্ষা দিয়ে প্রিলি পাশ করেছে ফাহিম। এবার ভাইভার পালা। শোনা যাচ্ছে অনেক টাকার লেনদেন হবে ভাইভাতে। ফাহিম অবশ্য বিশ্বাস করতে চায় না এসব কথা। কিন্তু ফাহিম না চাইলেও এটাই বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে আজকাল। তানিয়া বারবার বলেছে একটু খোঁজ খবর নিতে। কিন্তু কে শোনে কার কথা!
শেষ পর্যন্ত ‘উপজেলা শিক্ষা অফিসার’ হয়েছে ফাহিম। ওর প্রথম পোস্টিং হয়েছে ময়মনসিংহ সদর উপজেলায়। ওর মাস্টার্স এখনো শেষ হয়নি। যেহেতু নন-থিসিস তাই আর বেশিদিন লাগবে না। ৩/৪ মাসের মাঝে শেষ হয়ে যাবে। চাকুরীতে যোগদানেরও অনেক সময় বাকী। মেডিক্যাল আরো কি কি যেন বাকি। তানিয়া খুব করে চাইছিল অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিক ফাহিম। কিন্তু ফাহিমের এক কথা উন্নতি করতে চাইলে এখানে সুযোগ আছে। যাক ফাহিম ঠিক করে রেখেছে ময়মনসিংহ চলে যাবে চাকুরী যোগদানের সময় এলেই। এই শহরটাকে ওর ভালই লাগে। অনেকবার গিয়েছে সেখানে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় দেখা হয়েছে অনেকবার।
দীর্ঘদিন পর ঢাকা ছাড়ছে ফাহিম। এতো তাড়াটাড়ি ছাড়তে হবে ভাবেনি। আর কখন যে এই নোংরা, সুযোগ-সুবিধাহীন ঢাকাকে এতোটা ভালবেসে ফেলেছে সে নিজেও জানে না। কি টান এখানে-কি আছে এখানে! কিন্তু তারপর এতো কেনো টানে ঢাকা তাকে। তাকে ছাড়তেই হলো ঢাকা। তানিয়া ঢাকাতে রয়ে যাবে আরো কিছুদিন। মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষাটা ছুটি নিয়ে এসে দিতে হবে ফাহিমের। এদিকে ছেলে এবং মেয়ে দু’পরিবারে বিয়ের ব্যাপারে আলাপ করে রেখেছে। এবার মনে হচ্ছে ফাহিম পার পাচ্ছে না। ওরা ভেবেছিল আরো কিছুদিন সময় নিতে। চাকুরীতে স্থিতি আসুক আগে। নতুন শহরটা পুরাতন হউক। কিন্তু তানিয়ার পরিবার দেরী করতে চাইছে না। মেয়ে মাস্টার্স শেষ করে ফেলছে তাই বাবা-মায়ের চিন্তার শেষ নেই যেন।
ছোট গল্পঃ বেলা শেষে (১ম পর্ব)
ছোট গল্পঃ বেলা শেষে (২য় পর্ব)
যারা নিয়মিত পড়ছিলেন তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি একটা পর্ব বেড়ে যাওয়ার জন্য। এটা অনিচ্ছাকৃত বেড়ে যাওয়া। পরের পর্বে অবশ্যই শেষ করব।
আলোচিত ব্লগ
ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।
ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন
সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।
সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা
সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন
...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না
...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না
ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়
প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন