somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুচির প্রতি ঘৃণা

৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অং সান সুচি। যার হাসির আড়ালে রয়েছে এক কুৎসিত চেহারা। বিকৃত মানসিকতা। রোহিঙ্গাদের রক্ত নিয়ে যিনি খেলছেন হোলি খেলা। গ্রামের পর গ্রাম আগুনে পুড়িয়ে যিনি তুলছেন তৃপ্তির ঢেকুর। রোহিঙ্গাদের আর্তচিৎকার। বাঁচার আকুতি। সবই তার কাছে তুচ্ছ। আরাকানে রক্তগঙ্গার ওপর দাঁড়িয়ে তাইতো তার মুখ থেকে শোনা যায়- রোহিঙ্গাদের ওপর কোনো অত্যাচার চলছে না। আসলে সুচির কুৎসিত মানসিকতা টের পেয়েছিলেন বার্মার সামরিক জান্তারা। আর তাই বছরের পর বছর তাকে গৃহবন্দি করে রেখেছিলেন। তার প্রতি চালিয়েছিলেন অমানবিক আচরণ। নোবেল কমিটি যখন তাকে শান্তির জন্য পুরস্কার দেয়, সেই পুরস্কার আনতেও যেতে দেয়া হয়নি তাকে। তখন বিশ্ববাসী বার্মার সামরিক জান্তাদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিলেন। নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। কিন্তু সেসব পাত্তাই দেয়নি মিয়ানমারের সামরিক সরকার। তারা হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন সুচির হাতে ক্ষমতা গেলে মিয়ানমারকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খার করে দেবে। তাদের আন্দাজই ঠিক হলো। সুচির দল ক্ষমতায় বসার পর একের পর এক অঘটন; শুধু মিয়ানমার নয় আশপাশের সবকটি দেশে আগুন ছড়িয়ে দিয়েছে। আরকান রাজ্যের রোহিঙ্গা বসতিতে অমানবিক নির্যাতন, ধর্ষন, খুন যখন সরকারি মদদে হয় তখন সুচির প্রতি ঘৃণার পারদ জমতে থাকে বিশ্ববাসীর মনে। জাতিসংঘ পর্যন্ত অসহায় সুচির কাছে। সত্যিই সুচি পারেন। পারবেন। মিয়ানমারের বর্তমান সময়ের বর্বরতা ও সুচির ভূমিকা দেখে বিশ্ববিবেক আজ লজ্জিত। তারা একেবারে থ বনে গেছেন। কেউ কোনো রা পর্যন্ত করছেন না। বিশ্বমিডিয়া প্রতিদিন তুলে ধরছে বার্মার নির্মমতার চিত্র। ছোট শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধরা পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছে না সরকারি বাহিনী আর উগ্র বৌদ্ধদের হাত থেকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উলঙ্গ এক নারীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের চিত্র, ছোট্ট শিশুর শরীরে আগুন দিয়ে সরকারি বাহিনীর আনন্দ নৃত্য, গ্রামের পর গ্রাম আগুনে পুড়িয়ে দেয়ার দৃশ্য, এমনকি জ্যান্ত মানুষকে মাটিচাপার দৃশ্য দেখে গা শিহরে ওঠে। এসব নির্মমতা থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গারা ছুটছে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের সীমান্তে। তাদের আহাজারি বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে গোটা পৃথিবীতে। এক করুণ ইতিহাসের জন্ম দিয়েছে সুচির মিয়ানমার। যে ইতিহাস ভবিষ্যৎ পৃথিবী ঘৃণার সঙ্গে স্মরণ করবে। এসব দৃশ্য দেখে তাই বলতে হচ্ছে, সুচির গৃহবন্দি যথার্থ ছিল। অথচ তার মুক্তি চেয়ে এই ঢাকায় কত না মানববন্ধন হয়েছে। রাজপথ উত্তপ্ত হয়েছে। আসলে সে সময় যা হয়েছিল তা ছিল ভুল। বিরাট ভুল। কারণ, সুচির ভেতরের কুৎসিত চেহারা এটাই বলে। আজ মানবিকতা হারিয়ে সুচি যে এক অমানুষ তা প্রমাণিত হয়েছে। তার হৃদয় যে কঠিন পাথরের মূর্তি তা প্রমাণিত হয়েছে। সুচি যে বার্মার নেত্রী হওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছেন তা এখন প্রমাণিত। সুচি শুধু একটি জাতির কুদিশা দেয়ার নেতা। সুচি নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি মৌলবাদী হিসেবে নিজেকে জাহির করেছেন। গোটা বিশ্ব এটা এখন দেখছে। বিশ্ববাসী আজ বুঝেছে তারা ভুল মানুষের জন্য রাজপথে লড়েছেন। ভুল মানুষের জন্য আবেগে তাড়িত হয়েছেন। না হলে মিয়ানমারে এমন বিকৃত রুচির ঘৃণ্যতম কাজে সুচি একটুও ব্যথিত হচ্ছেন না। বরং তার বাহিনীকে প্রকাশ্যে নামিয়ে দিয়েছেন মাঠে। ভাবতে খুবই কষ্ট হয়, একদিন এই সুচির জন্য হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ হয়েছে। শুনেছি সুচির মনের ভেতর বজ্রকঠিন শপথ ছিল। এখন ভাবছিÑ রোহিঙ্গাদের ধ্বংস করার বজ্রকঠিন শপথই নিয়েছিলেন হয়তো সুচি; যা এখন বাস্তবে করে দেখাচ্ছেন। একদিন এই ব্যর্থ সুচিকেই ডাকা হতো এশিয়ার নেলসন ম্যান্ডেলা হিসেবে। নাহ। সুচির সঙ্গে ম্যান্ডেলার নাম যুক্ত করে ম্যান্ডেলাকে অপমানিত করা নয়। বিশ্বে আজ এক ঘৃণার নাম সুচি। বেঈমানদের যেমন মীরজাফর নামে আখ্যায়িত করা হয়, তেমন ঘৃণার নামও সুচি।
ইতিহাস বলে, সুচির রাজনৈতিক জীবনের ২০ বছরের ১৫ বছরই কেটেছে বন্দিদশায়। কখনো গৃহবন্দি কখনো বা কারাগারে। এর বাইরেও যন্ত্রণা আর বঞ্চনার শেষ ছিল না। তার পরও শুনেছি জীবনের বিনিময়ে হলেও দেশে গণতন্ত্রের পতাকা ওড়ানোর শপথ নিয়েছিলেন সুচি। এই কি সুচির গণতন্ত্রের নমুনা? নাকি সুচি সামরিক জান্তাদের নেয়া তার ওপর অত্যাচার নির্যাতনের প্রতিশোধ নিচ্ছেন রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর নির্যাতন চালিয়ে। তার মনের জ্বালা মেটাচ্ছেন বর্বরতার মাধ্যমে। অথচ এই সুচি সাধারণ গৃহবধূ হিসেবেই জীবন শুরু করেছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক মাইকেল অ্যারিসকে বিয়ে করে। বসবাস করতে থাকেন সেখানেই। ১৯৮৮ সালে তার মা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দেখতে ছুটে আসেন নিজ দেশে। মৃত্যুপথযাত্রী মাকে শেষবারের মতো দেখতে আসাই তার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। জড়িয়ে পড়লেন মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে। এরপর ১৯৮৯ সালে গৃহবন্দি করা হয় তাকে। পারিবারিক জীবনেরও সমাপ্তি ঘটল সেখানেই। এরপর গৃহবন্দি ও কারাগারে কাটান তিনি। স্বামীর সঙ্গে শেষ দেখা ১৯৯৫ সালের বড়দিনে হলেও ছেলেদের সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হয়নি। এর চার বছর পর স্বামী মারা যান। চাইলেই তিনি মুক্তি পেতে পারতেন। কিন্তু স্বামী-সন্তানকে দেখতে একবার দেশ ছাড়লে আর কখনোই তাকে দেশে ঢুকতে দেয়া হতো না। তাই সংসার ছেড়েছেন। মাকে দেখতে এসে গঠন করেন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। আর এতে সামরিক জান্তার চক্ষুশূলে পরিণত হন সুচি। ১৯৯০ সালে সাধারণ নির্বাচনে সুচির দল জয়লাভ করলেও ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি সামরিক জান্তারা। কিন্তু আন্দোলন চালিয়ে যান সুচি। পরিচিতি পান আপসহীন গণতন্ত্রকামী হিসেবে; যা আরও দৃঢ় হয় ১৯৯১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হওয়ার মাধ্যমে। মিয়ানমারের স্বাধীনতার নায়ক অং সানের কন্যা সুচি নোবেল পুরস্কারও নিজে গিয়ে আনতে পারেননি। এজন্য হয়তো তার সব ক্ষোভ গিয়ে পড়েছে মুসলমান রোহিঙ্গাদের ওপর। তাই ক্ষমতায় তার দল যাওয়ার পরপরই প্রথম আঘাত আসে এই রোহিঙ্গাদের ওপরই। যে সুচি হয়ে উঠেছিলেন দেশটির গণতন্ত্রকামী জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক। সেই সুচির এহেন কর্মকা-ে তার সুনাম ক্ষয়ে এসেছে গোটা বিশ্বে। তিনি আদর্শচ্যুত হয়েছেন। গৃহবন্দি সুচির সঙ্গে ক্ষমতার মসনদে বসা সুচির বিশাল পার্থক্য। আর তাই তো দেশে দেশে সেøাগান উঠেছে- কেড়ে নেয়া হোক তার নোবেল পুরস্কার। ঘৃণার আরেক নাম হয়ে উঠেছে সুচি। অথচ তার বাবা অং সান আধুনিক মিয়ানমারের শুধু প্রতিষ্ঠাতাই ছিলেন না, ছিলেন দেশটির সেনাবাহিনীরও প্রতিষ্ঠাতা। তার মেয়েকেই কি না সেই সেনাবাহিনী গৃহবন্দি করে রাখে ১৫ বছর। কারণ, সামরিক জেনারেলরা তাকে চিনেছিলেন। তারা আঁচ করতে পেরেছিলেন সুচির হাতে মিয়ানমার সুরক্ষিত থাকবে না। শুধু বুঝতে পারেনি বিশ্ব। আজ যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের বর্বর নির্যাতন, হত্যা, গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেয়ার দৃশ্য দেখতে পায় বিশ্ব সম্প্রদায় তখন সর্বত্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই করে নেয়া সুচি নিক্ষিপ্ত হয় ময়লার ভাগাড়ে। ছিঃ ছিঃ রব ওঠে সর্বত্র। ঘৃণায় থু থু ফেলে সবাই।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০১
১৫টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×