somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইংরেজ শাসন আমলের অভিশপ্ত নিদর্শন মেহেরপুরের ঐতিহাসিক আমঝুপি নীলকুঠি ধ্বংস হতে চলেছে।

২৪ শে মার্চ, ২০১২ বিকাল ৫:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সূত্র এখানে:-
অযত্ন আর অবহেলায় ধ্বংশ হতে চলেছে কালের সাক্ষী মেহেরপুরের ঐতিহাসিক আমঝুপি নীলকুঠি। বৃটিশ আমলে নীল চাষের উদ্দেশে ইংরেজরা ৭৪ একর জমির ওপর এই কুঠিবাড়ি গড়ে তোলে। আগে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী কুঠিবাড়ি দেখতে আসলেও এখন আর দর্শনার্থীদের দেখা মেলে না। সরকারের উদাসীনতা এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অনেক জায়গাই বেদখল হয়ে গেছে। বাকিটাও ধ্বংশ হতে চলেছে।
মেহেরপুর অঞ্চলে ১৭৭৮ সালে ক্যারল ব্লুম নামে এক ইংরেজ ব্যক্তি তৎকালীন নদীয়া জেলা বর্তমানে মেহেরপুরের আমঝুপির কাজলা নদীর তীরে ৩ শ’ বিঘা জমির উপর নীলকুঠি স্থাপন করেন। নীল চাষ অত্যাধিক লাভজনক হওয়ায় ১৭৯৬ সালে এখানে নীল চাষ শুরু হয়। এ সময় বিখ্যাত বর্গী দস্যু নেতা রঘুনাথ ঘোষালির সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে গোয়ালা চৌধুরী নিহত হলে মেহেরপুর অঞ্চলে রানী ভবানীর জমিদারীভুক্ত হয়। রানী ভবানী নিহত হবার পর হাত বদল হয়ে গোটা অঞ্চলটি মথুরানাথ মুখার্জির জমিদারীভুক্ত হয়। পরে তার ছেলে চন্দ্র মোহন বৃহৎ অঙ্কের টাকা নজরানা নিয়ে মেহেরপুরকে জেমস হিলের হাতে তুলে দেন। ১৮১৮ থেকে ১৮২০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে মেহেরপুরর বেশ কয়েকটি স্থানে নীলকুঠি স্থাপিত হয়। তন্মধ্যে আমঝুপি, গাংনীর ভাটপাড়া, বামন্দি নীলকুঠি অন্যতম। নীল গাছ পচা পানি জ্বালিয়ে তৈরি করা হতো নীল রঙ। এক বিঘা জমিতে আড়াই থেকে তিন কেজি নীল উৎপন্ন হতো,যা উৎপাদন করতে ব্যয় হতো ১২ থেকে ১৪ টাকা। অথচ চাষীরা পেতো মাত্র তিন থেকে চার টাকা। নীল গাছ থেকে যে রঙ তৈরি করা হতো তা ছিল চাষীদের বুকের পুঞ্জিভূত রক্ত।

কথিত আছে রবাট ক্লাইভ প্রায়ই সময় কাটানোর জন্য আমঝুপি নীলকুঠিতে আসতেন । নীলকুঠীতে তার ব্যবহার্য্য সামগ্রীও ছিল , যা সংরক্ষনের জন্য জাতীয় জাদুঘর কতৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে ।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় ইংরেজরা চলে যাবার সময় পূর্ব পাকিস্থানের (বাংলাদেশ) সরকারের কাছে কাছে হস্তান্তর করে যায় এই কুঠিবাড়ি সহ ভূ-সম্পত্তি। কুঠি বাড়িটিতে রয়েছে শয়ণ কক্ষ, স্নেকপ্র“ফ রুম, নাচঘর ও মৃত্যুকুপ। প্রচলিত রয়েছে এখানে নর্তকীদেরকে নাচতে হতো। যদি কোন প্রজা খাজনা কিংবা নীল চাষে অনীহা প্রকাশ করতো তাহলে তাকে হত্যা করে মৃত্যুকুপে নিক্ষেপ করা হতো। স্নেকপ্র“ফ রুমটি এতই মসৃণ যে সাপ কিংবা পিঁপড়া চলতে পারেনা। এখানে রয়েছে ঘোড়ার ঘর, কয়েদখানা, কাচারী ঘর ও নায়েবদের আবাসন। মূল ভবন ছাড়া বাকি ঘরগুলো সংস্কারের অভাবে তা ধ্বংসের পথে। ১৯৭৮ সালে ১৩ মে তারিখে খুলনা বিভাগ উন্নয়ন বোর্ডের আমঝুপি অধিবেশনে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সংস্কার ও উন্নয়ন করা হয়। এরপর থেকে জৌলুশ হারাচ্ছে আমঝুপি কুঠিবাড়ি। এ কুঠিবাড়ির চারদিকের সুশোভিত বাগান এখন জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। সে সময়ের ঘোড়ার আস্তাবল, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, এতিমখানা সহ অনেক স্থাপনা একেবারেই ধবংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। দামি মার্বেল পাথর আর গুপ্তধনের আশায় এলাকার প্রভাবশালীদের ইন্ধনে ভেঙে ফেলা হয়েছে। রক্ষাণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে সরকারের বাজস্ব বিভাগ ,তাদের নিয়োজিত কয়েকজন জন মাষ্টার রোলে কর্মরত থাকলেও তারা ঠিকমত বেতন ভাতা পায়না। এরই মধ্যে ভবনের ইট ও পাথর চুরি হয়ে গেছে। দামি ও ফলজ বৃক্ষ হয়েছে নিধন। বাকি অংশ গড়ে উঠেছে আবাসন প্রকল্প, জায়গা জমি ক্রমান্বয়ে বেদখল হয়ে যাচ্ছে। নীলকুঠির মূল ভবন ছাড়াও বিধ্বস্ত ভবনের চার পাশে আগাছার মতো ছড়িয়ে আছে নীল গাছ। কুঠি ভবন ও এ নীল গাছ স্মরণ করিয়ে দেয় নীলকরদের অত্যাচার ও নির্যাতনের কথা।
সুশোভিত বাগান সহ এর বিভিন্ন অবকাঠামো নষ্ট হচ্ছে। সরকার এই পর্যটন কেন্দ্রটিকে নতুন করে সংস্কার সহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তুললে আবারও মানুষ দেখতে আসবে এই আমঝুপিকে।
নীল কুঠিতে ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা তাপসী রাবেয়া বলেন, আমঝুপি নীলকুঠির অনেক গল্প শুনেছি। বেড়াতে এসে আশাহত হয়েছি। ব্যবস্থাপনা একেবারেই ভাল নয়। অযত্ন অবহেলায় সবকিছু নষ্ট হচ্ছে।
মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য জয়ন্ল আবেদিন বলেন, ঐতিহাসিক দিক থেকে আমঝুপি নীলকুঠি গুরত্ব বহন করে। কিন্তু এখানে তেমন কোন অবকাঠামো গড়ে উঠেনি। নেই আধুনিক কোন সুযোগ সুবিধা। প্রতি বছর মেহেরপুরের মুজিবনগরে প্রায় ১০ লাখ পর্যটক আসে। আর মুজিবনগর আসা মানেই আমঝুপি নীলকুঠি দেখা অবধারিত , কেননা দুটি ঐতিহাসিক স্থান স্বল্প দূরত্বে অবস্থিত এবং গুরতবও অত্যাধিক । কিন্তু তারা নিরাশ হয়ে ফিরে যায়। আমরা ইতোমধ্যে একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১২ বিকাল ৫:২১
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×