শ্রীমঙ্গলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চা বাগানের জন্য জমি ইজারা নিয়ে সেখানে রাবার বাগান স্থাপনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাগান কর্তপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, বাণিজ্যিক কমপে¬ক্স নির্মাণ, ছড়া থেকে বালু উত্তোলন করছেন তারা। ইজারা নীতি ভঙ্গকারী এসব চা বাগানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে। নীতিমালা অমান্যকারী চা বাগানের ভিডিও চিত্র এবং লিখিত প্রতিবেদন পাঠাতে ভূমি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চা বাগান ইজারা নিয়ে ইজারা গ্রহীতা চা চাষ থেকে অধিক লাভজনক প্রজাতির বৃক্ষরোপন, বানিজ্যিক কমপে¬ক্স স্থাপন, বালু/মাটি উত্তোলন করছেন। এতে করে চা শিল্প ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। চা বাগানের জমিতে এসব কার্যক্রম সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী বে-আইনী। সরকারী নীতি অনুযায়ী চা বাগানের জন্য ভূমি ইজারা নিয়ে সেখানে সরকারের অনুমতি ব্যতিরেকে চা চাষ ছাড়া অন্য কিছুই করা যাবে না।
চা বাগানের জমিতে বে-আইনীভাবে অন্য প্রজাতির বৃক্ষ রোপন করা প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করলে শ্রীমঙ্গলস্থ ফিনলে কোম্পানীর প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি এ বিষয়ে বাংলাদেশীয় চা-সংসদ ও চা বোর্ডের উদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
ফিনলে কোম্পানীর সাথে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ৭০ দশকের শেষের দিকে তারা সরকারের অনুমতি নিয়ে যে জায়গায় চা চাষ হয় না শুধু সেখানে তারা রাবার চাষ শুরু করেছেন। সূত্রটি জানায়, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের লোকজন প্রতিবছরই চা বাগানের সার্বিক বিষয়ে মনিটরিং করছেন। সরকারের জায়গায় কিছু করতে হলে অবশ্যই সরকারের অনুমতি নিতে হবে। এসব রাবার বাগান বড় বড় প্রকল্পে পরিণত হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফিনলে সদর দপ্তরের এক উদ্ধর্তন কর্মকর্তা বলেন, সরকার চাইলে অব্যশ নতুন করে আর রাবার চাষ করা হবে না। তবে যেগুলো হয়ে গেছে সেগুলোর ব্যাপারে সরকারকে ভেবে চিন্তেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজুর রহমান বৃহস্পতিবার এ প্রতিবেদককে জানান, ইজারা আইন লঙ্গন হলে অব্যশই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে চা বাগান সংক্রান্ত এ বিষয়ে তার জানা নেই। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের কোন নির্দেশনাও অদ্যাবদি তার কাছে পৌছেনি। তবে অভিযোগের ব্যাপারে তিনি তদন্ত করবেন এবং মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যাবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের আওতাধীন শ্রীমঙ্গলস্থ প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের চা চাষের জন্য ইজারাকৃত জমিতে রাবার চাষের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অনেক চা বাগানই ইজারা নীতি ভঙ্গ করে দীর্ঘদিন যাবৎ তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ফিনলে চা বাগান কর্তৃপক্ষ নীতিমালা ভঙ্গ করে রাবার বাগান স্থাপন সহ অনান্য কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি জানান, যে সব এলাকা চা চাষের অনুপযোগী শুধুমাত্র সেসব এলাকায় সরকারের অনুমোদন নিয়ে রাবার চাষ করতে পারে। কিন্তু ফিনলে কোম্পানী ইজারা নীতি লঙ্গন করে যেসব এলাকা চা চাষের উপযোগী সেসব এলাকায় ব্যাপক হারে রাবার চাষ করে চলেছে। তারা চায়ের এলাকা বৃদ্ধি না করে রাবার চাষের দিকে বেশী মনোযোগী হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বর্তমান সরকারের চা উৎপাদনে ব্যাপক উন্নয়ন এবং লক্ষ্য মাত্রা ব্যর্থ হবে। বাগান কর্তৃপক্ষের এসব আত্মঘাতী পরিকল্পনায় চা শিল্প হুমকির মুখে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিবে। চা একটি লাভজনক শিল্প। আভ্যন্তরিন চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় রপ্তানী শূন্যের কোঠায় দাড়িয়েছে । এ অবস্থা চলতে থাকলে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ চা আমদানীকারক দেশ হিসেবে পরিণত হবে। এছাড়াও চায়ের মাধ্যমে সরকার ১৫% ট্যাক্স পাচ্ছে, কিন্তু রাবার থেকে তা পাচ্ছে না। এছাড়াও রাবার গাছ পরিবেশ বান্ধব নয় বলে তিনি জানিয়েছেন।