somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলাম কি একটি অগণাতান্ত্রিক জীবন পদ্ধতি - ০১ - দি এ টীমের পোস্টের জবাব

০৯ ই আগস্ট, ২০০৭ রাত ১১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গতকাল দি এ টীম কর্তৃক প্রকাশিত "ইসলাম আর গনতন্ত্র- ১ (প্রথম ৪ খালিফা)" পোস্টটি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করল। চরিত্র বিচারে এ ধরনের লেখা ব্লগে নতুন নয় এবং প্রতিবারই এ ধরনের লেখা নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক হয়। সৌভাগ্য অথবা দুর্ভাগ্যের বিষয় কোনসময়ই এ ধরনের বিতর্কে আমার সক্রিয় অংশগ্রহণ করা হয়ে ওঠে না। কারণ অন্যান্য ব্লগারদের মতো আমার পক্ষে নিয়মিত ব্লগিং করা সম্ভব হয় না - আমি সাধারণত দুই-তিন দিন পর পর ব্লগে আসি। এ পোস্টটার বিতর্কেও হয়তো আমি অংশ নিতাম না। কিন্তু দেখলাম এর লেখক এটাকে সিরিজ আকারে লিখে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে এবং আমি যতক্ষণ পর্যন্ত ব্লগে ছিলাম ততক্ষণ পর্যন্ত পোস্টটার আপত্তিকর বিষয়গুলোর প্রতিবাদে ভালো কোন যুক্তি কেউ দেখাতে পারেনি। কাজেই একজন মুসলমান হিসেবে যুক্তিসংগত ভাবেই এই পোস্টের প্রতিবাদ করা আমার নৈতিক দায়িত্ব বলে আমার মনে হয়েছে।

ইসলাম একটি গণতান্ত্রিক জীবন ব্যবস্থা কিনা সেই আলোচনায় যাওয়ার আগে পোস্টের অন্য একটা বিষয় সম্পর্কে বলি। লেখক ডাঃ আইজউদ্দীনের মতে - "প্রথম তিন খালিফা স্বাভাবিক মৃত্যু না হওয়া ইসলামের গনতান্ত্রয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করেচে।" খুলাফায়ে রাশেদীন সম্পর্কে এই ধরনের একটা বাক্য লেখার আগে তার ভাবা উচিত ছিল, "বঙ্গবন্ধুর স্বাভাবিক মৃত্যু না হওয়া এবং সেই অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর কোন প্রতিবাদ না হওয়া বঙ্গবন্ধুর দেশপ্রেম, দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা বা ত্যাগ স্বীকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে" এই বাক্যটা তিনি মেনে নিতে রাজি আছেন কি না। খুলাফায়ে রাশেদীনের মতো অসাধারণ চরিত্রের অধিকারী মহামানবদের সাথে, যদের নাম ইহুদী-খ্রিস্টান গবেষকরা পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে আদর্শ ব্যক্তি বা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করতে গিয়ে সেখান থেকে বাদ দিতে পারে না, তাদের সাথে বঙ্গবন্ধুর একজন লোকাল নেতার তুলনা করে তাদেরকে অসম্মান করব, এত বড় দুঃসাহসী আমি নই। তুলনাটা এই কারণে দিলাম যে, এসকল তথাকথিক প্রগতিশীল (প্রকৃতপক্ষে ইসলাম বিরোধী) যারা
বঙ্গবন্ধু, রবীন্দ্রনাথ প্রমুখকে মহামানব মনে করে, তারা বিতর্কিত হওয়া সত্ত্বেও তাদের কোন দোষই এই প্রগতিশীলদের চোখে পড়ে না, অথচ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মাদ (স) এবং তার অনুসারীদের দোষ খুঁজে বের করতে এরা বদ্ধ পরিকর, তাদের জন্য এর চেয়ে বড় কোন তুলনার দরকার নেই। এই তুলনার কারণেই হয়তো এরা আমাকে রাজাকার বলে গালাগালি শুরু করবে অথচ তারা যে রাসূল এবং সাহাবায়ে ক্বেরাম সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করবে, সে জন্য তাদেরকে কিছুই বলা যাবে না।

যাই হোক, এবার আসি ইসলামের গণতন্ত্রয়ণ নিয়ে। আমার মতে আমরা যেটাকে গণতন্ত্র বলি, হুমায়ূন আজাদের ভাষায় যেই গণতন্ত্রে মাত্র 220 জন সাংসদ যদি সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশের মানুষ আসলে মানুষ না, তাহলে সেটাই বাংলাদেশের আইন হয়ে যাবে, ইসলাম সেই গণতন্ত্র সমর্থন করে না। ইসলামে গণতন্ত্র নয়, আইনের সুসাশনই বড় কথা। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়ে দুই-তৃতায়াংশ সমর্থন নিয়ে গণবিরোধী আইন প্রণয়ন করা গণতন্ত্রেই সম্ভব, মনোনীত হয়ে ইসলামে সেটা সম্ভব নয়। ইসলামে সব খলীফাকেই কুরআন এবং সুন্নাহের আইন অনুযায়ী সকল সিদ্ধান্ত নিতে হয়, সেটা যেই খলীফাই হন এবং যেভাবেই তিনি নির্বাচিত হন না কেন।

বর্তমানে যে গণতন্ত্র নিয়ে এত কথা, ইসলাম সেই গণতন্ত্র সমর্থন করে না। কিন্তু ইসলামের গণতন্ত্র এর চেয়েও মজবুত। প্রকৃতপক্ষে সেটাই হচ্ছে গণতন্ত্র - প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র - যে গণতন্ত্রের শক্তিবলে একজন সাধারণ ব্যক্তি খলিফা উমারকে (রা) জনসমক্ষে তিনি অতিরিক্ত জামা কোথায় পেয়েছেন - এরকম একটি অপমানজনক (!) প্রশ্ন করতে পারে।
এটাই হচ্ছে প্রকৃত গণতন্ত্র - আইনের সমানাধিকার, যেখানে খলীফা হয়েও আলীকে (রা) কাজীর দরবারে দাঁড়াতে হয়, এটাই হচ্ছে প্রশাসনের জবাবদিহিতা। আর বর্তমানে বিভিন্ন দেশে গ
ণতন্ত্রের নামে যা চলছে, সেটা হচ্ছে এক ধরনের ধনীকতন্ত্র, সংখ্যাধিক্যতন্ত্র - একধরনের আইওয়াশ। এই তন্ত্রে দেশের নব্বই শতাংশ মানুষ যদি ধনী হয় এবং তারা যদি সিদ্ধান্ত নেয় যে, গরীবদের মৌলিক অধিকারের কোন প্রয়োজন নেই - তবে সেটাই বাস্তবায়িত হবে গণতন্ত্রের নামে। কিন্তু ইসলামে এটা কোনদিনই সম্ভব নয়।

ইসলামে শাসক কিভাবে নির্বাচিত হচ্ছেন, তার পরিবর্তে কে নির্বাচিত হচ্ছেন, আল্লাহ-রাসূলের প্রতি তার ঈমান কতুটুকু বা তিনি কতটুকু সত নাগরিক এবং তিনি আইন অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন কি না, তার উপরই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। ক্যাম্পেইন করে নির্বাচন ইসলাম সমর্থন করে না - কারণ এতে বিত্তবানের জয়লাভের সম্ভাবনা বেশি থাকে। বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তিবিদরাও বলেছেন, ইসলাম প্রচলিত পশ্চিমা গণতন্ত্র সমর্থন করে না। মাওলানা মওদুদীর বিভিন্ন লেখা নিয়ে হয়তে অনেক বিতর্ক থাকতে পারে, কিন্তু একটা কথা পরিষ্কারভাবে বলেছেন, "খোদাদ্রোহিতার আরেক নাম গণতন্ত্র। একজন মুসলমান হিসেবে জনগণ দ্বারা পরিচালিত, জনগণের জন্য এবং জনগণের সরকার - এই মতামতে আমি বিশ্বাসী নই।" আমি তার এই বক্তব্য শতভাগ সমর্থন করি। কিন্তু বর্তমানে জায়ামাতে ইসলামীর মতো তথাকথিত ইসলামী দলগুলো ক্ষমতায় যাওয়ার লোভে মওদুদীর এই মতবাদ থেকে দূরে সরে গিয়েছে এবং অন্যান্য দলের সাথে আপোষ করছে, জোট করছে এবং নির্বাচনে অংশগ্রহন করছে।

সবশেষে আইজউদ্দিনের আরেকটা ভুল ধরিয়ে দিতে চাই। সেটা হল, চার খলীফা রাসূলের আত্মীয় বলে রাসূল তাদেরকে মনোনীত করেন নি। কারণ রাসূল তাদের সাথে আত্মীয়তা করেছেন নবুওয়্যাত পাওয়ার অনেক পরে, যতদিনে তারা তাদের যোগ্যতা প্রমাণ করে রাসূলের সান্নিধ্যে আসতে পেরেছিলাম। ব্যাপারটা এরকম যে, একজন মানুষকে তার সঙ্গীদের দ্বারাই চেনা যায়। সে হিসেবে রাসূলের যারা প্রিয় সহচর তারা অবশ্যই সততা, নিষ্ঠা, ঈমান, ত্যাগ সবদিক থেকে অন্যদের চেয়ে শ্রেয় বলে প্রমাণিত হয়েছিলেন। সে কারণেই রাসূল তাদের সাথে আত্মীয়তা করেছিলেন। এবং পরবর্তীতে যথাসময়ে তারা নিজেদের যোগ্যতা বলে খলীফা মনোনীত হয়েছিলেন এবং তাদের খিলাফতের ব্যাপারে কোন সাহাবী আপত্তি করেন নি।

আশা করি, আইজউদ্দিন এবং দি এ টীমকে আল্লাহ তা'আলা বুঝার জ্ঞান দিবেন

বি:দ্র: ইসলাম আর গনতন্ত্র- ২ এবং ৩ এর পাল্টা উত্তর যথাসময়ে দেওয়া হবে।
৮২টি মন্তব্য ০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×