somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লিবিয়ার নির্বাচন: কোন পথে যাচ্ছে লিবিয়া?

০৭ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আজ দীর্ঘ ষাট বছর লিবিয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল। অন্যান্য স্বৈরশাসকরা প্রহসনমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান করলেও গাদ্দাফীর আমলে নির্বাচন, রাজনৈতিক দল এগুলো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা করার একমাত্র শাস্তি ছিল মৃত্যুদন্ড, প্রকাশ্য রাজপথে ল্যাম্পপোস্টে ঝুলিয়ে ফাঁসি।

২০১১ সালে গাদ্দাফীর পতনের পর ক্ষমতাসীন এনটিসি ঘোষণা দিয়েছিল আটমাসের মধ্যেই তারা নির্বাচন দিবে। যারা এনটিসিকে পুতুল সরকার মনে করে, তারা তো বটেই, আমিও ভেবেছিলাম আট মাসের মধ্যে কোনভাবেই নির্বাচন দেওয়া সম্ভব না। বাংলাদেশের মতো গণতান্ত্রিক দেশেও ফখরুদ্দীন সরকার এসে দুই বছরের আগে নির্বাচন দিতে পারে নি, আর লিবিয়ার মতো দেশ, যেখানে অনেকে নির্বাচন কাকে বলে সেটাই জানে না, সেখানে তো আট মাস পুরাই অসম্ভব। আট বছর বললে একটা কথা ছিল! কিন্তু সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে প্রতিদিনের ছোটখাট সংঘর্ষের মধ্য দিয়েও আট মাস নয়, সাড়ে আট মাসের মধ্যে ঠিকই নির্বাচন দিতে সক্ষম হয়েছে সরকার।

মোট ভোটারে সংখ্যা আনুমানিক ৩৫ লক্ষ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু নির্বাচনের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছে প্রায় ২৮ লক্ষ মানুষ, যা প্রায় ৭৮%। নির্বাচনী আইনও মোটামুটি ভালোই মনে হল আমার কাছে। যারা এই মুহূর্তে ক্ষমতায় আছে অথবা নিরাপত্তাবাহিনীর সাথে জড়িত আছে, তারা কেউ প্রার্থীতা করতে পারবে না। কাজেই নতুন সরকার হবে লিবিয়ানদের ভোটে নির্বাচিত সম্পূর্ণ নতুন সরকার।

নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটটা দেখলাম। (http://www.hnec.ly/en/) সব প্রার্থীর নাম দেওয়া আছে। কোন এলাকার প্রার্থীদেরকে প্রচারণার জন্য কত টাকা খরচ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, সেটাও উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, কার ফান্ডের উত্স কি, এবং কে কত খরচ করেছে সেটাও অবিলম্বেই প্রকাশ করা হবে।

এই নির্বাচনে ২০০ টি আসন নিয়ে গঠিত (৮০টি দলের প্রার্থীদের জন্য, ১২০টি ব্যক্তিগত প্রার্থীর জন্য) এই সংসদ নির্বাচনে প্রায় ৩৫০০ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দীতা করছে, যার মধ্যে ৫০০ এরও অধিক নারী। এই সংসদের কাজ হবে আগামী এক বছর দেশ পরিচালনা করা, ৬০ সদস্যের সংসদীয় কমিটি তৈরি করা, যাদের কাজ হবে সংবিধান তৈরি করা, সেই সংবিধানকে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে পাশ করিয়ে জনসমক্ষে প্রকাশ করা এবং হ্যাঁ-না ভোটের মাধ্যমে দুই-তৃতীয়াংশ জনসমর্থন আদায় করা, এক বছর পর সংবিধান অনুযায়ী পরবর্তী নির্বাচনের আয়োজন করা।

এখন পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু ভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। দুর্নীতি বা কারচুপির কোন অভিযোগ উঠেনি। কিন্তু আজদাবিয়া এবং ব্রেগার কয়েকটি কেন্দ্রে ফেডেরালিস্টরা আক্রমণ করে নির্বাচনী সামগ্রী লুট করে নিয়ে গেছে এবং আগুন ধরে দিয়েছে। তারা লিবিয়াকে ফেডেরাল রাষ্ট্র করার দাবিতে কয়েক মাস ধরেই আন্দোলন করে আসছিল।

নির্বাচন কী, কিভাবে ভোট দিতে হবে, আসন কিভাবে বন্টিত হবে, এগুলোর উপর নির্বাচন কমিশন বেশ দারুণ একটা কার্টুন তৈরি করেছে, যেটা গত ক'মাস ধরে লিবিয়ান টিভি চ্যানেলগুলোতে সারাদিনই দেখানো হচ্ছিল। কিন্তু প্রার্থীদেরকে প্রচারণা করার জন্য মাত্র দুই সপ্তাহ সময় দেওয়ায় মানুষের কাছে অধিকাংশ প্রার্থীই অপরিচিত রয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত মানুষ ক্বাবিলা বা গোত্র বিবেচনাতেই ভোট দিচ্ছে।

ব্যক্তিদেরকে যেহেতু কেউ ভালোমত চিনে না, তাই সেক্ষেত্রে কারা বিজয়ী হবে বলা মুশকিল। কিন্তু দলের ক্ষেত্রে আমার নিজের ব্যক্তিগত পছন্দ যুদ্ধকালীন সময়ের বিদ্রোহীদের প্রধানমন্ত্রী মাহমুদ জিবরীলকে। ফেইসবুকে দেখেও মনে হচ্ছে লিবিয়ানদের মধ্যেও তার জনপ্রিয়তা বেশ ভালোই। কাজেই তার দলের একটা সম্ভাবনা আছে। যদিও সিরতে তার দলের প্রচারণা খুবই দুর্বল ছিল।

আর দল হিসেবে আছে আব্দুল হাকিম বিল হাজের দল। এই ভদ্রলোক উগ্র ইসলামপন্থী। আফগানিস্থানে যুদ্ধ করা, সিআইএর হাতে গ্রেপ্তার হওয়া, সিআইএ, স্কটল্যান্ডইয়ার্ড এবং গাদ্দাফী সবার হাতেই টরচারের শিকার হওয়া। যুদ্ধের শুরু থেকেই কাতার এদরকে সমর্থন এবং সহযোগিতা করে আসছে। চরম ইসলামন্থী ছাড়া সাধারণ লিবিয়ানদের মধ্যে এদের খুব একটা সমর্থন নেই। কিন্তু আলজাজিরার মতো শক্তিশালী নেটওয়ার্ক যখন প্রতিবার লিবিয়ার নির্বাচনের খবর দেখানোর নামে এদের সাক্ষাত্কার নেয়, তখন সেটা একটা দুশ্চিন্তারই বটে!

যাই হোক, আশা করি, লিবিয়ার ভবিষ্যত উজ্জ্বল হোক। মাহমুদ জিবরীল জাতীয় উদারপন্থী কারও জয় হোক। মিলিশিয়াগুলো সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণে আসুক ... ইত্যাদি।

সিরতে নির্বাচনী প্রচারণা এবং ভোটের কিছু দৃশ্য:
















নিচের ছবিটা সিরতের না, ত্রিপলীর:



সবশেষে একটা কৌতুক:

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১১:১৭
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×