ইরাকের মৌসুল আইএস মুক্ত হতে কিরকম সময় লাগতে পারে? কয়েক সপ্তাহ? কয়েক মাস? আমার ধারনা - বছর গড়াবে।
কারণ হিসেবে লিবিয়ার সিরতের সাথে মৌসুলের তুলনা করি, যেখানে গত ছয়মাসের যুদ্ধে আইএস প্রায় সম্পূর্ণরূপে পরাজিত হওয়ার পথে।
১। সিরত খুবই ছোট শহর। ঘনবসতি খুবই অল্প এলাকা জুড়ে। সেই তুলনায় মৌসুল অনেক বড় এলাকা, প্রচন্ড ঘনবসতিপূর্ণ, যেটা আইএসের গেরিলা ওয়ারফেয়ারের জন্য সুবিধাজনক।
২। সিরতে আইএস সাধারণ জনগণকে জিম্মি করেনি, এর প্রায় একলাখ অধিবাসীর প্রায় সবাই বিনা বাধায় বেরিয়ে যেতে পেরেছে। কিন্তু মৌসুলের ২৫ লাখ জনসংখ্যার একটা বড় অংশ জিম্মি।
৩। সিরতের ভূপ্রকৃতি সমতল, যেটা আইএসের গেরিলা ওয়ারফেয়ারের জন্য মৌসুলের তুলনায় অনেক বিপজ্জনক।
৪। সিরতে উঁচু ভবনের সংখ্যাও খুবই কম। চারতলার চেয়ে উঁচু বাড়ি নেই বললেই চলে। সেই তুলনায় মৌসুলে প্রচুর উঁচু বিল্ডিং আছে, যেটা স্নাইপারদের জন্য খুবই সহায়ক।
৫। সিরতে পুরো যুদ্ধটা করেছে মূলত একটা পক্ষ, মিসরাতীরা। একটাই কমান্ড, নিজেদের মধ্যে কোন বিভেদ নাই, যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মৌসুলে সিরতের তুলনায় আনুপাতিক হারে যৌথবাহিনীর সংখ্যা অনেক বেশি হলেও তারা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত - শিয়া, সুন্নী, কুর্দি, তুর্কি, আন্তর্জাতিক বাহিনী। প্রত্যেকের এজেন্ডা ভিন্ন এবং অনেকেই নিজেদের মধ্যেও দ্বন্দ্বে লিপ্ত।
৬। সিরতের আইএস শুধু নিজেরাই যুদ্ধ করেছে, অন্য কোন বাহিনীর সহায়তা পায় নি। এমনিতে যদিও আইএসের সাথে আল ক্বায়েদার দ্বন্দ্ব চরমে, কিন্তু সাম্প্রতি আল ক্বায়েদার (একিউআইএম, একিউএপি) কিছু নেতার বক্তব্যে মৌসুলে যৌথ বাহিনীর আগ্রাসনের প্রতিবাদ দেখা গেছে। যদি মৌসুলে শিয়া এবং যৌথ বাহিনীর অপারেশনে সাধারণ জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে, তাহলে সেখানে আল ক্বায়েদার জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
এখন, সবদিক বিবেচনায় সিরত অপারেশনটা খুবই সহজ ছিল। সেখানে থাকা আইএসদের একটা বড় অংশ শুরুতেই পালিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রচন্ড শক্তিশালী মিসরাতী বাহিনীর (এরাই ২০১১ সালে ত্রিপলী, বানিওয়ালিদ, সিরত সহ বিশাল এলাকা গাদ্দাফীর হাত থেকে মুক্ত করেছিল) আমেরিকার বিমান হামলা, আমেরিকান এবং ব্রিটিশ স্পেশাল ফোর্সের পরামর্শ, ট্রেনিং নিয়েও সিরত মুক্ত করতে ছয়মাস লেগে যাচ্ছে। কারণ মূলত একটাই আইএসের আত্মঘাতী হামলা। হাউ ডু ইউ ফাইট অ্যা ফ্যানাটিক আর্মি হু ইজ অলরেডি ডেড?
সিরতের তুলনায় বেনগাজীর সিচুয়েশন কিছুটা মৌসুলের কাছাকাছি। সেখানে জনসংখ্যা বেশি, ঘনবসতিপূর্ণ, উঁচ ভবন আছে, জনগণ ট্র্যাপড আছে, এবং সেখানে একক শক্তি না, আইএসদের পাশাপাশি লোকাল আলক্বায়েদাপন্থী গ্রুপগুলোও যুদ্ধ করছে, যারা আবার মিসরাতীদের কাছ থেকেও সাহায্য পাচ্ছে। ফলাফল? দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও সেখানে যুদ্ধ চলছে। মিসর, ইমারাত এবং ফ্রান্সের বিমান হামলার সাহায্য নিয়েও এখনও তাদেরকে নির্মূল করা সম্ভব হয় নি।
আমার ধারনা, মৌসুলও সেই পথেই যাবে। মৌসুল অচিরেই আরেকটা আলেপ্পোতে পরিণত হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:১৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




