এটা হয়তো এখন লেখার উপযুক্ত সময় না, কারণ সিরিয়ার আলেপ্পোতে এই মুহূর্তে ভয়াবহ অবস্থা চলছে। প্রচুর নারী-শিশুদেরকেও হত্যার অভিযোগ আসছে। তারপরেও ব্যাপারটা মাথায় এলো, তাই লিখছি। একান্তই নিজস্ব পর্যবেক্ষণ।
লিবিয়া যুদ্ধের সময় বহির্বিশ্ব, বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের জনমত গাদ্দাফীর পক্ষে ছিল। সিরিয়া যুদ্ধেও প্রথম দিকে, যখন সেটা শুধুই সাধারণ জনগণের বিদ্রোহ ছিল, তখন অধিকাংশ জনমত আসাদের পক্ষেই ছিল। বিদ্রোহটাকে মানুষ আমেরিকা-ইসরায়েলের ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখতো। এমনকি, সিএনএনে এক আমেরিকান জেনারেলের আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার ভবিষ্যদ্বাণীও প্রথম দিকে প্রচুর শেয়ার হতো। কিন্তু গত অন্তত দুই বছর ধরে দেখছি, মুসলিম বিশ্বের জনমত শিফট হয়ে আসাদের বিপক্ষে চলে গেছে। কারণটা কী? ওয়েল, আর কিছুই না, কারণটা হচ্ছে আসাদের বিপক্ষে এবং বিদ্রোহীদের পক্ষে বিভিন্ন ধরনের ইসলামিস্ট গ্রুপ তথা মুজাহেদীনদের সক্রিয় অংশগ্রহণ।
আমাদের মধ্যে এই একটা ব্যাপার আছে। আমরা কোন ব্যাপার নিরপেক্ষভাবে বিচার করতে পারি না। আমাদের পছন্দের ব্যক্তি বা দল যেই পক্ষে, আমরাও চোখ বন্ধ করে সেই পক্ষে সাপোর্ট দিয়ে বসি। গাদ্দাফী ছিল লৌহ মানব, লিবিয়াতে উন্নতির জোয়ার বইয়ে দিয়েছিল, তাই গাদ্দাফীই হচ্ছে দ্যা গুড গাই - বিদ্রোহীরা সব ন্যাটোর চর। আসাদ সুন্নী না, বরং বিদ্রোহীরা মুজাহেদীন, সুতরাং আসাদ ইজ দ্যা ব্যাড গাই। অনেককেই দেখেছি, যারা একই সাথে গাদ্দাফীর পক্ষে ছিল, কিন্তু এখন আসাদের বিপক্ষে।
এদের অনেকেই জানেই না, লিবিয়ার বিদ্রোহেও সবচেয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে বিভিন্ন ইসলামপন্থী গ্রুপ এবং দীর্ঘদিন জেল খাটা আফগানিস্থানফেরত জিহাদীরা, যাদের অধিকাংশই গাদ্দাফীর ছেলে সাইফুল ইসলামের উদ্যোগে ২০১০ সালে মুক্তি পেয়েছিল। আর লিবিয়া যুদ্ধে বিদ্রোহীদেরকে অর্থ, অস্ত্রশস্ত্র এবং প্রপাগান্ডা চালিয়ে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে ফ্রান্সের পরেই ক্বাতার এবং তাদের প্রপাগান্ডা মেশিন আল জাজিরা, যাদের টার্গেট ছিল ইসলামপন্থীদেরকে ক্ষমতায় বসানো। আমার ধারনা, লিবিয়ার যুদ্ধটা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যাওয়ায় ইসলামপন্থীদের অংশগ্রহণটা বহির্বিশ্বের মুসলমানরা বুঝতে পারেনি। পারলে আমেরিকা, ফ্রান্স, ন্যাটো, ইহুদী বার্নার্ড লেভি ... প্রভৃতি ফ্যাক্ট সত্ত্বেও তাদের সাপোর্ট শেষ পর্যন্ত গাদ্দাফীর বিপক্ষে এবং বিদ্রোহীদের পক্ষেই যেতো।
আরেকটা ব্যাপার উল্লেখ করি - আলেপ্পোতে যা ঘটছে, সেটা নিঃসন্দেহে বর্বরোচিত। কিন্তু সেটা শুধুমাত্র একদিকের চিত্র, যা মিডিয়া আমাদের সামনে তুলে ধরে। অন্যদিকের চিত্র আপনি কখনোই দেখবেন না। আপনার কি ধারনা বিদ্রোহীদের হাতে বা আমেরিকার বিমান হামলায় আসাদপন্থী বেসামরিক জনগণ মারা যায় না? গেলে সেই সংবাদগুলো কোথায়? আবারও লিবিয়ার সাথে তুলনা করি। বিদ্রোহের প্রথম দিকে সবগুলো মিডিয়া গাদ্দাফীর গুলিতে সশস্ত্র বিদ্রোহীরা নিহত হলেও সেটাকে সিভিলিয়ান বলে সারাদিন কান্নাকাটি করতো। কিন্তু অন্যদিকে বিদ্রোহীদের কোন অন্যায় তাদের চোখে পড়তো না। বিদ্রোহীরা যে গাদ্দাফীপন্থী কয়েকজনকে প্রকাশ্য জনসম্মুখে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছিল, কয়েকজনকে হাসতে হাসতে জবাই করেছিল, গাদ্দাফীর এক সৈন্যের কলিজা খুলে নিয়ে ক্যামেরার সামনে দেখাচ্ছিল, সেগুলো ঐসব শহরে সাংবাদিক থাকা সত্ত্বেও কোন মিডিয়া প্রকাশ করেনি।
অথবা গাদ্দাফীকে যেদিন মারা হয়েছিল, সেদিন যে শতাধিক গাদ্দাফীপন্থীকে পেছনে হাত বেঁধে লাইন ধরে বসিয়ে গুলি করে হোটেল মাহারীর পেছনে ফেলে রাখা হয়েছিল, সেটাও কোন মিডিয়াতে ফোকাস পায় নি। গাদ্দাফীর মার্সেনারী অভিযোগে অনেক নিরীহ কালো আফ্রিকানদেরকেও যে ধরার পরপরই গুলি করে মেরে ফেলা হতো, সেগুলোও কোন মিডিয়া কখনও বলেনি। সিরিয়ার ব্যাপারেও পরিস্থিতি ভিন্ন হওয়ার কোন যুক্তি দেখি না। আমরা শুধু সেটাই দেখতে পাই, যেটা মিডিয়া আমাদেরকে দেখাতে চায়।
বিঃদ্রঃ জানি লেখাটা অনেকেরই পছন্দ হবে না। তবে গালাগালি করার আগে ছোট্ট একটা ইনফো, আমি বিদ্রোহের একেবারে শুরু থেকেই গাদ্দাফীর বিপক্ষে ছিলাম। এখনও আমি খুনী আসাদের পক্ষে না। কিন্তু তাই বলে আমি কোনভাবেই মনে করি না, বিদ্রোহীরা সাধু। যুদ্ধ যুদ্ধই। এখানে কোন মানবিকতা নাই। গাদ্দাফী এবং আসাদ ভিলেন, তাই বলে বিদ্রোহীদেরকে হিরো বানানোর কোন যুক্তি নাই। যুদ্ধ বাংলা সিনেমা না যে, ভিলেন সর্বদোষে দোষী হবে, আর হিরো সর্বগুণে গুণান্বিত হবে। বিদ্রোহীদেরও প্রচুর যুদ্ধাপরাধ আছে, এটাই আমার পয়েন্ট।
আল্লাহ্ আলেপ্পো এবং মিডিয়ার ফোকাস না পাওয়া অন্যান্য শহরের বেসামরিক জনগণকে রক্ষা করুক।
এটা হয়তো এখন লেখার উপযুক্ত সময় না, কারণ সিরিয়ার আলেপ্পোতে এই মুহূর্তে ভয়াবহ অবস্থা চলছে। প্রচুর নারী-শিশুদেরকেও হত্যার অভিযোগ আসছে। তারপরেও ব্যাপারটা মাথায় এলো, তাই লিখছি। একান্তই নিজস্ব পর্যবেক্ষণ।
লিবিয়া যুদ্ধের সময় বহির্বিশ্ব, বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের জনমত গাদ্দাফীর পক্ষে ছিল। সিরিয়া যুদ্ধেও প্রথম দিকে, যখন সেটা শুধুই সাধারণ জনগণের বিদ্রোহ ছিল, তখন অধিকাংশ জনমত আসাদের পক্ষেই ছিল। বিদ্রোহটাকে মানুষ আমেরিকা-ইসরায়েলের ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখতো। এমনকি, সিএনএনে এক আমেরিকান জেনারেলের আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার ভবিষ্যদ্বাণীও প্রথম দিকে প্রচুর শেয়ার হতো। কিন্তু গত অন্তত দুই বছর ধরে দেখছি, মুসলিম বিশ্বের জনমত শিফট হয়ে আসাদের বিপক্ষে চলে গেছে। কারণটা কী? ওয়েল, আর কিছুই না, কারণটা হচ্ছে আসাদের বিপক্ষে এবং বিদ্রোহীদের পক্ষে বিভিন্ন ধরনের ইসলামিস্ট গ্রুপ তথা মুজাহেদীনদের সক্রিয় অংশগ্রহণ।
আমাদের মধ্যে এই একটা ব্যাপার আছে। আমরা কোন ব্যাপার নিরপেক্ষভাবে বিচার করতে পারি না। আমাদের পছন্দের ব্যক্তি বা দল যেই পক্ষে, আমরাও চোখ বন্ধ করে সেই পক্ষে সাপোর্ট দিয়ে বসি। গাদ্দাফী ছিল লৌহ মানব, লিবিয়াতে উন্নতির জোয়ার বইয়ে দিয়েছিল, তাই গাদ্দাফীই হচ্ছে দ্যা গুড গাই - বিদ্রোহীরা সব ন্যাটোর চর। আসাদ সুন্নী না, বরং বিদ্রোহীরা মুজাহেদীন, সুতরাং আসাদ ইজ দ্যা ব্যাড গাই। অনেককেই দেখেছি, যারা একই সাথে গাদ্দাফীর পক্ষে ছিল, কিন্তু এখন আসাদের বিপক্ষে।
এদের অনেকেই জানেই না, লিবিয়ার বিদ্রোহেও সবচেয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে বিভিন্ন ইসলামপন্থী গ্রুপ এবং দীর্ঘদিন জেল খাটা আফগানিস্থানফেরত জিহাদীরা, যাদের অধিকাংশই গাদ্দাফীর ছেলে সাইফুল ইসলামের উদ্যোগে ২০১০ সালে মুক্তি পেয়েছিল। আর লিবিয়া যুদ্ধে বিদ্রোহীদেরকে অর্থ, অস্ত্রশস্ত্র এবং প্রপাগান্ডা চালিয়ে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে ফ্রান্সের পরেই ক্বাতার এবং তাদের প্রপাগান্ডা মেশিন আল জাজিরা, যাদের টার্গেট ছিল ইসলামপন্থীদেরকে ক্ষমতায় বসানো। আমার ধারনা, লিবিয়ার যুদ্ধটা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যাওয়ায় ইসলামপন্থীদের অংশগ্রহণটা বহির্বিশ্বের মুসলমানরা বুঝতে পারেনি। পারলে আমেরিকা, ফ্রান্স, ন্যাটো, ইহুদী বার্নার্ড লেভি ... প্রভৃতি ফ্যাক্ট সত্ত্বেও তাদের সাপোর্ট শেষ পর্যন্ত গাদ্দাফীর বিপক্ষে এবং বিদ্রোহীদের পক্ষেই যেতো।
আরেকটা ব্যাপার উল্লেখ করি - আলেপ্পোতে যা ঘটছে, সেটা নিঃসন্দেহে বর্বরোচিত। কিন্তু সেটা শুধুমাত্র একদিকের চিত্র, যা মিডিয়া আমাদের সামনে তুলে ধরে। অন্যদিকের চিত্র আপনি কখনোই দেখবেন না। আপনার কি ধারনা বিদ্রোহীদের হাতে বা আমেরিকার বিমান হামলায় আসাদপন্থী বেসামরিক জনগণ মারা যায় না? গেলে সেই সংবাদগুলো কোথায়? আবারও লিবিয়ার সাথে তুলনা করি। বিদ্রোহের প্রথম দিকে সবগুলো মিডিয়া গাদ্দাফীর গুলিতে সশস্ত্র বিদ্রোহীরা নিহত হলেও সেটাকে সিভিলিয়ান বলে সারাদিন কান্নাকাটি করতো। কিন্তু অন্যদিকে বিদ্রোহীদের কোন অন্যায় তাদের চোখে পড়তো না। বিদ্রোহীরা যে গাদ্দাফীপন্থী কয়েকজনকে প্রকাশ্য জনসম্মুখে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছিল, কয়েকজনকে হাসতে হাসতে জবাই করেছিল, গাদ্দাফীর এক সৈন্যের কলিজা খুলে নিয়ে ক্যামেরার সামনে দেখাচ্ছিল, সেগুলো ঐসব শহরে সাংবাদিক থাকা সত্ত্বেও কোন মিডিয়া প্রকাশ করেনি।
অথবা গাদ্দাফীকে যেদিন মারা হয়েছিল, সেদিন যে শতাধিক গাদ্দাফীপন্থীকে পেছনে হাত বেঁধে লাইন ধরে বসিয়ে গুলি করে হোটেল মাহারীর পেছনে ফেলে রাখা হয়েছিল, সেটাও কোন মিডিয়াতে ফোকাস পায় নি। গাদ্দাফীর মার্সেনারী অভিযোগে অনেক নিরীহ কালো আফ্রিকানদেরকেও যে ধরার পরপরই গুলি করে মেরে ফেলা হতো, সেগুলোও কোন মিডিয়া কখনও বলেনি। সিরিয়ার ব্যাপারেও পরিস্থিতি ভিন্ন হওয়ার কোন যুক্তি দেখি না। আমরা শুধু সেটাই দেখতে পাই, যেটা মিডিয়া আমাদেরকে দেখাতে চায়।
বিঃদ্রঃ জানি লেখাটা অনেকেরই পছন্দ হবে না। তবে গালাগালি করার আগে ছোট্ট একটা ইনফো, আমি বিদ্রোহের একেবারে শুরু থেকেই গাদ্দাফীর বিপক্ষে ছিলাম। এখনও আমি খুনী আসাদের পক্ষে না। কিন্তু তাই বলে আমি কোনভাবেই মনে করি না, বিদ্রোহীরা সাধু। যুদ্ধ যুদ্ধই। এখানে কোন মানবিকতা নাই। গাদ্দাফী এবং আসাদ ভিলেন, তাই বলে বিদ্রোহীদেরকে হিরো বানানোর কোন যুক্তি নাই। যুদ্ধ বাংলা সিনেমা না যে, ভিলেন সর্বদোষে দোষী হবে, আর হিরো সর্বগুণে গুণান্বিত হবে। বিদ্রোহীদেরও প্রচুর যুদ্ধাপরাধ আছে, এটাই আমার পয়েন্ট।
আল্লাহ্ আলেপ্পো এবং মিডিয়ার ফোকাস না পাওয়া অন্যান্য শহরের বেসামরিক জনগণকে রক্ষা করুক।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:১৯