somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতিহাসের সেরা দশ খুনী

১১ ই এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পৃথিবীতে মানব জন্মের ইতিহাস যেমন সমৃদ্ধ তেমনি খুনের ইতিহাসও সমৃদ্ধ। ইন্টারনেট ঘেঁটে আমার সর্বাত্মক চেষ্টায় খুঁজে বের করতে চেয়েছি ইতিহাসের সেরা দশ খুনী। কয়েকটি উইকিপিডিয়াতে পেয়েছি যেগুলা আমি সংক্ষিপ্ত করে অনুবাদ করলাম। কয়েকটি ডেসটিনি পত্রিকার ওয়েবসাইট থেকে। আর কয়েকটি বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য নিয়ে সংগৃহীত (২০০৫,কারেন্ট ওয়ার্ল্ড)।
আশা করি পুরো পোস্ট পড়ে দেখবেন।



১। লুইস গারাভিতো: ইতিহাসের অন্যতম কুখ্যাত এই খুনি। তার প্রমানিত খুনের ভিক্টিম ১৩৮ জন। কিন্তু সন্দেহ করা হয় সে কমপক্ষে ৪০০ জনের উপরে মানুষ খুন করেছে। খুনের মাঝে অধিকাংশই পথশিশু। ১৯৫৭ সালের ২৫ জানুয়ারী কলম্বিয়াতে জন্ম নেয়া এই খুনী ১৯৯০ সালেই সবচেয়ে বেশি খুন করে। কলম্বিয়ার আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৩০ বছরের সাজা হয় তার! তাছাড়া সে লাশ শনাক্ত করতে পুলিশকে সাহায্য করায় তার সাজা কমিয়ে ২২ বছর করা হয়। এই সাজায় সারা বিশ্বের গণমাধ্যমে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। কলম্বিয়ার জনগন তার জন্য আলাদা প্রসিকিশন গঠন করার দাবী জানায়। কিন্তু লাভের লাভ কিচ্ছু হয়নি। কলম্বিয়াতে সে La Bestia (পশু) নামে পরিচিত।



২। জ্যাক দ্যা রিপার: ইতিহাসের অন্যতম ভয়ঙ্কর সিরিয়াল কিলার বলা হয় তাকে। ১৮৮৮ সাল থেকে ১৮৯১ সাল পর্যন্ত পূর্ব-লন্ডনের হোয়াইট চ্যাপেলের আশপাশ জুড়ে সর্বমোট এগারোটি খুনের ঘটনা ঘটিয়ে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার জ্যাক দ্য রিপার। তার কোনো ছবি তো দূরে থাকুক জ্যাক দ্য রিপার নামে কখনো কোনো লোক ছিল কি-না এ সম্পর্কেও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এই খুনগুলো যখন লন্ডনজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা আর আতঙ্কের ঝড় বইয়ে দিল, তখন এসব খুনের দায়-দায়িত্ব স্বীকার করে জ্যাক দ্য রিপারের স্বাক্ষরযুক্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছিল লন্ডনের সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সির কাছে। মূলত এরপর থেকেই মিডিয়ার কাছে ব্যাপক পরিচিতি পায় জ্যাক দ্য রিপার নামটি। এ ঘটনার আগেও অনেক সিরিয়াল কিলারের অস্তিত্ব ছিল ইতিহাসে। কিন্তু এ নামটির মতো আতঙ্ক এর আগে কেউ ছড়াতে পারেনি। তার চেয়েও বড় বিষয় এই খুনি ছিল সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে। তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি কখনোই। ম্যালভিল ম্যাকনাগটেন নামের তৎকালীন চিফ কনস্টেবল জ্যাক দ্য রিপার হিসেবে তিনজন ব্যক্তিকে সন্দেহ করেন। এর মধ্যে প্রধান হলেন_ এম জে ড্রুয়িট নামে এক ব্যারিস্টার যিনি পরবর্তীতে শিক্ষকতায় নিয়োজিত হন। দ্বিতীয়জন এরন কসমিনিস্কি নামের এক পোলিশ ইহুদি এবং তৃতীয়জন মাইকেল ওস্ট্রং নামের একজন উন্মাদ লোক। তবে এর সপক্ষে কোনো জোরালো প্রমাণ ছিল না। ডিটেকটিভ ফেডারিক এভারলিন জ্যাক দ্য রিপার হিসেবে সন্দেহ করেন সেভেরাইন ক্লোসোস্কি এলিস জিওর্গি চেপম্যানকে। এটিও প্রমাণ করা যায়নি। এ ছাড়া আরও কয়েকজন ব্যক্তিকে জ্যাক দ্য রিপার হিসেবে সন্দেহ করা হলেও এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি কে এই জ্যাক দ্য রিপার? গত প্রায় একশত বিশ বছর ধরে জ্যাক দ্য রিপার ও তার হত্যাকাণ্ডগুলোকে ঘিরে রচিত হয়েছে অজস্র গল্প, উপন্যাস, নাটক, সিনেমা এমনকি ভিডিও গেমস। শুধু তাই নয়, জ্যাক দ্য রিপার যেসব স্থানে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটিয়েছিল, সেসব স্থান দেখার জন্য সারা বিশ্ব থেকেই মানুষজন আসেন পূর্ব-লন্ডনে। জ্যাক দ্য রিপার যাদের হত্যা করেছেন, তাদের বেশির ভাগই ছিল পতিতা। জ্যাক দ্য রিপার যৌন কার্যের সময় ভিকটিমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করত। রিপার উইচপেল খুনি এবং লেদার অ্যাপ্রন নামে পরিচিত। জ্যাক দ্য রিপার সত্যিকার অর্থে কত জন খুন করেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।




৩। পেদ্রো লোপেজ: ইতিহাসের আরেক ভয়াবহ সিরিয়াল কিলার। তার জন্ম ইকুয়েডরে ৮ অক্টোবর,১৯৪৮। তার প্রকৃত খুনের হিসাব আজ পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হয় সে ১১০-৩০০ টি খুন করেছে। সে সর্ব প্রথম মিডিয়াতে আলোচিত হয় ১৯৮০ সালের ৯ মার্চ। তার বিরুদ্ধে প্রচুর ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়। তার সঠিক হিসাব অজানা। অনেকের মতে সে ধর্ষণের পর ভিক্টিমকে জবাই করতো। তারপর রক্ত দিয়ে হাত ধুতো।সর্বপ্রথম তাকে মিডিয়াতে নিয়ে আসেন রন লেইটন্যার নামের ফ্রি ল্যান্সার। শিকাগোর একটি স্থানীয় পত্রিকা সর্বপ্রথম তার সাক্ষাৎকার রচিত হয়। দিনটি ছিল ১৩ জুলাই ১৯৮০, রবিবার। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তার ষোল বছরের কারাদন্ড হয়। জেলখানায় ভালো ব্যবহারের জন্য তার ২ বছরের সাজা মওকুফ করা হয়।



৪। রিচার্ড ট্রেনটন সেচ: এই আমেরিকান সিরিয়াল কিলারের জন্ম ১৯৫০ সালে। হত্যাকান্ডের কারণে তার ডাক নাম ছিল 'ভ্যাম্পায়ার অব স্ক্রেরামেন্টো'। তার প্রথম শিকার ৫১ বছর বয়সী ইঞ্জিনিয়ার এমব্রোস গ্রিফিন। সেচ গ্রিফিনকে হত্যা করেন ১৯৭৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর। তার দ্বিতীয় শিকার টেরেসা ওয়ালিন ছিল অন্তঃসত্ত্বা। তাকে হত্যার পর তার সঙ্গে মিলিত হয় এবং তার রক্ত দিয়ে গোসল করে। ১৯৮০ সালের ৮ মে বিচারে গ্যাস চেম্বারে মৃত্যুদন্ডের রায় দেয়া হয়। কারাগারে অপেক্ষাকালীন সময়ে ১৯৮০ সালের ২৬ ডিসেম্বর তার সেলে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, প্রিজন ডাক্তারের প্রদত্ত ওষুধ অতিরিক্ত পরিমাণ খেয়ে সে আত্মহত্যা করে।




৫। জেফরি ডামার: ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস খুনী। জন্ম ১৯৬০ সালে। ডামারের শিকার সংখ্যা কমপক্ষে ১৭। ডামার শিকারকে জোরপূর্বক সমকামিতায় বাধ্য করাসহ তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন করে সেই মাংস ভক্ষণ করত। ডামার ১৮ বছর বয়সে প্রথম হত্যাকান্ড ঘটায়। ১৯৮৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ১৩ বছর বয়সী একজন বালককে হয়রানির অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বিচারে তার এক বছর সাজা হলেও সে বিচারকের কাছে দোষ স্বীকার করে এবং তাকে মেন্টাল থেরাপি দেওয়ার অনুরোধ করে। ৫ বছর সন্তোষজনকজ আচার-আচরণের শর্তে তাকে প্রবেশনে মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্তির পরপরই সে পুনরায় হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে ডামার পুনরায় পুলিশের কাছে ধরা পড়লে তার ভয়ানক কুর্কীতিগুলো প্রকাশিত হয়ে পড়ে। বিচারে তার ৯৩৭ বছর জেল হয়। বিচারকালে ডামার কারাবাসের পরিবর্তে সে নিজের মৃত্যুদন্ড দাবী করে। ১৯৯৪ সালের ২৮ নভেম্বর কারাগারের জিমে কর্মরত অবস্থায় ক্রিস্টোফার স্কেভার নামক অপর একজন কয়েদির মারাত্মক পিটুনিতে নিহত হয়।



৬। জাভেদ ইকবাল মুঘল: তার পুরো নাম জাভেদ ইকবাল মুঘল। ১৯৫৬ সালের ৮ই অক্টোবর পাকিস্তানে জন্ম নেওয়া এই লোকটিকে উপমহাদেশের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সিরিয়াল কিলার মানা হয়। তার হাতে প্রায় ১০০ শিশুর নৃশংস মৃত্যু হয়েছিল। প্রায় প্রতিটি মৃত্যুর সঙ্গেই যৌন নীপিড়নের যোগসূত্র ছিল। জাভেদের মানুষ হত্যার ক্ষেত্রে বিকৃত রুচির পরিচয় পাওয়া যায়।১৯৯৮ সালে জাভেদের বিষয়টি প্রথমবারের মতো সবার সামনে আসে। অবশ্য তখন এমন ভয়াবহতার কথা কেউ কখনো কল্পনা করেনি। সেবার ২ জন বালককে যৌন হয়রানির জন্য জাভেদকে আটক করে পুলিশ। কিন্তু আইনের ফাঁক গলে ঠিক বেরিয়ে যায় সে।আর সেই সঙ্গে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে জাভেদ। শুরু করে তার কুকর্ম। জাভেদ ছিল মিশুক প্রকৃতির। মিষ্টি মধুর কথা আর সুন্দর ব্যবহার দিয়ে খুব সহজেই মানুষের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলত। আর সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পরই স্বরূপে আবির্ভূত হতো সে। সুযোগ বুঝে প্রথমে ধর্ষণ ও পরে ছুরিকাঘাত করে তাদের হত্যা করত। জাভেদের নৃশংসতার এখানেই শেষ ছিল না। হত্যার পর জাভেদ মৃতদেহগুলোকে টুকরো টুকরো করে ফেলত। আর দেহের খণ্ডাংশগুলো কোথাও ফেলে না দিয়ে হাইড্রোলিক এসিডভর্তি ড্রামে ডুবিয়ে রাখত। এতে করে অল্প সময়ের মধ্যেই দেহের খণ্ডাংশগুলো গলে যেত। তখন সেই গলিত দেহাবশেষের তরল স্যুয়ারেজ লাইন কিংবা নদীতে ফেলে দিত। একসময় জাভেদের বাড়িতে পুলিশ রিপোর্টাররা এসে ভয়ঙ্কর চিত্র আবিষ্কার করে। জাভেদের ভিকটিম এর ব্যবহৃত ব্যাগ ও জুতা এবং অনেকগুলো ছবি পাওয়া যায়। এসিডের বোতল ছাড়াও ছুরি এবং আরও রক্তাক্ত জিনিস পাওয়া যায়। তার ঘরের দেয়াল ও মেঝেতে রক্তের দাগ পাওয়া যায়।
পুলিশের কাছে ধরা খাওয়ার পর জাভেদ নিজেই গড়গড় করে তার সব অপরাধের বৃত্তান্ত তুলে ধরে। জাভেদের ভাষায়, ‘আমি চাইলে ৫০০ বালককে হত্যা করতে পারতাম…। আমি জাভেদ ইকবাল, ১০০ শিশুর হত্যাকারী…। আমি এই পৃথিবীকে ঘৃণা করি এবং আমি আমার কাজের জন্য লজ্জিত নই। আমি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত, আমার কোনো অনুশোচনা নেই যে, আমি ১০০ শিশুকে হত্যা করেছি।’
হত্যার আগে সব শিশুকে যৌন নিগৃহ করেছে বলে তার লিখিত ডায়েরিতে উল্লেখ করেছে জাভেদ। বিচারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার রায় হয়। বিচারক তার রায়ে বলেন, যদিও তাকে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়েছে কিন্তু আমি চাই তাকে ১০০ বার ছুরিকাহত করে হত্যা করতে এবং ১০০ টুকরো করে এসিডে ডুবিয়ে রাখতে। তার ফাঁসি কার্যকর করার আগে ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর প্রিজন সেলে তাকে ছুরিকাহত হয়ে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। কর্তৃপক্ষ জানায়, জাভেদ প্রিজন সেলে আত্মহত্যা করেছে।



৭। গ্যারি রিডগওয়ে: জন্ম ওয়াশিংটনে ১৮ ফেব্রুয়ারী,১৯৪৯। তার বিরুদ্ধে ৪৯ টি খুনের মামলা আছে। আদালতে স্বীকারোক্তিতে সে স্বীকার করে নিয়েছে এই সংখ্যা ৭১। তবে সন্দেহ করা হয় তার খুনের সংখ্যা ৯০ ছাড়িয়েছে। তার বিচিত্র যৌনতা ছিলো। তার তিন স্ত্রীর প্রত্যেকে জানিয়েছে সে দিনে কয়েকবার মিলিত হতে চাইতো। এমনকি জনবহুল এলাকায় লোকজনের সামনেও সে এইটা চাইতো। ৩০ নভেম্বর,২০০১ সালে রেন্টন ছেড়ে যাওয়ার সময় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে চার জন নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ উঠে। পুলিশ চার নারীর গর্ভে ভ্রুণের DNA টেস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়। তারপর সময় গড়ানোর সাথে সাথে তার একের পর এক নারকীয় হত্যার প্রমান আসতে থাকে। ২০০১ সালে রিপোর্টার শেরিফ রিচার্ট তার সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রকাশ করার পর বিশ্ব গণমাধ্যমের নজরে আসে সে। আদালত তাকে আজীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করে।



৮।ফুলন দেবী: তার পরিচিতি দস্যুরানী হিসেবে। কুখ্যাত খুনির তালিকায় তার নামটা না এলেও পারত। কারণ প্রথম জীবনের বঞ্চনা এবং পরের জীবনের বিদ্রোহ তার প্রতি মানুষের একটা সহমর্মিতা তৈরি করেছে। এরপরও কেবল প্রতিশোধের নেশায় একের পর এক মানুষ হত্যা দস্যুরানী ফুলন দেবীকে ইতিহাসের অন্যতম খুনি হিসেবে পরিচিতি এনে দিয়েছে। তার জন্ম ১৯৬৩ সালে ভারতের এক নিচু পরিবারে। দারিদ্র্য এবং সামাজিক কারণে জীবনের শুরু থেকেই সংগ্রামের মুখোমুখি হয় ফুলন। মাত্র এগারো বছর বয়সে বাবার বয়সী এক লোকের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। ফুলনের গ্রাম এবং আশপাশের একাধিক গ্রামে ঠাকুর বংশের জমিদারী ছিল। আর জমিদারের লোকেরা প্রায়ই গ্রামের দরিদ্র গ্রামবাসীর কাছ থেকে ফসল নিয়ে নিত এবং তাদের ওপর নির্যাতন চালাত। ফুলন এসবের প্রতিবাদ জানিয়ে দখলকারীদের নেতা মায়াদীনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে। এ অপমানের প্রতিশোধ নিতে ঠাকুরেরা তাকে ধরে নিয়ে যায় বেমাই নামে প্রত্যন্ত এক গ্রামে। এরপর তার ওপর চলে অমানুষিক নির্যাতন। দুই সপ্তাহ ধরে প্রতি রাতে ঠাকুর ও তার লোকেরা ফুলনকে গণধর্ষণ করে। প্রতি রাতেই ফুলন জ্ঞান না হারানো পর্যন্ত চলত এ পাশবিকতা। ১৬ দিনের মাথায় এক রাতে নির্যাতন শেষে তারা ফুলনকে মৃত মনে করে ফেলে রাখে। আর প্রায় মৃত্যুপথযাত্রী ফুলন এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। তখন ফুলনের বয়স ছিল মাত্র সতের। পালিয়েও রক্ষা পেলেন না ফুলন। আরেকবার ধরা পড়লেন এক দস্যুদলের হাতে। দস্যুদের নেতা বাবুর নজর পড়ে ফুলনের ওপর। সে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইল ফুলনের ওপর। কিন্তু আরেক দস্যু এতে বাধা হয়ে দাঁড়াল। বাবুকে খুন করে ফুলনকে রক্ষা করে সে। এরপর ফুলনের সঙ্গে বিক্রমের বিয়ে হয় এবং শুরু হয় ফুলনের নতুন জীবন। রাইফেল চালানো শিখে পুরোদস্তুর দস্যু হয়ে ওঠে। ফুলন তার আলাদা বাহিনী নিয়ে প্রথম হামলা চালায় তার সাবেক স্বামীর গ্রামে। নিজ হাতে ছুরিকাঘাতে তার স্বামীকে খুন করে রাস্তায় ফেলে রাখে। ফুলন তার সংগঠিত দস্যুদল নিয়ে ক্রমাগত ধনী গ্রাম এবং জমিদারবাড়িগুলোতে আক্রমণ চালাতে থাকে। এর মধ্যেই একদিন ধনী ঠাকুর বংশের ছেলের বিয়েতে সদলবলে ডাকাতি করতে যায় ফুলন। সেখানে ফুলন খুঁজে পান এমন দুজন মানুষকে, যারা তাকে ধর্ষণ করেছিল। ক্রোধে উন্মত্ত ফুলনদেবী আদেশ করে বাকি ধর্ষণকারীদেরও ধরে আনার। কিন্তু বাকিদের পাওয়া না যাওয়ায় লাইন ধরে ঠাকুর বংশের বাইশজনকে একসঙ্গে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে মেরে ফেলা হয়। বেমাইয়ের এই গণহত্যা ভারতবর্ষে ব্যাপক সাড়া ফেলে। সরকার ফুলনকে ধরার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠে। আবার ফুলনের পক্ষেও আন্দোলন হয়। শেষ পর্যন্ত ১৯৮৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সরকার সন্ধিপ্রস্তাব করলে ফুলন অনেকগুলো শর্ত দেন। সরকার সেই শর্ত মেনে নিলে ১০,০০০ মানুষ আর ৩০০ পুলিশের সামনে ফুলনদেবী অস্ত্র জমা দেন গান্ধী আর দুর্গার ছবির সামনে। ১১ বছর কারাভোগের পর ফুলন সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দেন এবং ১৯৯৬ এবং ‘৯৯-তে পরপর দুইবার লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের ২৫ জুলাই ঠাকুর বংশের তিন ছেলের এলোপাতাড়ি গুলিতে ফুলন দেবী নিহত হন।



৯। আন্দ্রেই চিকাতিলো: জন্ম ইউক্রেনে পরবর্তী কালে রাশিয়ান নাগরিক এ সিরিয়াল কিলার বুচার অব রোস্তভ বা রোস্তবের কসাই হিসেবে কুখ্যাত ছিল। তাকে দ্য রেড রিপার নামেও ডাকা হতো। ১৯৭৮ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে ৫৩ জন নারী ও শিশুকে হত্যা করার অপরাধে তাকে অভিযুক্ত করা হয়। সে যে প্রক্রিয়ায় হত্যাকা- ঘটাত তা এক কথায় নৃশংস। চিকাতিলো তার প্রথম হত্যাকান্ড ঘটায় ১৯৭৮ সালের ২২ ডিসেম্বর। ৯ বছর বয়সী একটি মেয়েকে ফুঁসলিয়ে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে গিয়ে কুকর্মে উদ্যত হয়। মেয়েটি চিৎকার চেঁচামেচি করলে সে তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে তার ওপর কামচরিতার্থ ঘটায়। এভাবেই তার বিকৃত কর্ম শুরু। ১৯৯৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি এই কুখ্যাত খুনিকে ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে হত্যা করা হয়।



১০।এরশাদ শিকদার: বাংলাদেশের অপরাধীদের মধ্যে সবচেয়ে কুখ্যাত নামটি হলো এরশাদ শিকদার। নৃশংসতা ও ভয়াবহতার দিক থেকে এরশাদ শিকদার সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তার জন্ম ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মাদারঘোনা গ্রামে। ১৯৬৬-৬৭ সালে খুলনায় আসার পর আস্তে আস্তে সেখানে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। পেশায় প্রথম দিকে কুলির সহযোগী ছিল সে। পরবর্তী সময়ে চুরি ডাকাতির সঙ্গে জড়িয়ে একসময় রাঙ্গা চোরা নামে পরিচিতি পায়। এরপর জড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ কিলিং মিশনের সঙ্গে। এরশাদ শিকদার যাকে পথের কাঁটা মনে করেছে, তাকে হত্যা করেছে। রাজসাক্ষী নূরে আলমের মতে, এরশাদ শিকদার কমপক্ষে ৬০টি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তবে সে ২৪টি হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছিল। এরশাদ শিকদারের ছয়টি বিয়ের কথা জানা গেছে। এরশাদ শিকদারের হাতে বহু নারী নির্যাতিত-লাঞ্ছিত হয়েছে। যাকে তার পছন্দ হতো, তাকেই সে ছলে-বলে-কৌশলে তার ডেরায় নিয়ে এসে নির্যাতন করত। ১৯৯৯ সালে গ্রেফতার হওয়ার সময় তার নামে তিনটি মামলা ছিল। পরে এরশাদের নামে আরও ৪৩টি মামলা হয়। এর মধ্যে অধিকাংশ মামলায় তাকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা পড়ে। নিম্ন আদালতের বিচারে সাতটি হত্যা মামলায় তার ফাঁসির দণ্ডাদেশ হয়। চারটি মামলায় যাবজ্জীবন সাজা হয়। ২০০৪ সালের ১০ মে মধ্যরাতে খুলনা জেলা কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর হয়।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৫
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×