..................................
একটি বই পড়েছিলাম- মরণের আগে ও পরে
তাহলে কি মৃত্যু মধ্যবর্তী এক ফুলস্টপ মুহূর্তমাত্র?
আর একটা বই আমি ফুটপাথ থেকে কিনলাম
এবং এই বইটার নাম শুনলেই মনটা কেমন করে-
মিলনের আগে ও পরে
তবে কি বিস্মরণে উধাও মিলিত-সময়?
আমি সদা ফেরি করি মূর্ত-বিমূর্ত।
আমার পাঁজরে বহু শীত জমে গেছে।
মনে হচ্ছে আমিও একটা বই লিখব; লিখব
নজিরবিহীন কুয়াশাহীন শিশিরটিশির কিচ্ছু নেই
কিন্তু বইয়ের নাম রাখব- শীতের আগে ও পরে
যার মধ্যে পৌঁষমাঘ কিছুই থাকবে না
কিন্তু আমি শীত শীত বলে হাঁক দিয়ে যাব...
পুরো শীতকাল শুধু একটি শব্দ হয়েই থাকবে?
.............................
সান্ধ্যভাষার ব্যসন
.............................
সনেট প্রকল্প মার খেয়ে গেল। পয়ার প্রকল্প
ফেল করে গেছে। তাই কি উত্তর-আধুনিক শাসন
চলছে চর্যা হইতে অভ্যাগত বাঙলা কবিতায়?
ধুনোট প্রকল্প শিরোপা লভিছে, বুনট হাওয়ায়
উদারা-মুদারা-তারা, এ কি মহাফাল্গুন রজনী?
পৃথিবীর ছয়শো কোটি মানুষের মধ্যে সদানন্দ
আমি মণ্টু; সর্বোত্তম দানাদার খেতে ভালোবাসি।
দানা দানা চিনি, ঝাঁ ঝাঁ ঝিঁনি ঝিঁনি- কবিতা না গল্প
নাকি রূপচাঁদা উপন্যাস? সান্ধ্যভাষায় ব্যসন
লিখি অগ্নি-কর্মশালা, শেষমেশ বনপোড়া ছাই...
মৃগয়ারা আমার পাঠিকা, আলেখ্য সান্ধভাষায়
পাঁচজনা পাঁচ মানে পায়; অ-তে অপার, অশনি
প-তে পুষ্প, প-তে পাথর... বস্তুর ওজনেই দ্বন্দ্ব
দ্বন্দ্ব দেখতে কেমন? আমি কি দ্বন্দ্ব দেখতেই আসি?
......................................
ছন্দের বিরুদ্ধে
........................
ছন্দে কিছু লেখার উপায় নেই
ভাবনাগুলো দ্বন্দ্ব ভালোবাসে
ছন্দ মেনে লিখতে যদি যাই
বিষয়বস্তুর আভা কমে আসে-
বিষয়বস্তু হয়ত পাহাড়চূড়ো
ছন্দে ফেলে লিখতে গেলেই টিলা
হয়ত ছিল মনটা কষে বাঁধা
ছন্দ এসে টান করে দেয় ঢিলা-
ছন্দ ভীষণ সংকোচনও করে
বাক্যরা তাই ছোটো ছোটো হয়
শাদা পৃষ্ঠার স্বাধীনতা ভেঙে
সতর্ক সে, ভেঙে যাবার ভয়-
ছন্দ যদি ভাঙে, ছন্দ মন!
এরপরেও কি ছন্দ প্রয়োজন?
ছন্দ যদি দ্বন্দ্বে মাজুল হয়
ছন্দ ছাড়াই বলব, করি পণ-
ডাহুক যখন ডাক দিল রে, শুনে
লেখামাত্রই ছন্দ-কবলিত
খাতার ডাহুক লেখার পরেই চড়ুই
কিচিরমিচির ভাষায় প্রকাশিত-
চিত্রা যখন ঢেউ দেখিয়ে যায়
ছন্দ তখন আমায় শাসন করে-
চিত্রা তখন আগুন, আভা, আঁচে
ছন্দ মেনে পোকারা পুড়ে মরে-
পোকা, আমার আগুন মনে ধরে...
................................................
লেকসার্কাস রাত্রির কবিতা
..............................
কবিতা যতক্ষণ নিরক্ষর, ততক্ষণই কবিতা
নদীও ক্রমাগত নদী, লিখলেই শব্দ, জলহীন
তুমি ঘুমোচ্ছ না? তোমার ঘুম আসছে না?
তুমি ট্যাবলেট খাবে? ট্যাবলেট না থাকলে
খেতে পার স্বপ্ন-সন্দেশ
স্মৃতিচিক্কন ভর্তা-ভাজির কত কী দিন-
তুমি সেই দিনগুচ্ছ রাতের আহার করে
শুয়ে আছ, তোমার ভালো লাগছে না...!
কবিতাও তোমার পাশে শুয়ে আছে, উঠে বসছে
তোমাকে দেখছে, তোমাকে হয়তো বুঝতে চাচ্ছে
কবিতারও ভালো লাগছে না!
তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ? পৃথিবীর যত যে তরুণ যন্ত্রণা
দংশন, রঙিন মৃত্যু, উৎপীড়ন, এমন কি বসন্তকালীন কল্পরেখার
দূরতিক্রম্য ভাষা-নিঃশ্বাস-বেশ পড়া যাচ্ছে; শায়িত তোমার
চুলের মধ্যে মানবেতিহাসের কোন কোন গুজব, নিরব ট্র্যাজেডি?
কবিতা নিজেও পড়া শিখেছে, সে পড়ে নিচ্ছে
অর্থাৎ তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ কিন্তু কবিতা ঘুমোচ্ছে না
দেখিই তো কবিতা নির্ঘুমের পাশে নির্ঘুম থেকে যায়
কবিতাকে ঘুমের পাশেও নির্ঘুম থাকতে হয়,
যদি তুমি ছড়িয়েছ নিদ্রা বিভঙ্গের মুদ্রা
কবিতাও সেই মুদ্রা ফুটিয়ে দেখায়
কারণ কবিতা যতক্ষণ... নিরক্ষর, ততক্ষণই, অক্ষরজ্ঞানে সে
শব্দ হয়ে ওঠে, বাক্য হয়ে ওঠে,
যেমন তুমি জান না, আমি জানি, ঘুমোলে তোমার বুকে
কি জলোচ্ছ্বাস বা জাহাজডুবির গল্প কী পরিমাণ ফেনা হয়ে ফোটে!
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:১৯