somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাকনা পুলাপাইনের গল্প ১ (আব্‌জাব)

২০ শে মে, ২০০৮ রাত ৯:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[এই গল্প ৬ থেকে ১০ বছর বয়সী পুলাপাইন এর জন্য। শুধু পুলাপাইন হলেই হবে না ‘পাকনা পুলাপাইন’ হতে হবে। সো; বুড্ডহা লোক হাঠ্‌ যাও। আর বুড়া-ধুরা কেউ যদি লোভ না সামলে পড়েই ফেলেন তাহলে কমেন্ট করে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। বলে দিলাম কিন্তু!]

লাইফ ইজ সো আনফেয়ার!

এমনিতে অনিক ছেলেদের দলের সাথে খেলতে যায়না। আসলে ওরা নেয়নাও ওকে। তেমন কোণ খেলা পারেওনা সে। খেলতে না নিলেও একটু গল্প-সল্প যে করবে, তাও হয়না ইদানিং। এইটা হয়েছে সোহাগ ভাই এর কারনে। সে ক্লাস সিক্সে উঠে অন্য এক স্কুলে চলে গেছে। সেখান থেকে কি না কি জানি শিখে আসে প্রতিদিন! তার পর সেসব নিয়ে সব পোলাপাইন মিলে ফিসফিস-ফাসফাস করে সব সময়। অনিক যদি শুনতে যায় অমনি বলবে, “শোন অনিক, বড়দের কথার মধ্যে থাকবিনা”। অনিক বুঝেনা বড়দের আবার এমন কি কথা! তার উপর ঐযে রনি, ওতো অনিকের সাথেই পড়ে! ওকেতো ওরা দলে নেয় ঠিকই! এই কথা সোহাগ ভাই কে বলেও লাভ নাই। সবাই মিলে হাসাহাসি করবে। সব দোষ আম্মুর । এমনিতেই অনিক দেখতে একটু ছোট খাটো আর সুন্দর। তার উপর তার আম্মু এখনো মাঝে মাঝে তার কপালে কাজলের তিলক একে দেয়। আর তার উপর দিয়ে দেয় পাওডার। অনিক তখন সেই সাদা পাঊডার ওয়ালা কপাল নিয়ে লজ্জায় বাইরেই বেরই হতে পারেনা। সে যে বড় হয়েছে এইটা তার মা কেন যে বুঝেনা!! বলে এতে নাকি নজর লাগবে না!! কই রনির মা তো এমন করেনা। কিছু বলতে গেলে আবার বলবে, “আরে রনি কি আমার চাদের টূকরার মত নাকি? ওর দিকে নজর দিবেই বা কে?” নজর দিলে কি হয় সেটা অনিক বোঝে না। কিন্তু নজর ঠেকাতে গেলে যে বড়দের দলে প্রবেশাধিকার পাওয়া যায়না সেটা সে খুব ভাল করেই বোঝে। মাঝে মাঝে অভিমানে তার নিচের ঠোটটা বেঁকে যায়। এখনো একটু ছোট বলে সে এই অনুভুতিটা ভাযায় প্রকাশ করতে পারেনা। আবার বড়ো হয়ে গেছে বলে ঠোট বাকিয়ে কাঁদতেও পারেনা।

ছেলেদের দলে ঠাইনা পেয়ে অনিকের ঠাই হয় মেয়েদের দলে। পাশের বাসার বৈশাখী আপু যখন তানিয়াদের সাথে পুতুল পুতুল খেলে তখন তাকে দলে নেয়। অবশ্য আপুরাও মাঝে মাঝে ফিসির ফিসির শুরু করে। তখন তারাও তাকে দলে নেয় না। বলে, “শোন অনিক। মেয়েদের কথার মধ্যে থাকবিনা!” যাক্‌, আপু অন্তত তাকে ছোট বলেনা। এদলে ঠাই নাপাওয়ার কারণ সে ‘ছেলে’। এইটা জেনে অতটা খারাপ লাগেনা।

দিনকাল কাটছিল এভাবেই। কিন্তু হঠাৎ করে সেদিন অনিকের এক আজব অভিজ্ঞতা হয়েছে! যথারীতি সোহাগ আর পাভেল ভাইরা তাকে তাড়িয়ে দিয়েছে ‘বড়োদের আলাপ’ থেকে। সে এসেছে বৈশাখী আপুর বাসায়। তানিয়ারা সেদিন আসেনি। অনিক এসেছে তার সেরা পুতুলটা নিয়ে। এইটা বৌ পুতুল! বানিয়ে দিয়েছে তার আম্মু। খুব সুন্দর পুতুল। তাই এটার দিকে সবার লোভ। এইতো কয়েক দিন আগে তানিয়া তার বর পুতুলের সাথে বিয়ে দিতে চাইলো এই বৌ পুতুলের। কিন্তু বিয়ের পর নাকি বৌকে শশুর বাড়ি থাকতে হবে। মানে তানিয়াদের বাসায়!! অনিক বুঝেছে এটা আসলে তার পুতুল হাতানোর বুদ্ধি। সে রাজি হয়নি। এর পর থেকে তাকে মেয়েরাও আর পুতুল খেলতে নেয়নি কিছু দিন। আজ সোহাগ ভাই আর আম্মুর দেওয়া ‘নজরঠেকানি’ তিলক এর উপর রাগ করে সে তার বৌ পুতুল নিয়ে এসেছে। বিয়ে দিয়েই দিবে। যা হয় হোক। কিন্তু আজ তানিয়া নাই। তার বর পুতুলটা সুন্দর ছিল। বৈশাখী আপুরও বর পুতুল আছে। তেমন সুন্দর না। কিন্তু কি আর করা। তার কন্যার কপাল খারাপ। এর সাথেই বিয়ে ঠিক ঠাক।
বেশ ফর্মালিটীজ করে বিয়ে টিয়ে হয়ে গেল। সেই বিয়েতে খাওয়ার ভান ও করলো অনিক মুখ দিয়ে চুক চুক এক ধরণের শব্দ করে! এখন নাকি বাসর ঘর সাজাতে হবে। সিগারেটের বাক্স দিয়ে বানানো আর গ্যান্দা ফুলের পাপড়ি দিয়ে সাজানো একটা খাটে বাসর সাজানো হল। অনিক ভেবেছিল এখানেই শেষ। কিন্তু বৈশাখী আপুবলে এখানে নাকি শেষ না!! এর পর তারা জানি কি কি করবে! বৈশাখী আপু ডানে বামে একটু তাকিয়ে নিয়ে তার পর অনিকের কানে কানে বলে দেয় সেটা। অনিক বলে,
-যাহ্‌ ঘেন্না!! এরকম করে নাকি কেউ?!!
-হ্যা করে।
-আমার বৌ কি আর বাচ্চা নাকি যে বরটা তাকে চুমু খাবে!
বৈশাখী আপু বিরক্ত হয়,
-আরে এই চুমু তো বাচ্চাদের মত না। অন্য রকম। এই চুমু খেতে হয় ঠোটে!
অনিক আবার বলে,
-যাহ ঘেন্না। বিয়ে করলেই এরকম করে নাকি সবাই?
-সবাই করে।
অনিক জিজ্ঞেস করে,
-তুমার আব্বু করছে নাকি তুমার আম্মুর সাথে? যখন বিয়ে করছিল?
বৈশাখী কেমন যেন একটু বিব্রত হয়। বলে,
-করার তো কথা। করছে মনে হয়।
-এরকম করলে গুনাহ হবে না?
-নাহ্‌ কোন গূনাহ হতে যাবে কেন। সত্তুর নেকি হয় উলটা!
-কিন্তু ঘিন্না যে?
-ঘিন্না হতে যাবে কেন? দাড়া দেখাই...
বলেই অনিককে কিছু বুঝতে না দিয়েই ঝুকে ঠোট দুটো অনিকের ঠোটে চেপে ধরে বৈশাখী। অনিক একটু ভ্যবাচ্যাকা খেয়ে যায় প্রথমে। তবে ঘিন্না লাগেনা তেমন। শুধু কেমন কেমন জানি লাগে! আর বুঝতে পারে বৈশাখী আপু কেমন যেন কেঁপে কেঁপে যাচ্ছে। একটু পরেই ছাড়া পায় সে। ততক্ষনে অনিকের কপালের তিলক বেশখানি জড়িয়ে গেছে বৈশাখীর কপালেও। একটূ বিহ্‌বল অবস্থায় কিছুটা কাঁপতে কাঁপতেই সে অনিককে বলে,
-তুই এখন যা। খবরদার এই কথা বলবিনা কাউকে!!

অনিক বাসায় চলে আসে সেদিন। তেমন কিছুই বলেনা কাউকে। তবে এই ব্যপার টা তাকে ভাবিয়ে তোলে বেশ। কিন্তু তার সত্তুর নেকি অর্জন চলতেই থাকে। বৈশাখী আপুর বসাতেই এর পরে একদিন দীপা আপুও চুমুদেয় অনিককে। দীপা আপু বৈশাখীর বান্ধবী। সেবার দীপা আপু অবশ্য অতটা কেঁপে যায়না। কিন্তু আপুর মনে হয় জ্বর আসে। অনিক বুঝতে পারে। অবশ্য তানিয়ার কিছুই হয়না। সে এইসব শুনে এমন হাসি দেয়। আর চুমু দিতে এগিয়ে এসে কয়েক বার হেসে ফেলে খিল খিল করে। আর বলে, “এমা... ঘিন্না’। টুক করে একটা চুমুও দেয় বোধ হয়। তার পর হাসতে হাসতে বৈশাখী আপুকে বলে।
-ধুরো কি যে বল। কিছুই হলনা তো?
বৈশাখী আপুবলে,
-তুই আসলে ছোট মানুষ। এইসব বুঝবিনা!!
এইসব বুঝতে চায়ওনা সে।

তবে অনিকের মাথায় চিন্তা চলতেই থাকে। আচ্ছা, সত্যিই কি গুনা হচ্ছে না? পাভেল ভাই কে জিজ্ঞেস করতে হবে। পাভেল ভাই ছোট বেলায় মাদ্রাসায় পড়েছে। ক্লাস সিক্স থেকে এসেছে তাদের এলাকার স্কুলে। সে হল ছোটদের মধ্যে হুজুর। সবার ইহকাল পরকাল বিষয়ক বিভিন্ন্য প্রশ্নের উত্তর দেয় সে।

মেয়েদের দলের এইসব কান্ড ভালও লাগেনা অনিকের। সে ভাবে, ধুর পুতুল বিয়ে দিয়ে কি বিপদেই না পড়লাম! আবার সাহস করে ছেলেদের দলের দিকে যায় সে। সোহাগ ভাই মনে হয় কোথা থেকে একটা ছবির বই নিয়ে এসেছে। সবাই মিলে ঘিরে ধরে দেখছে সেসব। আর কি যেন বলছে। মাঝে মাঝে হেসেও ঊঠছে তারা। অনিককে এগিয়ে আসতে দেখেই ছেলেরা সবাই ট-ভাষায় কথা বলতে শুরু করে। সেসব ভাসা ভাসা আসে অনিকের কানে, “বুটঝলিটি বিটৈশিটাখীর বিটুক নিটা ইটেই ছিটবিটির মিটেয়ের ....” অনিক ট-ভাষা বুঝে। ওরা বলছে, “জানিস বৈশাখীর বুক না এই ছবির মেয়ের...”। ভাষা বুঝলেও এইসব কথার অর্থ বুঝেনা সে। শুধু এইটুক বুঝে। কি কি যেন জল্পনা-কল্পনা চলছে বড়োদের মধ্যে। এলাকার মেয়েদের নিয়ে। যখনই সে তার প্রশ্নটা করতে যাবে পাভেল ভাই এর কাছে তখনই আবার সোহাগ ভাই খেকিয়ে ওঠে, “যাহ ভাগ, বড়োদের কথার মধ্যে আসবিনা খবরদার!!”

কান্না পায় অনিকের। তানিয়া দূর থেকে ডাকে অনিককে। দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে সে এগিয়ে যেতে থাকে মেয়েদের দলের দিকে। তানিয়া বলে,
-দীপা আপুর কাজিন আর বৈশাখী আপুর স্কুলের এক বান্ধবী এসেছে আজ। তোকে চুমু দিবে। হি হি হি!

বিরক্ত লাগে অনিকের। তার পরও এগিয়ে যেতে থাকে। হয়তো ছেলেদের দলের উপর অভিমান করেই আবার মেয়েদের দলে ভিড়ে সে। এখন তার অনেক কাজ। একে একে কাজলের তিলক একে দিতে হবে সবাইকে। দুঃখটা বাড়তে বাড়তে তার নিচের ঠোট প্রায় বাকিয়ে ফেলে যেন! আচ্ছা কি এমন বলে অই ‘বড়’ ছেলেদের দল? বুকের গহীনে অজানা একটা ভাষায় কে যেন বলতে থাকে।

লাইফ ইজ সো আনফেয়ার!!
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০০৮ রাত ৯:৪০
৬১টি মন্তব্য ৬২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭



ছবি সৌজন্য-https://www.tbsnews.net/bangla




ছবি- মঞ্চে তখন গান চলছে, মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা.......... চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান।

প্রতি বছরের মত এবার অনুষ্ঠিত হল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪। গত ২৪/০৪/২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

×