somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চতুষ্কোণমিতি (ছেলেবেলা)

২৬ শে মে, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১. রোদ বাক্স
আমি ঘুমাই এক অদ্ভুত চতুষ্কোনের পাশে। খুব ভোরে ‘সকাল’ এসে প্রথমে ঘুম ভাঙায় ঘুলঘুলিতে বাসা বাঁধা চড়ুই দম্পতির। কিছুক্ষন কিচ মিচ করে অফিসে চলে যায় তারা দুজনই। পরে অবশ্য একদিন তাদের দুইটা বাবু হয়, তখন মা টা মনে হয় চাকরি ছেড়ে দেয়। বাবা অফিসে যাবার পর তাই মা আর বাচ্চারা মিলে কিচ কিচ করতেই থাকে। ততক্ষনে সকাল টা এক ফালি রোদ হয়ে ঘুলঘুলি পেরিয়ে গিয়ে পড়ে ওপাশের দেয়ালে। একমনে আঁকিবুকি করতে করতে এগিয়ে যায় আলনাটার দিকে।

আলসী ভরা চোখের কোনা দিয়ে আমি দেখতে থাকি সেইসব আঁকিবুকি। পাশের বাড়ির মরজিনার মোরগ টা তখন আজান দেয়। ততক্ষনে আঁকিবুকিও প্রায় আলনা ছুই ছুই। এখনই সেই ঘটনাটা ঘটবে! আধবোজা চোখ দুটোকে জোর করে পুরো বুজিয়ে ফেলি। নিষ্ফল আশ্রয় খুজি কোল বালিশের নিচে। আর তখনই সকালটা, স্টেশনের সেই ছন্নছাড়া কুলির মত ধুম করে একটা চারকোনা রোদের বাক্স এনে ফেলে আমার গায়ে! সেই অদ্ভুত চতুষ্কোন দিয়ে। এক ধাক্কায় ছুটিয়ে ফেলতে চায় সবগুলো ঘুমের রেণু। আলসী আর রোদ বাক্সের মধ্যে কাড়া কাড়ি পড়ে যায় রেণুদের মালিকানা নিয়ে। হয়তোবা আলসী বেশী অলস বলেই একটু পরেই হাল ছেড়ে দেয়। আড়মোড়াটাকে ভেঙ্গে চুরে উঠে পড়ি আমি।

২. সাজ
অদ্ভুত চতুষ্কোনটা দিয়েই একটা চারকোনা জগৎ দেখি সবসময়। যে জগৎএর সব চেয়ে সুন্দর হল একটা চারকোনা আকাশ। আর আকাশের কিছু কোনহীন তুলা তুলা মেঘ। বর্ষাকালে ঐ পাশের কদম গাছটা বুদ্ধি করে কিছু ফুল ঝুলিয়ে দেয় চতুষ্কোনের উপর দিয়ে। আসলে আকাশটাকেই সাজিয়ে দেয় বুঝি। মেঘগুলোরও হয়তো সাজতে ইচ্ছে করে। কেঁদে কেটে তারা সেই দাবী জানায় গাছটাকে। গাছটা মুচকি হাসে। তার পর তাদেরও সাজিয়ে দেয়।

চতুষ্কোনের নিচ দিয়ে মাঝে মাঝে কয়েকটা শিমের লতা উকি দেয় ঘরে। ওপাশের শিমের মাচাটা বড্ড একঘেয়ে লাগে বুঝি তাদের কাছে। তাই রোদ বাক্স আর আলসীর যুদ্ধ দখতে চায় তারাও। নজরানা স্বরুপ মাঝে মাঝে আমার চারকোনা জগৎটাকে সাজিয়ে যায় কিছু বেগুনী শিমের ফুলে। আমিও মুচকি হাসি।

৩. টিফিন
কখনো কখনো কিছু প্লেন আকাশ সীমা লঙ্ঘন করে ঢুকে পড়ে আমার চতুষ্কোনে। ওয়ার্নিং ওয়ার্নিং! দুটো চিল সাই করে উড়ে যায় তাকে তাড়িয়ে দিতে। প্লেনটা লেজগুটিয়ে পালায়! এক সময় চড়ুইদের বাবা টা অফিস থেকে ফিরে। তাদের ঘুল ঘুলির অ্যাপার্টমেন্টে। চিল দুটোও কোথায় যেন যায়। টিফিন ব্রেক!

৪. কোলাহল
মাঝে মাঝে সেই ‘আজান দেওয়া’ মোরগ টা বিপদে পড়ে যায়। এসে আশ্রয়নেয় চতুষ্কোনের কাছে সেই শিমের মাচার উপর। মরজিনার বর ওটাকে খেয়ে ফেলতে চায়। কেন যে চায়, বুঝিনা। হয়তো ওটা ডিম পাড়েনা তাই। কিন্তু মোরগ কি ডিম পাড়ে? ওটার কারণে নাকি মুরগী গুলোর বাচ্চা হয়না!! আরে ডিম পাড়বে মুরগী। বেচারা মোরগ কে নিয়ে কেন টানাটানি?! এইসব বুঝিনা আমি। মরজিনার বর রেগেমেগে বলতে থাকে, “আরে ঐটার তো মুরগীতে হবেনা, হুর পরী লাগবে”। এইসব কোলাহল ভাল লাগেনা আমার!

৫. অদ্ভুত চতুষ্কোন
তারপর এক সময় টিফিন ব্রেকের পর, চড়ুইটা আবার ফুড়ুত করে উড়ে যায়। মাঝে মাঝে তার সাথে আমিও বেরিয়ে পড়ি। সেই অদ্ভুত চতুষ্কোন দিয়ে চলে যাই ওপারের চারকোনা জগৎটাতে। শিমের মাচাকে নীচে, কদম গাছটাকে বায়ে আর দুঃখী মোরগটাকে তার রাগী স্ত্রীদের সাথে রেখে যোগ দেই আমার সেই ফাইটার চিলদের সাথে। দুপুরের ভাত ঘুমে!

ততক্ষনে রোদ বাক্সটাও মিইয়ে গেছে। অনেক আগেই...
৩২টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×