somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনামিকা ও সূর্য রাঙা নখ (ছেলেবেলা)

৩০ শে মে, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘ধুরো আম্মু! দিলে তো কনসেন্ট্রেশন টা নষ্ট করে। সমাধান টা মাথায় চলেই এসেছিল প্রায়। আবারো ভাবতে হবে শুরু থেকে!’ কন্ঠে একরাশ বিরক্তি নিয়ে তাড়িয়ে দেই মা কে। আমার রুম থেকে। ‘ঐ যে, আবার দরজা খুলে রেখে যাচ্ছ!! বন্ধ কর’। রাত বাজে দুইটা। মফস্বল এলাকার জন্য এটার রীতিমত গহীন-গভীর রাত। চারিদিকে শুনশান নিরবতা। ঝি ঝি পোকারাও একটানা ঝি ঝি করতে করতে হাফিয়ে গেছে সেই অনেক আগেই। শুধু ফ্রীজের কম্প্রেশরের একটা মিহি গুঞ্জন। মাঝে মাঝে সেটার থার্মোস্ট্যাট কট করে লক হয়। তখন গভীর রাত আর গাঢ় নিরবতা একটা ভারী চাদরের মত পেচিয়ে ফেলতে চায় চারদিক থেকে।

একটু আগে নাইট গার্ড মিজান যখন তার ঘন্টায় দুইটা বাড়ি দিল। ঢং ঢং!! তখন ঘোর কেটে প্রথম সেই চাদরটা খেয়াল করলাম। একটু ভয়ও পেয়ে গেলাম যেন। আর তখনই দরজায় উকি দিল মা! মনটা একেবারে নেচে উঠলো! খুশিতে। তার পরও, ‘ধুর, মুর!...’ এসব বলে তাড়িয়ে দিলাম মাকে। শুধু শুধু রাত জেগে কষ্ট করছে, আর আমাকে ডিস্টার্ব করছে! আমার মা টা খুব বোকা।

মেন্দী দেওয়ার প্রতিযোগিতা চলছে। আমার পিচ্চি বোন হল গিনিপিগ। আমি আর আমার ছোটবোন দুই জন মিলে গিনিপিগের দুই হাতে মেন্দী দিয়ে দেব। এর পর বিচার হবে কার ডিজাইন সেরা। বিচারক আমার মা। যদিও জানি সে কোন ডিসিশনই দিতে পারবে না। তারপরও কন্টেস্ট চলছে। আমার পালা শেষ। এখন ছোট বোনটা মেন্দী দিচ্ছে। বসে বসে দেখছি তার কারুকাজ। কোন ফাকে যেন মা টুক করে আমার বাম হাতটা নিয়ে অনামিকায় একটূ মেন্দী দিয়ে দিলো। আমি রে রে করে উঠি। বলি, ‘ধুর এইটা কি করলে!! এখনি তো লাল হয়ে যাবে’। মা বলে, ‘হোক’। আমি একরাশ বিরক্তি নিয়ে ফিরি আবার পিচ্চি বোনটার হাতের দিকে। মেন্দীর কারুকাজ দেখতে দেখতে ভাবতে থাকি দোস্তরা কে কি বলবে। যেমন সজীব বলবে, ‘কিরে শালা বিয়ে করলি নাকি’ সুমন বলবে, ‘মেয়েদের মত নখে...’। ধুরো, মা যে কি! সব সব সময় বোকামী করে। বিরক্ত হই।

তারপর যখন মেন্দী শুকায়, আমরা সবাই হাত পেতে বসি বিচারকের সামনে। তখন অবাক হয়ে খেয়াল করি- আমার অনামিকার নখে অসাধারণ একটা উজ্জ্বল লালচে কমলা রঙ ফুটেছে। পিচ্চি বোনটা বলে, ‘একেবারে সূর্যের মত!’ ওদের হাতের রঙ ঠিক এতটা সুন্দর হয়নি কেন জানি!

তার কিছুদিন পর বাড়ি ছেড়ে চলে আসি। আসলে আসতে হয়। বিদায়ের সময় যখন মাকে সালাম করি। মা কাঁদে না। কেমন যেন রাগী রাগী চোখে তাকিয়ে থাকে। যেন আমিই সেই দুর্বৃত্ত যে তার ‘খোকন’ কে কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে দূরে। হাটতে হাটতে প্রায় বড় রাস্তার কাছে চলে আসে মা। আর তার দুই হাত ধরে ছোট দুই বোন। রিক্সাটা বেশ কিছু দূর এগিয়ে যাবার পর পিছন ফিরি আমি। আমার সেই সূর্য রাঙা নখ, নখ ধারী অনামিকা, আর অনামিকা ধারী হাতটা নেড়ে বিদায় জানাই তাদের। দুর্বৃত্তের উপর রাগটা তখন আর ধরে রাখতে পারেনা মা। এবার কেঁদে ফেলে। আর কি অবাক কান্ড! তার সাথে যোগ দেয় আমার ছোট দুই বোনও। যারা কিনা বলতো, ‘তুমি গেলে খুব খুশি হব। একটা ঝগড়াটে কমবে!’ আসলে তখন ওরাও বোকা হয়ে যায় বোধ হয়। তিনটি বোকা মানুষকে পিছনে ফেলে অনেক দূরে চলে আসি আমি।

নতুন যায়গায় একটা ঘুপচি ঘরে বসে রাতের পর রাত পড়াশুনা করি। একদিন অনেক রাতে নখ কাটতে গিয়ে আটকে যাই অনামিকায় এসে। সূর্য রংটা সে হারাতে বসেছে প্রায়! বুকটা হু হু করে ওঠে। এসময় একটা তেলাপোকা উড়ে যায় দরজার দিকে। খুট করে একটু শব্দ হয় যেন। বেখেয়ালে বলে উঠি, ‘ধুরো আম্মু...’!!

সেবার আমিও বোকা হই। ঘড়িতে তখন রাত, ঠিক দুইটা...
৫২টি মন্তব্য ৪৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×