somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দশ মাস দশ দিন (কল্পগল্প)

০৪ ঠা জুন, ২০০৮ সকাল ৮:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছেলেটা বলে, আচ্ছা! কেমন হবে বল তো, আমাদের বাবুর চোখ যদি হয় আকাশ রাঙা?
মেয়েটা একটু পুলকিত হয়। মনে মনে আকাশ রাঙা এক জোড়া নবীন চোখ কল্পনা করে সে। একটু খুশি হয়ে ওঠে যেন। তারপর একটু ভেবে বলে, ‘উমম... আচ্ছা, আকাশ রঙের সাথে একটু সবুজ আভা থাকা চাই। কি দারুণই না লাগবে তাহলে!’

ছেলেটা খুশি হয়। চোখ দিয়ে একরাশ ভালবাসা ছড়িয়ে তাকিয়ে থাকে মেয়েটার দিকে। মেয়েটাও প্রতুত্তরে একটা মিষ্টি হাসি দেয়। আরেকটু চেপে বসে ছেলেটার দিকে। ছেলেটা তখন বলে, ‘আমাদের বাবুটার হবে টুক টুকে একটা গোলগাল মুখ’।
মেয়েটা যোগ করে, ‘আর যখন সে মিষ্টি করে হাসবে, দুগালে পড়বে এই এত্ত সুন্দর দুটো টোল’।

ছেলেটা এবার মেয়েটার হাত ধরে। টুন টুন করে কয়েকটা শব্দ হয় যেন। চুড়ির। মেয়েটা তার হাতের চাপ একটু বাড়িয়ে দেয়। এই চাপটুকু দিয়ে সে তার ভালবাসা বুঝিয়ে দেয় ছেলেটাকে। তারপর মেয়েটা বলে, ‘আচ্ছা, আমাদের বাবুর চুল কোকড়া হলে কেমন হবে বলতো?’
ছেলেটা একটু ভাবে। তারপর বলে, ‘কোকড়া চুল দেখতে ভালই লাগে আমার। কিন্তু কোকড়া চুলের মানুষ হয় একটু বদ মেজাজি। প্রতিদিন সকালে চুল আচড়াতে দিয়ে যেই চিরুনি আটকে যায় অমনি মেজাজ যায় বিগড়ে’। তারপর তারা দুজনেই ভেবে নেয় যে তাদের বাবুর চুল হবে সিল্কি। আর একটু লালচে কাল রঙের।

এর পর তাদের আলোচনা চলতেই থাকে। বাবু লম্বা হবে, নাকি মাঝারি উচ্চতার; ফর্সা, নাকি ট্যান; এসব হাজার বিষয়ে কথা বলে তারা। তারপর একসময় তারা দুজনেই বলে, ‘আমাদের হবে একটা ছেলে। যে তার সবুজাভ আকাশী চোখ দিয়ে জয় করে নেবে পৃথিবীর সব মেয়ের মন!’ এসব বলার পর ছেলেটা মেয়েটার বাম কানের কাছে একটা চুমু দেয়। তখন মেয়েটা তার টোল খাওয়া মুখে একটা মিষ্টি হাসি দেয়। ছেলেটাও একটু হাসে। মিষ্টি করে।

টেবিলের ওপাশ থেকে একটা ভরাট কন্ঠ বলে ওঠে, ‘স্পেসিফিকেশন সব নোট করা হয়েছে। আপনাদের বাচ্চাটা হতে যাচ্ছে ঠিক এরকম’। বলে একটা বাটনে চাপ দেয় সে। টেবিলের উপর ভেসে ওঠে একটা বাচ্চার হলোগ্রাফিক ইমেজ। বাচ্চাটা তার হবু বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে তার টোল খাওয়া গালে একটা মিষ্টি হাসি দেয়। আকাশী-সবুজ চোখে তখন তার রাজ্যের বিষ্ময়! মেয়েটার চোখে পানি চলে আসে। এবার হাতের চাপ বাড়িয়ে দেয় ছেলেটা। ভরাট কন্ঠটা মনে করিয়ে দেয় যে, তাদের বাচ্চাটা এক্সাক্ট এরকম হবেনা। নেচারাল কিছু বায়োলজিকাল মর্ফিং অ্যালাউ করা হবে। যাতে সব বাচ্চা একই রকম না হয়ে যায়।

তারপর সে আরো বলে, ‘নেক্সট একটা ওভারী চেম্বার ফাকা হবে দশ দিন পরে। তারপর কালচার হতে প্রায় দশ মাস। অবশ্য এক্সাক্ট ডেটটা একটু এদিক ওদিক হতে পারে। তার মানে ঠিক দশ মাস দশ দিন পরে যোগাযোগ করছেন আপনারা’।

এরপর প্রয়োজনীয় ক্রেডিট ট্রান্সফার করে, ছেলেটা আর মেয়েটা একে অপরের হাত ধরে বেরিয়ে আসে দেশের সব চেয়ে বড় জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম থেকে।
৪০টি মন্তব্য ৩৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×