somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপদার্থ কথা (ছেলেবেলা)

১৮ ই জুন, ২০০৮ রাত ১১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“তুই একটা অপদার্থ”। আমি নিশ্চিত, পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশিবার এই কথা শুনেছি আমি। আর পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশিবার এই কথা বলেছেন আমার বাবা। পদার্থ বিজ্ঞান পড়েছি ক্লাস নাইনে উঠে। কিন্তু অপদার্থের সংজ্ঞা জেনে গেছি তার অনেক আগেই। আমার বাবা আমাকে শুধু অপদার্থ বলেই ক্ষান্ত হননি। আমি যাতে ঠিক মত অপদার্থ হয়ে বেড়ে উঠি তার উপযূক্ত ব্যবস্থাও করেছেন! যদিও তার ধারণা ছিল আসলে সে আমাকে মানুষ বানাচ্ছে!!

বাসায় নতুন কোন গৃহশিক্ষক নিয়োগ করার সময় বাবা একটা কথা সব সময়ই বলে, ‘স্যার, এই ছেলের খালি হাড্ডি গুড্ডি আমার, ছাল চামড়া মাংস সব আপনার!’ মফস্বল এলাকার স্যাররাও ছাল চামড়া আলাদা করার ওস্তাদ। পরের দিনই সেসব কাজের ইন্সট্রুমেন্ট, মানে বেত, নিয়ে হাজির। তার পর চলে ছাল চামড়া আলাদা করার ব্যপক কর্মকান্ড! রাতে বাবা বাড়ি এসে বলে, ‘দেখিতো, তোর পড়াশুনা কেমন হচ্ছে? এদিক আয়। জামা খোল!’ তখন জামা খুলে আমার গায়ের বিভিন্ন যায়গায় ‘পড়াশুনার’ চিহ্ন দেখাতে হয়। বাবা সন্তুষ্ট চিত্তে মার দিকে ফিরে বলে, ‘বুঝলে এইটা জাদরেল টিচার!’

মাঝে মাঝে গা দেখে বোঝা যায় যে, ‘পড়াশুনা’ আজ তেমন হয়নি। তখন আমাকে নিয়ে বসে ট্রানস্লেশন সেখাতে। তখন ‘ডাক্তার আসার আগে’ এমনকি ‘রোগী মরারও অনেক আগেই’ আমার ‘পড়াশুনা’ হয়ে যায়। এর পর বাবা বসে জেনেটিক্স নিয়ে। আমার মামারা কেন সব গাধা গরু। এবং কি ভাবে সেই জিন আমার মায়ের মাধ্যমে তার ছেলের জিন কে মডিফাই করে গাধাগরু বানিয়ে ফেলেছে, সেইসব এর বিশদ বর্ণনা!

এভাবে প্রতিটা দিন শেষ হয়। পরদিন সকালে যখন আমাদের মাস চুক্তির রিক্সাওয়ালা বাসার সামনে টুন টুন বেল বাজায়। স্কুলে নিয়ে যাবার জন্য। দেখা যায় আমি তখনো আমার জুতার ফিতা নিয়ে কসরত করছি। বাবা আবার ‘তুই একটা অপদার্থ’ বলে এসে আমার জুতার ফিতা বেধে দেয়। আর সাথে দেয় ফিতা বাধার ইন্সট্রাকশন। ঘটনাটা প্রায় প্রতিদিনই ঘটতে থাকে। তার পর কোন একদিন হুঠ করে ফিতা বাধা শিখে ফেলি আমি! অভ্যাস বসে আমার জুতার ফিতা বাধতে এসে ‘তুই একটা অপদার্থ’ বলার পর বাবা যখন দেখে ফিতা বেধে ফেলেছি তখন বাবা যেন একটু থমকেই যায়। হয়তো তার অপদার্থ ছেলেটা বড় হয়ে যাচ্ছে দেখেই! ততদিনে সকালে আমার জুতার ফিতে বেধে দেওয়া টা তার অভ্যাস হয়ে গেছে। বাবা বলে, ‘এহ হে! এভাবে বাধে নাকি!’ তার পর সেই গিট খুলে আবার বেধে দেয়।

আসলেই বাবার বেধে দেওয়া গিটে যে ভালবাসা টুকু থাকে সেটা তো আর আমার গিটে থাকেনা। তাই সেই সুযোগটা আমিও দেই তাকে। তারপর আবারো বরাবরের মতই আরেকটা দিন। আবারো সেই ‘পড়াশুনা’ আরো দু-দশবার অপদার্থ পরিগনিত হওয়া...। এভাবেই দিন গুলো কাটে। আমি বড় হই। বড় হতেই থাকি। সকাল বেলায় এই ফিতে বেধে দেওয়ার ছোট্ট নাটিকাও টি অভিনিত হতেই প্রতিদিনই।

এভাবেই কাটে অনেক অনেক দিন। একসময় আমার এইচ, এস, সি, পরীক্ষা। সেই ফিতা বেধে দেওয়ার খেলাটা তখনো চলছে। সকালে বাবা যথারীতি আমার জুতার ফিতা বেধে দিচ্ছে। এসময় পাশের বাসার আঙ্কেল এসেছে পরীক্ষার্থি কে একটু অভয় টভয় জানাতে। এসে দেখে এই অবস্থা! সে চক্ষু ছানাবড়া করে তাকিয়ে আছে। তার চোখে তখন বড় হরফে লেখা ‘কত্ত বড় অপদার্থ!’ তাকে দেখে আমি যারপরনাই লজ্জা পেয়ে গেছি। বাবা তখন জুতা থেকে চোখ উঠিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘বুঝলেন ভাই। আমার ছেলেটা একটা অপদার্থ!’

তার পর আমি পরীক্ষা দিতে যাই। পদার্থবিজ্ঞান!
৪২টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×