somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্ল্যাক হোল-৭(মিনি ব্ল্যাক হোল এবং এদের প্রভাব)

১৫ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিংশ শতাব্দিতে ব্ল্যাক হোলের ভবিষ্যতবানী স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন তুলল কিভাবে এই ধরনের সুপারডেন্স বস্তু তৈরি হতে পারে।সময়ের সাথে সাথে বিজ্ঞানীরা উপলব্ধি করল এ প্রশ্নের অনেকগুলো উত্তর হতে পারে।এই উত্তর নির্ভর করবে ব্ল্যাক হোলের আকারের উপর।মিচেল,ল্যাপ্লাসের সময় থেকেই জোর্তিবিদ ও পদার্থবিদেরা তীব্র মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র সম্পন্ন তারকা আকৃতির বস্তুর দিকে মনযোগী হন।কাজেই ব্ল্যাক হোল কিভাবে তৈরি হয় তা বোঝার জন্য নক্ষত্রের জীবন-চক্র এবং এর ভিতরের ভৌত ক্রিয়া সম্পর্কে জানার ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা মনযোগী হন।
অবশ্য আইন্সটাইনের জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি খুবই ক্ষুদ্র আকৃতি সহ যে কোন আকৃতির ব্ল্যাক হোল থাকার সম্ভাবনা অনুমোদন করে।১৯৬৭ সালে জন হুইলারের ব্ল্যাক হোল নামের অবতারনার পর থেকেই অনেক বিজ্ঞানী ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র(মিনিয়েচার) ব্ল্যাক হোলের তত্ত্ব প্রদানের চেস্টা শুরু করল।পরমানু আকৃতির মিনি ব্ল্যাক হোলও থাকতে পারে।কিন্তু এতে পদার্থের ঘনত্ব এতই বেশি হতে পারে যে এ ধরনের একটি মিনি ব্ল্যাক হোলের ভর হতে পারে ১০০ ট্রিলিয়ন টন(~১০^১৭ কেজি)।এমনকি আরো ছোট মানে নিউক্লিয়াস আকৃতির মিনি-ব্ল্যাক হোলও থাকতে পারে।এই আকৃতির ব্ল্যাক হোলের ভরও ~১০^১২ কেজি স্কেলে হবে।
এই ধরনের ক্ষুদে আকৃতির ব্ল্যাক হোলের নাক্ষত্রিক(স্টেলার বা তারকাকৃতির) ব্ল্যাক হোলের সাথে কোন অত্যাবশ্যক সম্পর্ক না থাকারই কথা।কাজেই মিনি ব্ল্যাক হোলের সৃষ্টির সাথে নক্ষত্রের বা তারকার জীবন মৃত্যুর কোন সম্পর্কও নাই।তাহলে কোন ধরনের প্রক্রিয়ায় বা সক্তির সাহায্য মিনি ব্ল্যাক-হোল সৃষ্টি হয়?সত্তরের দশকের শুরুর দিকে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এর একটি গ্রহনযোগ্য ব্যাখ্যা দেন।তার মতে বিগ-ব্যাং বা মহা-বিস্ফোরনের(অধিকাংশ বিজ্ঞানীদের মতে যে বিস্ফোরনের মাধ্যমে মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে) সময় এইসব ক্ষুদ্রাকৃতির সুপারডেন্স বস্তুর সৃষ্টি হয়েছে।আইজ্যাক আজিমভ মিনি ব্ল্যাক-হোল সৃষ্টির এ ঘটনাটিকে এভাবে ব্যাখ্যা করেন, “অত্যন্ত বিশাল পরিমান পদার্থ মহা-বিস্ফোরনের সময় যখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছিল তখন কিছু কিছু যায়গায় এইসব পদার্থের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে থাকতে পারে।এই সংঘর্ষকৃত পদার্থগুলোর কিছু অংশ তখন সবদিক থেকে প্রচন্ড চাপ অনুভব করে থাকতে পারে এবং এই প্রচন্ড চাপে তারা একটিমাত্র বিন্দুতে একীভূত হয় যেখানে মহাকর্ষীয় বলের তীব্রতা এতই বৃদ্ধি পায় যে তা এই পদার্থগুলিকে চিরদিনের মত ওই একটিমাত্র বিন্দুতেই আবদ্ধ করে রাখে।আর এভাবেই তৈরি হয় মিন ব্ল্যাক হোল।”


স্টিফেন হকিং --তার প্রস্তাবনা অনুসারে যেই বড় বিস্ফোরনের মাধ্যমে মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে ওই একই কারনেই মিনি-ব্ল্যাক হোলের সৃষ্টি

স্টিফেন হকিংসহ অন্যান্য অনেক বিজ্ঞানীর ধারনা এই ধরনের লক্ষ লক্ষ মিনি ব্ল্যাক হোল এখনো মহাবিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।যদি তাই হয় তবে একদিন না একদিন কোন গ্রহানুপুঞ্জ,গ্রহ বা বড় আকারের কোন বস্তু এর মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র দ্বারা এর দিকে সরে আসবে।যদিও এই ধরনের মহাজাগতিক সাক্ষাত বিপজ্জনক হবে না বা কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ও ডেকে আনবে না।অবশ্য আজিমভের মতে,
“যদি একটা মিনি ব্ল্যাক হোল কোন বড় বস্তুর সাথে ধাক্কা খায় তাহলে এটা শুধুমাত্র ওই বড় বস্তুটাকে ভেদ করে এর নিজস্ব পথে চলে যাবে।এটি প্রথমে যে অংশটুকুর সাথে প্রথমে ধাক্কা খাবে সে অংশটুকুকে গ্রাস করে নিবে।এর ফলে যে শক্তি বিমুক্ত হবে তা এর সামনের বস্তুটুকুকে বাষ্পিভূত করে ফেলবে এবং এটি এই গরম বাষ্পের ভিতর দিয়ে যাবার সময় এই বাষ্পকে গ্রাস করবে এবং আবারো শক্তি বিমুক্ত করবে এবং এইভাবে এটি বড় বস্তুটির আরেক প্রান্ত দিয়ে বের হয়ে যাবে।বের হওয়ার সমর এটি আগের চেয়ে তুলনামূলক বড় আকৃতির একটি ব্ল্যাক হোলে পরিনত হবে।”
একটা মিনি ব্ল্যাক হোল একটা গ্রহের ভিতর দিয়ে গেলে যে গর্ত তৈরি করবে তা একটা বাগানে পিপড়ার তৈরি একটা গর্তের মতই ক্ষুদ্র এবং তাৎপর্যবিহীন হবে।এবং এ কারনেই যদি মিনি ব্ল্যাক হোল থেকেও থাকে তবে বিশালাকার বস্তুর উপর তাদের প্রভাব এতটাই সামান্য হবে যে তা মানুষ ও মাহাবিশ্বের অন্য যে কোন প্রানীর জন্য তা কোন বিবেচ্য বিষয়ই নয়।
অন্যদিকে স্টেলার বা বিশাল ভরের ব্ল্যাক হোলের মহাবিশ্বে এবং মানব জীবনে বিশেষ সম্ভাবনাময় প্রভাব রয়েছে।এজন্যই বিজ্ঞানীরা ব্ল্যাক হোল কিভাবে গঠিত হয়,এদের বৈশিষ্ট্য কি কি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য বিজ্ঞানীরা এত সময় ধরে নিজেদের নিয়োজিত করে রেখেছেন।তারা এটা উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে এমন বিশাল পরিমানের পদার্থ এমন ক্ষুদ্র একটা যায়গায় ঠেসে রাখতে(কমপ্রেস করতে) হলে একটা প্রচন্ড ভায়োলেন্ট প্রক্রিয়া বা ঘটনার প্রয়োজন।এবং এই ধরনের প্রক্রিয়ায় নির্গত শক্তি ভূমিকম্প,আগ্নেয়গিরির অগ্নুপ্যাত বা কোন গ্রহের সাথে গ্রহানুপূঞ্জের সংঘর্ষের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে নির্গত শক্তি থেকে লক্ষ লক্ষ গুন বেশি হবে।কাজেই বিজ্ঞানীদের কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে নক্ষত্রের ভায়োলেন্ট মৃত্যুই স্টেলার ব্ল্যাক হোল সৃষ্টির একমাত্র কারন হতে পারে।

ব্ল্যাক হোল সিরিজের আগের লেখার লিঙ্কঃ

ব্ল্যাক হোল-১( অ্যাস্ট্রোফিজিক্স-অসম্ভব অজানার মুখোমুখি)

ব্ল্যাক হোল-২(ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে জানা প্রয়োজন কেন?-এস্ট্রোফিজিক্স

ব্ল্যাক হোল-৩(ব্ল্যাক হোলের প্রাথমিক ধারণাসমূহ)

ব্ল্যাক হোল-৪(মুক্তি বেগ এবং অদৃশ্য তারকারাজি)

ব্ল্যাক হোল-৫(মহাশুন্যের বক্রতা ও মহাকর্ষ কূপ এবং জেনারেল থিওরী অফ রিলেটিভিটি)

ব্ল্যাক হোল-৬(সুপারডেন্স বস্তু থাকা কি সম্ভব???)

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ২:৩৪
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×