somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুহাম্মদ তমাল
আমি তমাল। তমাল মানে তমাল বৃক্ষ! আমি বৃক্ষের মতোই সরল, সহজ এবং মোহনিয়। পেশায় একজন পুরঃ কৌশল প্রকৌশলী। কাজ করেছি দেশের স্বনামধন্য কোন এক দপ্তরে। বর্তমানে উচ্চশিক্ষার জন্য জার্মানীতে অবস্থান করছি। আমি ভালবাসি মানুষ,দেশ এবং পরিবেশ। ধন্যবাদ।

গন্তব্যপথ এবং ঠিকানা

৩০ শে নভেম্বর, ২০২১ ভোর ৫:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মধ্য রাত, স্টেশনে ঘুটঘুটে অন্ধকার,
বোটকা গাঁজা, বিড়ি, প্রসাব আর ময়লার বিশ্রী রকমের গন্ধ।

চারিদিকে নিশ্চুপ, হু হু, শুনশান নীরবতা। কেউ জেগে নেই। জেগে আছে শুধু স্টেশনে দ্বায়-বদ্ধতায় থাকা কয়কে টা মানুষ আর স্টেশনে ঘুমানো ঠিকানা বিহীন মানুষ গুলোর রুটিন করে ফ্রি রক্ত খাওয়া বুড়ো বুড়ো মশার দল। তারা সবাই ব্যস্ত পৈশাচিক উলঙ্গ নৃত্যে। পেট পুরে খাচ্ছে শেষ বারের খাওয়া। যাকে বলে মওতের খাওয়া। যেমনটা খায় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা।

অসংখ্য ঠিকানা হীন ঘুমাচ্ছে, শান্তির ঘুম, প্রশান্তি, অনাবিল পূর্ণতার ঘুম, সারাদিনের ক্লান্তির ঘুম। পরবর্তী দিনের খাবার জুটাতে যতখানি শক্তি ব্যয় হবে, সেই শক্তি অর্জনের ঘুম।
ঠিকানা, এক অদ্ভুত রকমের দামী শব্দ। অনেক দামী।
প্রকৃতপক্ষে আমরা প্রত্যেকেই ঠিকানা বিহীন। আমাদের কোন স্থায়ী ঠিকানা নাই। সবকিছুই অস্থায়ী। অনন্যব্রত ঘূর্ণনরত। ভাসমান, শেওলার মতো।

হাজার, লক্ষ, কোটি, মিলিয়ন, বিলিয়ন, ট্রিলিয়ন, থেকে সেন্ট্রিলিয়ন বছরের যাত্রাতেও আমরা অস্থায়ী।
এ যাত্রা অনন্তকালের। আমাদের মানব সভ্যতা অথবা অসভ্যতার সূচি ছিল, আফ্রিকার প্রখর রৌদ্রময় মাটিতে। সে মাটি আমার স্থায়ী ঠিকানা হয়নি, আমি এবং আমরা ছড়িয়েছি পৃথিবীর প্রতিটা কোনে কোনে, ক্ষণে, ক্ষণে, প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনে, হয়তো অজানাকে জানতে, নতুন কিছু আবিষ্কার করার টানে, এ অদ্ভুত টান, অপূর্ব, অনাবিল, অনিন্দ্য, অপ্রকাশ্য।

এ যেন এক ঠিকানা হারানোর নেশা।

আমি ঠিকানার খোজে ঠিকানা হারাই, অজানায় পা বাড়াই, কিসের মৃত্যু ভয়, আমি যে যে অমর, অবিনাশী, আমার শেষ ঠিকারা একমাত্র মহেশ্বর।
অনিশ্চয়তা, শঙ্কা, আশঙ্কাতেও অবিবরত আমার পথ চলা। আপনার বাসার চকচকে মার্বেল পাথরের খোদাই করা নেম-প্লেট যতটা স্থায়ী, এটা থেকেও অনেক বেশী অস্থায়ী আপনি।

অস্থায়ী আপনার জানালার সদ্য প্রবাহিত হিমেল বাতাসের মতো, অথবা গত তরশু দিনের মৃদু ভূমিকম্পের মতো। চোখ বন্ধ করে, ভাবুন, কোথায় ছিলেন, কোথায় আছেন, এবং কোথায় থাকবেন। হাস্যকর হলেও এটাই নির্মম সত্য, আপনার কোন ঠিকানা নাই।
আপনার ঠিকানা আপনার অন্তিম যাত্রায়।
আপনার প্রতিপালক সমীপেষু।

ঐ স্টেশনে ঘুমে মগ্ন মানুষের মতোই, এক, অভিন্ন অবিচ্ছিন্ন, অস্থায়ী গোলকের অবিরত তাল মেলানোই আমাদের এক এবং একমাত্র উদ্দেশ্য, বিধাতা কর্তৃক নির্ধারিত । মাঝে মধ্যে ভাবনা ডালপালা মেলে, এই যে এতসব মোহ, মায়া, মমতা,প্রেম, ভ্রম, ভালবাসা, লুতুপুতু, কুতুকুতু, বাবু, সোনা, ময়না, টিয়া, অভিলাষ, লক্ষ্য, ধ্যান, পৈশাচিক বড় হবার তাড়না, নিতান্তই কি অবান্তর এবং ক্ষণস্থায়ী ?


সত্যি বলতে আমি জীবনটাকে পথ আর নিজেকে পথিক ভাবি। খুব বেশী কিচ্ছুই করার নাই, শুধু নিশ্বাস নিতে চাই, এই বিশ্বাসে, আমার প্রতিপালকের কাছে আমার প্রকৃত ঠিকানা, চলছি, চলবো, আমার এই পথ চলা, আমার এই পথে, ঠিকানার খোজে, আমি ঠিকানা বিহীন।

অনেক গন্ধ, আর দাড়াতে পারছি না, ট্রেন চলে আসছে।
এভাবেই আমার প্রতিপালক সমীপে আমার যাত্রা শুরু হবে। আপনি আপনার মোনাজাতে আমার জন্য আমাদের প্রতিপালকের নিকটে নাজাতের দরখাস্ত রাখুন। চললাম........

----মোহাম্মাদ তমাল

১৭.০৯.২০১৭
ইসলামপুর রেলওয়ে স্টেশন, জামালপুর।

(লেখাটি ৪ বছর আগের। চাকরি সূত্রে মাঝেমধ্যে তখন আমার জামালপুর-শেরপুর যেতো হতো।)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০২১ ভোর ৫:৪৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×