somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খন্দকার মোহাম্মদ ফারুকঃ স্মৃতি ও কর্ম

০১ লা জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
ড. মঞ্জুরে খোদা


৭৫’র পটপরিবর্তনের পর সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখল ও পাল্টা দখলের খেলা চলছিল, সেই সময়ে সামরিক স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের মধ্যদিয়ে খন্দকার মোহাম্মদ ফারুক’র ছাত্র আন্দোলনে অভিষেক। সময়টা ছিল বড় বৈরী ও বন্ধা। অপরাজনীতির বিষবৃক্ষ রোপণ ও তার পুষ্টিদানের কাজ চলছিল পুরাদমে। সেই সময়ে তার মত নেতার প্রয়োজন ছিল এক অনিবার্য বাস্তবতা। রাজনীতিতে তিনি ছিলেন নিবেদিত, তার বলা বক্তব্য, কর্মকান্ড ও সৃজনশীলতায় ছিল অসাধরণ মেধার ছাপ। আর তিনিও তার সামর্থের সবটুকু দিয়ে করেছেন। তার ফলও আমরা দেখেছি প্রবল প্রাতিষ্ঠানিকতার বিপরীতের দাঁড়িয়ে অধিক শক্তিশালী করেছেন বাংলাদেশের বৃহত্তম প্রগতিশীল ছাত্র প্রতিষ্ঠান ছাত্র ইউনিয়নকে। শুধু তাই নয় বাংলাদেশের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি সংগঠনকে একক মর্যাদা ও জনপ্রিয়তায় নিয়ে গেছেন। তিনি নিজে তিন তিন বার (১৯৭৯-১৯৮৩) ইউকসুর সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। যে সম্মান ও অর্জন ছাত্র আন্দোলনে তার গ্রহনযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তায় যোগ করেছে বিশেষ মাত্রা, পরিণত করেছে ছাত্র রাজনীতির আইকন হিসেবে।

ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসে খন্দকার মোহাম্মদ ফারুক’র আত্মত্যাগ ও ভূমিকা আজও অম্লান। ১৯৮২’র ২৪শে মার্চ সামরিক জান্তা এরশাদ ক্ষমতা দখলের পর ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী প্রথম সংগঠিত প্রতিবাদে তার ভূমিকা ছিল এক দুঃসাহসী ছাত্রনেতার। যে দিনটি আজ ‘স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পরিচিত। সেদিন তিনি শহীদ জয়নালের লাশ নিজের কাঁধে বহন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলে পুলিশের থাবা থেকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। যে মিছিলের ওপর সামরিক শাসক ট্রাক উঠিয়ে দিয়েছিল, তিনিও সেই ট্রাকের চাপায় গুরুতর আহত হয়ে অল্পের জন্য বেঁচে যান। এই সময়ে তিনি সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন (১৯৮২-১৯৮৪)।

ছাত্র আন্দোলন শেষ করে তিনি ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ও বাংলাদেশের ক্ষেতমজুরদের সংগঠিত করার কাজে হাত দেন। সেখানেও তিনি তার মেধা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখেন। তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ ও দৃশ্যমান করা সম্ভব হয়। কাজ, মজুরী, জমি, অধিকার, ইনসাফের আন্দোলনকে তিনি জাতীয় পর্যায়ে পরিচিত করান। তৎকালীন সরকার ক্ষেতমজুরদের সেই দাবীর যৌক্তিকতা স্বীকার করে ভূমিহীনদের মাঝে খাস জমি বিতরণের সিন্ধান্ত গ্রহন করেন।

’৯০ এ সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর নানা রাজনৈতিক টানাপোরেনের কারনে তিনি সার্বক্ষনিক রাজনীতি থেকে বিদায় নেয়। একজন শিল্প উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যবস্যা শুরু করেন এবং প্রতিষ্ঠা করেন ‘নর ওয়েস্টার ফ্যাশন লিমিটেড, তিনি ছিলেন যার কর্ণধার। সেখানেও তিনি তার মেধা ও শ্রম দিয়ে একজন সফল উদ্যেক্তায় পরিণত হন। পাশাপাশি নানা সামাজিক, রাজনৈতিক ও মানবিক কর্মকান্ডে সহযোগিতা অব্যাহত রাখেন।

দেশে একটি সুস্থধারার ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠুক সেটি তিনি মনে প্রাণে চাইতেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর পার্টির ভাঙ্গনে ছাত্র ইউনিয়নের শুভকাঙ্খীদের একটি বড় অংশ তাদের মুখ ফিরিয়ে নেন তখন উনার ভূমিকা ছিল ব্যতিক্রম। বিশ্ব রাজনীতির নয়া মেরুকরণের টালমাটাল পরিস্থিতিতে যখন বিভিন্ন শুভাকাঙ্খীদের কাছে যেতাম নানা সহযোগিতা ও পরামর্শের জন্য তখন অনেকে উৎসাহ না দেখালেও ফারুকভাই ছিলেন আশার বাতিঘর। সেই সময় (১৯৯৬) তিনি একদিন আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, সংগঠন করতে তোমাদের সবচেয়ে বড় খরচ ও সমস্যা কি? আমি বললাম সংগঠনের অফিস ভাড়া নিয়মিত পরিশোধ করা আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় দায়। উনি জানতে চাইলেন তোমাদের অফিস ভাড়া কত? আমি বললাম ৩ হাজার টাকা। উনি বললেন আজ থেকে তোমাদের অফিস ভাড়ার দায়িত্ব আমি নিলাম। আরও বললেন, তোমাদের বড় অনুষ্ঠানগুলোর সময় আমার সাথে যোগাযোগ করবে। সেখানে কর্মরত ছিলেন, আমাদের সংগঠনের একজন প্রাক্তন বন্ধু আলামিন ভাই অতি বিনয়ী এবং দায়িত্বশীল একজন মানুষ, প্রতিমাসের ৩০ তারিখে যেয়ে আমি টাকাটা নিয়ে আসতাম। সেই সময় এই সহযোগিতা যে কতবড় বিষয় ছিল তা সেই সময়ের বন্ধুরাই কেবল উপলব্ধি করতে পারবেন। যতটুকু জানি- জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি তার সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন। ফারুক ভায়ের মেধা, ত্যাগ, কর্ম ও স্মৃতি হোক এই প্রজন্মের সাহস ও অনুপ্রেরণা।

মঞ্জুরে খোদা টরিক, গবেষক, ইনস্টিটিউট অব পলিসি সাইন্স, জাপান, সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×