somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সংলাপ: বিশিষ্ট নাগরিকদের আকাঙ্খা প্রসঙ্গে

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ড. মঞ্জুরে খোদা

যারা মনে করেন প্রধান দুই দলের মধ্যে সংলাপ করানো গেলে বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমস্যাকে একটা সমঝোতা ও সমাধানের দিকে যাবে তাদের সেই আকাঙ্খার প্রতি আমার সহানুভুতি থাকলেও কান্ডজ্ঞান ও আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

প্রথম বিষয় হচ্ছে, দুই নেত্রী বা দলের চাওয়া-পাওয়া পরস্পরের অজানা কিছু না! এবং এই প্রশ্নে তাদের অনমনীয় অবস্থানের ধারাবাহিক বিভিন্ন পর্বের একটি অংশ হচ্ছে বর্তমান পরিণতির এই পর্যায়। তাই যদি হয় তাহলে তাঁদের সংলাপ আকাঙ্খার এই উত্থাপন কতটা জরুরী ও গুরুত্বপূর্ণ?
দ্বিতীয়ত, যারা এই বিষয়ের উদ্যোগ/আহ্বানের কথা বলছেন, তারা কি মনে করছেন বাস্তবতার ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধিতে নেতা-নেত্রীরা অক্ষম? সেটাই যদি হয় তাহলে তাঁদের কেন মনে হলো উনাদের আহ্বান বা আকুতি বোঝার মত জ্ঞান-বোধ-গুরুত্ব তাঁদের আছে বা হবে?

তৃতীয়ত, বাস্তবে এই আহ্বান ও আকাঙ্খা কখন গুরুত্ব পায়? রাষ্ট্র বিজ্ঞানের সাধারণ পাঠ হচ্ছে, যখন দেশের ভিতরে এবং/অথবা বাইরের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক ও কোন প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি যাদের উপকার ও ক্ষতি করার ক্ষমতা আছে, তাদের প্রভাব যদি এই আকাঙ্খার সাথে যুক্ত হয় তাহলেই সেই চাওয়টি ঐ পর্যায়ের গুরুত্বের বিবেচনায় আসে। এখন প্রশ্ন, সেটা কি এই শিক্ষিত বিদগ্ধ জনদের অজানা..?

তাহলে কেন এই নাগরিকরা রাজনীতিকদের গাত্রে সুঁড়সুড়ি দিয়ে এমন পুলকের সৃষ্টি করেন? রাষ্ট্র ও সমাজের উন্নতিতে ব্যক্তি নাগরিকদের ভূমিকা অস্বীকার করছি না কিন্তু একটি উন্নত গণতান্ত্রিক সমাজে সেটা সম্ভব। উনারা যদি কেউ ভারতের আন্না হাজারের মত সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব রাখতেন তাহলেও সেখানে কিছু আশা করা যেত, তা না হলে এই সব কথা হবে কেবলি ফলহীন-শব্দদূষণ বৈ অন্য কিছু নয়।

সংলাপ হচ্ছে কোন অচলাবস্থা অবসানের বা পথ খুঁজে বের করার একটা সমঝোতামুলক প্রক্রিয়া। কিন্তু ১৮০ ডিগ্রী বিপরীতিমুখী কোন অনড় অবস্থানের পরিস্থিতিতে এই বিবেচনা কতটা সমীচীন? পক্ষগুলোর উভয় অথবা অন্তত একপক্ষকে সমঝোতার ইঙ্গিতসহ সম্ভাব্য একাধিক ফর্মুলা ঘোষণা করলে এর একটা ক্ষেত্র তৈরী হতে পারে, কিন্তু এখানে তার সামান্যতমও কিছু ঘটেছে? সমঝোতার দুইটি দিক আছে একটি হচ্ছে নীতির দিক, আরেকটি কৌশলগত। প্রথমে নীতিগত অবস্থানের বিষয়ে একটা সিন্ধান্তের ক্ষেত্র তৈরী করা তারপর কৌশলগত প্রক্রিয়া নিয়ে সংলাপের সুযোগ থাকে/আসে। যেখানে উভয় শর্তই অনুপস্থিত, সেখানে এই চাওয়া কতটা যৌক্তিক ও কান্ডজ্ঞানের!?

সংলাপই যদি এরা করবে সেখানে কি তাদের কোন দূতিয়ালির দরকার আছে? উভয় দলের অনেক নেতাই আছেন তাদের রাজনৈতিক অবস্থান যাই থাক না কেন, এমন ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে যারা সংলাপ ও সমঝোতার কৌশলগত বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারেন এবং সেই জন্যই বলছিলাম সংলাপ ও সমঝোতা হওয়া-না হওয়া কোন পবিত্র পুরুষ ও নির্মল আহ্বানের অভাবে/অপেক্ষায় হচ্ছে না, বিষয়টি এমন না। এটি সবারই জানা দীর্ঘ অগণতান্ত্রিক ধারা ও গণতান্ত্রিক চর্চার অভাবে একটি সমঝোতার রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। আর সেটা হয়নি বলেই দল ও রাজনীতির এই অসুস্থ ও বৈরী অচলাবস্থা।

তাহলে কি এই পরিস্থিতিকেই আমরা নিয়তি হিসেবে মেনে নেব? না, অবশ্যই না কোনভাবেই না। এখান থেকে আমরা স্বস্তির পরিবেশ তৈরী করতে পারি, যদি নাগরিক, পেশাজীবী, রাজনৈতিক ও সামাজিক পর্যায়ে একটি ব্যাপক চাপের ক্ষেত্র তৈরী করা যায়। সেই পরিস্থিতি হতে হবে থমকে দেয়ার মত দৃশ্যমান ও শক্তিশালী গণজাগরণ। বিভিন্ন পর্যায়ে কার্যকর প্রতিরোধের ধারা গড়ে তোলাই হতে পারে সমঝোতার রাজনীতির আকাঙ্খা তৈরীর ভিত্তি। এবং গড়ে উঠবে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি ও প্রত্যাশিত গণতান্ত্রিক ধারার সংস্কৃতি। সেই পরিস্থিতি তৈরীর ক্ষেত্রে যদি তাদের/বিশিষ্ট নাগরিকদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা দৃশ্যমান হতো এবং জনগনের মধ্যে আস্থার জায়গা তৈরী করতে পারত তাহলে এই 'উলু বনে মুক্তো ছড়ানোর চেয়ে' অনেক বেশি গুরুত্ব পেতো।

লেখকঃ ড. মঞ্জুরে খোদা, গবেষেক ও খন্ডকালীন প্রক্টর ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি, কানাডা।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×