somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লগারদের বিতর্ক ও বিভক্তি, লাভবান কে?

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ড. মঞ্জুরে খোদা
লেখালেখি, জ্ঞান-বিজ্ঞান-দর্শনের জগতে আলোচনা-সমালোচনা ও তর্ক-বিতর্ক একটি স্বীকৃত ও গ্রহনযোগ্য বিষয়। যার মাধ্যমে আমরা নিজেদের উন্নত ও পরিশিলিত করতে পারি। কিন্তু সেটা করতে যেয়ে কেউ কেউ বিষয়টিকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যান, তা হয়ে দাড়ায় ব্যক্তিগত আক্রমন ও নোংরা কথাবার্তা..! সেটা খুবই অস্বস্তিকর ও দুঃখজনক। নিজেদের সভ্য, ভদ্র, উদার, বিনয়ি, জ্ঞানী, উন্নত, মানবিক, সংস্কৃতিবান, সহনশীল, রুচিশীল ও দায়িত্বশীল মনে করেন কিন্তু তাদের কারো কারো প্রকৃত আচরণ ও তার প্রকাশ এর বিপরীত।


বছর দুই আগে লেখক-ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন ফেসবুকে ব্লগার পিনাকি ভট্রাচার্যকে নিয়ে একটি (প্রতিকী) ভৎসনামুলক স্টেটাস পোস্ট করে। সেই স্টেটাসে লাইক দেয়ার কারনে পিনাকি’দা আমিসহ কয়েকজন পরিচিত ক্রিটিকস্-ব্লগারকে তাঁর বন্ধু তালিকা থেকে বিযুক্ত করেন! এরকম পারস্পারিক মতদ্বৈততা ও পক্ষ-বিপক্ষ না ঘটনায় ফেসবুকে ব্লগ-আনফ্রেন্ড-শত্রুতা একটি কমন প্র্যাকটিস! কয়েকদিন আগে দেখলাম পিনাকি ভট্রাচার্য লেখক-গবেষক মাসুদ রানাকে নিয়ে ফেসবুকে (সরাসরি নাম উল্লেখ না করে) একাধিক ব্যক্তিগত আক্রমনাত্মক স্টেটাস দিয়েছেন। যে ব্যক্তি অন্যের করা সমালোচনা নিজে সহ্য করতে পারেন না, কিন্তু নিজে ঠিকই প্রতিপক্ষের ক্ষেত্রে সেই একই নোংরামির আশ্রয় নিচ্ছেন! সম্প্রতি দেখছি আসিফ মহিউদ্দিন ও অমি রহমান পিয়ালের মধ্যে সেই একই বিতর্ক ও কাঁদা ছোড়াছুরি! ভার্চ্যুয়াল জগতে সক্রীয় খ্যাতিমান লেখক-ব্লগার তাদের বন্ধু ও অনুসারীরাও এই বিতর্কে জড়িয়ে পরছেন।

বাস্তবে খুব কম ইস্যুই আছে যাতে প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, মুক্তমনা বলে পরিচিত লেখক-ব্লগাররা সেই বিষয়ে একমত হতে পারেন। তাঁদের মধ্যে ব্যক্তিত্ব ও শ্রেষ্টত্ব প্রতিযোগিতার প্রবণতা প্রায়ই সকল ভদ্রতা-শালিনতা-সহনশীলতাকে অতিক্রম করে! ব্যক্তিগত আক্রমন-পাল্টা আক্রমন অরুচিকর মন্তব্য ও আপত্তিকর আলোচনা-কথাবার্তাই হয়ে ওঠে প্রধান। একটি অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক-মুক্তবুদ্ধির মানবিক সমাজ ও পরিবেশের আন্দোলন এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে আমরা যাদের প্রধান বাঁধা বা প্রতিপক্ষ মনে করি তত্ত্বগতভাবে তা সঠিক হলেও বাস্তবে আসলে আমরাই আমদের প্রতিপক্ষ, আমরাই আমাদের এগিয়ে যাবার পথে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক! প্রগতিশীল বলয়ে বিভেদ-বিতর্ক-বিরোধ হয় তীব্র আর প্রতিপক্ষ আঁকে পরবর্তি আক্রমনের ছক। সেই সাজানো ছকের নির্ভূল নিশানায় আঘাত আসে একের পর এক! বলি হয় লেখক-ব্লগার-মুক্তমনা!


কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, ব্লগারদের তর্ক-কাদাছোড়াছুড়ি বন্ধ হলেই কি থেমে যাবে মৌলবাদ-জঙ্গীবাদের থাবা? যখন লেখক-ব্লগার নিহত হন, হামলার স্বীকার হন তখন সরকার ও প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হয় মতপ্রকাশের নামে কেউ মাত্রা অতিক্রম করলে তা সহ্য করা হবে না। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে জোড়াল অবস্থান না নিয়ে কর্তাব্যক্তিরা বরং সতর্ক করেছেন ব্লগারদের। মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রন আনতে আইসিটি আইন, ৫৭ ধারা প্রণয়ন করেছেন। প্রকাশনী সংস্থা ও প্রকাশনা বাতিল করছেন। খোদ বাংলা একাডেমি শীর্ষ ব্যাক্তিও লেখক-প্রকাশকদের হুমকি দিয়েছেন! আর লেখক-ব্লগাররা নিজেদের নিরাপত্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ইস্যুতে এক না হয় বিভক্ত ও পারষ্পারিক আক্রমনে ব্যস্ত। এই পরিস্তিতি কাদের স্বার্থ ও সুবিধার কারন..?

সামরিকজান্তা এরশাদকে ক্ষমতা থেকে সরাতে ৯০এ বাংলাদেশেও ডানবাম সকল দল একত্রিত হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিশ্ব মানবতার শত্রু জার্মানের হিটলারকে পরাজিত করতে তিন বিপরীতি স্বার্থ ও সুবিধার পরাশক্তি আমেরিকা-রাশিয়া-ব্রিটেন একত্রিত হলেছিল। একই ভাবে দরকার স্বাধীন মতপ্রকাশে বিশ্বাসী, নানা চিন্তার-মতের লেখক-ব্লগারদের শক্তিশালী ঐক্য। প্রয়োজন সবটা সামর্থ দিয়ে নিজেদের নিরাপত্তা ও পাল্টা আঘাতের কৌশল তৈরী করা।

অন্তরা চৌধুরীর একটি গান শুনেছিলাম, তেলের শিসি ভাঙ্গলো বলে তোমরা খুকীর কান মলো, তোমরা যে সব বুড়ো খোকা ভারত ভেঙ্গে ভাগ কর..! আমরা যারা নিজেদের শিল্প-সাহিত্য-জ্ঞান-বিজ্ঞান-দর্শনের সবচেয়ে অগ্রসর অংশ মনে করি, তাদের আচরণ, মানসিকতা ও প্রকাশ যদি এমন হয় তাহলে অন্যরা শিখবে কিভাবে? আমরা যে সংগ্রাম গড়ে তোলার তাগিদ বোধ করি, আন্দোলনের অংশ মনে করি এই আচরণ ও প্রবণতা কোনভাবেই সেই আকাঙ্খাকে অগ্রসর করবে না বরং যতটুকু অর্জন ছিল-আছে তাকেও ক্ষতিগ্রস্থ করছে-করবে।

তর্ক হোক তুমুল-তুখোর, জ্ঞান-বিজ্ঞান-দর্শন-সাহিত্যের যুক্তিতে ও বুদ্ধিতে, হোক সুস্থতায় ও মানবিকতায়। বড় বৈরী সময় আজ মতপ্রকাশের, উদ্ধত চাপাতি’র উল্লাসে মুক্তমনার জীবন আজ শংকিত। এমন সময় দ্বন্দ্ব খুব বেমানান ও স্বার্থপরতা। এই দুঃসময়ে ব্যাক্তি চিন্তা ও বিরোধকে না বলে সহনশীলতা ও সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রসারিত করা জরুরী।

ড. মঞ্জুরে খোদা টরিক, লেখক, গবেষক ও সাবেক ছাত্রনেতা।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:২০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×