somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ হরে জরুরি ভিত্তিতে যা করণীয়। ভূমি/জমি/বাড়ি বেদখল হলে করণীয়

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জোর করে কেও যদি আপনার সম্পত্তি দখল করে ফেলে, তখন আপনি কি করবেন? প্রতিনিয়ত জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট হতে কেউ না কেউ দখলচ্যূত হচ্ছেন। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্রায়ই অন্য লোকজনের স্থাবর সম্পত্তি জোর পূর্বক বা চাতুরী পন্থায় দখল করে।

জমি নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় রকম মামলার মধ্যদিয়ে প্রয়োজনীয় প্রতিকার পাওয়া সম্ভব। জমি দখলকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৫ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে হয় নির্বাহী হাকিম তথা এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের শরণাপন্ন হতে হয়। জমি নিয়ে বিরোধ হলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মূলত একটি সাময়িক প্রতিকার প্রদান করেন দখল বুঝিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে। এ ক্ষেত্রে সবশেষ দখলে থাকা ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। এ ছাড়া স্থায়ীভাবে স্বত্ব দখল কিংবা জবরদস্তি বেদখলের বিরুদ্ধে দেওয়ানি আদালতে নিয়মিত মামলা করে নানারকম দেওয়ানি প্রতিকার পাওয়া যায়।

ফৌজদারি প্রতিকার

জমি দখলকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৫ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে হয়। এ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে হবে প্রথম শ্রেণির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে। আর এ মামলা করতে হবে বেদখল হয়ে গেলে কিংবা বেদখল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়ার দুই মাসের মধ্যে। কোনো মামলা করলে ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিপক্ষের ওপর সমন জারি করবেন। পরবর্তী সময়ে উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনবেন এবং সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে সম্পত্তির দখলদার কে তা নির্ধারণ করবেন। প্রয়োজনে সরেজমিনে তদন্তের আদেশ দিতে পারেন পুলিশকে। তাদের দেয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রকৃত দখলদার কে, সে বিষয়ে রায় দেবেন। তবে ১৪৫ ধারায় প্রতিকার চাইতে গেলে এখানে স্বত্ব বা মালিকানা দাবি করা যাবে না। এর মাধ্যমে শুধু প্রকৃত দখলদার নির্ণয় করার জন্য প্রতিকার চাওয়া যাবে।

মালিকানা দাবি যেভাবে করতে হয়

জমির মালিকানা বা স্বত্ব দাবির জন্য দেওয়ানি আদালতের আশ্রয় নিতে হবে। জমি অবৈধভাবে দখলচ্যুত হলে দখল পুনরুদ্ধারের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ ও ৯ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার পেতে পারেন। এ আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী জমির মালিক নির্ধারিত পদ্ধতিতে জমিটি পুনরুদ্ধার করার জন্য প্রতিকার চাইতে পারেন। তবে এ ধারা অনুযায়ী, দখলচ্যুত ব্যক্তিকে জমিতে তার স্বত্ব বা মালিকানা আছে কিংবা মালিকানার দাবি রয়েছে, তার ঘোষণা চাইতে হবে। না হলে এ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার পাওয়া সম্ভব হয় না। ৮ ধারার স্বত্ব প্রমাণসহ মামলা করার ক্ষেত্রে বেদখল হওয়ার পর থেকে ১২ বছরের মধ্যে মামলা করার সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এ ধরনের মামলাকে সাধারণত স্বত্ব সাব্যস্ত খাস দখলের মামলা বলা হয়।

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে হলে মালিকানা প্রমাণের দরকার নেই। শুধু জমি থেকে দখলচ্যুত হয়েছে এটি প্রমাণ করলেই চলবে। ৯ ধারায় উল্লেখ আছে, যদি কোনো ব্যক্তি বেদখল হন, তবে তিনি বা তার মাধ্যমে দাবিদার কোনো ব্যক্তি মোকদ্দমার মাধ্যমে এর দখল পুনরুদ্ধার করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে যেসব দিক বিবেচনা করা হয়, সেগুলো হলো বাদী অর্থাৎ যিনি প্রতিকার দাবি করেছেন, তিনি জমিটি দখল করে আসছিলেন কিনা; বিবাদী তাকে জোরপূর্বক বেদখল করেছেন কিনা; বিবাদী বেআইনিভাবে জমিতে প্রবেশ করেছেন কিনা। তবে বাদীকে অবশ্যই বেদখল হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে মামলা করতে হবে। অন্যথায় এ ধারায় মামলা করার অধিকার হারাতে হবে তাকে। তবে সরকারের বিরুদ্ধে এ ধারায় প্রতিকার চাওয়া যাবে না।

****জমি কেনার সময় ক্রেতাদের যা অবশ্যিই করণীয়ঃ

=জমিটা কেনা হচ্ছে তার কোন আইনি সমস্যা আছে কিনা।
=ক্রেতা যার থেকে কিনছে সে ওই জমিটা বিক্রি করতে পারবে কিনা?
=রেজিস্ট্রি করার আগে দেখে নিতে হবে জমিটা এক না অংশীদারি মালিকানার অন্তর্গত।
=জমি রেজিস্ট্রেসনের সময় ভুললে চলবে না যে জমিটা কেনা হচ্ছে সেটা কোন বড় সমিতি, বড় কন্সট্রাকশন, বা সরকারি জমির আওতার অন্তর্গত কি না?
=জমির টাকা হস্তান্তর করার আগে দেখে নিতে হবে জমিটার মালিক জমির সমস্ত ট্যাক্স, ও অন্যান্য বিল মিটিয়েছে কিনা।
=অনেক সময় দেখা যায়, জমির মালিক জমিটা মরডগেজ দিয়ে লোন নিয়েছে। কাজেই জমি রেজিস্ট্রেসনের আগে এটাও দেখার বিষয় যে জমির মালিকের লোনের টাকা পরিশোধ হয়েছে কিনা?
=জমি রেজিস্ট্রেসনের আগে দেখে নিতে হবে যে, যে পরিমাণ জমির টাকা দেওয়া হচ্ছে সেই পরিমাপের জমি ক্রেতা পাচ্ছে কিনা? দরকার হলে জমিটি সরকারি কর্মচারী দিয়ে মেপে নিতে হবে ।
=আগের সমস্ত অর্থনৈতিক ও আইনি নথি ঠিক থাকলে, একটা চুক্তিনামা করিয়ে নিতে হবে, যাতে ওই জমির মালিক পরে জমির দাম বৃদ্ধি, বা অন্য কোন ক্রেতাকে বেশি মূল্যে জমিটি বিক্রি না করতে পারে ।
=জমি ক্রয়/বিক্রয়ের সময় দু’পক্ষের উকিল ও দু’জন সাক্ষী থাকে। পাকেচক্রে কোন পক্ষ সমস্যার সম্মুখীন হলে যাতে অপর পক্ষের বিরূদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়। রেজিস্ট্রি হল জমির হস্তান্তারের দুপক্ষেরই প্রমাণ পত্র ।

দখলে থাকলেই ভূমির মালিকানা নয়



- এডভোকেট মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ ( এম টি উল্যাহ)
[email protected]
০১৭৩৩৫৯৪২৭০
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:২৮
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×