somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ; রাজনৈতিক জীবনের আদ্যোপান্ত

২৮ শে জুলাই, ২০২২ রাত ১০:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র থাকাকালে ১৯৫৫ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ কারাবরণ করেন। বয়স ছিল তখন ১৬ কি ১৭। বলতে গেলে তখন থেকেই শুরু তাঁর হয় রাজনৈতিক জীবন। ১৯৫৬ সালে যখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের অনার্সের ছাত্র, তখন মিশরের উপর বৃটেন এবং ফ্রান্সের যৌথ আক্রমনের প্রতিবাদের মিছিলে পুলিশ তাঁকে নির্মমভাবে আহত করে। যাহার ফলে এক বছর চিকিৎসাধীন ছিলেন, শরীরের একটি অংশ অবশ হয়ে গিয়েছিল। সে আঘাতের ব্যথা বৃদ্ধ বয়সে আবার দেখা দেয় এবং আমৃত্যু তিনি ভোগ করেছেন। ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন পরিচিত ছাত্রনেতা ছিলেন। ১৯৬১ সালে লন্ডনে আইন পড়তে গিয়া আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলেন এবং ১৯৬৫ সালের স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান আন্দোলনে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ব্যারিষ্টারী পাশ করে দেশে ফেরার পর ১৯৬৭ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য Defence Team কমিটি করেন এবং তাঁর সিনিয়র প্রখ্যাত আন্তর্জাতিক আইনজীবী স্যার টমাস উইলিয়ামসকে ঢাকায় আনার ব্যবস্থা করেন এবং তাঁর এই আগমন এবং মামলা পরিচালনা আইয়ূব বিরোধী গণ আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করে। প্রায় ১৯ মাস চলার ফলে একটি গণ আন্দোলনের মুখে ১৯৬৯ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি আগর তলা ষড়যন্ত্র মামলা নিঃশর্তভাবে প্রত্যাহার করে নিলে বাংলাদেশের মানুষ একজন এক নেতা হিসাবে শেখ মুজিবুর রহমানের আবির্ভাব ঘটে। আগরতলা মামলার আইনজীবী হিসেবে মওদুদ আহমদ কোন ফি নেন নি। তাঁর একজন আইনজীবী এবং অরাজনৈতিক অবৈতনিক সচিব হিসাবে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ শেখ মুজিবর রহমান সাহেবের সাথে থেকে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি তখন রাওয়াল পিন্ডিতে গিয়েছিলেন, আয়ূব খানের সাথে দুই দফা গোল টেবিল বৈঠক করার জন্য।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ প্রবাসী সরকারের বৈদেশিক সম্পর্ক বিভাগ গড়ে তুলতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। কালকাতার তখনকার মিশনে ৯ নং সার্কাস এভিনিউতে বিদেশে জনমত সৃষ্টি করার জন্য “বাংলাদেশ” নামে ইংরেজী মুখপত্রটি নিয়মিত প্রকাশ করার দায়িত্ব ছিল তাঁর উপর, ২৫০ জনের উপর বিদেশী সাংবাদিকদের ব্রিফ করা, বিলেত থেকে ডাকটিকিট ছাপিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রথম ডাকঘর প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাঁকে দেশেরর প্রথম Post Master General আখ্যায়িত করা হয়। যুদ্ধ কালীন ৯ মাস এক কাপড়ে সোফায় শুয়ে রাত কাটিয়েছিলেন কালিকাতার মিশন অফিসে।
স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে আবার আইন ব্যবসায় ফিরে যান তিনি। ১৯৭৩ সালের শেষের দিকে দেশে অত্যাচার নির্যাতন এবং রক্ষী বাহিনীর নির্যাতনের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেস ক্লাবে জরুরী আইন ঘোষণার পরের দিনই ১৯৭৪ সালের ২৯শে ডিসেম্বরে, এই সংগঠনের সম্পাদক হিসাবে তাঁকে গ্রেফতার করা হয় এবং বিনা বিচারে তিনমাস কারাগারে রাখা হয়। ১৯৭৭ সালের ডিসেম্বর শহীদ জিয়া দেশে গণতন্ত্র পুণঃ প্রতিষ্ঠায় তাঁকে সাহায্য করার আহ্বান জানালে তিনি সরকারের টেলিযোগাযোগ উপ-মন্ত্রী হিসাবে যোগদান করেন। ১৯৭৯ সালে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ৩৯ বছর বয়সে উপপ্রধান মন্ত্রী হন এবং বিদ্যুৎ, পানিসম্পদ এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
১৯৮২ সালে যখন জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণ করেন তখন মওদুদ আহমদ বিচারপতি সাত্তারের মন্ত্রীসভার সদস্য ছিলেন না, কিন্তু তারপর সেনাবাহিনী ক্ষমতা গ্রহণ করার প্রায় ৮ মাস পর তাঁকে গ্রেফতার করা মন্ত্রীসভার অন্যান্য সদস্যদের সাথে একটি তুচ্ছ অভিযোগে সামরিক আদালতে শাস্তি দিয়ে সেটা পরে রিভিউতে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মতই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করিবার লক্ষ্যে তাকে সাহায্য করার জন্য আশ্বাস জানালে মওদুদ আহমদ সাহেব সরকারে যোগদান করলে তাঁকে সড়ক, জনপথ, রেলওয়ে, পরিকল্পনা, আইন, পার্বত্য বিষয়ে এবং শিল্প মন্ত্রী হিসাবে রাখা হয় এবং একই সরকারে প্রায় দেড় বছর দেশের প্রধান মন্ত্রী এবং ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের উপ-রাষ্ট্রপতি ছিলেন তিনি। তারপর একটানা দশ বছর বিরোধী দলে থাকার পর ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের আইন মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১/১১ এর পরবর্তী তিনি প্রায় আড়াই বছর কারাবন্দী থাকেন। সর্বশেষ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ছয় বার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৯১ সালে জেলে থাকাবস্থায়ও নির্বাচিত হন। ৩০ বছর এলাকার মানুষের অঞ্চলের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। বাংলাদেশের অনেক জেলা সদরের চাইতেও তুলনামুলকভাবে তার নর্বাচনী এলাকায় উন্নয়নের কাজ অনেক বেশী হয়েছে। অসংখ্য বেকার যুবকের জন্য দেশ বিদেশে চাকুরীর সংস্থান করে দিয়েছেন এবং হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রীর জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করেছেন।
তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, অক্সফোর্ড বিশবিদ্যালয় এবং হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো, স্যার জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে Visiting Professor হিসাবে অধ্যাপনা করেছেন। বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার উপর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত রচিত অনেক মূল্যবান গ্রন্থ রয়েছে। ( সংক্ষেপিত)

-মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ
আইনজীবী
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০২২ রাত ১০:৫১
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×