somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিরাপদ খাদ্য

১৯ শে মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৪:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিরাপদ খাদ্য খাদ্যগ্রহণ প্রাণীকুল বেঁচে থাকার প্রধান শর্ত। খাদ্য যেমন প্রাণীকুলকে বাঁচিয়ে রাখে তেমনি অনিরাপদ খাদ্য মৃত্যুর কারণ হয়েও দাঁড়ায়। অনিরাপদ খাদ্য মানবদেহে নিত্য নতুন জটিল ব্যাধি সৃষ্টি করছে। খাদ্যে ভেজাল মেশানোর মাধ্যমে প্রকৃতি প্রদত্ত নিরাপদ খাদ্যও অনিরাপদ এবং ভয়ংকর হয়ে উঠছে দিনদিন। এসব খাদ্যের ফলে গর্ভবতী মা ও শিশুসহ সারাদেশের জনস্বাস্থ্য এক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। এটি একটি মানবসৃষ্ট দুর্যোগও বলা চলে। বর্তমানে ভেজালপুর্ণ অনিরাপদ খাদ্য মহামারিতে রূপ নিয়েছে। মুলত: উৎপাদন, পরিবহন এবং সংরক্ষণ এই তিন স্তরে খাদ্যে ভেজাল মেশানো হয়ে থাকে। আমাদের দেশে খাদ্যে ভেজাল মেশানোর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এটি বেশী দিনের নয়। যখন ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্যচাহিদা যোগান দিতে সীমিত জমিতে শুরু হয় অধিক ফলন প্রতিযোগিতা, মুলত তখন থেকেই খাদ্যে ভেজাল মেশানো কিংবা নানাধরণের রাসায়নিক সার/কীটনাশক ব্যবহারের প্রবণতা শুরু হয়। কারণ অধিক ফলনের জন্য উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন সার ও কীটনাশক প্রয়োগ এবং শষ্য বাজারজাতকরণে দীর্ঘপথ পরিবহন, দীর্ঘদিন সংরক্ষণের বিষয়টি চলে আসে। আধুনিক জীবনে শিল্পজাত খাদ্য একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। এক্ষেত্রে বিভিন্ন কারখানায় খাদ্য তৈরীতে ব্যবহৃত কাঁচামাল ব্যবহার এবং প্যাকেজিং ব্যবস্থায় রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার অনিবার্য্য হয়ে পড়ে। যুগের পরিবর্তন এবং চাহিদার পরিবর্তনের সাথে পাল্লা দিয়ে যখন ক্রমান্বয়ে রাসায়নিক দ্রব্য/সার ও অন্যান্য প্রযুক্তিগত বিষয়ের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার শুরু হয় তখন থেকেই এই সেক্টরে খাদ্যে ভেজাল মেশানোসহ অনিরাপদ খাদ্য তৈরীতে নানাধরণের অপরাধ সংঘটিত হতে শুরু হয়। যদিও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা রাসায়নিক প্রকৌশল বিদ্যা গবেষণায় শুধুমাত্র অধিক ফলন ও দীর্ঘদিনের সংরক্ষণ ব্যবস্থায় জোর না দিয়ে উদ্ভাবিত ফলন বা ব্যবস্থা মানবদেহের জন্য কতটা উপযোগী-এবিষয়ে আরো বেশী জোর দেয়া প্রয়োজন। ফসল উৎপাদন ব্যবস্থায় রাসায়নিক সার পরিহার করে জৈবসার এবং কীট পতঙ্গ দমনে কীটনাশক ব্যবহার না করে ফেরোমন ফাঁদসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত। শুধু উৎপাদন ব্যবস্থায় নয় এদেশে খাদ্যসামগ্রী গুদামজাতকরণেও কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া, বাংলাদেশের খাবারে ভেজাল মেশানোর ঘটনা একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। বেশিদিন তাজা রাখা, উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি, কাঁচা ফলকে দ্রুত বাজারজাতকরণের জন্য পাকিয়ে তোলা প্রভৃতি উদ্দেশ্য সাধনে ফল ও শাকসবজির সঙ্গে আজকাল অবাধে প্রয়োগ করা হচ্ছে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য। যেমন কুমড়ার সঙ্গে মেশানো হচ্ছে সোডিয়াম সাইক্লোমেট, কাপড়ের বিষাক্ত রং, সাইট্রিক এসিড ও প্রিজারভেটিভ। শুঁটকিমাছ প্রক্রিয়াজাত ও গুদামজাত করতে ডিডিটি ও অন্যান্য কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। দুধ, মাছ, মাংস, ফল ও শাকসবজি বাজারজাত করা ও বেশিদিন তাজা রাখার জন্য এখন ব্যবহার করা হচ্ছে ফরমালিন, হাইড্রোক্সাইড, কার্বাইডসহ বিভিন্ন বিষ। মুরগীর খাবারে ট্যানারী বর্জ্য মেশানো, গরু মোটাতাজাকরণে ব্যবহৃত হয় স্টেরয়েড হরমোন। মানুষের খাদ্য ব্যবস্থায় এধরণের অরাজকতা শুধু মানবসভ্যতার পরিপন্থি নয় এটি স্পষ্টতই মানুষের বেঁচে থাকার নুন্যতম অধিকারেরও লংঘন। এই অবস্থার উত্তরণে জাতিসংঘ বিশ্বব্যাপী নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে ইন্টারন্যাশনাল হেলথ রেগুলেশন্স-২০০৫, আইন পাস করে। এ আইনের প্রতি বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সব সদস্য রাষ্ট্রের রয়েছে পূর্ণ শ্রদ্ধা। বাংলাদেশ সরকার ও বিভিন্ন সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণকে আন্দোলনে রূপ দিয়েছে। বাংলাদেশের বদলে যাওয়া পরিস্থিতির সঙ্গে মিল রেখে জাতীয় সংসদে পাস করা হয়েছে ‘নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩’। আইন প্রয়োগে সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা, কর্তৃপক্ষ ও প্রতিষ্ঠান মাঠ পর্যায়ে নিবিড়ভাবে কাজ করছে। বিভিন্ন সংস্থার অব্যাহত পর্যবেক্ষণ ও কঠোর নিয়ন্ত্রণ সত্বেও খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে শতভাগ সফলতা সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি ভেজাল খাদ্য নির্ণয়ে পর্যাপ্ত পরীক্ষাগার স্থাপন এবং ব্যাপকহারে জনসচেতনতা তৈরী করা জরুরী। জনসচেতনতা তৈরীতে সরকারের পাশাপাশি বাংলাদেশে কর্মরত বেসরকারী উন্নয়ণ সংস্থাগুলো তাদের কর্ম-এলাকায় চলমান কার্যক্রমের পাশাপাশি নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে পর্যবেক্ষণ ও তৃণমুল পর্যায়ে জনসচেতনতা তৈরীতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে সক্ষম। সুতরাং খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে আইন প্রয়োগে কঠোর পদক্ষেপের পাশাপাশি সর্বস্তরে নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও জনসতেনতা তৈরীতে সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট সকলের একযোগে কাজ করা জরুরী। কারণ নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতরণের মাধ্যমে নিশ্চিত হবে নিরাপদ জাতি, সুস্থ জাতি।

সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৪:৫৬
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটা গাছ কাঠ হলো, কার কী তাতে আসে গেলো!

লিখেছেন নয়ন বড়ুয়া, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:০৬



ছবিঃ একটি ফেসবুক পেইজ থেকে

একটা গাছ আমাকে যতটা আগলে রাখতে চাই, ভালো রাখতে চাই, আমি ততটা সেই গাছের জন্য কিছুই করতে পারিনা...
তাকে কেউ হত্যা করতে চাইলে বাঁধাও দিতে পারিনা...
অথচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×