জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমাযূন আহমেদ। নিউইয়র্কের বেলভিউ হাসপাতালে চারদিন ধরে তিনি সংজ্ঞাহীন। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দুপুরে বমি করার পর বেলভিউ হাসপাতালের চিকিত্সকরা তার ফিরে আসার সব আশা ছেড়ে দেন। পরিবারের সদস্যদের তারা জানিয়েও দিয়েছেন, চিকিত্সক হিসাবে তারা সব চেষ্টা করেছেন। এখন শুধু আল্লাহই পারেন হুমাযূন আহমেদকে ফিরিয়ে দিতে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
এদিকে হুমাযূন আহমেদের অবস্থার অবনতিতে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিরা। প্রিয় লেখককে এক নজর দেখতে মঙ্গলবার সারাদিনই অনেকেই হাসপাতালে ভিড় করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মীদের হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। হুমাযূন আহমেদের স্ত্রী ও অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন এবং ভাই জনপ্রিয় লেখক অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল সার্বক্ষণিক হাসপাতালে অবস্থান করছেন। মঙ্গলবারও বন্ধু হুমাযূন আহমেদের খবর নিতে হাসপাতালে ছুটে যান যুক্তরাষ্ট্র সফররত নাট্য ব্যক্তিত্ব ও সংসদ সদস্য আসাদুজ্জমান নূর। এছাড়া মেহের আফরোজ শাওনের মা সংসদ সদস্য বেগম তহুরা আলী এবং এক বোনও সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখছেন হুমাযূন আহমেদের।
একাধিক সূত্র জানায়, গত চার দিন ধরে হাসপাতালে সংজ্ঞাহীন হুমাযূন আহমেদ। তবে অন্য একটি সূত্র বলছে, গত ১০ দিন ধরে কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাস দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে তাকে। মঙ্গলবার দুপুরে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় বমি করেন হুমাযূন আহমেদ। সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের খবর দেয়া হয়। এসময় হাসপাতালে শুরু হয় কান্নাকাটি। মুহূর্তের মধ্যে নেতিবাচক খবর ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে।
বেলভিউ হাসপাতাল ঘুরে এসে প্রবাসের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ফাহিম রেজা নূর ইত্তেফাককে জানান, তিনি সন্ধ্যা সাড়ে ৮টায় হাসপাতালে গিয়েছিলেন। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) কাঁচের জানালা দিয়ে এক নজর দেখেছেন হুমাযূন আহমেদকে। হাসপাতালের বিছানায় নিস্তেজ নিথর দেহ পড়ে ছিল। মুখে অক্সিজেন লাগানো ছিল। এ অবস্থা দেখে তিনি অশ্রু সংবরণ করতে পারেননি।
ফাহিম রেজা নূর বলেন, হাসপাতালে অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবালের সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল। তিনি ভাইয়ের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। এসময় তাকে খুব বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। হুমাযূন আহমেদের অন্য স্বজনরা ছিলেন অশ্রুসিক্ত।
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী চলচ্চিত্রকার ও সাংবাদিক কবীর আনোয়ার ইত্তেফাককে জানান, হাসপাতালে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে হুমাযূন আহমেদ। এর বেশী তিনি কিছু বলতে চাননি। তবে তিনি দেশবাসীর কাছে তার আরোগ্য কামনা করে বলেন, হুমাযূন আহমেদের মত একজন গুণী ব্যক্তিকে আমাদের বড় প্রয়োজন। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, তিনি আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসুক।
বৃহদান্ত্রের ক্যান্সারের চিকিত্সায় সপরিবারে নিউইয়র্কে আসেন হুমাযূন আহমেদ। গত ১২ জুন তার বৃহদান্ত্রে অস্ত্রোপচার করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১০ দিন পর দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচার হয়। এরপর থেকে নিউইয়র্কের বিশ্বখ্যাত বেলভিউ হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন হুমাযূন আহমেদ। অস্ত্রোপচারের আগে তার শরীরে ১১টি কেমোথেরাপি দেয়া হয়।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


