somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নুরেমবার্গ ট্রায়ালে ৭ জনের মেয়াদি দণ্ড ৫ জন বেকসুর খালাস?

০৩ রা মার্চ, ২০১৩ রাত ২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মিনা ফারাহ : ভয়ঙ্কর গৃহযুদ্ধ থামাতে দুই বছর সংগ্রামের পর যখন ত্রয়োদশ সংশোধনী পাস হলো, মাত্র এক মাস পর কট্টর শ্বেতাঙ্গ যুবকের গুলিতে প্রাণ দিলেন ইতিহাসে শান্তির মহানায়ক আব্রাহাম লিংকন। শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের অবস্থা ছিল বর্তমান সিরিয়া, আফগানিস্তানের চেয়েও ভয়ঙ্কর। পরবর্তী সময়ে তাকে অনুসরণ করেছেন গান্ধী, ম্যান্ডেলা, ড. কিং…। শেখ মুজিবও নেলসন ম্যান্ডেলার অতীত ভুলে যাওয়ার পথ ধরেই হাঁটছিলেন, যদি না ‘র’ সব লণ্ডভণ্ড করে দিত। লিংকনের দূরদর্শিতার ফসল জ্বলজ্বল করছে আজকের হোয়াইট হাউজে। এ দিকে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আমাদের সরকার উসকে দিলেন গৃহযুদ্ধ। অনুরোধ, রাজনীতিবিদেরা যেন সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত অস্কার পাওয়া লিংকন ছবিটি দেখেন। বিশেষ করে স্পিকারকে, কারণ ১৮৮৫ সালে হাউজের স্পিকার নিয়ম ভঙ্গ করে দাসপ্রথা বন্ধের পে নিজের একটি ভোট দিলেন।
প্রবাদে আছে মা খারাপ হলে সন্তান খারাপ হয়। তবে মা যতই খারাপ হোক, সন্তানকে হত্যা করেন না। কিন্তু দেশমাতৃকা বাংলাদেশ তার সন্তানের জীবন হরণের পথ ধরে ভাষার মাসে প্রায় ১৫০টি সন্তান হত্যা করে আরো হত্যাযজ্ঞের উল্লাসে নৃত্য করছে। মার্কিন কংগ্রেসে বাংলাদেশ ককাসের চেয়ারম্যান জোসেফ ক্রাউলি এই মর্মে হতাশা ব্যক্ত করেছেন, বাংলাদেশ আফগানিস্তান-পাকিস্তান হোক আমরা তা চাই না। কী ভয়ঙ্কর সতর্কবাণী!
বিদ্রোহের পথ ধরে ফেব্র“য়ারি আমাদের ভাষার মাস হলেও কালোদের জন্য ৪০০ বছরের শ্বেতাঙ্গ নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে দ্রোহের মাস। ৬০০ বছর দেরিতে কিন্তু নিষ্পেষণ আর বিদ্রোহের ব্যাকরণ এক। মানবাধিকার হরণ কোনো কালেই কেউ পছন্দ করে না। তাই ১৮০০ শতাব্দীতে ন্যাট টার্নার নামের এক বিদ্রোহী কৃষ্ণাঙ্গ যুবকের কাজই ছিল সারা রাত মশাল জ্বালিয়ে গোপন বৈঠকে বসে খুনি শ্বেতাঙ্গ হত্যার পরিকল্পনা। প্রতিদিন ১০০-২০০ শ্বেতাঙ্গ হত্যা শুরু হলে বিষয়টি হয়ে উঠল রীতিমতো উদ্বেগজনক। এরপর ন্যাট টার্নারকে পাবলিকের ফাঁসি। ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক বলেছেন, ‘ন্যাট টার্নার এত খুন করল তবু কেন শ্বেতাঙ্গ প্রভুদের চোখ খুলল না’? ন্যাট টার্নারের ফাঁসি প্রসঙ্গে অগ্নিপুরুষ সিভিল রাইটস নেতা ম্যালকম এক্স বলেছিলেন, ‘যদি শ্বেতাঙ্গদের হত্যা করে অভিশাপমুক্ত হওয়া যায় সেটিই হোক’। আরেক অগ্নিপুরুষ ড. মার্টিন লুথার কিং মৃত্যুর মাত্র এক দিন আগে আন্দোলনরত গার্বেজ কর্মীদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘মানবতার শত্র“দের বিরুদ্ধে লড়াই করে যদি মৃত্যুবরণ করতে না পার তা হলে তোমাদের অধিকার নেই বেঁচে থাকার, গরিব কিন্তু সংগ্রামের মঞ্চে মৃত্যু অধিকারে তোমরা ধনী।’
শাসকগোষ্ঠী কখনোই বুঝতে চায় না মানুষ কখন বিদ্রোহ করে, বুঝলে পৃথিবীটা হতো শান্তিময়। প্রয়োজন শুধু শাসক এবং শোষকদের একমঞ্চে বসা। যে মানুষেরা এত সুন্দর হাসতে জানে, কখনোই শত্র“ নয় যতণ না বাধ্য করা হয়। বাতিস্তার বিরুদ্ধে চে গুয়েভারা, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আফজাল গুরু, মুজিব সরকারের বিরুদ্ধে সিরাজ শিকদার… সব বিদ্রোহীর ভেতরেই লুকিয়ে থাকে একজন অতি সাধারণ শান্তিকামী শিশু। শান্তিপ্রিয় মঙ্ক পোশাকের আড়ালে তিব্বত সংগ্রামী এক বিদ্রোহী দালাই লামা কখনোই সফল হবেন না, যতণ পর্যন্ত না জিয়াবাও তার সাথে এক টেবিলে বসেন।
অন্যথায় জিয়া নয় বরং মুজিবই সব ক’টাকে মুক্তি দিতেন কারণ কাগজে-কলমে সেই প্রক্রিয়া তিনি প্রায় শেষও করেছিলেন। স্বাধীনতার দ্বিতীয় বার্ষিকীতে ৩০ হাজার বন্দী মুক্তির প্রাক্কালে তিনি বলেছিলেন, তারা যেন অতীতের নৃশংস কার্যকলাপ ভুলে নতুন করে শুরু করতে পারে। ১৯৭৩ সালে যাদের গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের অভিযোগে আলাদা করা হলো, ওই ১৯৫ জন ভয়ঙ্কর যুদ্ধাপরাধীকে দিল্লি চুক্তির মাধ্যমে মার প্রাক্কালেও অতীত ভুলে মার মহানুভবতাই ব্যক্ত করে বলেছিলেন, বাঙালি জানে কিভাবে মা করতে হয়। এরপর প্রথম চোটে ৩০ হাজার দালাল মুক্তির পর ভারতে অবস্থানরত ৯০ হাজার পাকসেনাসহ ১৯৫ শীর্ষ খুনির মুক্তির মাধ্যমে ট্রাইব্যুনাল-৭৩ হয়ে উঠল অপ্রয়োজনীয়। সুতরাং ১৫ আগস্ট না ঘটলে বাকি ৪০ হাজার দালালের মুক্তির বিষয়টি কি মুজিব নিজেই নিষ্পত্তি করতেন না? রাজনৈতিক জীবনে ফজলুল কাদের চৌধুরী থেকে তোফায়েল আহমেদ, মীরজাফর থেকে সিরাজউদ্দৌলা… সব চরিত্রের মানুষের সাথে শেখ মুজিবের ছিল চলাফেরা। বিদ্রোহী বনাম বন্ধুদের হাড়-মজ্জা তার চেয়ে ভালো আর কে চেনেন? বন্ধুদের অনেকেই জেলে থাকা অবস্থায়ও সাহায্য করেছেন যেমনÑ শাহ আজিজ, ফজলুল কাদের চৌধুরী কিংবা আমার শহরের পাক রেডিও খ্যাত ব্রাহ্মণ মা করো ছদ্মনামের খন্দকার আবদুল হামিদ যিনি জাতিসঙ্ঘে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে লবিস্ট…। আর ‘র’ এর চক্রান্ত না হলে নব্য স্বাধীন দণি আফ্রিকার কাছে মাত্র ক’টা টাকার জন্য মানবসম্পদ পাঠিয়ে স্বাধীনতার ৪২ বছর পরও এভাবে লজ্জিত হওয়ার দরকার ছিল? সুতরাং বাইচান্স বিপ্লবীরা যখন কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে উলঙ্গ উত্তেজনায় গৃহযুদ্ধ বাধানোর পাঁয়তারা করছেন, তখন আকাশে-বাতাসে আবার ‘রঙের দুর্গন্ধ’ পাই। ভারতের পত্রিকাগুলো সেই সন্দেহই ব্যক্ত করছে।’
কে এই ডা: ইমরান
বলতে পারব না, তবে অনুমান করতে পারি কারণ তার একটি পুরনো ছবি যার সাথে বর্তমান ইমরানের মিল নেই। এই ছবি দেখার পর মনে হয়েছে, স্কয়ারের পুরো আয়োজন পূর্বপরিকল্পিত এবং দেশে-বিদেশী চক্রান্তের আওতাভুক্ত। অন্যথায় কোনো ইমরান সরকারই প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা খরচ করে প্রজন্ম চত্ব¡র করতে পারে না। প্রশ্ন, প্রতিদিন প্রায় ১০ কোটি টাকার উৎস কোথায়? সরকার বিরোধী দলকে দাঁড়াতে পর্যন্ত দেয় না অথচ তাদের গানম্যান দিয়ে নিরাপত্তা দেয়। এর কারণ প্রকাশ করতে হবে। সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি স্লেøাগানও এরা দিচ্ছে না কেন? এখানেও ‘র’এর কড়া রসুনের গন্ধ পাই।
ডা: ইমরানের পুরনো ছবিতে তার দাড়ি-মোচ নেই বললেই চলে। তবে বর্তমান ইমরানের চেহারায় বলিভিয়ার এক বিখ্যাত বিপ্লবীর সমান দাড়ি-মোচ। সাথের ব্লগারদের মাথায় ‘চে’ টুপি দেখে মনে হয়েছে এই আয়োজন পরিকল্পিত ও দীর্ঘ দিনের।
ব্লগাররা মুক্তিযুদ্ধ কিংবা বিচার বিষয়ে মূর্খ না হলে এসব করত না। তবে এরা হচ্ছেÑ সেই তৃতীয় শক্তির প্রসব হওয়া সন্তান যাদের ভয় এত দিন করছিলাম। যেমনÑ জাফর ইকবাল কেন মঞ্চে উঠে ‘তুই রাজাকার’ স্লেøাগান দেন যখন তিনি সাঈদীর মামলায় সাী হয়েও সাী দিলেন না। তার মানে কি এই নয় যে, জাফর ইকবালের বিরুদ্ধে স্লেøাগান দেয়া উচিত ছিল? আজকাল রাজাকার চিনতেও কষ্ট হয়। নুরেমবার্গের নাম ধরে যারা বিপ্লবের গাঁজা খাচ্ছেন তারা কি জানেন, ৬০ লাখ ইহুদি হত্যার জন্য যে ২৪ হিটলারের বিচার হয়েছে তার মধ্যে ১২ জন ফাঁসি, সাত জন কারাদণ্ড, পাঁচ জন বেকসুর খালাস? তার মানে কি এই যে ইহুদিদেরও উচিত ছিল, রায়ের বিরুদ্ধে মঞ্চ গড়া?
প্রজন্ম চত্বরের বিষয়টা ভয়ঙ্কর ও ঘোলাটে। এই টার্মে ষড়যন্ত্রের শুরুতে বিডিআর ক্যু। এরপর অসংখ্য ব্যর্থতার সাগরে নিমজ্জিত সরকার শেয়ারমার্কেট থেকে পদ্মা সেতু… দুর্গন্ধ মাছের ওপর শাক বিছিয়ে দিয়েও বারবারই ব্যর্থ হয়ে পচা মাছ ঢাকতেই প্রজন্ম স্কয়ার। কোটি কোটি টাকা খরচা করে সারা দেশ থেকে মানুষ জড়ো করে পাঠানো হচ্ছে আর জেলা-ইউনিয়নে চাপ দেয়া হচ্ছে মঞ্চ গড়ার। এমনকি ডা: ইমরান পর্যন্ত নিজ মুখে স্বীকার করলেন, এক সময় আওয়ামী লীগের ব্যানারে নির্বাচন করেছেন। এখন অস্বীকার করলে কি অতীত ধুয়ে মুছে যাবে? তাহলে তো রাজাকারদের অতীতেরও একই অবস্থা হওয়ার কথা। কারণ তখনকার পরিস্থিতি এবং সময় বিবেচনা করলে যা ঘটেছিল এই বিচার সেই পটভূমির ওপর আলোকপাতে ব্যর্থ হয়েছে। সুতরাং আসল ইমরান সরকারের মুখোশ উন্মোচনের সময় এখন।
ত্রিপীয় ষড়যন্ত্র সফল করতে যাদের সাহায্য দরকার তারাই ’৭১ থেকে দেশটাকে কলোনি বানাচ্ছে। এক সময় এই চাবি ছিল ইন্দিরা গান্ধীর হাতে, বর্তমানে তারই ক্যাবিনেটের সদস্য কলোনিস্টবাবু প্রণব কাকার হাতে। তার বাড়িতেই ’৭৫ পরবর্তী শেখ হাসিনা দীর্ঘ দিন সপরিবারে অতিথি থেকে গুরুদীা নিয়ে দেশে ফিরেছেন যার ধারাবাহিকতায় এবার হয়তো পার্লামেন্টে ভাষণ। সুতরাং সব দিক বিবেচনা করলে এই মুহূর্তের সংগ্রাম, বিএনপি ভাঙতে আগে শক্তিশালী জামায়াতকে বিলুপ্ত করো এবং সে জন্য দিল্লি ছাড়াও দেশের মানুষের সমর্থন চাই। আর এই কাজটি করার জন্যই তরুণ শক্তিকে মাঠে নামাতে হবে। তারই ধারবাহিকতায় স্কয়ারের সাথে সালমান খুরশিদের একাত্মতা ঘোষণা এবং জামায়াত নিষিদ্ধে জনসমর্থনের কথা ব্যক্ত করার সাথে সাথেই ডা: ইমরানদের ‘গণস্বার’ শুরুর অভিযান আমার পূর্ব সন্দেহ আরো নিশ্চিত করল। আমরা জানি, ’৭১ থেকে দেশটাকে কলোনি বানানোর জন্য সাম্রাজ্যবাদী ভারত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব চায়, যার অন্যতম স্থল ও জলবন্দর। সাম্রাজ্যবাদীরা তেল আর বন্দর যুদ্ধে বিনাশ করছে সভ্যতা আর এই উদ্দেশ্য সাধনে যেসব জগৎশেঠরা মাঠে, ধর্মভিত্তিক দলগুলো বরাবরই তাদের বিরুদ্ধে। সুতরাং ট্রাফিক সমস্যা জর্জরিত শহরই শুধু নয় এমনকি হাসপাতালে ঢোকার রাস্তা পর্যন্ত বন্ধ করে শাহবাগ চত্বর… কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবির সাথে সরকারের সংহতি এবং গানম্যান দিয়ে ব্লগারদের নিরাপত্তা গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা নিশ্চিত করছে।
কুৎসিত উত্তেজনা থেকে বাদ যায়নি দুই বছরের শিশু। ফাঁসি-ফাঁসি-ফাঁসি চাই অর্থাৎ বাংলাদেশের বিচারবিভাগ চলবে ডা: ইমরানদের কথায়, রায় হবে তাদের কথায়, কী রায় হবে সেটাও নায়কদের কথায়। আবার সময়সীমাও বেঁধে দেন। তারাই বলছেন, মাহমুদুর রহমানকে কবে, কয়টায় গ্রেফতার করতে হবে। এরপর বলবেন, সংসদ বসবে নাকি বসবে না। আমার প্রশ্ন, তখন আদালত অবমাননা হয় না কেন? ট্রাইব্যুনাল তো কথায় কথায় আসামিপরে উকিলদের শোকজ ও জরিমানা করছেন। ব্যক্তি ও পরিবার বন্দনার চতুর্থ কিবলা… সংসদে সদা উত্তেজিত তোফায়েলরা ডা: ইমরানদের রাষ্ট্রদ্রোহিতার বিরুদ্ধে চিৎকার করছেন না কেন? আমার সন্দেহই কি ঠিক যে, পুরো চত্বরই বানোয়াট? অন্যথায় শাহবাগ স্কয়ারে এনে সব ক’টাকে ফাঁসি দিলেই তো লেঠা চুকে যায়, আন্দোলনের দরকারটা কী? আসল রহস্য, ২০২১ সাল পেরিয়ে আওয়ামী শাসন নিশ্চিত করা কিংবা এই সুযোগে ১/১১-এর মতো তৃতীয় শক্তি প্রসব করে এবার বিদেশীদের হস্তপে।
কী এই আন্দোলন : আন্দোলনের ভ্রƒণ নিষিক্ত হলো কোথায়? আন্দোলনের সেøাগান আর সংসদের ভাষা এক কেন? ড. ইউনূস থেকে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, সংসদ থেকে স্কয়ার… সর্বত্রই গুণীদের উলঙ্গ করার ধারাবাহিকতা কেন? ড. কামাল হোসেনরা যেখানে বিদেশী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেন, যেখানে পয়সা খরচ করে বিদেশীরা ড. ইউনূসের বক্তৃতা শোনেন, যেখানে বিল কিনটন দাওয়াত করেন স্যার আবেদকে… আর আমরা কিনা ইউনূসের লোম আর বঙ্গবীরের জিহ্বা ছিঁড়ে ফেলতে চাই! বঙ্গবীর তো বলেছেন, আমি রাজাকার হলে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রাজাকারের কমান্ডার। অন্য কেউ যখন জাতির পিতৃত্ব নিয়ে উলঙ্গ করা শুরু করবেন সেই কথাও ভাবতে হবে। কারণ বাকস্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। সংবিধান দিয়ে কেড়ে নিলেও বিপ্লবীরা তা না-ও মানতে পারেন। যতই দিন যায় সংসদ যেন হয়ে উঠছে সব অপকর্মের ভ্রƒণ তৈরির কেন্দ্র আর ষড়যন্ত্রীরা তখন মাঠ তৈরি করে।
মুজিব সরকারের বিরুদ্ধে সর্বহারাদের ক্রুসেডের পর তার কন্যার শিাসফর কেন শেষ করা উচিত তার উত্তর, একই পরিস্থিতিতে সর্বহারা ও গণবাহিনী আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গিয়েছিল। ফলে দুইপরে খুনাখুনিতে নিহত হয়েছে প্রায় লাধিক মানুষ। এবার ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিপে যাওয়া মানেই মৌচাকে ঢিল মারা। সুতরাং ’৯২-এর পরিস্থিতি কেন সৃষ্টি হতে পারে, স্মৃতিশক্তি এত দুর্বল হলে চলবে? ওই রায়টে দুই বাংলায় প্রায় ১৫ হাজার খুন, ১০ লাধিক দেশছাড়া। এ দিকে ১০ বছরের ব্যর্থ যুদ্ধের পর ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সাথে বসার তাগিদ অনুভব করল মার্কিন সরকার, ফলে কারজাই থেকে মুরসি… ধর্মভিত্তিক দলের বাইরে যাওয়ার সাহস ওবামা সরকারেরও নেই এবং এই কথাটিই বোঝার দূরদর্শিতা বা যোগ্যতা সরকারের নেই। চাই বা না চাই, মধ্য এবং দণি-পূর্ব এশিয়ার কমন ‘পুঁজি’র নাম ধর্ম। একে কেন্দ্র করেই একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জাতীয়তাবাদ ও পশ্চিমের বিরুদ্ধে অব্যাহত ক্রুসেড। ৯/১১-এর পর থেকে এই ‘পুঁজি’কে কেন্দ্র করেই আত্মঘাতী সংগ্রামে প্রাণ গেছে প্রায় ১০ লাখ মানুষের। প্রথম দফায় মৌচাকে বুশ ঢিল মারলে মৌমাছিরা কেন বেরিয়ে গেলা, ধর্মের স্পর্শকাতরতা বুঝতে না পারার কোনোই কারণ নেই বলেই ওবামা পর্যন্ত নমনীয় হলেন। আর ডা: ইমরানদের মাঠে নামিয়ে সেই ভুলটাই করছেন আমাদের ‘কারজাইরা’। এই কথা বলার কারণ, আওয়ামী মুসলিম লীগের জাতীয়তাবাদের সাথে কংগ্রেসঘেঁষা লীগের জাতীয়তাবাদের পার্থক্যের ফলে পাশ্চাত্যের সাথে বরাবরই সম্পর্ক সাংঘর্ষিক হয়েছে। আমেরিকার চেয়ে বরং মুক্তিযুদ্ধের ঘোর বিরোধী ছিল চীন। গণহত্যার অস্ত্র বিক্রি করেছে চীন দূতাবাস। চীন স্বীকৃতি দিয়েছিল ’৭৫-এর ২২ আগস্ট। মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে চীন-আমেরিকার দীর্ঘ শীতলযুদ্ধ শেষে খুলল পুঁজিবাদের কাছে বন্ধ চীনের বিশাল বাজার। অথচ ফ্যাসিবাদ লুকাতে ব্যর্থ হয়ে এবার আরেক ফ্যাসিবাদী চায়নার ঘাড়ে চেপে বসা, পরাক্রমশালী আমেরিকা ইতোমধ্যেই প্রতিশোধ নিতে শুরু করেছে তারপরেও যে কথা সত্য, এই অঞ্চলের তাঁবেদারি কংগ্রেসের হাতে ট্রানজিট আর পানি বন্ধক দিয়ে যার নিট ফলাফল হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে বাংলাদেশ। এরও আগে দিল্লি চুক্তির একটি ওয়াদাও না পূরণ করল পাকিস্তান, না ভারত।
ধর্মের ভিত্তিতে ’৪৭ : পৃথিবীতে ধর্মের ভিত্তিতে যদি একটি দেশও ভাগ হয়ে থাকে, ’৪৭। শত চেষ্টা করলেও ’৪৭-এর সেন্টিমেন্ট উপড়ে ফেলা যাবে না। কৃতিত্বের দাবিদার এপার বাংলার ৯৬ ভাগ মুসলমান, যারা বন্ধুরাষ্ট্র হতে চেয়েছিল, দাস হতে নয়। এখানেই কাজ করে শের-ই-বাংলা, ভাসানীভিত্তিক মুসলিম জাতীয়তাবাদ, যা কংগ্রেসঘেঁষা মুজিব জাতীয়তাবাদ থেকে একেবারেই ভিন্ন। মূল যুদ্ধটা ’৪৭ পূর্ববর্তী ভারত নাকি স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ববাদ। সে দিন যদি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী স্বাধীন বাংলার দাবি ত্যাগ করে জিন্নার লেজুড়বৃত্তি না করতেন ’৪৭ এই বাংলাদেশের জন্ম হতো। ’৩৭ সাল থেকে বাংলা তো বাঙালি মুসলমানদের দখলে ছিল। সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদদের বরাবরই চিনতে ভুল করে বাংলার মানুষ। তাহলে কাকে বলব আসল নেতা, আর কেই বা পাতিনেতা! সোহরাওয়ার্দী-উত্তর বাংলাদেশে ‘বাইচান্স’ নেতাদের দাপটে দেশ আজ ফিলিস্তিন-ইসরাইলমুখী। ধর্মীয় অনুভূতি এ দেশের বৃহত্তর মানুষের মধ্যে কাজ করে বলেই শেখ হাসিনা যা বলেন করতে পারেন না, যা করেন তা বলেন না। যেমন ’৭২-এর সংবিধান পুনরুদ্ধারের তামাশা। সংবিধান কাটাছেঁড়া যেমন কোনো পকেই খুশি করতে পারেনি তেমনিই প্রমাণ করতে পারেনি রাষ্ট্র পরিচালনায় দতা বরং উসকে দিয়েছে সাম্প্রদায়িকতা যার নিট ফলাফল বুদ্ধবিহার থেকে বিশ্বজিৎ ছাড়িয়ে ধর্মনিরপপেতা দূরের কথা বরং আগুন সামলাতে রাষ্ট্রধর্মই বহাল। তখন কিন্তু অসাম্প্রদায়িকতার দাবিতে ডা: ইমরানদের সেøাগান দিতে দেখা যায়নি। শেখ হাসিনার দ্বৈতনীতি, ব্লগার রাজীবের বাসায় উপস্থিত হয়ে জামায়াত নিষিদ্ধের বিলাপ আর ছাত্রলীগের হাতে নিহত বিশ্বজিতের মাকে সান্ত্বনা না দেয়া। ফলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আগুনে যারা রাজনীতির ব্যবসায় করছে তারাই মুক্তিযুদ্ধকে মাগনা কাবাব বানিয়ে বিলাচ্ছে প্রজন্ম চত্বরে।
হিটলারেরও ছয়টি অঙ্গদল ছিল কিন্তু বিচার হয়েছিল শুধু শীর্ষ খুনিদের। আর ৪২ বছর পর সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যে বিচার, জনতার প্রশ্ন, যে ব্যক্তি হিটলারদের মুক্ত করল তাকে মা করা যায় কি? মানলাম যায়। তবে ৩৯ বছর পর বিচারের নামে এই মাপের প্রতারণা না করলেই সব ঠিকঠাক। কিন্তু ইশতেহার পূরণের নামে নির্বাচনী ক্যাম্পেইন যেন রীতিমতো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ইশতেহারে তো অনেক কিছুই ছিল। সুতরাং বংশ পরিচয় ছাড়াই অনেকেই হয়তো দেশটাকে মালয়েশিয়ার মতো এগিয়ে নিতে পারার যোগ্যতা রাখে। সামান্য পদ্মা সেতু করার যোগ্যতা যাদের নেই, বিচার শেষে আন্তর্জাতিক মহলে রায়ের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিতর্ক উঠবেই। শাহরিয়ার কবিরেরা নুরেমবার্গের গাঁজা টেনে ফাঁসির ধুয়া তুললে কী হবে, নুরেমবার্গের রায়ে অর্ধেক লোকেরই ফাঁসি হয়নি। সুতরাং রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে এত যে মানুষ মরছে এর বিচার একদিন হবে; হবে সিরাজ শিকদার হত্যার বিচারও।
বহু চরিত্রের দাবিদার : যেসব কাণ্ড করেন একজন প্রধানমন্ত্রীর জন্য তা বিব্রতকর যেমনÑ প্রথম টার্মে গণভবন লিখিয়ে নেয়া। জিয়ার মাজারে যাওয়ার জন্য দুই পয়সার সাঁকোটি উৎপাটন করে অন্যত্র স্থাপন। খালেদাকে বসতবাড়ি থেকে উৎপাটন। বিশ্বচোর আবুলকে দেশপ্রেমিকের সার্টিফিকেট দেয়া। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে ক্রুসেড ঘোষণা করে দাতাগোষ্ঠীর কাছে বাংলাদেশকে টয়লেট বানানো। এ ছাড়াও রয়েছে ধর্মভিত্তিক দলগুলো নিয়ে বারবার আন্দোলন করে কাজ শেষে পচা মাছের মতো ছুড়ে ফেলা। একবার নয় এই উদাহরণ বহুবার, যেমন এরশাদের নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েও জামায়াতকে সাথে করে আন্দোলন ও বিরোধী দলে যাওয়া। এরপরেও এরশাদকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে তাকে নিয়েই মহাজোট করা এবং জামায়াতকে ছুড়ে ফেলা, যে দলগুলোকে তার পিতা নিষিদ্ধ করেছিলেন, জিয়াউর রহমান যাদেরকে বৈধ করলেন তাদেরই বারবার ব্যবহার আর অপব্যবহার করে এখন সব ক’টাকে ফাঁসিতে ঝোলাও!
২০০৬-এর ১২ জানুয়ারিতে খিলাফতের সাথে ৫ দফা চুক্তি সই যার মধ্যে ব্লাসফেমি আইনে ফতোয়ায় সম্মতি অর্থাৎ পরকীয়ার শাস্তি পাথর ছুড়ে হত্যা করা কিংবা গলাকেটে ফেলা। নেত্রীর অবস্থান যখন তখন পরিবর্তন অর্থাৎ জোটের প্রয়োজন বুঝে। লন্ডন থেকে গাফ্ফার চৌধুরীর হায় হায় কে কুবুদ্ধি দিলো! গাফ্ফার ভাই আপনার হাসিনাকে কেউ কুবুদ্ধি দেয় না বরং দিল্লিকে নিয়ে নিজের বুদ্ধিতে চলেন বলেই তো এই দুরবস্থা। যে দিন জাহানারা ইমামের মরদেহ এলো, সে দিন পর্যন্ত তিনি ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সাথে লাগাতার বৈঠক করছিলেন, যাদের মধ্যে ছিলেন এমনকি নিজামী-সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীও। যখন জাহানারা ইমামের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে তখন ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটিকেও ছুড়ে ফেলা। সিপিডির নিন্দা, জাহানারা ইমামের সাথে বেঈমানি করে জামায়াতের সাথে সখ্য? ক’টা বলব? মানুষই বিচার করবে ১/১১-এর কুশীলবদের বিচার হয় না কেন। কী কারণে সামারিক সরকারের আইনগুলো বৈধ করা হলো। শেখ মুজিবের ভালো গুণগুলো বিবেচনা করলে, কবরে শুয়েও কন্যার এহেন কার্যকলাপে শিউরে উঠছেন না বলা যাবে না। কারণ আজকের এই গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি এড়াতেই সবাইকে তিনি মা করেছিলেন।
ধর্মের ভিত্তিতেই দেশ ভাগ হয়েছিল। ’৭১ হয়েছিল ভাষা আর নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে। এবার ক্রুসেড ধর্মভিত্তিক দলগুলোর বিরুদ্ধে। পড়াশোনা না থাকলে ইতিহাস থেকে শিা নেয়ার কারণ নেই। জামায়াত নিষিদ্ধ করলে অতীতে নিষিদ্ধ নাৎসি বা ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির মতো নতুন নামে এরা সংগঠন করবে, একই সাথে সিরাজ শিকদারের সর্বহারা পরিস্থিতিও হতে পারে। সুতরাং তালেবান প্রশ্নে পরাক্রমশালী আমেরিকা, যা পারল না শেখ হাসিনার জন্য তা দিবাস্বপ্ন।
’৭১-এর সমস্যা : বিশ্বে যদি একটি দেশও ৯ মাসে স্বাধীন হয়ে থাকে সেটা বাংলাদেশ। কারণ রাজনীতি করতে লাগে বুদ্ধি, যুদ্ধের জন্য পরিকল্পনা। ৬ দফা আর ১১ দফার নামে হুমকি-ধমকি আর ৭ মার্চ ১৯ মিনিটের উত্তেজনার ফলে দেশটা চলেছে উল্টো পথে। ৬ দফা থেকেই বুদ্ধিভিত্তিক রাজনীতি চালু হলে ৯ মাসে এত য়তি আর এতো মানুষ মরতো না। কারণ ভাসানীবিহীন আওয়ামী লীগ কখনোই মুসলিম লীগ বা কংগ্রেসের মত বুদ্ধিভিত্তিক দল হতে পারেনি বরং লগি-বৈঠা আর উত্তেজনা পুঁজি করে আওয়ামী রাজনীতি যা যুক্তফ্রন্ট কলহকেও বিব্রত করে। যুদ্ধ কোনো মুরগি জবাই নয় আর ভারত সে সুযোগটিই নিয়েছে। ফলে ৪২ বছর পরেও নব্য স্বাধীন দণি আফ্রিকার কাছে হাত পাততে হয় আর তাদের জিডিপি মাথা পিছু ১২ হাজার ডলার? সুতরাং সব বিচার করলে সবার আগে ১৯৫ জনের মুক্তির বিষয়টি বাতিলের প্রক্রিয়া দেখতে চাই। অন্যথায় ক্রুসেড হতে পারে দীর্ঘতর, যা কারোই কাম্য নয়।
বাংলাদেশ কেন ফিলিস্তিন-জেরুসালেম হতে যাচ্ছে : তিন ধর্মই দাবি করে জেরুসালেম তাদের। এখানে যিশু ক্রুশবিদ্ধ, প্রথম কিবলা এবং ট্যাম্পল মাউন্টের মতোই স্পর্শকাতর। জেরুসালেমকে ঘিরে যুগযুগ ধরে ইহুদি-মুসলমানেরা খুনাখুনিতে লিপ্ত। মুক্তিযুদ্ধের অবস্থা কিবলা আর ট্যাম্পল মাউন্টের মতো ভয়ঙ্কর। একপ যারা পাকিস্তানঘেঁষা, দাবি করে মুক্তিযুদ্ধ তাদের, ভারতঘেঁষাদেরও তাই। এটা কি সত্য নয় যে পাকিস্তান রার জন্য পিতা রাজাকারে আর ছেলে গেছে মুক্তিযুদ্ধে? ’৪৭ আর ’৭১ প্রজন্ম বিপরীত কিন্তু আদর্শের চেতনা এক। সবপরে মানবাধিকার রা না করাটাও মানবাধিকারবিরোধী কাজ, যা বোঝার জন্য কোয়ান্টাম মনস্তত্ত্ববিদ হওয়ার দরকার নেই। সব আওয়ামী টার্মে একই পরিস্থিতি কেন সৃষ্টি হয় গবেষণা করে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। মুক্তিযুদ্ধ লগ্নিকারীদের চেতনার আগুনে গোটা দেশ আজ কাবাব হওয়ার পথে।
ব্লগারদের বোঝার জন্য দিল্লিচুক্তির কিছু রূপরেখা। তারিখ ৯ এপ্রিল ১৯৭৪। স্বার ড. কামাল হোসেন ও পাকিস্তানের পে আজিজ আহমেদ, ভারতের পে শরণ সিং। চুক্তিতে ১৬টি প্যারার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৭, ১০, ১২ ও ১৩। ১৪ নম্বর প্যারাটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ শেখ মুজিব বলছেন, ‘১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে মা করে দিয়ে বাংলাদেশ দেখিয়ে দিলো, বাঙালি জানে কিভাবে মা করতে হয়।’
১৩ নম্বর প্যারায় ড. কামাল হোসেন বলছেন, ‘তাদের মুক্তি দেয়া সম্ভব না কারণ এরা জঘন্য যুদ্ধাপরাধী’। উত্তরে শেখ মুজিবের বার্তা তিনি চান মানুষ অতীত ভুলে যাক এবং নতুন করে বন্ধুত্ব শুরু করুক। এরপর শেখ মুজিবের পাকিস্তানসফর এবং ভুট্টোর বাংলাদেশ সফরের নিট ফলাফল তিনিও ম্যান্ডেলার পথেই হেঁটেছিলেন। কিন্তু ‘র’এর সেটা পছন্দ হয়নি। গণহত্যার রক্ত বাংলার সোঁদা মাটিতে মেশার আগেই পাকিস্তান গিয়ে ওআইসি সম্মেলনে যোগ দিয়ে ভুট্টোর মতো গণহত্যাকারীর গালে চুমা আর খুনি টিক্কা খানের সাথে হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে ফয়সালা করলেন, বিচারের প্রক্রিয়া শেষ। অথচ বুদ্ধিভিত্তিক রাজনীতির খরা এইভাবে স্পষ্ট যে, দিল্লিতে যত চুক্তিই হয়েছিল, ভুট্টো এর একটাও পালন না করে বরং নিজেদের হক সব আদায় করেছেন। ফলে জেনেভা ক্যাম্পের ওরা আজ পর্যন্ত ধুঁকে ধুঁকে মরছেন।
তৃতীয় শক্তির অর্থ আর মদত ছাড়া ব্লগারদের আন্দোলনের আয়ু মাত্র দুই দিন। অপারেশন সার্চলাইট যারা জানে না সে মূর্খগুলারে বলে কী লাভ? বরং গবেষকদের সাথে বিতর্ক করাই বাঞ্ছনীয়। মূল কথা এখন যাদের বিচার হচ্ছে কেউ ট্যাঙ্ক চালায়নি, কামান দাগায়নি, সম্মুখ সমরেও লিপ্ত হয়নি বরং নুরেমবার্গের দারোয়ানদের মতো গণহত্যার সাথে সম্পর্ক সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হলে, তবেই ফাঁসি। বরং মুক্তিযুদ্ধের কথা আমি বলতে পারি কারণ তুরার পাহাড়ে ৭০ হাজার মানুষের সাথে তাঁবুর তলে রিফিউজি দিন কাটিয়েছি। বাবাকে দেখেছিলাম দিনরাত মুশাবিদা করে ১০ হাজার মানুষের প্রাণ রা করতে। দেখেছি শেলিং বৃষ্টি, শেষে মৃত্যুর কাফেলা। সাপের বনে, জোঁকের রাজ্যে দিন কাটিয়েছি। তাঁবুর মধ্যে সাপ-জোঁক-বিছা সারাণ লেগেই থাকত। ক্যাম্পের কুখাদ্য খেয়ে কলেরার মহামারীতে চিতার আগুন যেন নিভতোই না। শেখ মুজিবের পরিবারের কারো পায়েই আঁচড় লাগেনি, কোথাও পালাতে হয়নি। ঢাকা শহরেই পাক হেফাজতে জিয়া-মুজিব পরিবার কেন ভালো ছিলেন সেই উদাহরণও কি দিতে হবে? আর এই নরক যারা সৃষ্টি করল তাদের মা করে ৪২ বছর পর দারোয়ানদের বিচারের পে কোনো যুক্তিই যেমন যথেষ্ট নয়, তেমনি একে কেন্দ্র করে নির্বাচনী বৈতরণীও মেনে নেয়া যাবে না অন্যথায় দেরি না করে মহল্লায় মহল্লায় পাড়ায় পাড়ায় এখনই প্রতিরোধ মঞ্চ গড়ে তুলতে হবে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বন্ধ করতে আগ্রাসী জাপানের বিরুদ্ধে দুটো বোমা ফেলেছিল হিরোশিমা-নাগাসাকিতে। এ জন্য জাপানিজরা আমেরিকাকে বয়কট করেনি। শেখ মুজিবও ওআইসি সম্মেলনে যোগ দিয়ে দালালদের বিচার নিষ্পত্তি করে গেছেন। প্রমাণ ঘাটলে বরং আওয়ামী লীগের মধ্যেই অপরাধী বেশি। পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী ২৩ জন যাদের মধ্যে শেখ হাসিনার বেয়াই এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং দু’জন বিএনপিতে। তাদের বিচার হবে না? এসবই যুক্তিতর্কের জন্য বলা।
মূল সমস্যা কোথায়? : সব নষ্টের গোড়া ’৭২-এর হিটলার সংবিধান, যা সৃষ্টি হয়েছিল শেখ মুজিবকে মাথায় রেখে। ড. কামাল হোসেনরা একবারও চিন্তা করেননি শেখ মুজিব একজন মানুষ, মৃত্যুঞ্জয়ী নন। সব মতা একজনের হাতে দিলে ব্যক্তি তো ফ্যাসিবাদী হবেই। তাই সংবিধানের সব অবকাঠামো ভেঙেচুরে পুনর্জন্ম দিতে হবে। মতার ভারসাম্য রায় মতা সীমিতকরণসহ মতার ভাগবণ্টন এবং প্রাদেশিক ব্যবস্থা। অন্যথায় বিকেন্দ্রীকরণ না করলে ঢাকার জনসংখ্যা ১০ বছরে হতে পারে পাঁচ কোটির বেশি। চার বছর ও দুই টার্ম মতা অতি জরুরি। হরতাল বন্ধ করে সংসদ বর্জনের বিরুদ্ধে আইন। গণপ্রজাতন্ত্রের নামে রাজাপ্রজার দুর্গন্ধ দেশটাকে ফিউলাডিজম পূর্ববর্তী কৃতদাসের যুগে ফিরিয়ে নিয়েছে তাই পুঁজিবাদের দেশে সমাজতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্রীদের ঝেঁটিয়ে বিদায় করে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’। বিশেষ কোনো ধর্মকে ডিসপ্লে করার অর্থ হবে রাষ্ট্র সাম্প্রদায়িক বরং সব ধর্মের প্রতি সমান আচরণ। এই সংবিধান যদি আর বহাল থাকে তাহলে ফ্যাসিবাদ তার চিরস্থায়ী জায়গা করে নেবে। একনায়কত্ববান্ধব ’৭২-এর সংবিধান ভেঙে নতুন খসড়া ছয় মাস ধরে, যাচাই-বাছাই শেষে গণভোটের মাধ্যমে পাস করতে হবে। এর অন্য কোনো বিকল্প নেই। আন্দোলন করতে চাইলে ব্লগারদের সামনে অনেক অ্যাভিনিউ খোলা।
লেখক : নিউ ইয়র্ক প্রবার্স

সূত্র

১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×