সকালে ঘুম থেকে উঠেই চমৎকার একটা সুখবর পেলাম। দেশে ভাইবার আর ট্যাঙ্গো বন্ধ করে দিয়েছে। আমি নিশ্চিতভাবে এটাও বলতে পারি যে, কোন এক রৌদ্রোজ্জল সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখব, দেশে স্কাইপ, হোয়াটসআপ, ইমো, হ্যাংআউটস সহ সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ হয়ে গেছে।
এটা আসলে কোন ব্যাপারই না সরকারের জন্য। তারা বললে, এখন মানুষ আর ছাগল এক গ্লাসে চুমুক দিয়ে লাচ্ছি খাবে, এক কাটা চামচ ইউজ করে চওমিন খাবে। এগুলা কোন বিষয়ই না। দুই একজন হয়তো লাফালাফি করবে। বলবে, আমরা ম্যাঙ্গো লাচ্ছি খাব না, ছাগলের দুধ খাব। আবার কেউ কেউ বলবে চওমিন খাব না, খাসির রেজালা খাব। ওদেরকে কৌশলে সরিয়ে দেবে পথ থেকে। দুইদিন পরে লোকজন কিছু শোক সভা পালন করে আবার ছাগলের সাথে একসাথে ব্রাঞ্চ করা শুরু করব। (বি.দ্রঃ আমাকে কেউ বালপন্থী কিংবা ব্যাম্পিপন্থী ভাইবেন না প্লিজ। আমি এখনো ভোটার আই ডি কার্ড পাই নাই !! pacman emoticon pacman emoticon :v)
যাই হোক, আসল কথায় আসি। সরকারের উদ্দেশ্য খারাপ না। দেশের মাথারা, দেশের বিজ্ঞ লোকেরা অনেক চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্তটা নিয়েছেন। হতে পারে সাময়িক সিদ্ধান্ত, কিন্তু চুড়ান্ত করতে কতক্ষন। তাদের সিদ্ধান্তটা আসলে দেশের জনগণের জীবন বাচানোর জন্যই নেয়া। তাদের ধারণা, দেশে এখন দেশে যে সন্ত্রাসী হামলা চলছে, তার পেছনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যামগুলো দায়ী (এর আগে সবগুলা পাব্লিক পরীক্ষার প্রশ্ন কিন্তু ফেসবুক, ভাইবার এসবের মাধ্যমেই ফাস হইছিল। কিন্তু তখন উনারা ছিলেন নির্বাক। হয়তো ভাবছিলেন, পোলাপাইন গ্রুপ ডিসকাশন করতেছে !)। সন্ত্রাসীদেরকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাবহার নিয়ে উনারা আসলে কি ভাবেন, ব্যাপারটা একটু দেখে নেই।
উনারা ভাবেন, তাহারা অপারেশানে যাবার আগে গার্লফ্রেন্ডকে স্কাইপে নক করে বলে, জান, প্লিজ একবার। শেষবারের মত একটা পাপ্পি দাও না। প্লিজ।
অথবা, অপারেশানে যাবার আগে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়, গোয়িং টু ভেনিস কাওরান বাজার ইউথ ফাইভ নিউলি মেইড কক্টেল। ফিলিং এক্সাইটেড। মুহা হা হা হা হা হা !!!
নাইলে, কুদ্দুস রমজানের ওয়ালে লেখে, ব্রো, আজকে ৫ নম্বরের চিপায় থাকিস রাত ৮ টায়। দুইটা পি.বি. (পেট্রল বোম) নিয়া আসুম।
একবার সুস্থ মাথায় চিন্তা করে দেখুন প্লিজ। এটা কি আসলেই সম্ভব। কারো যদি দেশের সর্বনাশ করার ইচ্ছে থাকে, তা যে কোন ভাবেই করে ছাড়বে। এজন্য তো ফেসবুকে বা ভাইবারে নক করে ইনফো পাস করতে হবে না। এই ছোট্ট চিন্তাভাবনাটুকু তাদের মাথায় নাই। আর আসলেই কি অফ করে রাখা সম্ভব? সরকার চলে ডালে ডালে, পোলাপাইন চলে পাতায় পাতায়। হটস্পট শিল্ড, ভিপিএন ইউজ করে দুনিয়ার সবকিছুতেই কানেক্ট করে ফেলা সম্ভব। এটা কি তারা বুঝে না।
কয়েকদিন পরে দেখবেন, নীলখেতের মোড়ে 'সহজ উপায়ে ফেসবুক ইউজের ১০১ টি বটিকা', 'এস ভাইবারে চ্যাট করি', 'স্কাইপে দেখুন প্রিয়জনের মুখ (প্রচ্ছদে সানি লিওনের একটা রগরগে ছবি !!)' নামক চটিপুস্তক বিক্রি হচ্ছে। ৫ টাকা ! ৫ টাকা !৫ টাকা !
অথবা "মোমের আলো" পত্রিকার প্রথম পেইজের কোণা দিয়ে পাবেন, "সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যাবহারের কিছু টিপস", যেখানে সবকিছুর বিশদ বিশদ বর্ণনা দেয়া থাকবে।
আর সরকারের বড় বড় নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে বলবে, এখন দেশে হিমালয়ের বরফ গলা পানির মত ঠান্ডা পরিস্থিতি বিরাজমান। কোথাও কোন সন্ত্রাসী কার্যক্রম ঘটে নাই। আমাদের সরকার ইন্টারনেট ব্যাবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা এনে এক বৈপ্লবিক ব্যাপার করে ফেলেছে। কিন্তু আপনার এলাকায় তারপরেও সন্ত্রাসী হামলা হলে, নিকটস্থ মোবাইল টাওয়ারটা নিয়ে ঝাকাঝাকি করুন !! দেখবেন সন্ত্রাসী হামলা বন্ধ হয়ে যাবে !!
মোদ্দাকথা হল, এইসব সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটের যে কোন বাজে এফেক্ট নাই, তা কিন্তু না। অনেক অনেক আছে। পোলাপাইন এখন এক্সাম প্রিপারেশানের চেয়ে, এক্সাম সংক্রান্ত স্ট্যাটাস, পরীক্ষা পূর্ববর্তী সেলফি আপ্লোডাইতে বেশি ব্যাস্ত থাকে। এটা কিছুতেই না করা যাবে না। কিন্তু সেলফ কন্ট্রোল করা ছাড়া, এটা দমনের সুযোগ নেই। বাবা, মা কিংবা সরকার, কেউই এটা ঠিক করতে পারবে না, যদি না নিজেকে নিজে কন্ট্রোল করা যায়।
তবে শুধু এই সোশাল নেটওয়ার্কিং এর জন্যই কিন্তু কয়েকটা প্রজন্মকে আমরা একসাথে রাখতে পেরেছি, ছোটবেলায় হারিয়ে যাওয়া বন্ধুকে খুজে পেয়েছি, হাজার হাজার মেইল দূরে থাকা বন্ধুদেরকে কখনো দূরে মনে হয় না। মনে হয়, এইতো কালকেই স্টারে বসে একসাথে কাচ্চি খাইলাম। প্রেমিককে এখন প্রেমিকার সাথে রাতে কথা বলার জন্য বাবার পকেট থেকে ১০ টাকা চুরি করে ফ্লেক্সি করা লাগে না। এই সব ছোট ছোট পাওয়া কিন্তু দিন শেষে অনেক বড় হয়ে দাড়ায়।
তবে সবচেয়ে বড় কথা, সরকারের এই সকল সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় একবার হলেও প্রবাসী বাঙ্গালীদের কথা চিন্তা করা উচিৎ। যাদের মাধ্যমে দেশের অর্ধেকের মত বৈদেশিক মুদ্রা জমা হয় ন্যাশনাল রিজার্ভে। একজন প্রবাসী বাঙ্গালী সারাটা দিনের মধ্যে একটা সময়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে। সেটা হল, প্রিয় মানুষ গুলোর সাতেহ কিছু সময়। কিছু প্রিয় মুখগুলোকে একবারের জন্য মায়াভরা চায়। এই সব জিনিস শুধু কিছু সোশাল নেটওয়ার্কের জন্যই হয়ত সম্ভব হয়েছে। নাহলে সেই উচ্চ কলরেটে, ভাঙ্গাচোরা নেটওয়ার্ক নিয়ে, খুড়িয়ে খুড়িয়ে প্রিয়জনের কন্ঠসর শোনা লাগত। এই জিনিসটা যে কত কস্টের, তা হয়তো কেউ এই পরিস্থিতিতে না পড়লে বুঝবে না।
আশা করছি, সরকার এই ধরণের কোন সিদ্ধান্ত গ্রহনের সময়, একটু হলেও নিজেদের মাথা খাটাবেন। যে উদ্দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করতেছেন, তা দমনের জন্য আরো অনেক উপায় আছে। ল-এনফোর্সমেন্ট বাহিনী শক্ত করা, নিরাপত্তা ব্যাবস্থা জোরদার করা। ঐসব নিয়া একটু ভাবেন। দয়া করে এসব আজাইরা জিনিস নিয়ে পরে ভাইবেন।