somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিছু অপূর্ণ স্বপ্ন ও একটি নতুন বছর।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবনে একসময়একটা বিশাল স্বপ্ন ছিল।বড় হয়ে ডাক্তার হব। মানুষের সেবা করব। সেইরকম ব্যাপার করে ফেলব। ডাক্তারের চেম্বারে গেলে আড়চোখে দেখতাম,ডাক্তার কত টাকা নেয়। পরে নিজে হিসেব করে বের করতাম, প্রতি রোগীর থেকে ৩০০ টাকা করে নিয়ে প্রতিদিন যদি ৩০ টা রোগী দেখি, তাহলেই ৯০০০ টাকা। মাসে প্রায় ২৫০০০০ টাকার উপরে। ভাবতেই আনন্দে মন আনচান করে উঠত। আহ কত টাকা হবে আমার একদিন। শেষজীবনে, ডাক্তার তো পরের কথা, কম্পাউন্ডার ও হইতে পারলাম না।
হইলাম ইঞ্জিনিয়ার। তাও যে সে ইঞ্জিনিয়ার না। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। তাও আবার বি.এচ.চি ইঞ্জিনিয়ার। সেই পার্ট। যাই হোক, দেশে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের ভাত নাই, এ কথা বলে লজ্জা দিয়েন না !!! পাশ তো করছি। এই কি বেশি না !!! আই ই বি এর মেম্বার হইছি। মানে এখন নিজেকে ইঞ্জিঃ আনোয়ার উল্লাহ মোহাম্মদ তৌসিফ বিন আলম ডাকতেই পারি !!! (নিজের কাছেই নামটা কেমন জানি উইয়ার্ড লাগতেছে। যাউজ্ঞা আব্বা আম্মার দেয়া নাম)
দেশে ভাত নাই দেইখা,( এখানে কবি ভাত নাই বলতে, চাকরির স্বল্পতা বুঝিয়েছে !!!) বাইরে তাড়াতাড়ি একখানা নামকাওয়াস্তে ডিগ্রী অর্জনের জন্য আসার জন্য পাড়াপাড়ি শুরু করি। 'বাবা, কই পড়তে যাইতেছ?' জিজ্ঞাসা করলেই আনসার দিতাম, "আঙ্খেল, উ.আস.এ। তবে খানাডার টপ কিছু ভার্সিটিতেও এপ্লাই করেচি। আসলে ওখানে তো অনেক ঠান্ডা। কিভাবে যাব বলেন? স্কিন খারাপ হয়ে যাবে না। এভাবে কি পড়া সম্ভব বলেন। আমার একটা জীবন আছে না।"
মুরুব্বিরা বলে,'একদম ঠিক বলেছ বাবা। এত ঠান্ডায় কি পড়া সম্ভব। আর স্কিন খারাপ হয়ে গেলে, পরে বিয়ে করাতে সমস্যা। জানই তো। বিয়ের বাজারে এম্নিতেই মেয়ে পাওয়া যায় না। তার ওপর এভাবে খারাপ স্কিন নিয়ে তো একদমই মেয়ে পাওয়া যাবে না। তুমি আম্রিকাই যাও বাবা'।
মুচকি হাসি দিয়া আমি আমি আম্রিকার স্বপ্ন দেখতাম, আর জিটিএ স্যান এন্ড্রেস খেলতাম। নিজেকে CJ এর মত ভাবতাম। এইভাবে আম্রিকা গিয়া আমি গ্যাংস্টার হব। আরেকটু ভাল কিবোর্ড বাজানো শিখলে পপস্টার হব। বাহ। কত মগা হবে !!
একদিন আম্মার কাছ থেকে ১০০০ টাকা নিয়া, ৫০০ টাকা দিয়া নীলখেত থেকে জি.আর.ই এর বই কিনে আনলাম। বাকি ৫০০ টাকা দিয়া নীলখেতের মোড়ে পুরি আর তেহারী মারলাম সবান্ধবে। আমার অনেক জি.আর.ই ইস্টাইলে পড়া শুরু করলাম। জি.আর.ই তে ভাল করতে হলে ইংরেজীতে দক্ষ হতে হবে।আর ইংরেজী ভাল শিখতে হলে, প্রচুর ইংরেজী শুনতে হবে, পড়তে হবে আর বলতে হবে।
ভাল ইংরেজী শেখার জন্য প্রচুর ইংরেজী সিরিয়াল দেখা শুরু করলাম। ফ্রেন্ডস, হাও আই মেট ইউর মাদার, বিগ ব্যাং, ডেক্সটার, গেইম অফ থ্রোন্স থেকে শুরু করে ফ্যামিলি গায় পর্যন্ত বাদ গেল না। সব সিরিয়াল সাবাড় করার পরে ঘুম থেকে উঠে দেখি সব ইউ.এস.এর ইউনিভার্সিটির ডেডলাইন শেষ। আর জি.আর.ই তো কবেই রসাতলে গেছে। তাড়াতাড়ি করে IELTS টা দিয়ে ফেললাম। কোনমতে একটা মান বাচানো টাইপ স্কোর করলাম। বাহ, আমি তো মারাত্তক মেধাবী!!
জি.আর.ই নাই। IELTS ই ভরসা। বন্ধুরা কয়, আরে দোস্ত। চল জার্মানী এপ্লাই করি। টিউশন ফি নাই। আর ভাল পড়ালেখার মান। আমার রিপ্লাই, "আরে ধুর!! জার্মানী একটা দেশ হইল। খালি ফুটবল খেলে। আর কিচ্ছু নাই। টিউশন ফি নাই। ওখানে গিয়া দেখবি, ইউনিভার্সিটি বলে কিছু নাই। বিল্ডিং ভাড়া করে পড়াইতেছে। গেলে কানাডা, আম্রিকা অর অস্ট্রেলিয়া। নাইলে নাই।"
এক বন্ধু মোটামুটি জোর করে ডেডলাইনের আগের দিন TUM এ এপ্লাই করাই দিল। পুরা জার্মানীতে একটা ইউনিভার্সিটির একটা সাব্জেক্টেই এপ্লাই করছি। পড়লে ভাল ইউনিতে পড়ুম। নাইলে নাই। আর তখন তো চোখ ছিল শুধু রেঙ্কিং এ। আর তো কিছু জানি না। মোটিভেশান লেটার লেখলাম ৩০ মিনিটে। একবার রিভিশান ও দিলাম না। ডিরেক্ট সেন্ড।
আম্রিকা আর কানাডার হাজার স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে পরে পাড়ি দিলাম, জার্মানীতে। এখানে পড়ি। মারা খাই। আবার পড়ি। আবারো মারা খাই। এভাবেই আমার চোখের সামনে থেকে আম্রিকা কেমন যেন ঝাপসা হয়ে গেছে।
দেশে থাকতে নিউ ইয়ার পালনের কথা আম্মারে বললেই লাঠি নিয়া দৌড়াইয়া আসত। 'আমার থেকে টাকা নিয়া রাস্তায় গিয়া বোম ফুটাবা, রঙ তামাসা করবা। এসব হবে না বাপজান।' আম্মাকে অনেক বুঝাইয়াও রাজী করতে পারতাম না। তখন মনে মনে ভাবতাম। একদিন দেখাই দিব। সকাল বিকাল বোমা বাজী ফুটাব। রঙ তামাসা করব।
জীবনের রঙ্গমঞ্চে আজ সে সূযোগ এসে গেছে। লিগালি বোমাবাজী ফুটানোর। আম্মা নাই। মানে বাধা দেয়ারও কেউ নাই। কামলা খাইটা কিছু টাকা কামাই। সো, মানি নো প্রব্লেম। কিন্তু মনের মাঝে সেই রং আর নাই। আম্মা কল করে আমাকে ইউশ করে। বলে, কিরে বাইরে যাবি না? সেলিব্রেট করবি না। আমি জবাব দেই, শীত লাগে মা। বাইরে অনেক ঠান্ডা। আসলে মনের রঙের বড়ই অভাব। জীবনটাকে এখন সেলিব্রেশানের বেড়াজালে বেধে রাখতে ইচ্ছে করে না। আসুক না নতুন বছর। মুছে যাক সব জরা। তাতে আমার কি !!!
একসময় জীবনে অনেক কিছু চেয়েছি। তা হয়ত পাইনি। আবার অনেক কিছু না চেয়েও পেয়েছি। আজ জীবনের হালখাতার যেসব জিনিস বাকি পড়ে আছে, সেগূলো হয়ত হাতের কাছেই পাই। কিন্তু ছুয়ে দেখতে ইচ্ছে করে না। ছুয়ে ফেললেই যে স্বপ্নটা ভেঙ্গে যাবে।
সবশেষে,কিছু স্বপ্ন থাকুক না অপূর্ন। এই অপুর্ন স্বপ্নগুলোকে বাস্তব করার জন্যই তো আমাদের বেচে থাকা।
সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা। নতুন বছর ভাল কাটুক এবং আপনাদের সব অপুর্ণ স্বপ্ন পুরন হোক, এই কামনা করি।
Happy New year
Glückliches neues Jahr
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×