somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুবাদ গল্প - আয়ারল্যান্ডে সাপ নাই

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্যাঙ্গর। উত্তর আয়ারল্যান্ড। ম্যাককুইন সাহেব তার চেয়ারে বসে আছেন। তার টেবিলের ঠিক অপর পাশে বসে আছে যুবকটি। যুবকটি এসেছে কাজের আশায়। তিনি কৌতহূলী চোখ দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছেন। যুবকটি ভারতীয়। ম্যাককুইন সাহেব ঠিকেদারীর কাজ করেন। তার কাজের জন্য তার প্রচুর মানুষের দরকার।

ম্যাককুইন সাহেব যুবকটিকে প্রশ্ন করছেন, তুমি আগে কখনও কনস্ট্রাকশনের কাজ করেছ?

না। যুবকটি বলে যেতে থাকে। আমি বেলফাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে আছি। মেডিকেলের ছাত্র। কিছুদিনের ভেতরই আমার ডাক্তারী পড়া শেষ। কিন্তু তার জন্য আমার অর্থ প্রয়োজন। এই গরমের ছুটিতে তাই আমাকে কাজ করতেই হবে। একটা কাজ কি আপনার কাছে পাওয়া যাবে?

ম্যাককুইন সাহেব দয়ালু মানুষ। তিনি যুবকটি সাহায্যই করতে চাচ্ছেন। কিন্তু এর আগে তিনি কখনও কোন ভারতীয়কে কাজে নেননি। সাধারনত উত্তর আয়ারল্যান্ডের মানুষরাই তার কাছে আসে। ওদের কেউ কেউ আবার ভিনদেশীদের পছন্দ নাও করতে পারে।

আমার এখানের কাজগুলো কিন্তু খুব কষ্টের। জান তো?

জানি, স্যার।

ম্যাককুইন সাহেব এবার ধীরে ধীরে স্পষ্ট ভাষায় কি যেন ইঙ্গিত করে বললেন, আমার কাজের ফল পাবে নগদে কিন্তু প্রশ্ন করা যাবে না। বুঝতে পেরেছ?

না স্যার। বুঝতে পারি নাই।

আমি তোমাকে প্রতি সপ্তাহে নগদ বেতন দিয়ে দেব। ও টাকায় আমার বা তোমার কাউকেই কোন ট্যাক্স দিতে হবে না। বিনিময়ে তুমি কাউকে বলতে পারবে না তোমার একটা কাজ আছে। কাজ নিয়ে কোন প্রশ্ন করতে পারবে না। তুমিও খুশি , আমরাও খুশি।

ম্যাককুইন সাহেব যা বুঝাচ্ছেন তার মূল কথা হল যুবকটিতে হয়ত আইন ভঙ্গ করতে হতে পারে। ম্যাককুইন সাহেবও হয়ত একই সাথে আইন ভাঙ্গবেন। এ কাজগুলো নোংরা এবং সময়ে সময়ে বেশ বিপদজনক। কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। বিনিময়ে যুবকটির প্রাপ্তি নেহাতই কম হবে না।
যুবকটি একটু চুপ করে থেকে মাথা ঝাঁকিয়ে উত্তর দেয়, আমি রাজী।

ম্যাককুইন সাহেব কলম তুলে খাতায় খসখস করে লেখা শুরু করলেন। নাম?

হরি কৃষন রাম জী।

আমি তোমাকে রাম বলে ডাকব। আগামী সোমবার সকাল সাড়ে ছ’টা করে রেলষ্টেশনের বাইরে অপেক্ষা করবে।

ম্যাককুইন সাহেবের অফিস থেকে বের হয়ে রাম বেলফাস্ট ফেরৎ গেল। বেলফাস্টে ভার্সিটির কাছেই একটা ঘরে গত চার বছর ধরে তার আবাস। এবার গরমের ছুটিতে তাকে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ছ’টা করে কাজে যেতে হবে বলেই বেলফাস্টে এখন থাকা সম্ভব না। এ গরমে তাকে ব্যাঙ্গোরেই বসবাস করতে হবে। রোববার বিকেলে একটা ব্যাগে কিছু জামা-কাপড় নিয়ে ব্যাঙ্গরের রেল ষ্টেশনের কাছের এক সস্তা রুমে উঠতে উঠতে সে চিন্তা করছে, আর মাত্র একটা বছর। এর ভেতরই পাশ করে ভারতে ফিরে যাব আমি। নামের আগে লেখা থাকবে ডাক্তার।

পরদিন সকাল সাড়ে ছ’টা করে রেল ষ্টেশনের সামনে অপেক্ষা করতে করতে রাম খেয়াল করে তার মতই জনা দশেক লোক রেল ষ্টেশনের বাইরে অপেক্ষা করছে। সবার অপেক্ষা বিলি ক্যামরুনের জন্য।

বিলি ক্যামেরুন এ কোম্পানীর ফোরম্যান। একটা পুরানো ঝরঝরে ট্রাক নিয়ে বিলি হাজির হয় সময় মত। বিরাট দশাসই শরীর বিলির। প্রায় দু’মিটার উঁচু আর একশ বিশ কেজি ওজন বিলির। এমন গড়নের জন্য সবাই তাকে বলে বিগ বিলি।

বিলি নেমেই রামের দিকে তাকিয়ে কর্কশ ভাষায় চেঁচিয়ে উঠে। সবাই ট্রাকের পেছনে ওঠে পড়। এই তুমিও ওদের সবার সাথে উঠে পড়।

মানুষগুলো ট্রাকের পেছনের কাঠের পাটাতনে বসে পড়ে। বিকট শব্দ করে ট্রাকের ইঞ্জিন চালু হবার পর ট্রাকটা গড়িয়ে গড়িয়ে রাস্তা ধরে এগোতে থাকে। রামের উল্টো পাশে বসা মানুষটির চেহারা হাসিখুশি। উজ্জ্বল নীল চোখে বন্ধুত্বের আমন্ত্রন। টমি বার্নস বলে নিজের পরিচয় দিয়ে সে রামকে জিজ্ঞেস করে, কোথা থেকে এসেছ?

ইন্ডিয়া। পাঞ্জাব। সংক্ষেপে দু’শব্দে উত্তর দেয় রাম।

কোন জায়গার কথা বললে ? ইন্ডিয়া না পাঞ্জাব?

রাম হেসে উত্তর দেয়, পাঞ্জাব ইন্ডিয়ার একটি অংশ টমি।

টমি বার্নস কখনই উত্তর আয়ারল্যান্ডের বাইরে পা রাখে নাই । কোন ভারতীয়র সাথেও তার কখনও পরিচয় হয় নাই। পাশের মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে ওদের বলে সে, নতুন মানুষটি বাড়ি থেকে অনেকদূর চলে এসেছে।

বিগ বিলি কথার মাঝে আচমকা বলে বসে, তা ও বাড়ি থেকে এতদূর এল কেন? ইন্ডিয়াতে কি কাজ নাই?

বিলির কথার সুর ধরে টমি ওকে জিজ্ঞেস করে, তুমি উত্তর আয়ারল্যান্ডে কেন?

আমি আসলে বেলফাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাক্তারী পড়ছি। ১৯৭১ এ এখানে এসেছি। আসছে বছর আমি ডাক্তারী সাটিফিকের্ট পেয়ে যাব।

তাহলে তুমি ডাক্তার? ভালই হল রাম। আমাদের সাইটে কেউ আহত হলে তুমি ওদের সাহায্য করতে পারবে।

টমির কথা শেষ না হতেই আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে বিগ বিলি বলে উঠে, আমি ওকে আমাকে ছুঁতেই দেব না।

হঠাৎ সবাই চুপ হয়ে যায়। এরা সবাই বিগ বিলিকে ভয় করে।

চলতে চলতে এক সময় ট্রাকটা দাঁিড়য়ে পড়ে এবং ওরা নেমে আসে। কাছেই একটা নদী। রামের চোখে পড়ে বিশাল এক পুরনো কারখানা। কারখানার চারপাশ জুড়ে সারি করে লাগানো আছে নানা গাছ। আশে পাশে কোন বাড়িঘর , দোকান কিছুই নেই। এমনকি খাবার কেনারও কোন দোকান নাই। ওরা কোন কিছু তৈরী করতে আসে নাই। ওরা এসেছে ওই পুরানো ভবনটা ভেঙ্গে ফেলার জন্য।

ভবনের মালিক কাজটা তাড়াতাড়ি আর সস্তায় সারবে বলে বুলডোজার বা যন্ত্রপাতি ভাড়ার ঝামেলায় যায় নাই। এ লোকগুলো কারখানা ভবনটাকে হাতুড়ি আর লোহার শাবল দিয়ে ভাঙ্গবে।

মানুষগুলো ট্রাক থেকে হাতুড়ি আর শাবল তুলে নিয়ে কাজ শুরু করে।
কাজটা যথেষ্ট পরিশ্রমের। মাথার উপর সূর্য প্রচন্ড তাপ ছড়াচ্ছে। বাতাস ধূলোয় ভরে আছে। সকাল শেষ না হতেই রাম ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ক্ষুধাও তাকে পেয়ে বসেছে। দুপুর নাগাদ সবাই কাজে বিরতি দেয়। অন্যরা তাদের প্লাস্টিক লাঞ্চ বক্স খুলে খেতে শুরু করে।

টমি রামকে খালি হাতে দেখে জিজ্ঞেস করে, তোমার সাথে খাবার নাই?

না। কাল থেকে আনব।

খাবার কিছু না থাকলেও ওখানে চায়ের অবশ্য কোন কমতি নাই। মানুষগুলো আগুন জ্বালিয়ে কেতলীতে পানি তুলে দিয়েছে। বড় বড় ধাতব মগ ভর্তি চা নিয়ে ওরা খেতে শুরু করেছে। টমির দুটো মগের একটি ও রামকে দিয়ে দিল। কিন্তু চায়ের স্বাদটা ছিল মিষ্টি । ওরা ওতে দুধ মিশিয়েছে। রামের এ চা খেতে ভাল লাগে না। টমি তার লাঞ্চ বক্স খুলে রামের দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বলে, একটা স্যান্ডউইচ তুলে নাও।
দূর থেকে বিগ বিলি চেঁচিয়ে উঠে। বিদেশীদের নিজের স্যান্ডউইচ নিজেকেই আনতে হবে।

টমি বার্নস কথাটা শুনে মাটির দিকে তাকিয়ে থাকে। সবাই বিগ বিলিকে ভয় পায়।

টমির দিকে তাকিয়ে রাম উত্তর দেয়, ধন্যবাদ। কিন্তু আমার খিদে নেই।
পরদিন একটা লাল স্টীলের লাঞ্চ বক্সে রাম তার খাবার নিয়ে আসে। রামের এ কাজ ভাল লাগছে না। প্রতিদিন কাজের শেষে তার হাত-পায়ে কোন অনুভূতি সে টের পায় না। প্রচন্ড রকম দুর্বলতা এসে ভর করে শরীরে। সে বিগ বিলিকে মোটেও পছন্দ করে না। কিন্তু টাকাটা তার বড় প্রয়োজন।

ফোরম্যান রামকে প্রথম সপ্তাহ থেকেই ভোগাতে শুরু করল। সবচেয়ে কঠিন আর বিপদজনক কাজগুলোতে রামকে ছাড়া তার যেন চলছে না। রাম উঁচু ভবনে চড়তে চায় না কিন্তু বিগ বিলি তাকে কারখানার ছাদে উঠাবেই।

খুব তাড়াতাড়ি ছাদ ভাঙ্গার কাজ শেষ। এরপর শুরু হল দেয়াল ভাঙ্গার কাজ। রামকে এখন দেয়ালগুলোর মাথায় চড়ে কাজ করতে হয়।
শনিবার সকালে ওরা যখন চা খেতে খেতে বিশ্রাম নিচ্ছিল তখন বিগ বিলি পরবর্তী কাজের হুকুম জারি করে।

আমাদের পরবর্তী কাজ হল ওই উঁচু দেয়ালটা ফেলে দেয়া। আমরা উপর থেকে নিচে নামব।

এবার সে দেয়ালে একেবারে উঁচু অংশের দিকে আঙ্গুল তুলে রামের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, তোমাকে ওখানে যেতে হবে।

রাম ভাল করে দেয়ালটার দিকে তাকায়। দেয়ালটা জরাজীর্ন। নিচের দিকে অসংখ্য ভাঙ্গন চোখে পড়ে।

রাম কিছুটা প্রতিবাদের স্বরে বলে,ওটা যে কোন সময় পড়ে যাবে। যদি ওটা পড়ে যায় তাহলে আমি ওটার নিচে চাপা পড়ব।

কিভাবে আমার কাজ করতে হবে তা কি এখন এক বোকা কালো ইন্ডিয়ানের কাছ থেকে শুনতে হবে? ঝাঁঝালো স্বরে কথাগুলো বলে বিলি উল্টো দিকে হাঁটতে শুরু করে।
রাম উঠে দাঁড়ায়। চেঁচিয়ে বলে, ক্যামরুন সাহেব এই দেশ আমার না। কিন্তু আমি বোকা নই। দয়া করে আামাকে অপমান করবেন না।

বিগ বিলি থমকে দাঁড়ায়। তার চোখে মুখে ফুটে উঠে অবিশ্বাস। আশেপাশের মানুষগুলোর চোখেও অবিশ্বাস। বিগ বিলির সাথে এভাবে কেউ কথা বলার সাহস পায় কোথা থেকে?

দ্রুত গতিতে বিলি এগিয়ে যায় রামের দিকে। কোন রকম সময় না নিয়ে রামের মাথায় প্রচন্ড এক আঘাত করে বসে সে। আঘাতের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে রাম ।

পাশ থেকে টমি ফিসফিস করে বলে, ওখানে পড়ে থাক। তোমাকে এখনি উঠতে দেখলে ও নিঘার্ত খুন করবে।

রাম উঠতে পারছে না। চোখের দৃষ্টি তার ঝাপসা হয়ে আছে। অবশেষে অনেক কসরতের পর উঠে আবার কাজ শুরু করল সে। বাকীটা সময় কেউ তার সাথে কথা বলল না। সেও কারও সাথে কোন কথা বলছে না। বিগ বিলি তার মাথায় আঘাত করেছে। তার মাথ ঘুরছে।

সেদিন রাতের অন্ধকারে একাকী নিজের রুমে বসে আছে রাম । রাগে ভেতরটা পুড়ে যাচ্ছে কিন্তু কিছু করতে পারছে না সে। পারলে সে তখনই কাজটা ছেড়ে দিত কিন্তু তার যে টাকার বড় দরকার। অপমানবোধে পোড়া ছাড়া আর কিই বা তার করার আছে? বিগ বিলি তাকে এমনভাবে মেরেছে যে আরেকটু হলেই সে মারা যেত। রামের মাথায় খুনের নেশা চেপেছে। বিগ বিলিকে সে খুন করবে। কিন্তু কিভাবে?

কাঁচের দরজার ওপাশে ঝুলতে থাকা রাত্রিকালীন পোষাকের কোমর বন্ধনীর রজ্জুটা ঝুলছে বাতাসে। যখন আলো এসে পড়ে দরজার ওপাশটায়, তখন কাঁচের দরজার এ পাশ থেকে ওটাকে মনে হয় একটা সাপ নেমে এসেছে কোথা থেকে। ওটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎই রামের মাথার ভেতর এক পরিকল্পনা ঝিলিক দিয়ে উঠে।

পরেরদিন রবিবার। ছুটির দিন। বেলফাস্টের এক ভারতীয় বন্ধুর সাথে দেখা করে রাম। এ বন্ধুটিও তার মত মেডিকেলের ছাত্র । তবে তার অর্থাভাব নাই। ধনী বংশের সন্তান ।

রাম বলে, আমার বাবা অসুস্থ। তাকে দেখার জন্য আমার ভারত যাওয়াটা বড় জরুরী। আমাকে কিছু টাকা ধার দিতে পারবে? বিমানের টিকিট কাটার জন্য টাকাটা আমার প্রয়োজন।

লেনদেনের ব্যাপারে রামের সুখ্যাতি আছে। বন্ধুটি এক বাক্যে রাজী হয়ে যায়। বলে, আগামীকাল সকালে পৌনে ন’টা করে এসো। টাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

টাকার একটা নিশ্চয়তা পেয়ে রাম আবার ব্যাঙ্গর ফিরে গেল। পরদিন সকালে ম্যাককুইন সাহেব অফিস এসে দেখে রাম উপস্থিত। হাতে ব্যাগ। ম্যাককুইন সাহেবকে দেখেই রাম বলে উঠে, আজ তো আমি সাইটে যেতে পারছি না। বাবা খুব অসুস্থ। আমাকে আজই ভারত যেতে হবে ক’দিনের জন্য। কিন্তু ফেরার পর আমি আবার আপনার হয়ে কাজ করতে চাই। আমি আজ বিকেলের ফ্লাইটে যাব আর সপ্তাহ শেষ হবার আগেই ফেরৎ চলে আসব। আপনি কি দয়া করে সামনের সপ্তাহে আমাকে আবার কাজটা ফিরিয়ে দেবেন?

ম্যাককুইন সাহেব অমত করলেন না। রাম ফিরে এলে কাজটা ফেরৎ পাবে। কিন্তু যে ক’দিন রাম অনুপস্থিত সে ক’দিনের টাকা রাম পাবে না। সেই সাথে অবশ্যই তাকে শুত্রুবারের ভেতর আয়ারল্যান্ড ফেরৎ আসতে হবে এবং শনিবার তাকে কাজে হাজির থাকা চাই।

ম্যাককুইন সাহেবের শর্ত মেনে নিয়ে রাম বেলফাস্টে এসে আগের হিসেব মত বন্ধুর কাছ থেকে টাকাটা ধার নিয়ে যাত্রা শুরু করে। যাত্রার শুরুতে এয়ারপোর্ট থেকে বোম্বে হতে ফেরৎ টিকেটা কিনে নিয়ে চলে যায় লন্ডন। লন্ডন থেকে বোম্বে। মঙ্গলবার সকাল নাগাদ সে পৌঁছে যায় বোম্বে। তবে পাঞ্জাব না গিয়ে রয়ে যায় ওই বোম্বেতেই।

বোম্বেতে তার পরিচিত এক ভদ্রলোক ছিলেন। নাম চ্যাটার্জী। ভদ্রলোক জন্তু-জানোয়ারের ব্যবসা করেন। তার জানোয়ারের বেশীরভাগই কিনে নেয় বিজ্ঞানী আর মেডিকেলের ছাত্ররা। অনেকরকম জানোয়ারের ভেতর চ্যাটার্জীর ছিল সাপের বড় সংগ্রহ। বুধবার সকাল করে রাম দেখা করে চ্যাটার্জীর সাথে। এ কথা সে কথার পর রাম চ্যাটার্জীর কাছে তার চাহিদা কথা খুলে বলে।

উত্তরে চ্যাটার্জী বলে, হ্যাঁ আছে। তার কাছে একটা মাত্র ছোট গোখরো সাপ আছে। ওটা খুবই বিষাক্ত এবং বিপদজনক। এর কামড়ে অতি দ্রুত মানুষ মরবেই। মানুষ প্রায়ই বুঝতেই পারে না ওকে এ সাপ কেটেছে। তেমন কোন ব্যাথা ছাড়াই আক্রান্ত মানুষটির মৃত্যু চার ঘন্টার ভেতর হবার গ্যারান্টি সে দিতে পারে। তুমি যদি কিনতে চাও তবে তোমার জন্য ৩৫০ টাকা পর্যন্ত দাম আমি রাখতে পারব।

চ্যাটার্জী বাবু একটা খুব ছোট কাঠের বাক্সের ভেতর সাপটাকে ঢুকিয়ে দেয়। কাঠের বাক্সের শরীরে ছোট ছোট কয়েকটি ছিদ্র আছে। ৩৫০ টাকা তার হাতে চলে আসে। কোন প্রশ্ন করে না সে। সাপ নিয়ে রাম কি করবে তা তার মাথাব্যাথা না। ব্যবসা হলেই সে খুশি।

খাবার পানি ছাড়া একটা সাপ অনেকদিন বাঁচতে পারে। পরেরদিন ব্যাগের ভেতর কাঠের বাক্সটি কাপড়ে মুড়িয়ে বিমানে চড়ে বসে সে। ম্যাককুইন সাহেবের শর্ত মোতাবেক শুক্রবার বিকেলের ভেতরই ব্যাঙ্গোরে পৌঁছে যায় সে। শনিবার সকালে লাল টিফিন বক্সটি হাতে নিয়ে যথারীতি কাজেও যোগ দেয় সে। লাল রংয়ের ধাতব বাক্সের ভেতর আজ খাবারের পাশাপাশি আছে একটা ছোট সাপ।

কাজের সময় বিগ বিলিকে পরনে সবসময় দেখা যায় একটা পুরো কালো জ্যাকেট। এ শনিবারে গরমটা খুব বেশী থাকায় বিলি তার জ্যাকেটকে একটা গাছে ঝুলিয়ে রেখেছে। আজ ওরা খসিয়ে নেয়া ইটগুলোকে ট্রাকে তুলছে। ট্রাকগুলো চলে যাচ্ছে অজানা গন্তব্যে। অন্যদিনের তুলনায় পরিশ্রমটা সবারই বেশী।

রামের আজ কাজে মন নাই। সারাটা সকাল সে অপেক্ষা করেছে একটা যুতসই সময়ের জন্য। যখনই কেউ তাকে দেখছে না এমন একটা সময় পাওয়া গেল, রাম দেরী না করে অতি সাবধানে সাপটাকে বিগ বিলির জ্যাকেটের পকেটে ঢুকিয়ে দেয়। ও পকেটে বিলি তার সিগারেটগুলো রাখে। একটু পর পর একটা বের করে আনে আর ধোঁয়া টানে।

দুপুরবেলা খাবার বিরতিতে বিলি তার জ্যাকেটের পকেটে হাত ঢুকিয়ে সিগারেটের প্যাকেটটা বের করে আনে। সিগারেট মুখে ধরাতে গিয়ে হঠাৎ করে তার চোখে যায় রামের দিকে। ছেলেটা তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

কি দেখিস? খেঁকিয়ে উঠে সে।

রাম চোখ নিচে নামিয়ে নেয়। কিন্তু তার চোখ বারবার চলে যাচ্ছে জ্যাকেটের দিকে। রাম ভেবেছিল হাত দেওয়া মাত্রই বিলিকে কামড়ে দেবে সাপটা। হাতে সাপ দেখে চেঁচিয়ে উঠে বিলি সাপটাকে ছুঁড়ে মারবে মাটিতে আর রাম দৌড়ে গিয়ে জুতো দিয়ে মারিয়ে ছোট সাপটাকে মেরে সাথে সাথে ছুঁড়ে মারবে নদীতে।

কিন্তু কিছুই হল না।

সাপটা গেল কোথায়? কেন ওটা বিলিকে কামড়াল না ? ওটা আবার বের হয়ে যায়নি তো? বাকী দিনটা সাপের কথা চিন্তা করে বড় দুশ্চিন্তায় কাটল তার।

বিকেলে সবার মতই বিগ বিলি তার বাসায় ফেরৎ গেল এবং অন্যান্য দিনের মতই রান্নাঘরের দরজার পেছনের জ্যাকেটটা ঝুলিয়ে রাখল। রবিবার জ্যাকেটটা ওখানেই থাকল সারাদিন। সোমবার সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে জ্যাকেটটা রান্নাঘরের মেঝেতে এবং ওটা কেমন জানি একটু একটু করে নড়ছে। ভাল করে খেয়াল করে সে দেখে জ্যাকেটের পকেট থেকে ছোট কি যেন একটা বের হয়ে আসছে। ওটা দেখতে অনেকটা সাপের মত। কিন্তু আয়ারল্যান্ডে তো কোন সাপ নেই। তাহলে ওটা কি?
অনেক ভেবে বিলি সিদ্ধান্ত নেয় এটা নিশ্চয়ই কোন গিরিগিটি। পা দিয়ে ওটাকে মাড়িয়ে দিতে গিয়ে হঠাৎ করে বিলির মুখটা হাসিতে ভরে উঠে। তার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে। শয়তানী বুদ্ধি। অনেক খুঁজে একটা খালি বাক্সের ভেতর জিনিষটাকে সাবধানে তুলে রাখে সে।

সেদিন কাজে যাবার সময় বাক্সটা লুকিয়ে সাথে নিয়ে গেল সে। আজ ওরা কারখানার কাঠের ছাদটা আগুনে পোড়াবে। আজ বিলিকে বড্ড খুশী খুশী লাগছে। ঘুরে ঘুরে সবার সাথে কথা বলছে। হাসি-ঠাট্টা করছে। বিলির পরিবর্তনে সবাই খুশি। কেবল একজন ছাড়া। সে একজন হল রাম। তার প্ল্যান কাজ করে নাই।

গত দু’দিন ধরে দুশ্চিন্তায় রামের রাতের ঘুম নষ্ট । আকারে খুব ছোট হলে কি হবে সাপটা বড় বিষাক্ত। প্রতি বছর এ ধরনের গোখরোর কামড়ে ভারতে প্রচুর মানুষ মারা যায়। এখন উত্তর আয়ারল্যান্ডে ওটাকে নিয়ে আসলেও ওটার স্বভাব তো পাল্টায় নাই। এটা বিলিকে যেমন কামড় দিতে পারে তেমনি হতে পারে অন্য কারও মৃত্যুর কারন।

ভারতীয় ছাত্রটি বিলিকে তার লাল টিফিন ক্যারিয়ারটা গোপনে খুলতে দেখে নাই। অন্য মানুষরা অবশ্য দেখেছে বিলি কি করেছে। তারা জানে আজ বিলি রামের সাথে দুষ্টামী করবে। মজা করবে। তারা একে অন্যের দিকে তাকিয়ে গোপনে হাসাহাসি করে।

ভর দুপুরবেলা। সবাই মাটিতে বসে তাদের খাবার মুখে তুলছে আর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রামের দিকে। তারা অপেক্ষা করছে রাম কখন তার টিফিন ক্যারিয়ার খুলবে। রাম তাদের অপেক্ষার কথা জানে না। তার মাথায় এখন ঘুরছে অন্য চিন্তা। সাপটা গেল কই?

অন্যমনস্কভাবে রাম তার টিফিন ক্যারিয়ারের ঢাকনা খুলে ভেতরে নজর দেয়। ওতে কিছু একটা নড়ছে। জিনিষটা রামের চেনা। সাপ। গোখরো সাপ। ইন্ডিয়ান ভাইপার। ওটা মাথা তুলছে। তাকে কামড় দেবে।

আকাশ - বাতাস কাঁপিয়ে হাতের বাক্সটা ছুড়ে ফেলে লাফিয়ে উঠে ভারতীয় ছাত্রটি। চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছে, সাপ। বিষাক্ত সাপ। এটাকে মেরে ফেল তাড়াতাড়ি। তাড়াতাড়ি।

চারদিকে অট্টহাসি। সবার মুখে হাসি-আনন্দ। সবার হাসির আওয়াজ ছাপিয়ে শোনা যায় ঠিক সামনেই বসে থাকা বিলির অট্টহাসি। রামের খাবার তার পায়ের কাছের ধূলোতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। বিগ বিলি হাসতে হাসতে বলছে, আহাম্মক ইন্ডিয়ান! এতদিন আয়ারল্যান্ড থাক আর এটা জান না আয়ারল্যান্ডে সাপ নেই? বোকামীর জন্য তোমার খাবারটা নষ্ট হল আজ।

এই অট্টহাসি আর মাত্রারিক্ত আনন্দের জন্যই হয়ত বিগ বিলি তার ডান হাতে সাপটার অস্তিত্ব অনুভব করে না। এমনকি ওটা যখন চামড়া ফুটো করে তখনও তা অনুভব করতে পারে না সে।

ক’মিনিট পর বিলি উঠে দাঁড়িয়ে সবাইকে তাড়া দেয়। সবাই কাজে নেমে পড়ে। আজ বড় ফুর্তিতে কাজ চলছে ওদের। কেবল রাম চুপ। রাগে তার গা পুড়ে যাচ্ছে। সেই সাথে দুশ্চিন্তাও ভর করেছে। তার পরিকল্পনাটা মাঠে মারা তো গেছেই সেই সাথে সাপটা আবার উধাও।

ঘন্টা তিনেক পর ফোরম্যান হঠাৎ নিজের কাজ থামিয়ে দেয়। তার শরীর কেন জানি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। মুখের উপর হাত দিয়ে প্রথমে সে বসে আর এরপর সে শুয়ে পড়ে। সবাই নিজ কাজ নিয়ে ব্যস্ত। কেউ তাকে খেয়াল করে না।

সাড়ে চারটার দিকে হঠাৎ একজন চেঁচিয়ে বলে উঠে, বিগ বিলি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ওর চোখের পাতা খোলা যাচ্ছে না। ওকে হাসপাতালে নিয়ে হবে। এ্যাম্বুলেন্স ডাকো।

কেউ একজন দ্রুত ট্রাক চালিয়ে একটা টেলিফোনের খোঁজ করে ।এ্যাম্বুলেন্সকে খবর দিতে হবে।

টমি বার্নস দ্রুত রামকে খুঁজে বার করে। তুমি তো একজন ডাক্তার, রাম। বিলির কি হয়েছে?

রাম জানে বিলির কি হয়েছে। বিলিকে দেখেই বুঝেছে বিলি মারা গেছে।

যখন বিলিকে এ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে হাসপাতালে আনা হয় তখন সে মৃত। বিলিকে পরীক্ষা করে হাসপাতালের ডাক্তাররা বিলির মৃত্যুর কারনও বের করেছে। তাদের ভাষায় কারনটা স্ট্রোক। অনেকক্ষন ধরে রোদের নিচে কাজ করায় স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে বিলি মারা গেছে।

কিছুদিন পর পুরাতন কারখানা ভবনের কাজ শেষ হল। পরের রবিবার রাম আবার সে জায়গায় চলে আসে। এবার ও সম্পূর্ন একা। যে জায়গাটায় বিগ বিলি ক্যামেরুন মারা গেছে ওখানটায় দাঁড়ায় সে। খর্বাকৃতির হরি কৃষন রাম জী বিশালদেহী ফোরম্যানকে হত্যা করতে পেরেছে। কিন্তু ও তো শীঘ্রই ডাক্তারী পরীক্ষায় পাশ করবে। তখন তো তাকে জীবন বাঁচাতে হবে।

সাপটা কোথায় এখন ? কোনদিকে গেল? এমন ঠান্ডার দেশে তো ওটা বাঁচতে পারবে না। শীতে নিশ্চয়ই ওটা মারা যাবে।

আনমনেই চেঁচিয়ে উঠে রাম। সাপটাকে উদ্দেশ্য করে জোরে জোর বলতে থাকে, তুমি এখানে হত্যা করেছ এবং তুমিও এখানেই মরবে। আমার কথা কি শুনতে পাচ্ছ ? তুমি এখানে একাকী মরবে কারন আয়ারল্যান্ডে কোন সাপ নাই।

রামের কথা বাতাসে ভেসে বেড়ায়। কোন উত্তর আসে না। আসা সম্ভবও না। সাপ শুনতে পায় না। আর শুনতে পেলে সে এখন শুনত না। সে এখন বড় ব্যস্ত।

নিজের বাচ্চাদের যত্ন নিতে মা সাপটা এখন বড় ব্যস্ত।

(মূল গল্প There are no Snakes in Ireland by Frederick Forsyth)
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:১৮
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×