somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ট্রাভেলার মাসুদের নেপাল ভ্রমণ

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভ্রমণ; নেশার মতো। যাকে পেয়ে বসে বেড়ানো ছাড়া আর কােন কিছুই ভালো লাগে না তার। আমি ভ্রমণের নেশাগ্রস্থ হয়েছি । সেই ধারাবাহিকতায় ঝটিকা নেপাল সফর। গুগল ম্যাপে অনেক দিন আগে থেকেই প্লান করছিলাম নেপাল কিভাবে যাব এবং কি কি করবো। সেদিন তা বাস্তবায় করেই ফেললাম। নেপাল ভ্রমণের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হলো...

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঢাকা-কাঠমান্ডু-ঢাকা আপ-ডাউন টিকিট আগে থেকেই কেটে রেখেছিলাম। নির্ধারিত দিনের দুপুর বারোটায় এয়ারপোর্টে গিয়ে হাজির হলাম। দুপুর ০২:৪৫ মিনিটে ফ্লাইট।


যথাসময়ে বিমান উড্ডয়ন করলো। নীল আকাশের সাদা মেঘ ভেদকরে বাংলার পতাকাবাহী বিমান দুরন্ত গতিতে চলতে থাকলো কাঠমান্ডুর উদ্দ্যেশে।


দেড়ঘন্টা উড্ডয়নের পরেই নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরন করলাম। কাঠমান্ডুর কাছাকাছি গিয়ে চোখে পড়ল বিশাল বড় বড় পাহাড় সারি। স্মৃতিপটে ভেসে উঠলো বিএস২১১-এর মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কথা। সত্যিই ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর উচু উচু পাহাড়ে ঘেরা ভয়ানক এক বিমানবন্দর। যাইহোক আমরা সেখানে বিজি-০৬৯ নিয়ে ভালোভাবেই অবতরন করলাম।


অবতরন করার পর দেখলাম এ যেস আমাদের সৈয়দপুর বিমান বন্দরের মতো দেখতে। একদম সাদামাঠা একটা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর। বিমান থেকে নেমে কো-বাসে উঠলাম, দু-মিনিট বাস চলার পর আগমনী হলের সামনে নামিয়ে দিল।

হলের ভেতরে প্রবেশ করতেই আগমনী যাত্রীদের নিবন্ধন ডেক্স । আমারা বাংলাদেশীদের জন্য অন এ্যরাইভাল ভিসা। এন্ট্রি ডেক্সকে পাসপোর্ট দিয়ে নাম নিবন্ধন করলাম। পরে ব্যাংক কাউন্টার ৩০ ডলার সমপরিমান নেপালি মুদ্রা জমা দিতে গিয়ে উনারা বলল প্রথমবার ভিজিটে কােন ফি দিতে হবে না। মনে মনে বেশ পুলকিত হলাম।


এরপর ইমিগ্রশন পুলিশের লাইনে দাড়ালাম। মিনিট দশেক দাড়িয়ে থকার পর ওখানেই ভিসা সিল দিল ১৫ দিনের জন্য। সবকাজ শেষ করে বের হয়ে গেলাম। আমার জীবনাতিহাসে যােগ হলো আরেকটি দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা।


এই দিন আমি কাঠমান্ডুর অবস্থান করি। হােটেল ভাড়া ও খাবার অনেক সস্তা। মানও ভাল। একটি মােটামুটি দামের হােটেলে উঠলাম। ফ্রেস হয়ে বের হালাম কাঠমান্ডুর দর্শনীয় স্থান দেখার উদ্দেশ্যে। রাতে হােটেলে ফেরার আগে বাইক রেন্ট নিলাম। উদ্দেশ্য আগামীকাল পােখরার উদ্দ্যেশে যাত্রা।


অনেকদিনের আশা ছিল রয়েল এনফিল্ড বুলেট ৩৫০ সিসি বাইক চালাবো। যেই কথা সেই কাজ। দিনে ২৫০০ নেপালি রুপি দিয়ে ভাড়া করলাম অনেক দিনের কাংঙ্খিত রয়েল এনফিল্ড বুলেট ৩৫০। সিকিউরিটি হিসেবে ওরা আমার পাসপোর্ট রেখে দিল। তবে পাসপোর্ট না দিয়ে ফটোকপি দিতে পারলে ভালো হতো। পরদিন ভোর ০৫:০০ টায় মোবাইলে জিপিএস সেট করে পােখরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা।


পথিমধ্যে বিশাল পাহাড়ী উচু নিচু আকাবাকা রাস্তা। বিশাল পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে কখোনো পাহাড়ের উপর দিয়ে আমার রয়েল এনফিল্ড বুলেট ৩৫০ চলল সা সা করে। নিজেকে কেমন রাজা রাজা মনে হতে থাকলো রয়েলএনফিল্ডের শব্দে।
পথিমধ্যে কয়েকজায়গায় যাত্রাবিরতি দিলাম। চা পানের বিরতি। মুগলিং নামক জায়গায় কিছু খেলাম। একটু রেস্ট নিয়ে আবার পােখরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা। শুনেছি পােখরা থেকে হিমালয় খুব নিকটবর্তী। সকালের মিষ্টি রােদে হিমালয় নাকি জলজল করে। বাইক চালাচ্ছিলাম আর এই সব মনে মনে ভাবছি। রােমাঞ্চিত অনুভব হতে লাগছিল।


মুগলিং এ যেয়ে সকালের হালাকা রােদের ঝিলমিল উচু পাহাড় ভেদ করে উপত্যকার দিকে গড়াচ্ছিল। রােদঝিলমিল দেখে হৃদয় নাচন আরও বেড়ে গেল। কাঠমান্ডু থেকে মুগলিং ১১১ কিমি। মুগলিং থেকে পােখরা ৯০ কিমি। কাঠমান্ডু থেকে পােখরা ২০১ কিমি। যা হােক মুগলিং থেকে একটু রিচার্জ হয়ে আবার বাইকে।


এরপর বান্দিপুর-দামুলি-শুকলা গানধাকি হয়ে পোখরা পৌছলাম একঘন্টা ত্রিশ মিনিটে। পৌঁছে একটা কমদামি হােটেলে উঠলাম। একটু ফ্রেশ হয়ে কাছের ফেওয়া লেকে গেলাম। সৃষ্টিকর্তা তার আপন হাতে বানিয়েছে। চােখ জুড়িয়ে যায়। এরপর রাত্রে রেস্টুরেন্টে খেয়েদেয়ে হােটেলে গিয়ে গভীর ঘুম । সারাদিন বাইকে বেশ ক্লান্ত।


পরদিন সকালে যাত্রা দেবীস ফলস, বেগনাস লেক ও মাহিন্দা কেভ।


এই তিন জায়গা ঘুরে হোটেলে আবার ফ্রেস হয়ে বের হলাম কাঠমান্ডুর উদ্দেশ্যে। সময় কম ছিল তাই টাইট সিডিউল। রাত্রে ১১ টায় পৌঁছলাম কাঠমান্ডু হােটেলে। আগেই বুকিং করেছিলাম। প্রিয় বাইক রয়েলএনফিল্ড বুলেট ৩৫০ জমা দিয়ে পাসপোর্ট নিলাম।

পরদিন সকালে মাখানতলী থেকে হালকা কিছু কেনাকাটা করে খেয়েদেয়ে আবার হােটেলে। ফ্রেস হয়ে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে। বিকাল ০৪.৫০ মিনিটে কাঠমান্ডু-ঢাকা ফ্লাইট বিজি-০৭০। এয়ারপোর্টের সব কার্যক্রম শেষ করে ওয়েটিং রুমে বসে আছি। ঢাকা থেকে বিজি-০৬৯ যথা সময়ের মধ্যেই অবতরণ করলো। এবং যথাসময়েই ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলো।

রেখে গেলাম নেপাল ভ্রমনের স্মৃতি। এক ঘন্টা ত্রিশ মিনিটের মাঝেই ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতর করলাম। বেশ পুলকিত নেপাল ভ্রমনের অনিন্দ্য স্মৃতি আমার স্মৃতিপটে রক্ষিত থেকে গেলো। একবারে সব দেখা হলো না।

তাই আবার আসবো এই নেপাল প্রান্তরে। এই শেষ হয়েও হলো না শেষ আমার নেপাল ভ্রমন! মধুরেণ সমাপয়েৎ!
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:২৪
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×